এন্ড্রজ্যাকসন ছিলেন এক গরীব , পাড় মাতাল, মুচির ছেলে। শিক্ষা দীক্ষা বলে তার কিছুই ছিলনা। দারিদ্রের তাড়নায় তাকে রীতিমত নিম্ন শ্রেণীর সাধারণ কাজ করতে হত। কিন্তু তার কল্পনা প্রবণ মায়ের কাছ থেকে তিনি অতিন্দ্রীয় দর্শন ক্ষমতার অধিকারী হন। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই ক্ষমতা রীতিমত একজন ভবিষ্যৎ বক্তা হিসাবে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। মোটর গাড়ী ও এরোপ্লেন আবিষ্কার সম্বন্ধে তিনি বহু পূর্বেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন।
১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের কিছু আগে তারা সপরিবারে এসে নিউইয়র্কের পুঘ্কিপ্সিতে বসত করেন। এখানে এসে তিনি উইলিয়াম লিভিংষ্টোনের সাক্ষাত পান। এই উইলিয়াম লিভিংষ্টোন ছিলেন একজন ভ্রাম্যমাণ দর্জি । সেই সঙ্গে তিনি একজন সৌখিন সম্মোহনকারিও ছিলেন।তিনি ডেভিসের ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা সম্বন্ধে জানতে পারেন। আর তার এই ক্ষমতাকে কাজে লাগাবার জণ্য তিনি বিনা দ্বিধায় অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তাকে প্রাথমিক ভাবে ভ্রাম্যমাণ ভবিষ্যৎ বক্তা (Faith-healer) হিসাবে নিজের দলে নিয়োগ করেন।
ম্যানহাটানে দলের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে স্থানে স্থানে তিনি বক্তৃতা করে বেড়ান। দেড়শরও বেশী বক্তৃতা করে যথেষ্ট সুনামও অর্জন করেন। বক্তৃতাগুলো বেশির ভাগই দেন রীতিমত আচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে। এই আচ্ছন্ন অবস্থায় তিনি বেশ কয়েকটি বইও লেখেন। এই বই গুলোতেই তিনি তার ভবিষ্যৎবাণী গুলো লিপিবদ্ধ করেন। আর এই ভবিষ্যৎবাণী গুলো আশ্চর্য রকম ভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়-নিখুঁত ও বিস্তৃত ভাবে প্রতিটি ঘটনা সকলের সামনে ফলে যায়।
আকাশ যানঃ
কথিত আছে তিনি তার বইতে দৈববাণী করেন যে ভবিষ্যতে বিচিত্র মাল মসলা দিয়ে কনক্রিটের দালান কোঠা তৈরি হবে। তার রচিত বই ‘পেনিট্রেলিয়া’ প্রকাশিত হয় ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দে। এই বইতে তিনি আকাশ পথে মোটরগাড়ীর মত যান বাহনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন এসব গাড়ী আকাশ পথে একদেশ থেকে আরেক দেশে চলাচল করবে। শক্তি চালিত ইঞ্জিনের সম্বন্ধে ও তার বইতে উল্লেখ করেন। স্বয়ংচালিত যানবাহন সম্বন্ধেও তার বইতে তার উল্লেখ পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে কান্ট্রিরোডে দেশে –ঘোরা বিহীন গাড়ী চলবে বলেও ভবিষ্যৎবাণী করেন ।ভ্রমনের জন্য তাতে সেলুন থাকবে। বাস্প বিহীন গাড়ী, এমনকি অদৃশ্য কোন শক্তি সম্পন্ন দ্রুতগামী যানবাহন ও চলাচল করবে বলে তিনি অভিমত রেখে যান। এই সকল যানবাহনে তার সময়ের গাড়ীর তুলনায় অনেক বেশী নিরাপত্তা ও আরামের ব্যবস্থা থাকবে।
পানি ও স্বাভাবিক প্রাকৃতিক গ্যাসের সহজ ও সুন্দর সংমিশ্রণে প্রস্তুত বিশেষ কোন শক্তির সাহায্যে অতি সহজে গাড়ী চালিত হবে। এই শক্তির উদ্ভব হবে এমন কোন যন্ত্রের সাহায্যে যা আমরা আমদের ইঞ্জিনের বাইরে থেকে মোটেও দেখতে পাবনা। এই লুক্কায়িত শক্তিই সামনের চাকায় গতিবেগ এনে দিবে। বর্তমানের ক্ষীণ বসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে লোকেরা যে সব অসুবিধার সম্মুখীন হয় এই সব যানবাহনের জন্য ভবিষ্যতের জনসাধারণকে কোন রকম অসুবিধায় ফেলে হতবুদ্ধি হতে দেবে না। আর এসব যানবাহনের জন্য ভাল রাস্তার প্রয়োজন হবে। ভবিষ্যতে সুন্দর রাস্তার উপর দিয়ে ঘোড়া ছাড়াই ইঞ্জিন গুলো ছুটাছুটি করবে। যাত্রা হবে ত্বরান্বিত সময়ের অপচয় বন্ধ হবে ।মানুষের জীবনের ঝুঁকি অনেক পরিমাণে কমে গিয়ে মানুষকে অপরিসীম স্বস্তি দান করবে। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের কল্পকথার মত ভবিষ্যৎবাণীগুলোর বাস্তব রূপ আমরা এই শতাব্দীতে পুরোপুরি উপভোগ করছি না কি ?