প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসা কিছু পালাগান আপাত দৃষ্টিতে কল্পকথা মনে হলেও একদিক থেকে তা কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনেরই গল্প বলে। এমনই কিছু পালাগান যেগুলো ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত ছিলো এবং পরবর্তীতে চন্দ্রকুমার দে এর মাধ্যমে সংগৃহীত ও ড. দীনেশচন্দ্র সেনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছিলো, সেগুলোকে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ বলা হয়। অধিকাংশের মতে, মৈমনসিংহ গীতিকার সব আখ্যানই ট্র্যাজিক, কিন্তু একটি আছে ব্যতিক্রম। কিন্তু আসলেই কি ব্যতিক্রম? নাকি একটি ভালো সমাপ্তির আড়ালের ট্র্যাজেডিকে আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছি আমরা? ব্যর্থ হয়ে থাকলেও প্রশ্ন রয়েই যায় যে, কেনো এই ব্যর্থতা? তবে কি ‘নিরপেক্ষতা’ শুধুই শব্দমাত্র? সে যা-ই হোক, আপাতত ঘুরে আসা যাক ব্যতিক্রমী সেই ট্র্যাজেডির রাজ্যে, মধ্যযুগের এক ভাগ্য বিড়ম্বিত নারী কাজলরেখার জীবনের গল্পে।
ভাটির দেশের সওদাগর ধনেশ্বর জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত। এর ফলে তার দুই সন্তান রত্নেশ্বর ও কাজল রেখার জীবনেও দেখা দেয় অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক অনটন। বিপদগ্রস্ত ধনেশ্বর আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ধর্মমতী বুদ্ধিমান শুকপাখির কাছে যায়। শুকপাখির পরামর্শে হীরার আংটি বিক্রি করে বাণিজ্যে গিয়ে কপাল খুলে যায় ধনেশ্বরের। আবারও তার হাতি শালে হাতি এবং ঘোড়া শালে ঘোড়া ফিরে আসে। নানা কাজে সময় চলে যায় ধনেশ্বরের। কিন্তু আবারো শুরু হলো নতুন বিড়ম্বনা, প্রিয় মেয়ের বিয়ে না হওয়ার বিড়ম্বনা। সমস্যা সমাধানের জন্য ধনেশ্বর আবারও শুকপাখির পরামর্শ চায়। তখন চম্পানগরের হীরাধন সাধুর অভিশাপগ্রস্থ বনবাসী সূঁচরাজার সঙ্গে বিয়ে দেবার পরামর্শ দেয় শুকপাখি। এ কথা শুনে মেয়ের দুঃখে বিলাপ করে কেঁদে ওঠে সওদাগর। তবে এই পরামর্শকে ভাগ্যের লিখন ভেবে বনেই মেয়েকে রেখে আসার পরিকল্পনা করে সওদাগর। নৌকা করে শুরু হয় তাদের যাত্রা। যেতে যেতে এক সময় তারা বনের কাছে পৌঁছায়।
এতো দূর চলার জন্য গলা শুকিয়ে আসে কাজল রেখার, ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে তার। চলতে চলতে তারা দূরে গভীর বনে একটি মন্দির দেখতে পায়। মন্দিরের সামনে মেয়েকে অপেক্ষা করতে বলে সওদাগর যায় পানির খোঁজে। গভীর বন গাছের ছায়ায় অন্ধকার চারিদিক। সূর্যের আলো প্রবেশের কোন উপায়ই নেই। এদিকে গা ছমছম করে ওঠে কাজলরেখার। সামনে মন্দিরের দরজা বন্ধ। সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে একটু একটু করে উপরে উঠে দরজায় টোকা দিতেই ক্যাচ করে খুলে যায় দরজা। কি অন্ধকার! ভয় পেয়ে দুই পা পিছিয়ে আসে কাজলরেখা। বের হতে চাচ্ছে কাজল, কিন্তু হঠাৎ দরজাটি নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে গেলো। কিছুতেই আর দরজা খুলছে না। ইতিমধ্যেই মেয়ের জন্য পানি নিয়ে ফেরৎ আসে সওদাগর। কিন্তু মেয়েকে না পেয়ে ভয়ে হিম হয়ে যায় তার পা, অবশ হয়ে পড়ে সমস্ত অনুভূতি। ঠিক তখনই ভেতর থেকে শোনা যায় এক ভয়ার্ত চিৎকার। সওদাগর ভাবে, এ তো তারই মেয়ের কণ্ঠ। দরজা বন্ধ মন্দিরে বন্দী মেয়ে চিৎকার করে বাবাকে যখন ডাকে, তখন বাবা বলে,
“ও আমার কইন্যা, মন্দিরে আছে কে তাই আমায় কওনা।”
বাবার কথায় সম্বিৎ ফিরে পায় কাজলরেখা। তৎক্ষনাৎ বাবাকে উত্তর দেয় সে,
“মৃত এক রাজকুমার শুয়ে আছে ঘরে,
তাই দেখে পরান কাঁপে ভয়ে আর ডরে,
হাজার হাজার সূঁচ গাঁথা আছে তার গায়ে,
চোখ-মুখে-নাকে, হাতে আর পায়ে।”
সত্য হলো শুকপাখির বাণী। ধনেশ্বর বুঝলো, এই সূঁচরাজাই তার মেয়ের স্বামী। মেয়েকে বোঝালো ধনেশ্বর, স্বামীর পাশে থেকে তার সেবা করতে করতে একদিন তার স্বামী সুস্থ হয়ে যাবে, প্রাণ ফিরে পাবে সে। এই কথা বলে অশ্রুসিক্ত চোখে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয় সওদাগর ধনেশ্বর।
এদিকে কাজলরেখার দিন কাটে মৃত স্বামীর সেবা করে। আর চোখ দিয়ে ক্রমাগত অশ্রু ঝরে পড়ে তার। তার জীবন হয়ে যায় দুঃখ-কষ্টের দিগন্তহীন সাগর। কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত কাজলরেখা। তার এই কান্না শুনে একদিন এক সন্ন্যাসী এসে বসে মন্দিরের দরজার কাছে। তাকে কান্নাকাটি না করবার জন্য অনুরোধ করে সন্ন্যাসী। কাজলরেখাকে সে বোঝায় যে, এই রাজকুমারকে সারিয়ে তোলার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। তার সারা শরীরের সূঁচ এক এক করে তুলে ফেলতে হবে, তবে সব সূঁচ তোলার পর যখন চোখের দুটো সূঁচ বাকি থাকবে তখন দুটি বিশেষ বনজ পাতার রস নিংড়ে লাগিয়ে দিলেই বেঁচে উঠবে মৃত রাজা -এই বলেই অদৃশ্যে মিলিয়ে গেলো সন্ন্যাসী।
সারা শরীরে বিদ্ধ সূঁচগুলোকে কাজলরেখা মনপ্রাণ দিয়ে এক এক করে তুলে ফেলতে শুরু করে। শ্রান্ত কাজলরেখা, কোনো বিরতি নেই। ক্রমাগত চলছে তার অক্লান্ত কাজ। ঠিক এমন সময়ে দরজার কাছে শোনা যায় এক কণ্ঠস্বর, “মা দাসী লাগবে, দাসী?” ভীষণ ক্লান্ত কাজলরেখা ভাবলো, সত্যিই তো তার একজন দাসীর প্রয়োজন। দিনরাত পরিশ্রম করে সে মহারাজকে সুস্থ করে এনেছে প্রায়, এই সময় একজন সঙ্গী পেলে মন্দ হয় না। দাসীর মালিককে প্রশ্ন করে সে, “কিসের বিনিময়ে এই দাসী রাখতে পারবো?” দাসীর বাবাই ছিলো তার মালিক। তৎক্ষণাৎ উত্তর আসে, হাতের কঙ্কনের বিনিময়ে এই দাসীকে পেতে পারে কাজলরেখা। যেই কথা সেই কাজ। হাত থেকে কঙ্কন খুলে দিলো কাজলরেখা মেয়েটার বাবাকে। দাসীর বাবা বিদায় নেবার আগে কি ভেবে যেনো কঙ্কন দুটি দাসীকেই দিয়ে চলে গেলো বহু দূরে। কাজল রেখা দাসীকে প্রশ্ন করলো, কি নামে ডাকা হবে তাকে। দাসীর উত্তর, “আমাকে কঙ্কন বলেই ডাকতে পারো তুমি”।
সব ঠিকমতো চলছিলো। সাত দিন সাত রাত ধরে সব সূঁচ একটা একটা করে তুলে চললো কাজলরেখা। বাকি রয়েছে চোখের দুটো সূঁচ। সন্ন্যাসীর কথা মতো এই দুটো সূঁচ তুলে একটি বিশেষ পাতার রস লাগালেই তো জীবন ও দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে সূঁচরাজা। নবজীবন পাওয়া রাজা তখন ধর্মমতে জীবন দানকারীকে বিয়ে করতে বাধ্য হবে। এটাই তো হবার ছিলো। কিন্তু কোথা থেকে উড়ে আসলো কঙ্কন দাসী! আপনভোলা কাজলরেখা বিশ্বাস করলো কঙ্কন দাসীকে। বোকার মত বলে দিলো তাকে সূঁচরাজার সমস্ত গল্প এবং জানিয়ে দিল তার সুস্থ হবার উপায়। কিন্তু কাজলরেখা জানতো না, কতো বড় ভুল সে করে ফেলেছে। চোখের সূঁচ দুটো বাদ দিয়ে সব সূঁচ তোলার পর কাজল রেখা নিজেকে আসন্ন বিয়ের জন্য উপযুক্ত করে তুলতে সরোবরে গোসল করতে যায়। ফিরে গিয়ে দুটো সূঁচ তোলার পরই তো তার জীবনে আসবে এক নতুন অধ্যায়, শেষ হবে তার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট –এই ভেবে রোমাঞ্চিত হয় কাজলরেখা। কিন্তু সে কল্পনাও করতে পারে নি যে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।
কাজলরেখার অনুপস্থিতিতে কঙ্কন দাসী কাজলরেখার বলে দেওয়া পদ্ধতিতে সূঁচরাজাকে সারিয়ে তোলে, আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সূঁচরাজা তখন কঙ্কন দাসীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। সরোবর থেকে গোসল শেষে কাজলরেখা মন্দিরে ফিরে এসে দেখতে পায় তার যা সর্বনাশ হবার হয়ে গেছে। কঙ্কন দাসী সূঁচরাজার কাছে কাজলরেখাকে পরিচয় করিয়ে দেয় হাতের কাঁকন দিয়ে কেনা কঙ্কন দাসী হিসেবে। অভাগিনী নিরুপায় কাজলরেখা নিশ্চুপ থাকে, নিজের পরিচয় আর দিতে পারে না সে। রাণী হয় দাসী, আর দাসী হয় রাণী। কপাল দোষে কাজলরেখা হলো অভাগিনী।
সূঁচরাজা স্ত্রী এবং দাসীসহ দেশে ফিরে আসে। তার রাজ্যাভিষেক হয়। কঙ্কন দাসী রাণী হিসেবে আর কাজলরেখা দাসী হিসেবেই দিন অতিবাহিত করতে থাকে। তবে প্রথম দেখা থেকেই সূঁচরাজা কাজলরেখার রূপমুগ্ধ ছিলো। সবসময় তার মনে পড়ে থাকতো কাজলরেখার কাছে। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করতো সে, কি এই নারীর আসল পরিচয়? এমন সময় চম্পানগরে বেড়াতে আসে সূঁচরাজার এক প্রিয় বন্ধু। সেই বন্ধুটিও কাজলরেখার রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে যায়। বন্ধুকে চমৎকৃত করতে সূঁচরাজা আয়োজন করলো এক অভিনব প্রদর্শনীর। প্রদর্শনীতে রাণী আর কাজলরেখা উপস্থাপন করলো তাদের রান্না এবং পটচিত্র। সুশিক্ষিত কাজলরেখার কাছে অশিক্ষিত কঙ্কন দাসী সব বিষয়ে পরাজয় ঘটলো। রাজার বন্ধু কাজলরেখার গুণমুগ্ধ। কাজলরেখার কৌলিন্যে নিঃসন্দেহ হয়ে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলো সে। কিন্তু কাজল রেখা তো তাকে বিয়ে করতে অক্ষম। একইসাথে নিজের পরিচয়ের রহস্যও জানাতে অক্ষম। কিন্তু রাজার নাছোড়বান্দা বন্ধু কাজলরেখাকে অপহরণ করে নদী পথে রওয়ানা হলো। অসহায় কাজলরেখা নদীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে নদী তার বুকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কাজলরেখা পালিয়ে গিয়ে দ্বীপবাসিনী হয়।
এই দিকে কাজলরেখার আপন ভাই রত্নেশ্বর বড় হয়ে যায়। সওদাগর বাবার নৌকা নিয়ে বাণিজ্যে বের হয় সে। পথে দ্বীপবাসিনী কাজলরেখার সাথে তার দেখা হয়। কিন্তু সে তো চিনতে পারে নি কাজলরেখাকে। মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে বসে রত্নেশ্বর তার বোনকে। কাজলরেখা তখন তাকে দেশে নিয়ে গিয়ে প্রথমে উন্মুক্ত সভায় শুকপাখির কাছ থেকে তার জীবন-বৃত্তান্ত শোনানোর আহ্বান জানায়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এক বিশাল সভার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক লোকের সমাগম ঘটে সেখানে। ঐ সভার সংবাদ পেয়ে সূঁচরাজাও সেখানে উপস্থিত হয়।
সভায় শুকপাখি কাজলরেখার জীবন-বৃত্তান্ত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করে শূন্যে মিলিয়ে যায়। আর অন্য দিকে লজ্জিত রত্নেশ্বর বোনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অনুতপ্ত সূঁচরাজাও কাজলরেখার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ঘরে তো তার আরেকজন স্ত্রী? তাহলে কি করবে এখন সে? বুদ্ধি করে কাজলরেখাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার আগে সূঁচরাজা কঙ্কন-দাসীর সাথে এক প্রতারণার আশ্রয় নেয়। প্রাসাদে ফিরে সূঁচরাজা কঙ্কন-দাসীকে বলে যে, অন্য রাজ্যের লোকেরা সদলবলে প্রাসাদ আক্রমন করতে আসছে, তাই পরিখাতে ধন-রত্নসহ আশ্রয় নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ভয়ে কঙ্কন-দাসী সবার আগেই ধন-রত্নসহ পরিখায় আশ্রয় নিতেই সাথে সাথে রাজার আদেশে তার লোকজন কঙ্কণ-দাসীকে দেশ থেকে বিদায় করে দেয়। শেষমেশ বাবার কাছে ফিরে যায় কঙ্কন দাসী। এরপর সূঁচরাজা কাজলরেখাকে সসম্মানে তার দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। অতঃপর তারা সুখে দিন কাটাতে শুরু করে।
কাজললেখার এই গল্পের চরিত্রদের নাম আলাদা আলাদা ব্যক্তি চরিত্রের ধারক ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। যেমন, ধনেশ্বর, রত্নেশ্বর, কঙ্কন-দাসী, হীরাধন, সূঁচরাজা, এমনকি কাজলরেখা নিজেও। আমরা যদি শুকপাখিকে দৈবত্ব, অলৌকিকত্ব, বা সীমিত অর্থে ধর্মের প্রতীক হিসেবে দেখি, তাহলে দেখতে পাই যে, তার ভূমিকা শুধু প্রয়োজনের সময়। বিপদে সহায়তা করা ছাড়া আর কোনো ভূমিকা নেই শুকপাখির। যে মুহূর্তে তার প্রয়োজন শেষ, সেই মুহূর্তে তাকে শূন্যে মিলিয়ে যেতে দেখা গেছে।
আর সূঁচরাজার অভিশপ্ত জীবনে দেবতাদের অভিশাপ থাকলেও তার শাপমুক্তির প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি লৌকিক। সূঁচ তুলে নেয়া এবং তারপর ভেষজ চিকিৎসাতে কোনো অলৌকিকত্ব নেই। এখানে কাজলরেখার ভূমিকা পুরোপুরি বাস্তব, আকাশের মুখাপেক্ষী নয়।
“কাজলরেখা” ছাড়া মৈমনসিংহ গীতিকার সব আখ্যানই নাকি ট্র্যাজিক। এমনটা মনে করা হলেও আসলে কাজলরেখাও ট্র্যাজিক, যদি তা কঙ্কন-দাসীর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হয়। মানুষ দাস হয়ে জন্মায় না, পরিবেশ-পরিস্থিতি তাকে দাসত্বে বাধ্য করে। তাই সুযোগ পেলে সে যদি তার দাসত্বকে মোচনের চেষ্টা করে, তবে তাকে অন্যায় বলা যায় না। কঙ্কন-দাসীর সুযোগ গ্রহণ তাই অন্যায় নয় বলে অনেকে বলতেই পারেন। কঙ্কন-দাসীর করুণ পরিণতিও তো ঐ সময়কার বাস্তবতা, কিন্তু তা কি ট্র্যাজিক নয়?
মৈমনসিংহ গীতিকা উজান অঞ্চলে প্রাপ্ত আখ্যান হলেও এই গল্পটি ভাটি অঞ্চলের। ভাটির সাথে উজানের ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং ভাটি সম্পর্কে উজানের মানুষের অসীম আগ্রহই এ ধরনের গল্পের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি নিজ সমাজের বাস্তবতাকে অন্য সমাজের প্রেক্ষিতে বা ভিন্ন আঙ্গিকে দেখানোর চেষ্টার আধুনিক প্রচেষ্টাও আছে। বাংলার বাণিজ্যের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। আরব, গ্রীস, রোমের সাথে বাণিজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাথেও বাংলার বাণিজ্য-সম্পর্ক ছিলো। সে কারণে ধনেশ্বরের কাহিনী, চাঁদ সওদাগরের গল্পের মতো অনেক গল্প আমাদের সাহিত্যে অনেক পাওয়া যায়। এগুলো আমাদের ইতিহাসেরই উপাদান হিসেবে বিবেচিত। কাজলরেখার গল্পটি একদিকে যেমন খুবই নিরীহ একজন নারীর ব্যথা-বেদনার কথা বলে; তেমনই ভাগ্য, বাণিজ্য ও লোকজ সমাজের বাস্তবতাও তুলে ধরে এটি।