১৯৪৬ সালে দেশভাগের প্রাক্কালে গোপালগঞ্জের এক যুবক মাটি কামড়ে পড়ে থাকল কলকাতায়, সাড়ে তিন হাত জমি আঁকড়ে ধরে। এক মর্মস্পর্শী কাহিনি।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও আবদুস সালাম চৌধুরী দুই আবেগপ্রবণ, তেজি বাঙালি পুরুষ। একজনার জন্ম মাদারীপুরে ১৯৩৪ সালে, আরেকজনার ১৯২২ সালে, গোপালগঞ্জে । সুনীল আজীবন কবিতা আর উপন্যাসে তাঁর ফেলে যাওয়া একান্ত আপনার বাংলাদেশে সাড়ে তিন হাত জমি কামনা করে গেছেন। গভীর অধিকারবোধ থেকে লিখেছেন, ‘যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াব, আমি বিষপান করে মরে যাবো।’ আর সালাম? সে তো আরও এক ডিগ্রি বাড়া! কলকাতা শহরের একেবারে মধ্যখানে জাতি–রাষ্ট্রের সব নিয়ম ভঙ্গ করে সাড়ে তিন হাত জমি জবরদখল করে বসে আছেন। ১৯৪৭ সালে হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের জন্য  সুনীলের অন্তর জ্বালা এবং তা মন্থন করে তিনি যা সৃষ্টি করে গেছেন, তা কমবেশি সব বাঙালির জানা। আজ নাহয় সালামের যুদ্ধটাই উপজীব্য করি।

প্রায় ছয় ফুট লম্বা, সুঠাম দেহী, ২৫ বছরের দারুণ সুপুরুষ এই যুবক। পরিবারে তাঁর আদুরে নাম তনু। ১৬১ পার্ক স্ট্রিটে তাঁদের তিনতলা বিশাল বাড়ি। তাঁর বড় তিন ভাই—মইনুদ্দিন চৌধুরী, আক্তার উদ্দিন চৌধুরী ও আব্দুস সাত্তার চৌধুরী। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানি, রপ্তানিসহ নানা ব্যবসা তাঁদের। তাঁদের ৭০টি গয়না নৌকা গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটের পণ্য কলকাতায় নিয়ে আসে। সেগুলো রেলে চেপে চলে যায় মুম্বাই (তৎকালীন বোম্বে), দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থানসহ আরও বিভিন্ন এলাকায়। একইভাবে সেই সব এলাকার পণ্য কলকাতা হয়ে চলে আসে পূর্ব বাংলার (এখনকার বাংলাদেশ) বিভিন্ন শহরে। বড় তিন ভাই যেমন ধীরস্থির, সালাম ঠিক তার উল্টো! কিছুটা বাঁধনহারা, কিছুটা স্বাধীনচেতা। পাক্কা ফুটবল খেলোয়াড় তিনি। তাঁকে ঘরে বাঁধার জন্য বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। সেই বধূর জন্য গড়া গয়না নিয়ে সালামের ভাবিরা তাঁকে দেখাতে গেলে তিনি সকৌতুকে বলেছিলেন, যার জন্য গড়া তার কণ্ঠে একবারেই দেখব।

সময়টা ছিল বড় উত্তাল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দ্রুত রূপ নিচ্ছে দুটি ভিন্ন জাতীয়তাবাদে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তড়িঘড়ি করেই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত ছাড়ল। জন্ম নিল দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু হায়, স্বাধীনতার আনন্দে সবাই কি একইভাবে ভাসতে পেরেছিল? যে লাখ লাখ পরিবার রাতারাতি শরণার্থী হয়ে গেল, তারা কি ছিন্ন করতে পেরেছিল তাদের নাড়ির টান?  অনেকের মতো চৌধুরী পরিবারও ব্যবসাবাণিজ্য, বাড়িঘর—সব ছেড়ে দেশভাগের এক বছরের মাথায় চলে এল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু সালাম? সালামকে তো আনা গেল না। সে যে বড় একগুঁয়ে স্বভাবের। রয়ে গেল কলকাতায়। আত্মীয়পরিজন ছাড়া, একা আঁকড়ে ধরে রইল কলকাতা শহরের মূল্যবান সাড়ে তিন হাত জমি।

সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানে এসে চৌধুরী পরিবারের ফিরে তাকানোর সময় ছিল না। ঢাকা ও খুলনাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে হলো। ঢাকা, খুলনা ও গোপালগঞ্জকে  ঘিরে নতুন করে গড়তে হল এম এ চৌধুরী কোম্পানি। ইঞ্জিন এসে গেছে। গয়না নৌকা বদলে নামানো হলো মাল ও যাত্রীবাহী লঞ্চ। নতুন করে খুলতে হলো দোকানপাট, প্রতিষ্ঠা করতে হলো বড় বড় গুদাম। কেটে গেল বেশ কিছু বছর। সালামের সঙ্গে সম্পর্ক থাকল না পরিবারের। কেউ যেতে পারেনি তাঁকে একনজর দেখতে। এ নিয়ে খুব কি অভিমান ছিল সালামের? কে জানে! তিনি কি জানতেন যে তার ভাইয়েরা তাঁকে ভোলেননি? তাঁদের একটি লঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছিল সালাম!  তিনি কি শুনতে পেতেন কোনো এক মধ্যরাতে বড় ভাই মইনুদ্দিনের ‘হায় তনু, হায় তনু’ বলে আর্তচিৎকার? ১৯৬৫–এর ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তো সালামের বড় ভাইও চিরনিদ্রায় চলে গেলেন।

গোবরায় সালাম চৌধুরীর সাড়ে তিন হাত জমি

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, তারপরে তো যেতে পারতেন চৌধুরী পরিবারের সেজ কর্তা, আমার শ্বশুর সাত্তার চৌধুরী। সবাই–ই গিয়েছিল তাঁদের পুরোনো ঠিকানায়। কিন্তু তিনি যাননি। কোথায় যেন একটা খচখচে ব্যথা ছিল। অন্য এক বাধ্যবাধকতায় ১৯৮৯ সালে সাত্তার চৌধুরী দীর্ঘ ৪১ বছর পরে আবার পা রাখলেন কলকাতার মাটিতে। তাঁর মেজ সন্তান যখন ১৬১ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে তাঁর অনেক কালের চেনা বাড়িটার সামনে ট্যাক্সি থামাল, এক লহমায় হাজারটা স্মৃতি এসে এলোমেলো করে দিল সবকিছু। কানে যেন শুনতে পেলেন বড় ভাইয়ের দরাজ গলা, সাত্তার, ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানের খেলা তো কখন শেষ হয়েছে। তনু কেন এখনো ফিরছে না? অথবা সাত্তার, এখন কি গয়না নৌকা ঘাটে লেগেছে?

সাত্তার তরুণ বয়সের নিজেকে দেখতে পেলেন। দৌড়ে এক লাফে ট্রামে চাপছেন তিনি। তিনতলার কোনার ঘরটি সাত্তারের। এ ঘরেই তো তুলেছিলেন তাঁর নববিবাহিত বালিকা বধূটিকে। ওই তো পেছনের শানবাঁধানো উঠোনে থপ থপ করে পা ফেলে হাঁটতে শিখছে তাঁর প্রথম সন্তান। মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার ওপারে দেখতে পেলেন সিরাজের সেই বিরিয়ানির দোকান। কতবার খেয়েছেন এই হোটেলে! এই বাড়ি, এই রাস্তা, এমনকি দিল্লি, বোম্বে, পাঞ্জাব, রাজস্থান—সবই তো চষে ফিরতেন তিনি। পথের কোনো ধূলিকণায় কি মিশে নেই তাঁর পদচিহ্ন? তাঁদের ঝকঝকে বাড়িটির রংচটা হাল দেখে মনটা আরও ভেঙে গেল। ফেলে আসা সব স্মৃতি গলাটিপে ধরবে বলেই কি এত দিন লেগে গেল তার ফিরতে? নাহ্‌, তাঁর আর কিছুই ভালো লাগছে না, তর সইছে না, কখন তিনি যাবেন তনুর কাছে।

পরদিন বেশ ভোরে উঠে গেলেন সাত্তার। গোসল সেরে ধোপদুরস্ত সাদা পাঞ্জাবি–পায়জামা পরে তৈরি হয়ে নিলেন তিনি। নাশতা করে, ১০টা নাগাদ এলেন গোবরা কবরস্থানে। হ্যাঁ, ১৯৪৬ সালে কাঁধে করে নিয়ে এসে তনুকে এই কবরস্থানে শুইয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা তিন ভাই। দুদিনের অসুখে হুট করেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কতবার তিনি এসেছেন ভাইয়ের কবরে। তিনি ঠিকই চিনতে পারবেন কবরটা। কিন্তু হায়, খুঁজে পেলেন না সে কবর! দেখা হলো না দুই ভাইয়ের। নামানো গেল না বুকের ভার। তারপর থেকে প্রায়ই বলতেন, তোমরা কেউ কলকাতা গেলে তনুর কবরটা খুঁজে বের কোরো। বিয়েটাও তো দিতে পারিনি। নেই তার কোনো সন্তান। কে দেবে তার কবরে বাতি? একসময় সাত্তারও পৃথিবী ছাড়লেন। সালাম কি তবে ঢাকা পড়ে যাবেন বিস্মৃতির অতলে?

কোথায় আছে নীল সাদা সিরামিকের কাচ বসানো সালামের সাড়ে তিন হাত জমি? লাইন ধরে ধরে খুঁজেছি। বেশ কতগুলো সালামের কবর পেলাম। তাদের কারও নামের পদবি শিকদার, কারও–বা সরকার বা আহমেদ। নাম মেলে তো পদবি মেলে না। মেলে না চিনিটিকরির কাজের ডিজাইন বা মৃত্যু সাল।

২০১৩ সালে এক সম্মেলন উপলক্ষে আমি ও সাত্তার চৌধুরীর সেজ ছেলে আবরার কলকাতায় যাই। সোনার আমারি হোটেলে ছিলাম আমরা। শুনেছি গোবরা কবরস্থান এই হোটেলের কাছাকাছি। সারা দিনের জন্য ট্যাক্সি ঠিক করা ছিল। উড়িয়া ড্রাইভারকে বললাম, ‘গোবরা কাবারস্তান লে চালো।’ ড্রাইভার বলল, ‘গোবরা মে তিন পুরানি কাবারস্তান হ্যায় কওনসি মে জানা?’ আবরার বলল, ‘প্যাহলে সে শুরু কি জায়ে।’ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ১০টা বাজে। শুরু হলো আমাদের অভিযান। আমার শ্বশুর ও তাঁর ভাইদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল তনু ওরফে সালামের পুরো নাম। শুধু জানি, তাঁর কবর যে মিস্ত্রি তৈরি করেছিল, তাকেই কলকাতা থেকে গোপালগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে একই নকশায় আমার দাদা ও দাদিশাশুড়ির কবর বেঁধেছিল। বড় ভাই মইনুদ্দীন ও তাঁর স্ত্রীর কবরও এই নকশায় বাঁধানো। নকশার নাম চিনিটিকরি। পার্সিয়ান মসজিদগুলোতে এই নকশা বহুল ব্যবহৃত। ঢাকার তারা মসজিদ, কসাইটুলী মসজিদেও আছে সেই কাজ। নকশাগুলো আমার মনে গাঁথা আছে, আর শুনেছি পাকিস্তান সৃষ্টির বছরখানেক আগে মারা গেছেন সালাম। এই তিন সূত্র ধরে খুঁজতে থাকলাম। কোথায় আছে নীল সাদা সিরামিকের কাচ বসানো সালামের সাড়ে তিন হাত জমি? লাইন ধরে ধরে খুঁজেছি। বেশ কতগুলো সালামের কবর পেলাম। তাদের কারও নামের পদবি শিকদার, কারও–বা সরকার বা আহমেদ। নাম মেলে তো পদবি মেলে না। মেলে না চিনিটিকরির কাজের ডিজাইন বা মৃত্যু সাল। প্রথম কবরস্থান শেষ করে দ্বিতীয়টিতে ঢুকলাম। সেখানেও একই হাল। সূর্য তখন মধ্য গগনে। দরদর করে ঘামছি। এরই মধ্যে উৎসাহী একদল নানা বয়সী সঙ্গী জুটে গেল। কিছুক্ষণ পরপর তাদের কেউ চিৎকার দিয়ে ওঠে, ‘মিলগিয়া, মিলগিয়া।’ কাছে গিয়ে দেখি সেটি নয়। কবরস্থানের এক কর্মী জানাল, যখন রেললাইন হয় বেশ কিছু কবর তার নিচে চলে গেছে। ভাবলাম, সালামের অভিমান খুব গাঢ়। দেখা দেবেন না তিনি। আবরার বলল, চলো ফিরে যাই। কেউ একজন বলে উঠল, ‘স্বাধীনতার আগের চিনিটিকরি কাজ করা কবর তিন নম্বর কবরস্থানেই বেশি। এত যখন ঘুরলেন ওটাও দেখে নিন না দিদি।’ ‘তথাস্তু’—চললাম তিন নম্বর গোবরা কবরস্থানে।

১৬১ পার্ক স্ট্রিট: এম এ চৌধুরীদের ছেড়ে আসা নিবাস

সেখানেও বারবার ফলস অ্যালার্ম। অগত্যা ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসা ছাড়া পথ নেই। আবারও সমস্বরে চেঁচাচ্ছে কিছু ছেলেপেলে, ‘পেয়ে গেছি দাদা, আসুন এদিকটায়।’ ভুরুটা আপনা থেকেই কুঁচকে গেল। কিছুটা বিরক্তির সঙ্গেই সে দিকে এগোলাম। কিন্তু একি! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দেখলাম মোটামুটি ঝকঝকে ফলকে লেখা: ‘In memory of our affectionate brother, Abdus Salam Chowdhury who suddenly passed away on the 13th June 1946. May his soul rest in peace. Erected by Moinuddin Chowdhury, Akhtar Uddin Chowdhury and Abdus Satter Chowdhury.’ মনটা ভরে গেল এই ভেবে যে আমার শ্বশুরের বহুদিনের লালিত ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছি। আবদুস সালাম চৌধুরীরও কি দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষ হলো? আমার মনে হলো, তিনিও দীর্ঘ পঁয়ষট্টি বছর ধরে তাঁর পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শুনতে পেলাম যেন তাঁর আদরমাখা কণ্ঠ, ‘এইখানটায়, এই গাছের ছায়ায় এসে বসো।’ দুপুরের তপ্ত রোদের ঝাঁজ নিমেষেই উবে গেল। এর বদলে গাছের মৃদুমন্দ বাতাসে নেমে এল এক নিগূঢ় প্রশান্তি। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে চুপচাপ বসে রইলাম। তারপর স্বর্গীয় এক অনুভূতি নিয়ে রওনা দিলাম হোটেলের উদ্দেশে। ফেরার পথে ট্যাক্সিতে সুনীলের কবিতার লাইনগুলোই আবারও মনে পড়ল, ‘বিষণ্ন আলোয় আমার এই বাংলাদেশ…এ আমারই সাড়ে তিন হাত জমি।’ সুনীলের চাপা বিষণ্নতা আমাকে আবারও ছুঁয়ে গেল। ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেওয়া সুনীলও তো আরেক সালাম। সালাম ভূমি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজের কবিতায়, গল্পে উজ্জীবিত রেখেছেন তাঁর সাড়ে তিন হাত জমির দাবি। সেই মুহূর্তে আমার বড় সাধ হলো মাদারীপুরের মাইজপাড়া গ্রামে সুনীলকে সাড়ে তিন হাত জমি দিয়ে দিতে। সেখানে থাকবে তাঁর স্মৃতিফলক। তার পাশে গড়ে উঠবে একটা গ্রন্থাগার। সে গ্রন্থাগারে থাকবে বিশ্বসাহিত্যের ভান্ডার। প্রতিবছর সেখানে কবিতার সম্মেলন হবে। সেই জায়গা ঘিরে গড়ে উঠবে এক বোদ্ধাগোষ্ঠী।

আমি কিন্তু সেই বুদ্ধিজীবীদের দলে নই, যারা গদগদ হয়ে যান পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতিচর্চার কাছে। যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে চিন্তা–চেতনায় ধারণ করার বিষয়ে যতটা যত্নশীল, তার কিঞ্চিৎ পরিমাণ যদি আল মাহমুদ, গোলাম মোস্তফা, আব্বাসউদ্দীন, আহসান হাবিব বা আশরাফ সিদ্দিকীদের কর্মকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরায় ব্যয় করতেন, তবে আমরা একটা বহুত্ববাদী ও সহিষ্ণু বাংলাদেশ পেতাম। আর এক দল আছেন, যাঁরা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সূত্র ধরে পশ্চিম বাংলার সাহিত্যের স্বাদ আস্বাদন না করেই প্রত্যাখ্যান করেন। আমি তাঁদের দলেরও নই। আমার কাছে সাহিত্য জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাকে জাতীয়তায় বাঁধা যায় না।

গোপালগঞ্জে পাইককান্দিতে আবদুস সালাম চৌধুরীর পিতার একই নকশায় বাঁধানো সাড়ে তিন হাত জমি

আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থার, যেখানে সালাম বা সুনীলের সাড়ে তিন হাত জমি পাওয়ার অধিকার আছে। আবদুস সালাম চৌধুরী, তুমি প্রবল প্রতাপে থাকো কলকাতার মধ্যিখানে, তোমার সাড়ে তিন হাত জমিতে। আর সুনীল, রাষ্ট্রনায়ক আর নায়িকাদের কোনো দিন যদি বোঝাতে পারি, তবে মাদারীপুরে তোমাকে দিয়ে দেব তোমার ‘ছেলে বেলা’, দিয়ে দেব সেই নদী যার ‘শিয়রে ঝুঁকে পড়ে মেঘ’, যেখানে ‘শিমুল তুলোরা’ ওড়াউড়ি করে, দিয়ে দেব কোনো ‘ভুবন ডাঙ্গার মাঠ’, যা তুমি দিতে চাও ‘নবীন কিশোর’কে।