হায়দ্রাবাদের কোহিনূর নিলুফার হতে পারলেও হতে পারেন নি তারই চাচাতো বোন দুরুশেহভার। অথচ সৌন্দর্য কোনো অংশে তারও কম ছিলো না। অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ খলিফার একমাত্র মেয়ে হিসেবে এই পদবী তো তারও হতে পারতো। ভারতবর্ষের বিদেশিনী বধূদের মধ্যে নিলুফারকে নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হলেও কেনো যেনো আড়ালেই পড়ে ছিলেন দুরুশেহভার।
মাত্র দশ বছর বয়সে তিনিও তো রাজপ্রাসাদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, পরিবারের সঙ্গে নির্বাসিত হয়েছিলেন ফ্রান্সে, বাধ্য হয়েছিলেন অপরিচিত ভারতবর্ষে বৈবাহিক জীবনের সম্পূর্ণটা কাটাতে। চাচাতো বোন নিলুফারও সেই যাত্রায় তার সঙ্গিনী হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের দুজনেরই জীবন প্রতি ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার পথে ধাবিত হলেও, কথা হয় নি দুরুশেহভারের ব্যথা নিয়ে।
জন যুবর্যাইকি তার ‘দ্য লাস্ট নিজাম’ বইতে লিখেছেন, দুরুশেহভার ছিলেন একজন সত্যিকারের শেহজাদী; দৃঢ়, আভিজাত্যে পূর্ণ এবং স্মার্ট। রাণী কুমুদিনী দেবী ছিলেন দুরুশেহভারের বান্ধবী। তারা দুজন একসাথে ঘোড়ায় চড়তেন, টেনিস খেলতেন এবং গাড়িও চালাতেন। তার বান্ধবীর দাদীর ভাষ্যমতে, দুরুশেহভার পান খেলে তা গলা দিয়ে নামতেও দেখা যেতো -এতোটাই সুন্দর ছিলো তার সমস্ত ভঙ্গিমা।
নিলুফার মা হতে পারেন নি। আর এ কারণে সুন্দরী হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর সান্নিধ্য ও সহানুভূতি তিনি তেমনভাবে পান নি। সংসারের প্রতি পিছুটান কম থাকার কারণে নিলুফারের স্বাধীনতা লাভ অধিকতর সহজ হয়েছিলো। অন্য দিকে, দুরুশেহভার দুই ছেলের মা হয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর সহানুভূতি তিনিও খুব একটা লাভ করেন নি। তিনি খুব ভালো করেই জানতেন, তার স্বামীর একাধিক উপপত্নী রয়েছে। তিনি এ-ও জানতেন, তার স্বামী জুয়ায় আসক্ত। সব জেনেশুনেই তিনি সংসারে এককভাবে কম্প্রোমাইজ করে গেছেন। ফ্যাশনজ্ঞান তারও কিছু কম ছিলো না। কিন্তু সন্তান ও সংসারের জন্য হয়তো তিনি নিলুফারের মতো এতোটা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন নি। নিলুফারের জন্য স্বামীর সংসার ছেড়ে যাওয়া কিছুটা সহজ ছিলো। কিন্তু স্বামীর সীমাবদ্ধতা জেনেও দৃঢ়চেতা দুরুশেহভার ধৈর্য-ধারণ করে শেষ পর্যন্ত সংসার করে গেছেন।
১৯৭০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি কিছু সময় হায়দ্রাবাদ ও কিছু সময় লন্ডনে কাটাতেন। তার সময়ের অন্যান্য রাজকীয় নারী চরিত্রদের মতো স্বীকৃতি তিনি কখনোই পান নি। তবে সফিউল্লাহ বলেন, তিনি দুরুশেহভারকে নিজাম জাদুঘর উদ্বোধনীর সময় দেখেছেন এবং তার আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন। সফিউল্লাহর মতে, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে, অর্থাৎ খলিফা আব্দুল মজিদকে তুরস্ক থেকে বিতাড়িত করা না হলে নিঃসন্দেহে ইতিহাসের প্রথম নারী খলিফা হতেন দুরুশেহভার।
২০০৬ সালে বিরানব্বই বছর বয়সে মারা যান ধৈর্যশীল নারী দুরুশেহভার। মৃত্যুর সময় তার দুই ছেলে মুকররম জাহ ও মুফফাখম জাহ তার সঙ্গে ছিলেন। নীরবতার ক্ষমতা চিনিয়ে যাওয়া এই নারীও তার সমসাময়িক অন্যান্য রাজকীয় নারীদের মতোই শ্রদ্ধা ও সম্মান পাবার যোগ্য।
রেফারেন্স: