দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচাইতে ভয়াবহ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে হয়েছে তুমুল লড়াই। ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী এই যুদ্ধে পরিবর্তন হয়েছিলো মানুষের সমাজ কাঠামো, বদলে গিয়েছিলো বিশ্বরাজনীতি। এই মহাসমরকে বিশ্বযুদ্ধ বলার কারন হচ্ছে, পুরো বিশ্বেই এর প্রভাব পড়েছে। যে সকল রাষ্ট্র যুদ্ধ করেছে, তারা তো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেই, সেই সাথে তৎকালীন বিশ্বের প্রায় সকল স্বাধীন রাষ্ট্র ও পরাধীন কলোনীর মানুষ এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ভুগেছে। এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো ইউরোপ থেকে, সেখান থেকে ছড়িয়েছে আফ্রিকা থেকে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রসংগ আসলেই অবধারিত ভাবে চলে আসে হিটলারের নাম। বলা যেতে পারে বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে ঘৃণিত নাম হচ্ছে হিটলার। এখানে আমরা তাঁর জন্ম-পরিচয় ও জার্মান জাতির ভাগ্য বিধাতা হিসেবে তাঁর উথ্থানের পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস করবো।
হিটলারের পুরো নাম হচ্ছে অ্যাডলফ্ হিটলার । তাঁকে বলা হয় “Evil Genius”। প্রাতিষ্ঠানিক উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো শিক্ষা না থাকলেও, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সামান্য এক কর্পোরাল থেকে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ক্ষমতার পাদপ্রদিপে আসা বা সামান্য কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি পানশালায় গঠিত নাৎসি দলকে দশ বছরের মধ্যে জার্মানির প্রধান দলে পরিনত করা, হিটলারের উদ্যম, পরিশ্রম, সাংঘঠনিক ক্ষমতা ও ব্যাক্তিত্ত্বকে অস্বীকার করার উপায় একদমই নেই। ত্রিশের দশকের শেষের দিকে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হন। আমৃত্যু তিনি জার্মানির ফ্যুয়েরার বা নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বস্তুত, তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জার্মানির “Great Dictator” বা একনায়ক ছিলেন। তাঁর দলের নাম ছিলো National Socialist German Workers Party। যা প্রথম শব্দের Na এবং জার্মান শব্দের sozialist এর zi থেকে এসেছে নাৎসি পার্টি বা ইংরেজিতে Nazi পার্টি (মূলত জার্মান ভাষায় z এর উচ্চারণ অনেকট ইয়াৎস এর মতো)। আমরা অনেকেই হিটলারের দল সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা করে থাকি আর তা হলো আমরা মনে করি যে, ফ্যাসিস্ট পার্টিই হচ্ছে হিটলারের দল। আসলে তা ঠিক নয়।
ফ্যাসিস্ট পার্টি ছিলো ইতালির একনায়ক বেনিতো মুসোলিনীর দল, যাদের রাজনৈতিক আদর্শ নাৎসি পার্টির মতোই ছিলো। এই মুসোলিনী আবার হিটলারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রও ছিলেন।মুসোলিনীর নেতৃত্বেই ইতালি অক্ষ শক্তিতে যোগদান করে।বস্তুত, গনতন্ত্রে যেমন জনগনের জন্য রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে তেমনি ফ্যাসিবাদ ও নাৎসীবাদের মূল ছিলো রাষ্ট্রের জন্য জনগন। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক গনতন্ত্রের মতো জনগন ছিলো না এবং অনেকটা এক দেশ, এক দল , এক নেতা এই রকম একটা ব্যাপার। যাহোক, অসাধারন বাগ্মিতা ও বর্জ্রসম ব্যাক্তিত্ব দিয়ে হিটলার পরিচালিত করেছিলেন সমগ্র জার্মান জাতীকে। তাঁর ইস্পাতসম মনোবলের সামনে এসে কুকড়ে যেতো দুঁদে জেনারেল, ফিল্ডমার্শালরা। তাঁর অঙ্গুলী হেলনে লাখ লাখ জার্মান ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট থেকে ইস্টার্ন ফ্রন্টে, আফ্রিকায়। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও লোকরন্জনবাদ ছিলো তাঁর রাজনীতির মূল হাতিয়ার। সুমহান আর্য নর্ডিক জাতীর গরিমা প্রকাশ ছিলো এর ভিত্তি।পাশাপাশি ইহুদী জাতীর প্রতি তীব্র বিদ্বেষ ও এর অন্যতম অংশ ছিলো। তিনি মনে করতেন জার্মান জাতীই একমাত্র বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী। তাই কেবলমাত্র তাঁদেরই অধিকার আছে বিশ্বের অন্যান্য নিচু জাতীর (হিটলারের মতে) উপর প্রভুত্ব করার।কমিউনিজম ও গনতন্ত্রকেও দারুন ঘৃণা করতেন হিটলার। তিনি নিজের এই অদ্ভুত রাজনৈতিক মতাদর্শের উপর একটা বই লিখেছিলেন, “মাইন ক্যাম্ফ” বা “আমার সংগ্রাম” নামে। পৃথিবীর বহু দেশে যা একটা সময় নিষিদ্ধ ছিলো বা হয়তো এখনও নিষিদ্ধ আছে।
হিটলারের জন্মপরিচয় জানতে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ঊনিশ শতকের শেষ দিকে অস্ট্রিয়ায়।মূলত অস্ট্রিয়ান ও জার্মানদের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত অনেক মিল ছিলো। আর হিটলারের বাল্যকালটা কেটেছে অস্ট্রিয়া-জার্মান সীমান্তবর্তী এক গ্রামে। সেখানকার অধিবাসীদের আনুগত্য ছিলো জার্মান কাইজারের প্রতি। সেইদিক থেকে দেখতে গেলে হিটলার জার্মান ছিলেন না, ছিলেন অস্ট্রিয়ান। অবশ্য তিনি সমগ্র জার্মান ভাষাভাষীদেরকে (ইহুদী বাদে) এক জাতীই মনে করতেন। তাঁর পরিবারে কোনো কৌলিন্য বা গৌরব ছিলো না, বরং অশিক্ষা ও দারিদ্র্যে ভরপুর ছিলো। বলতে গেলে, একেবারে সমাজের নিম্ন স্তরের ছিলো। হিটলারের পিতামহ ছিলেন জোহান হেডলার। তিনি ছিলেন কিছুটা ভবঘুড়ের মতো।মাঝে মাঝে ছোটখাটো ব্যবসা করতেন, তেমনটা লাভ করতে পারতেন না।
কিছু টাকা পয়সা হাতে আসা মাত্র নিজের ঘোড়ায় টানা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়তেন, সাথে থাকতো নিজের একটা ছোট্ট সুটকেস যেটার অর্ধেকটাই ভরা থাকতো অস্ট্রিয়ার নানা রকম ভৌগলিক তথ্যপূর্ণ কাগজপাতি দিয়ে। তো এই জোহান বিয়ে করেন মেরি অ্যান নাম্মী এক পল্লী বালাকে। তাঁদের সংসারে শুরু হয় অশান্তি, কারন জোহানের সাথে বিয়ে হওয়ার পাঁচ বছর আগেই মেরির অবিবাহিত অবস্থায় একটি সন্তানের জন্ম হয়েছিলো। এই সন্তানের নাম ছিলো এলিস (Alois)। জোহান মানতে পারেন নি এলিসকে, যার রেশ ধরে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।কিন্তু আনা আশ্রয় লাভ করেন জোহানের ছোটভাই নেপমাক হেডলারের ঘরে।কোনো অজ্ঞাত কারনে নেপমাক মেরিকে শিশুপুত্রসহ সহজেই গ্রহন করেন এবং শিশুটিকে দত্তক নেন।এইভাবে পিতৃপরিচয়হীন শিশু এলিস হেডলার পদবীধারী হয়। এই এলিস যৌবনে কাস্টমস বিভাগে সামান্য পোস্টে চাকুরী শুরু করেন। খুব একটা উন্নতি কখনই করতে পারেন নি।একাধিক বিয়েও করেছিলেন। এই এলিসের তৃতীয় স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান হলেন এডলফ হিটলার। ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল এডলফের জন্ম হয়।এর আগে গুস্তাভ ও ইভা নামের তাঁর দুই ভাইবোন ছিলো কিন্তু তাঁরা শৈশবেই মারা যায়।পরবর্তীতে এডলফ হয়তো তাঁর পদবী অল্প পরিবর্তন করে হিটলার রাখেন এবং এই নামে জগতে কুখ্যাত-বিখ্যাত হন।
তিন স্ত্রী ও সাত সন্তান নিয়ে এলিসের ছিলো বিশাল পরিবার। ছোটো একটা ঘরে এত সদস্যের কারনে সবসময় হইচই লেগেই থাকতো। জীবনের শেষদিকে এসে এলিস যেনো আরোও খিটমিটে হয়ে ওঠেন। প্রায়ই মদ্যপান করে এসে স্ত্রী-সন্তানদের মারধোর করতেন ফলে সন্তানরা বাবাকে ভয় পেয়ে এড়িয়ে চলত, স্ত্রীরা ঘৃণা করতো।এরকম পরিবেশে বড় হতে থাকলেন এডলফ। ছোটোবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ভীষণ জেদী, রগচটা ও একগুয়ে। কোনো বিষয়ে লক্ষ্য স্থির করলে তা করার চেস্টা করতেন। কারোর সাথে মতানৈক্য হলে রেগে উঠতেন।ছয় বছর বয়সে তাকে স্থানীয় স্কুলের প্রথম গ্রেডে ভর্তি করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তার পরিবার ল্যাম্বাস শহরে স্থানান্তরিত হলে তিনি সেখানকার গীর্জার স্কুলে ভর্তি হন।ধারণা করা হয়, ছাত্রজীবনে এডলফের মধ্যে উগ্র জাত্যাভিমানের বীজ বপন করেছিলেন তার স্কুল জীবনের একজন শিক্ষক, যাঁর নাম ছিলো লিওপোল্ড। তাঁর কাছ থেকেই জার্মান জাতীর গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস জানতেন এডলফ। বিসমার্ক, ফ্রেডেরিক দ্যা গ্রেট প্রমুখ জার্মান বীরদের বীরগাথা কিশোর এডলফ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতেন। গীর্জার দেয়ালে ঝোলানো স্বস্তিকা চিহ্নকে শ্রদ্ধাভরে হাকেনক্রুজ উচ্চারণ করেন। পরবর্তীতে তাঁর শাসনামলে জার্মানীর জাতীয় প্রতিক হয়ে ওঠে এই স্বস্তিকা চিহ্ন।
বাবা এলিস চাইতেন তার কনিষ্ঠ পুত্র কাস্টমস বিভাগের ছোটখাটো চাকুরে হোক। সেভাবেই গড়ে উঠুক সে। কিন্তু বালক এডলফের দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিলো যে তিনি একজন বড় শিল্পী হবেন। ছবি আঁকাতে তাঁর ছিলো বিশাল আগ্রহ।বাবার সাথে এ নিয়ে বেশ বচসা হয় বালক এডলফ এর। কিন্তু বাবার সাথে কিছুতেই একমত হতে পারে না বালক এডলফ।মাত্র তের বছর বয়সেই বাবাকে হারান এডলফ।তারপরই তাকে স্কুল ছাড়তে হয়। তারপর মা কে নিয়ে অস্ট্রিয়ার লিন্জ শহরে চলে আসেন এডলফ। তখন তাঁর স্বপ্ন বড় আর্টিস্ট হওয়ার।চেষ্টা করলেন আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সেখানে নির্বাচিত হলেন না। এডলফ ছবি আকতে পারতেন, ছবি হতো। কিন্তু শিল্প হতো না। তিনি যে কোনো ছবি নিঁখুত নকল আঁকতে পারতেন কিন্তু নিজের নতুন কিছু আঁকার বিদ্যা বা প্রতিভা হয়তো তার ছিলো না। এরমধ্যে আঠার বছর বয়সে তাঁর মা ও মারা যান।এরপর শুরু হয় এডলফের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। তিনি নিজেই লিখেছেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়টা ছিলো ১৯০৯ সাল থেকে ১৯১৩ সাল। এসময় জীবিকার জন্য এমন কোনো কাজ করতে বাকি রাখেন নি। কখনও দিন মজুরের কাজ করেছেন তো কখনও মেয়েদের ছবি একে তা বিক্রি করেছেন।এসময় তার তেমন বন্ধুর কথা জানা যায় না। তবে হ্যানিচ নামে এসময় তাঁর একবন্ধু ছিলেন । তাঁরা একই সাথে থাকতেন। তাঁর মতে, এসময় অত্যান্ত নোংরা ও দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাতেন এডলফ।অর্থের জন্য যে কোনো সৎ কাজ করতেন তিনি আর একটু টাকা জমলে ক্যাফেতে গিয়ে পত্রিকা মনযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়তেন তিনি। পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়াশোনা করতেন ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজনীতি নিয়ে।আর এর সাথে চলতো তাঁর উদ্ভট সব পরিকল্পনা।এ সময় থেকেই বেশ রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠেছিলেন এডলফ। প্রায়ই হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করে উদ্ভট বক্তৃতা দিতেন। এর ফলে পরিচিতজনরা তাঁকে নাটুকে নেতা বলে বিদ্রুপ করতেও ছাড়তেন না। তাঁর মতের সাথে কেউ একমত না হতে পারলেই ভিষণ রেগে যেতেন।
এডলফ নকল ছবি আঁকতেন ও হ্যানিচ বাজারে গিয়ে তা বিক্রি করতেন। এর মধ্যে ভিয়েনা পার্লামেন্ট ভবনের একটি ছবি আঁকেন এডলফ। তাঁর মতে এটাই তাঁর সেরা সৃষ্টি। তো হ্যানিচ তাঁকে না বলে তাঁর ছবিটি বাজারে বিক্রি করে দেয়। ফলে মারাত্মক রেগে যান এডলফ। থানায় অভিযোগ করেন হ্যানিচের নামে। হ্যানিচ ধরা পড়লে এক সপ্তাহের জেল হয়। এইভাবে তার সাথে এডলফের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায়।এরপর তিনি জার্মানির মিউনিখে যান।সেখানেও অনেক ক্লেশে তাঁর জীবন কাটাচ্ছিলেন। এই মিউনিখ থেকেই ভবিষ্যতে একদিন তাঁর উথ্থান হয়।পরবর্তীতে আবার অস্ট্রিয়ায় ফিরে আসতে বাধ্য হন।এর মধ্যে বেজে ওঠে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা।দলে দলে তরুন, যুবা যোগ দেয় যুদ্ধে। এসময় এডলফের মধ্যে সেনাবাহিনীতে যোগদানের ইচ্ছা জেগে ওঠে। কিন্তু অস্ট্রিয়ান সেনবাহিনীতে যোগদানের কোনো ইচ্ছাই তাঁর ছিলো না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও তিনি অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন। কিন্তু অযোগ্যতার দরুন বাদ পরেন সেখানে। পরবর্তীতে জার্মানির ব্যাভেরিয় রেজিমেন্টে ভর্তি হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতির আবেদন করেন। পরে অনুমতি লাভ করেন। এভাবে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে খাঁটি জার্মান বনে যান এডলফ। তাঁর রেজিমেন্টের ডাকনাম ছিলো কমান্ডিং অফিসার কর্নেল ভন লিস্টের নাম অনুসারে “লিস্ট রেজিমেন্ট”।প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে তাঁর ইউনিটকে রনাঙ্গনে প্রেরন করা হয়।ঘিলুভেল্টে তখন ব্রিটিশদের সাথে জার্মানদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। এতদিনে এডলফ সত্যিকারের যুদ্ধের স্বাদ পেলেন। যুদ্ধে তার ইউনিটে হতাহত হয় অনেক। কিন্তু তিনি রনাঙ্গনে অধিনায়কের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেস্টা করতেন। রণাঙ্গনে দারুন সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি কর্পোরাল পদে প্রমোশন পান।এরপর তাঁর ইউনিটকে ফরাসীদের বিরুদ্ধে রনাঙ্গনে নামানো হয়। এখানে ও দারুন বীরত্ব দেখান এডলফ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হচ্ছে প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্যে তিনি একজন আহত অফিসারকে কাঁধে করে নিরাপদে ফিরিয়ে আনেন। বেশ কয়েকবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। ফলে তাঁর সহযোদ্ধাদের ধারণা জন্মে যে এডলফের সাথে হয়তো কোনো অলৌকিক ব্যাপার আছে। হয়তো নিয়তিই তাঁকে বাচিয়ে রেখেছিলো পুরো বিশ্বকে ভবিষ্যতে কাঁপিয়ে দেয়ার জন্য।
একটা সময়ে তাঁর রেজিমেন্টের প্রায় তিন হাজার সৈন্যের মধ্যে মাত্র ছয়শো সৈন্য জীবিত থাকে।যুদ্ধে কৃতিত্ব দেখানোর জন্য তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীর আয়রন ক্রস লাভ করেন। এরমধ্যে তাঁর পায়ে গুলি লাগে, তাঁকে বিলিৎজ ফিল্ড হাসপাতালে পাঠানো হয় শুশ্রুষার জন্য। কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নে যুক্ত করা হয়।এর ফলে তিনি রণাঙ্গন থেকে দূরে থাকেন। এসময় তিনি যুদ্ধাহত জার্মান সেনাদের আহজারী ও জার্মান জনগনের দুর্দশার চিত্র কাছ থেকে দেখে মর্মাহত হন।এজন্য তিনি আবেদন করেন যেনো তাঁকে অগ্রবর্তী অবস্থানে পাঠানো হয়।পরবর্তীতে ব্রিটিশদের সাথে ভয়াবহ দুটি যুদ্ধে অংশ নেন।সেখানেও তিনি বেশ বীরত্ব দেখান।একবার এডলফ একা এক বাংকারে অবস্থানরত ফরাসী সৈন্যদের আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করেন। তিনি বাংকারে কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলেন যে তাদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে ধরা না দিলে সবাইকে হত্যা করা হবে।ফরাসি সৈন্যরা বুঝতে না পেরে সবাই আত্মসমর্পন করে।১৯১৮ সালের আগস্টে তিনি আয়রন ক্রস ফার্স্ট ক্লাস অর্জন করেন। এটা ছিলো এক বিশাল অর্জন এডলফের জন্য। কারন এই পদক সবাই পেতেন না। সাধারন সৈনিক, নন কমিশন্ড অফিসার তো দুরের কথা বড় বড় অফিসাররাও হাতে গোনা কয়েকজন পেয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে এডলফের মর্যাদা ও সম্মান বেড়ে যায়। তিনি তাঁর এ পদকগুলোর জন্য সবসময়ে গর্ব করতেন এবং চ্যান্সেলর হওয়ার পরও পদক গুলো সবসময় পড়তেন। যুদ্ধের অবসরে সেনাশিবিরে সহযোদ্ধাদের নিয়ে ছোটখাটো সভা বসাতেন হিটলার। সেখানে হাত পা ছুঁড়ে তাদের বোঝাতেন কিভাবে মার্ক্সিস্ট ও ইহুদীরা জার্মান জাতীর অনিষ্ট করছে।১৯১৮ সালে যুদ্ধের শেষভাগে তাঁর ইউনিটের উপর গ্যাস আক্রমন করে ব্রিটিশরা। এডলফ এই গ্যাস আক্রমনে আক্রান্ত হন। তাঁকে পাসওয়াক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই তিনি জার্মানির পরাজয়ের খবর পান বৃদ্ধ পাদ্রীর কাছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে আহত সৈনিকদের কাছে জার্মানির পরাজয়ের খবর দেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির এমন পরাজয়কে মেনে নিতে পারেন নি এডলফ। এর পেছনে তিনি ইহুদীদের চক্রান্তকেই সাব্যাস্ত করেন। প্রচন্ড কষ্ট পান তিনি জার্মানির এমন অসহায় আত্মসমর্পনে মিত্র বাহিনীর কাছে।হতাশাগ্রস্ত, যুদ্ধপীড়িত পুরো জার্মান জাতী। এভাবেই তৎকালীন বিশ্বব্যাপী প্রায় এক কোটি নব্বই লাখ সৈন্য সহ তিন কোটি সত্তর লাখ সাধারন মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হোলি খেলা। পরাজিত জার্মানির সর্বত্র বিশৃঙ্খলা, রাহাজানি। রাজতন্ত্রের পতন হয়। বেকারত্ব, মূদ্রাস্ফীতি, খাদ্যাভাব, অরাজকতা চলছে সারা জার্মানি জুড়ে। মিত্রবাহিনীর চাপিয়ে দেয়া ক্ষতিপূরনের বিরাট অংকের অর্থ দিতে হিমশিম খায় জার্মানি।এর মধ্যেই সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন এডলফ।বিপর্যস্ত জার্মান জাতীর দুর্দশা দেখে তিনি ব্যাথিত। ঠিক করেন, রাজনীতি করবেন দেশ ও জাতীর জন্য। জার্মান জাতীকে পূর্বের মর্যাদাপূর্ন অবস্থানে পৌছে দেওয়াই হবে তাঁর জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এভাবেই ভবিতব্য ঠিক হয়ে যায় এডলফ হিটলারের। ভবিষ্যতে পুরো পৃথিবীকে আরোও একবার কাঁপিয়ে দিতে তিনি আসছেন ।