লক্ষ্ণৌয়ের রেসিডেন্সিতে ঢুকে মনে হলো প্রায় ভূতের রাজ্যে ঢুকে পড়েছি। চারদিকে ইটের সারি সারি ভাঙা বাড়ি ও থাম উঁচিয়ে আছে, যাদের গায়ে এখনও কামান ও বন্দুকের গুলির দাগ লেগে আছে। লক্ষ্ণৌ রাজ্যের রাজধানী ছিলো ফৈজাবাদ। নবাব আসফ-উদ-দৌলা সেই রাজধানী সরিয়ে আনলেন লক্ষ্ণৌতে। পিছন পিছন ব্রিটিশরাও এসে গেল এখানে। তখন সারা ভারতকে একটু একটু করে গ্রাস করছে ব্রিটিশেরা, ফলে লক্ষ্ণৌয়ের নবাবেরা ব্রিটিশকে সমীহ করে চলছে।
ব্রিটিশরা রাজধানীতে তাদের রেসিডেন্ট বা আবাস গড়তে চাইল। সেখানে তারা নিজেদের অফিস খুলবে ও ব্রিটিশ অফিসারেরা সেখানে সপরিবারে বাস করবে।
এই বিশাল এলাকায় অনেকগুলো বাড়ি বানিয়েছিলেন নবাব আসফ-উদ-দৌলা, আর কিছু বানিয়েছিলেন নবাব সাদাত আলি ১৮০০ সালে। মোটামুটিভাবে ১৭৭৫ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে রেসিডেন্সির প্রাথমিক নির্মাণ সমাপ্ত হয়।
ব্রিটিশ জেনারেল ক্লদ মার্টিন আরও কিছু জায়গা দখল করলেন। ব্রিটিশেরাও তাদের পছন্দমতো কিছু বাড়ি বানালো। মোট ৩৩ একর জায়গা জুড়ে বসতি স্থাপন করলো ব্রিটিশেরা। চারদিকে শক্তপোক্ত গেট বানিয়ে রেসিডেন্সিকে সুরক্ষিত করা হলো। ভেতরে হাসপাতাল ও ট্রেজারি স্থাপন করা হলো। বানানো হলো চার্চ, সঙ্গে থাকলো কবরখানার জায়গা। রেসিডেন্সিতে বানানো হয়েছিল পোস্ট অফিস ও জেলখানা।
মূল রেসিডেন্ট বিল্ডিং বানিয়েছিলেন নবাব সাদাত আলি। বাড়িটি ছিলো তে-তলা। এটাই মূল অফিস। মাটির নিচে ছিল রেকর্ড রুম। ট্রেজারি বিল্ডিং ছিলো দো-তলা।
১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহ
১৮৫৭-এর ৩০ জুন রাত ৯টাতে লক্ষ্ণৌয়ের সিপাহিরা বিদ্রোহ. ঘােষণা করে। চিনহাটের লড়াইয়ে তারা জয়ী হয় এবং ইংরেজরা হেরে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। তবে সিপাহিদের মধ্যে নেতৃত্বের যে দুর্বলতা ছিল, তার সুযােগে ইংরাজেরা বিনা বাধায় রেসিডেন্সিতে এসে জড়াে হতে থাকে। ১ জুলাই থেকে লক্ষ্ণৌয়ের রেসিডেন্সি অবরােধ শুরু. করে সিপাহিরা।
সিপাহি বিদ্রোহ লক্ষ্ণৌ শহরে ভয়ংকর চেহারা নিয়েছিল। ক্ষিপ্ত সিপাহিরা সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথম দফায় ৮৭ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ৬১ দিন ব্রিটিশ রেসিডেন্সি ঘিরে রেখেছিল সিপাহিরা। প্রায় হাজার দুয়েক ইংরেজ মারা পড়ে। তারপর বিদ্রোহ যখন নিভে এলো, ইংরেজ প্রতিশোধ নিতে শুরু করল। বন্দি সিপাহিদের দাঁড় করাল কামানের সামনে। নিরপরাধ শিশু-বৃদ্ধদেরকেও তারা রেহাই দেয়নি।
ভাঙাচোরা দেয়াল, ঝুলে থাকা ছাদ, কামানের গোলা আর রাইফেলের গুলির স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে সিপাহি বিপ্লবের সেই ভয়ঙ্কর গৌরব গাথার দুর্দমনীয় দিনগুলোর স্মারক হয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে।
লেখকঃ Jamil Sayed, India