ঢাকার নায়েব নাজিমদের মধ্যে ইন্তেজামউদ্দৌলা নাসিরুল মূলক নওয়াব সৈয়দ আলী খান বাহাদুর নুসরাত জং সবচেয়ে বেশি দিন, সাঁইত্রিশ বছর (১৭৮৫-১৮২২ সাল পর্যন্ত) অধিষ্ঠিত ছিলেন নায়েব নাজিম পদে। তাঁর বড় ভাই নায়েব নাজিম হাসমত জংয়ের মৃত্যুর পর কোম্পানির কাছে তিনি একইভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন নায়েব নাজিম পদের এবং একইভাবে লাভ করেছিলেন অনুমোদন।
ঢাকাবাসীদের প্রিয় ছিলেন তিনি এবং অষ্টাদশ ও উনিশ শতকের ঢাকার যোগসূত্রও ছিলেন তিনি। নায়েব নাজিমের ক্ষমতা ও অর্থ খরচে সীমাবদ্ধতা থাকলেও নুসরাত জং সুকুমার কলার প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলেন। ১৮০১ সালের পুর্বোল্লিখিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, নুসরাত জংয়ের ভৃত্য সংখ্যা ছিলু প্রায় চারশো। যখন তিনি বাইরে যান তখন তাঁর সঙ্গে থাকতো সাধারণ ছ’জন ঘোড়াসওয়ার, ছ’জন বর্শাধারী পাইক ও প্রায় চল্লিশ জন নিরস্ত্র অনুচর।
তায়েশ. তাইফুর, সবাই নুসরাত জংয়ের সুকুমার বৃত্তি ও মহৎ হৃদয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তাইফুর জানিয়েছেন, ঈদ ও মুহররমের ওপর দীর্ঘ প্রামাণ্য জলরংটি (যা এখন সংরক্ষিত জাতীয় জাদুঘরে তাঁর আমলেই আঁকা হয়েছিল। তিনি অনেক শিল্পসামগ্রীও সংগ্রহ করেছিলেন। তায়েশ লিখেছেন—- Ôধনী দরিদ্র সকলের সাথে অত্যন্ত হৃষ্টচিত্তে কথাবার্তা বলতেন। বিত্তহীনদের তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন।
তাঁর আরবি ও ফার্সি হাতের লেখা ছিল অতি উৎকৃষ্ট । অনুশীলনের উদ্দেশ্যে প্রায়ই নিজের হাতে ছাত্রদেরকে লিখে দিতেন । সব সময় তসবীহ, তিলওয়াত ও অজিফা পাঠে রত থাকতেন। তিনি ইমামীয়া মাজহারে অনুসারী হলেও মগবাজারের গদীনশীন পীর মরহুম হযরত শাহ্ মুহাম্মদীর অত্যন্ত ভক্ত ও অনুরাগী ছিলেন।
এসব কারণে ক্ষমতাহীন হয়েও নুসরাত জং ঢাকাবাসীর কাছে প্রিয় ছিলেন। এর প্রমাণ তাঁর জানাজায় অজস্র লোকের অংশগ্রহণ। নুসরাত জংয়ের অন্যতম কীর্তি, যে কারণে তিনি আজও স্মরণীয়, তা হলো, তাঁর লেখা বাংলার অসমাপ্ত ইতিহাস। পাণ্ডূলিপির নাম ‘তারিখ-ই-নুসরাত জঙ্গি’। এ পাণ্ডূলিপিতে লিপিতে সমসাময়িক ঢাকা সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে। ‘তারিখ-ই-নুসরাত জঙ্গি’ থেকে জানা যায়, ঢাকার অধিকাংশ বড় জমিদার ছিলেন মুসলমান এবং সামর্থ্য তাঁদের কম ছিল না। নুসরাত জং ছিলেন সর্বশেষ নায়েব নাজিম। ১৮২২ সালে পরলোকগমন করেন।