আজ সারাদিন নারায়ণীর উপবাস। বিয়ের মূল অনুষ্ঠানের দিন নাকি কিছুই খাওয়া যাবে না। সন্ধ্যেবেলায় লগ্ন। দু হাতে পানপাতা দিয়ে চোখ ঢেকে দাদাদের বয়ে নিয়ে যাওয়া পিঁড়িতে বসে নারায়ণী প্রথমবারের মতো স্বামীর মুখ দেখতে পেলেন। যেনো সাক্ষাৎ কার্তিক ঠাকুর! মিহি জরির সুতায় চওড়া পাড়ের লাল শাড়িতে তাকেও লাগছিলো অপ্সরীর মতোনই। ওদিকে স্বামী দেবতা তো চোখই ফেরাতে পারছিলেন না। নারায়ণীর হাতে সোনার কাঁকন, গলায় সীতাহার, মিষ্টি ছোটো নাকে নাক ফুল। আক্ষরিক অর্থে তাকে তার বাবা সামর্থ্যের বেশি গয়না দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। প্রায় তিন হাজার রুপি যৌতুক দেবার কারণেই এমন কেষ্ট ঠাকুরের মতো বর পেয়েছিলেন নারায়ণী। আর নারায়ণীর ছোটবেলার শিক্ষা তো শুধু বলে, সীতার মতো সতী হতে হবে তাকে। ছিলেনও তিনি তেমনই। ভালোই যাচ্ছিলো তার সংসার জীবন, একদম স্বপ্নের মতো।

নারায়ণীর স্বামী কোম্পানির অফিসে চাকরি করেন। সাহেবদের সাথে উঠা-বসা। কোম্পানির তত্ত্বাবধানে তৈরী হচ্ছে বিরাট এক সেতু। দেখাশোনা ও মালামালের হিসেব রাখতে হয় তাকে। তিন দিনের জন্য গিয়েছিলেন কর্মক্ষেত্র পরিদর্শনে। সেখানে গিয়ে হঠাৎ জ্বর। ব্যস, সেই জ্বর থেকে আর ওঠা হয় নি তার। সোজা নদীর তীরে চিতায় জায়গা হলো নারায়ণীর স্বামীর। নারায়ণীর স্বপ্নের মতো সংসার চুরমার হয়ে গেলো। শুকনো খড়, ডালপালা দিয়ে চিতায় দ্রুত আগুন ধরানোর ব্যবস্থা করা হলো। প্যারাফিন নয়, ঘি ঢালা হলো নারায়ণীর স্বামীর শরীরে। পুরোহিত মন্ত্র পড়তে লাগলেন। নারায়ণীর দেবর চিতার মুখে আগুন দেবার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃতদেহ পোড়ানোর গন্ধ এসে নাকে লাগলো নারায়ণীর। সব শেষ হয়ে গেলো নিমিষেই। তার সব স্বপ্ন হঠাৎ করেই কর্পুরের মতো মিলিয়ে গেলো।

আয়া সংস্কৃতিঃ সংগ্রামী নারীদের দুইজন

১৮৮০ সালের দিকে ব্রিটিশ মালিকের বাচ্চা নিয়ে দুইজন আয়া

নারায়ণী কাজ পেলেন তারই স্বামীর মনিবের বাড়িতে। তার কাজ স্টিফেন সাহেবের সন্তানদের দেখাশোনা করা। তাদের খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, গোসল করানো সবকিছুই তার দায়িত্বে। এ ধরনের কাজকর্মের জন্য ভারতবর্ষের যে সব মহিলা ও পুরুষদের নিয়োগ দেয়া হতো, তাদেরকে ডাকা হতো যথাক্রমে ‘আয়া’ ও ‘খানসামা’ বলে। ‘আয়া’ একটি পর্তুগীজ শব্দ, যার অর্থ ‘শিশুর পরিচারিকা’ এবং ‘খানসামা’ হলো ফারসি শব্দ, যার অর্থ ‘ভৃত্য’ বা ‘পরিচারক’। ব্রিটিশদেরও বহু আগে থেকে ভারতবর্ষে বিদেশীদের ঘরে ঘরে আয়া ও খানসামা রাখার প্রচলন ছিলো। সামান্য গৃহকর্মী হলেও একমাত্র নারায়ণীই ঐ বৃটিশ পরিবারের মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়ালেন। পরিবারের শিশুদের হাসিখুশি রাখা ও মনোরঞ্জনের জন্য নানারকম বিনোদনমূলক কাজও করতে হতো তাকে। বিকাল হলে শিশু দুজনকে মাঠে নিয়ে ঘুরিয়ে আনতে হতো। সে সময় আশেপাশের বাড়ির আয়াদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। সেখান থেকেই তিনি জানতে পারেন যে, ব্রিটিশ নাগরিকরা ভারতবর্ষ ও অন্যান্য দেশ থেকে হাজার হাজার মহিলাকে লন্ডনে নিয়ে গিয়েছে আয়া হিসেবে।

প্রথম দিকে বাইরে থেকে ভারতবর্ষে যারা আসতেন, তারা কেউই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসতেন না। কারণটা ছিলো পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা, দুর্ভিক্ষ, নানান ধরনের ছোঁয়াচে রোগ, খরা, বন্যা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা। অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ভারতবর্ষে আসবার সময় অনেকেই অনেক ধরনের বিপদে পড়েছেন। পথিমধ্যে আফ্রিকা হয়ে আসবার সময় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় ভীত হয়ে থাকতেন বিদেশীরা। তার ওপর জলদস্যুদের উৎপাত তো আছেই। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতবর্ষের অপার সম্ভাবনা ও অঢেল সম্পদ বিদেশীদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসলো। এর মাঝে সুয়েজ খাল কাটা হলো। আবিষ্কৃত হলো স্টীম ইঞ্জিন। বিশাল দূরত্ব কিছুটা কমে ভারতবর্ষে আসবার পথও ছোট হয়ে গেলো। তাই একটা সময় পর সবাই-ই নিজেদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতবর্ষে এসে বসবাস করতে শুরু করেন।

অধিকাংশ ব্রিটিশ রমণীরা নিজ দেশে থাকাকালীন তো আর বহুকাঙ্ক্ষিত ভিক্টোরিয়ান জীবনযাপনের স্বাদ পেতেন না, সেখানে নিজের সংসারের দায়িত্ব নিজেদেরকেই নিতে হতো। তাই ভারতবর্ষে এসে যখন তারা সস্তায় পেয়ে যাওয়া এই ‘আয়া সংস্কৃতি’ এর সাথে পরিচিত হলেন, তখন সেই ভিক্টোরিয়ান জীবনের সুযোগ কেউ আর হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তারা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরাম-আয়েশে জীবন কাটাতেন। সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব তাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব ছিলো না। তাদের সময় কাটতো স্বামীদের অফিসিয়াল পার্টি তদারকি করে, থিয়েটারের আনন্দে গা ভাসিয়ে এবং বল নাচের ফ্লোরে অসাধারণ নৃত্য প্রদর্শন করে।

আয়া সংস্কৃতিঃ সংগ্রামী নারীদের একজন

কর্নেল ব্লেয়ার তার পরিবার এবং একজন ভারতীয় আয়ার সাথে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। একদিন বিকেলে মাঠে বাচ্চাদের ঘোরাতে নেবার সময় নারায়ণী তার বন্ধুদের কাছে শুনলেন, বিশ্বে যুদ্ধ লেগেছে। ভারত থেকে অনেকেই নাকি ইংল্যান্ডে ফেরত চলে যাচ্ছে। অনেক আয়া তাদের পুরাতন মনিবকে শুধুমাত্র সঙ্গ দেওয়ার জন্য তাদের সাথে জাহাজে করে ইংল্যান্ড চলে গিয়েছেন। নারায়ণীর খুব অবাক লাগলো শুনে। মনে মনে প্রমাদ গুনলেন তিনি। কে জানে, তার মনিব কি সিদ্ধান্ত নিবেন? তা ছাড়া সমুদ্রপাড়ি দিলে তো ধর্মনাশ হয়ে যায় তার ধর্মে। তবে কেনো চলে যাচ্ছে সেসব আয়ারা? নারায়ণীর মনে হাজারো প্রশ্ন আর আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে।

দরিদ্র এই ভারতবর্ষে নারায়ণীর চেয়েও দরিদ্র অসংখ্য রমণী কখনো আরো টাকা উপার্জন করার জন্য, কিংবা কখনো মনিবের পরিবারকে ভালোবেসে ধর্মনাশের এই ভয়কে উপেক্ষা করে বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন। তবে এই লম্বা যাত্রায় শুধু ধর্ম হারাবার ভয়ই ছিলো না, ছিলো এর চেয়েও বড় বিপদ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, জাহাজে পানি উঠলে আয়াদেরকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হতো জাহাজের ভার কমানোর জন্য। জাহাজের ভার কমানোর এই পদ্ধতির কারণে অসংখ্য আয়াই বেঁচে থাকার অধিকারটাও হারিয়ে ফেলেছিলেন।

এদিক দিয়ে নারায়ণী অবশ্য সৌভাগ্যবতী ছিলেন। তিনি যে পরিবারে কাজ করেন, সেই পরিবার থেকে তিনি ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছেন। তার মনিব নিষ্ঠুর ছিলেন না। আবার নারায়ণী নিজেও তো ভীষণ একা, তার অভিভাবক বলতে কেউ নেই। এই ব্রিটিশ পরিবারটির কারণেই তিনি নিজের সব দুঃখ ভুলে বেঁচে থাকতে পারছেন। এসব কারণেই এই পরিবার ছেড়ে থাকতে চান না তিনি নিজেও। কিন্তু ধর্মনাশ হয়ে গেলেও তো সমস্যা। নারায়ণী ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় পড়লেন।

অবশেষে নারায়ণীর ভাগ্যেও লেখা হলো সমুদ্রপাড়ি দেয়া। ধর্মনাশের বিষয়টি উপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। গুজরাটে পৌঁছলেন তিনি সাহেব পরিবারের সাথে। জোয়ার আাসার পর জাহাজ ছাড়বে। মধ্য রাত হয়ে যাবে জাহাজ ছাড়তে ছাড়তে। ঘাটে পৌঁছাবার পরে এক্কা গাড়িতে করে আসা মালামাল তোলা হলো জাহাজে। ঘাটে প্রচন্ড ভিড়। জাহাজের সারেং, সাহেবের আত্মীয়। বেশ আপ্যায়ন করেই উপরের ডেকে নেয়া হলো তাদেরকে। মালপত্র বহন করার লোকদের বিদায় দেয়া হলো। আগামী ছয় মাস এই জাহাজই হবে নারায়ণীদের ঘরবাড়ি। দূর থেকে ঘাটে মানুষের কোলাহল ও আরো অনেক ধরনের শব্দ ভেসে আসছিলো নারায়ণীর কানে। ভেতরে ভেতরে তিনি কিন্তু তখনও ভীষণ চিন্তিত।

বন্ধুদের কাছে নারায়ণী গল্প শুনেছিলেন, অনেক আয়াই ছয় মাস ধরে সাত সাগর তেরো নদী পার হয়ে ধর্মনাশের শঙ্কা মাথায় নিয়ে ব্রিটেনে গিয়ে চাকরি করার পর প্রচুর টাকা উপার্জন করে দেশে ফিরে এসেছেন। আবার অনেকেই নাকি ঐ তথাকথিত সভ্য ইংরেজ জাতির কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব ও কর্পদকহীন হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। যাদের কঠোর পরিশ্রমে ব্রিটিশদের জীবন সুন্দর হয়েছিলো, সন্তান লালন-পালন জলের মতো সহজ হয়েছিলো, সেই আয়াদেরকেই মানুষ হিসেবে ন্যূনতম মূল্য দেয় নি অনেক ব্রিটিশরা। তাদের কাছে আয়ারা ছিল অস্পৃশ্য।

অসহায় আয়াদের মধ্যে যারা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন নি, তারা কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ব্রিটেনেই থেকে যান এবং ভাড়ার অভাবে ফুটপাতেই না খেয়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেন। ভিক্ষা করে জীবন চালাতেও বাধ্য হন অনেকে। মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে পাওয়া টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য ওখানকার সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতেন তারা। এমনই কষ্টের মধ্যে কেটেছিলো তাদের দিনগুলো। পরবর্তীতে এলিজাবেথ রাজর্স নামে একজন নারী একটি হোম প্রতিষ্ঠা করেন তাদের জন্য, যার নাম দেয়া হয়েছিলো ‘আয়াস হোম’। এখানে সমস্ত লাঞ্ছিত-বঞ্চিত আয়াদের বিনা খরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এমনকি তাদের কাজেরও ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এই আশ্রয়কেন্দ্রকে স্থানীয় গীর্জা থেকে অনুদান দেয়া হতো।

আয়া সংস্কৃতিঃ সংগ্রামী নারীদের গল্পের একজন

১৮৭০-এর দশকের একজন ভারতীয় আয়া’র ছবি। সৌজন্যে: বোর্ন অ্যান্ড শেপার্ড, ব্রিটিশ লাইব্রেরি অনলাইন গ্যালারি

স্ট্যাডলার জানান, স্থানীয় গীর্জার সাহায্য করবার প্রধান কারণ হলো, এই আয়াদেরকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা। পরে ১৯০০ সালে ‘আয়াস হোম’ এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নেন খ্রিস্টান গোষ্ঠী লন্ডন সিটি মিশন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এতো বছর পর এখনো লন্ডনের সেই ভবন যেখানে আয়ারা থাকতেন, সেখানে তাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নীলফলক লাগানো আছে। এই নীলফলক শুধুমাত্র বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাড়ির বাইরেই লাগানো হতো, যেনো বাইরে থেকে দেখে সহজেই যে কেউ বুঝতে পারে, এখানে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি থাকতেন। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, বি. আর. আম্বেদকারসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে এই নীলফলক দিয়ে সম্মান জানানো হয়েছিলো। সেই একই সম্মান এই আয়াদেরকেও দেয়া হয়েছিলো।

ইংল্যান্ডে থাকা অবস্থায় গথিক পড়ে নারায়ণী জানতে পেরেছিলেন, ১৯২৬ সালে একজন ভারতীয় আয়া দু জন ব্রিটিশ রমণীর সাথে ইংল্যান্ডে পৌঁছান। ম্যারিয়ান নামের সেই আয়া এর আগেও পাঁচ বার ভারতবর্ষ ছেড়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে আয়ার কাজ করেছিলেন। ইংল্যান্ডে পৌঁছবার পরে দুই বোন স্কট ও ওয়ার্নারের কাছে তিনি তার পারিতোষিক চান। তারা পারিতোষিক না দিয়ে উলটো ম্যারিয়ানের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে ওখানকার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করেন। ম্যারিয়ান ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সেই দুই বোনের সঙ্গে প্রচন্ড যোগ্যতার সাথে লড়েছিলেন। ম্যারিয়ান বলেছিলেন, তিনি যদি ঐ জিনিসগুলো চুরি করতেন, তাহলে অবশ্যই তল্লাশি করে তার কাছে সেগুলো খুঁজে পাওয়া যেতো, কিন্তু সেগুলো কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে যেহেতু এই চুক্তিটি ভারতবর্ষে হয়েছিলো, তাই ম্যাজিস্ট্রেট এর সমাধান দিতে অপারগ ছিলেন।

পরবর্তীতে জাহাজের ক্যাপ্টেন ম্যারিয়ান সম্পর্কে একটি সনদ দিয়েছিলেন যে, তিনি অত্যন্ত সভ্য একজন মহিলা এবং ছয় মাস জাহাজে অবস্থানকালেও তার মধ্যে ব্যতিক্রম কোনো ব্যবহার তিনি দেখেন নি। এই সনদ ম্যারিয়ানের অধিকার অর্জনে তাকে সহায়তা করেছিলো। পরবর্তীতে তিনি এবং তার ছেলে জাহাজে করে ভারতবর্ষে ফিরে যান। এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, দরিদ্র দেশের এই আয়ারা তাদের অধিকার ও সম্মান রক্ষার জন্য যে কোন সমস্যা মোকাবেলা করবার সাহস রাখতেন।

আয়া সংস্কৃতিঃ সংগ্রামী নারীদের গল্প আয়া

জর্জ আর. সিমস (1901) এর ছবিতে লন্ডনে আয়া দের থাকার স্থান।

সেই প্রাচীনকাল থেকেই অভিবাসন প্রক্রিয়া চলে আসছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে গিয়ে নিম্নবিত্তরা অর্থ উপার্জন করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এর মাঝে দুর্ভাগ্যবান কেউ কেউ জুলুমের শিকারও হচ্ছে। আজও আমাদের দেশের অভিবাসী মহিলা ও পুরুষদের দুর্ভোগের গল্প আমরা শুনে থাকি। কিন্তু তাই বলে কি অভিবাসন থেমে যাবে? এ তো সম্ভব নয়। বিশ্বায়নকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারবো না। তবে করণীয় কি? আমাদেরকে পুরনো দিনের বাস্তবতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এতো বছর আগেও নারীরা যেভাবে সংগ্রাম করেছে বেঁচে থাকার জন্য, সেই সংগ্রামের শিক্ষা নিয়েই পথ চলতে হবে। তারা কেউই তো থেমে থাকে নি। প্রয়োজনে নিজেদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং আবারো সামনে এগিয়ে যেতে হবে নতুন উদ্যমে।

পরিস্থিতির বশবর্তী হয়ে অনেকেই নিজের দেশে শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে পারেন না। কে জানে? হয়তো ইংল্যান্ডের কোনো গলিতে আজও হেঁটে বেড়াচ্ছেন ভারতবর্ষের কোনো আয়ার বংশধর। কিংবা হয়তো আজও অন্য কোনো দেশে পড়ে আছেন আয়া হিসেবে কাজ করা কোনো বৃদ্ধা, দিন গুনছেন দেশে ফিরে আসবার প্রতীক্ষায়।