ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে ফটোগ্ৰাফ নেয়া সম্ভব হয়।  ফরাসি উদ্ভাবক জোসেফ নিসফোর নিপস ১৮২২ সালে পোপ সপ্তম পিসের একটি প্রতিকৃতি ফটোগ্রাফ নিতে সক্ষম হয়।  যদিও এর একটি প্রতিলিপি করতে গিয়ে পরবর্তীতে নষ্ট হয়ে যায়।  সুতরাং উনিশ শতকের ঐ সময়েই ফটোগ্রাফিতে কিছু জটিলতা ছিলো।

প্রথম প্রথম একটি ছবি তুলতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগতো।  ততক্ষণে হাসি তো দূর, মনের স্বাভাবিক উ্চ্ছলতাই নষ্ট হয়ে যেতো, তাই ছবিতে মানুষের মুখ গম্ভীর দেখাতো।

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

দ্বিতীয়ত, সে সময়ে হাসাহাসিকে বেশ অপ্রাসঙ্গিকভাবে নেয়া হতো।  কারণ ঊনবিংশ শতক  ছিলো উপনিবেশিক যুগ, আর ফটোগ্রাফি মূলত সম্ভব ছিলো পশ্চিমের উপনিবেশপ্রধান দেশগুলোতে।  সুতরাং শাসক কুল (ফটোগ্রাফ অনেক ব্যায়বহুল ছিলো, তাই শাসক কুল বা অভিজাত ব্যক্তিবর্গেরাই বিশেষত ছবি তুলতো) হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে নিজেদের ‘শাসক’ অবস্থান দেখানোর জন্য গম্ভীর মুখে ছবি তুলতো।

* তখন তো মধ্যযুগের রেশ ছিলো, সে যুগের বৈশিষ্ট্য মোতাবেক অভিজাতরা মুখ গম্ভীর করে রাখতো, তাই অনেকে নিজের আভিজাত্য দেখানোর জন্য মুখ গম্ভীর করে ছবি তুলতো।

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

* সে সময়ের সংজ্ঞা মতে, মুখ স্বাভাবিক ও প্রকাশভঙ্গি হীনভাবে রাখলে আসল সৌন্দর্য ফুটে উঠে।  এরকমও বলা হতো যে, “মোনালিসার মুখে তো দৃশ্যত হাসি নেই, তাই বলে কি তাকে সুন্দর লাগে নি?” সুতরাং স্বাভাবিকভাবে মুখ রেখেই ছবি তুলতো সবাই।

* অনেকে চাইতো না ছবি তোলার সময় নিজের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশিত হোক, তাই মুখটা অভিলেশহীন রাখতো ছবি তোলার সময়।

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

* তৎকালীন সময়ে ফটোগ্রাফি অনেক ব্যয়বহুল ছিলো।  সারাজীবনের সঞ্চয় থেকে একটা মোটা অংশ ব্যয় করে ছবি তোলার সময় আপনা আপনিই গুরুগম্ভীর হয়ে যেতো।

* ঐ সময়ে শিশু মৃত্যুর হার‌ ছিলো অত্যন্ত বেশি।  সে জন্য বেশি বেশি সন্তান নিতো মা- বাবারা।  দেখা যেতো আটজন সন্তানের ভেতর চারজনই মৃত।  নিজের প্রিয় সন্তান এর স্মৃতি রেখে দেয়ার জন্য মৃত অবস্থায় তার ছবি তুলতো।  অনেক ক্ষেত্রে বড় ব্যক্তির বেলাতেও হতো এটা।  এতে ছবিতে সন্তান কিংবা ব্যক্তির চেহারা ভাবলেশহীনভাবে রাখা সম্ভব হলেও হাসি ফোটানো সম্ভব হতো না। 

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

 * ঐ সময়ে মানুষেরা দাঁতের তেমন যত্ন নিতো না, তাই কুৎসিত লাগার ভয়ে অনেকে ছবি তোলার সময় হাসতো না।

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

* ফটোগ্রাফাররা মধ্যযুগে আঁকানো প্রতিকৃতির মতো করেই প্রথম প্রথম তাদের ছবি সাজাতে চাইতো।  মধ্যযুগের প্রতিকৃতিগুলোতে হাসি নেই বললেই চলে।  তাই ক্লাসিক ভাবধারা বজায় রাখার জন্য ফটোগ্রাফাররা চাইতো ব্যাক্তি কিংবা মহিলাটি ছবিতে না হাসুক।

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

* তখন ক্যামেরার বৈশিষ্ট্যই হোক, কিংবা ফটোগ্রাফারদের নিজস্ব মতই হোক, ফটোগ্রাফাররা বলতো যে হাসলে ক্যামেরায় মুখ বড় দেখায়, তাই সামনের জনকে ঠোঁট ভিতরে ঢুকিয়ে ছোট করতে বলতো, এমন অবস্থায় হাসি মুখে ছবি তোলা নিশ্চয়ই অসম্ভব ছিলো।

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

*আমরা জানি যে ছবির নেগেটিভ রাখার জন্য আজও অন্ধকার রুম লাগে।  সুতরাং ফটোগ্রাফির প্রথম পর্যায়ে ক্যামেরার কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিলো এবং ছবি তোলার জন্য কম আলোর হলঘর প্রয়োজন ছিল।  হলঘরের ভুতুড়ে পরিবেশে মানুষের এমনিই ভয় লাগতো। অনেকক্ষণ ক্যামেরার সামনে বসে থাকার জন্য মাথা যাতে না নড়ে যায়, তাই চেয়ারে ঘাড়ের কাছে লোহার দানি ব্যাবহৃত হতো মাথা ঠিক রাখার জন্য।  এমন ভুতুড়ে অবস্থায় খুব কম মানুষের মুখেই হাসি আসতো।  

যাই হোক, কয়েক দশকের ধারা ভেঙে একজন ফটোগ্রাফার ‘উইলি’ নামক এক আঠারো বছরের যুবকের ছবি তোলে যে ছবিতে কোনো মানুষকে সামান্য হলেও প্রথম হাসতে দেখা যায়।  ১৮৫৮ সালে ছবিটি আবিষ্কৃত হয়।

ঊনবিংশ শতকের ফটোগ্রাফিগুলোতে আমরা কাউকে হাসতে দেখি না কেনো?, Stay Curioussis

তার মানে কিন্তু এই নয় যে, সে যুগের মানুষ কম হাসতো।  মানুষ যখন ছিলো, মানুষের মুখে হাসিও ছিলো।  শুধু তাদের ছবিতে ছিলো না।  কারণ ছবি সবসময় বিপরীত দিক থেকে তোলা মানুষের প্রতিকৃতি তুলে ধরে, আসল মানুষটাকে কখনও তুলে ধরে না।