মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস আমাদের বাংলাদেশের পাঠকের কাছে অনেকটাই অপরিচিত বলা যায়। তবে কিছু কিছু আমরা যারা ওনার সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে অবগত আছি_আমাদের মধ্যেও এ নিয়ে বিস্তর মতানৈক্য বিদ্যমান। কেউ মনে করে ওনার লেখনির ঝাঝ-তেজ আছে, কেউ বলে_আরে নাহ্ তেমন কিছু নেই! কেউ মনে করে একটু বামঘেষা লেখিকা, আবার তার বিরুদ্ধপক্ষ ততটাই তেতিয়ে উঠে বলে_আরে ভাই বাম-ডান ব্যাপার না। মোদ্দাকথা হল ওনি লিখতে জানেন। লেখার ধাঁচে, শব্দের অলঙ্করণে, ভাষার শৈলীতে, দার্শনিকতায় যেমন অনন্যা তেমনিভাবে একজন সমাজ সচেতন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান আর সংস্কৃতি অন্তপ্রাণ তথা স্থবিরতায় খানিকটা ঝাকুনি, অন্যায়-অবিচারের খড়গের বিরুদ্ধে সাধ্যমত কাঁপুনি দিয়ে সামাজিক প্রভুদের বেশ খানিকটা হুঁশ যে তিনি তখনকার প্রেক্ষাপটে কিছুটা হলেও ফিরিয়েছেন_তা মানতেই হবে আর তাতেই তার স্বকীয়তা, তার স্বতন্ত্রতা। কতটুকু সার্থক বা কতটুকু তার দীর্ঘচলাতে ব্যর্থতা এসেছে তা হয়ত বর্তমানের দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করলে আমাদের মনোগত হবে না, তবে তখনকার প্রেক্ষাপটে তার মূল্য অবশ্যই ইতিহাস দিবে। আমরা সেখানে নেহাতই অক্ষম, যেখানে ইতিহাস তার আপন হাতে করিতকর্মা ব্যক্তিকে বরমাল্য দেয়। অবশ্য ইতিহাস যেহেতু আমরাই লিখি অর্থাৎ মানব সন্তানরাই তাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস লেখে, সেখানে রক্তারক্তি’র সম্পর্কের আলোকে একটু হেরফের হবে, তাতে মিশ্রণ-সংমিশ্রণের উঁকিঝুঁকি থাকবে অথবা ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে নানা মুনির নানা মতে, অমতে বা কখনো কখনো দ্বিমতে দ্বান্দ্বিকতার ছড়াছড়ি থাকবে_তবে এর গতিধারাকে রোধ করে খুব বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই জোর করে পাল্টানো, পাল্টিয়ে ফেলার স্থায়িত্ব তদ্রুপই ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য। সেদিক দিয়ে উপর্যুক্ত লেখকের নাম-ধামের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বোধহয় প্রয়োজন হবে না। সচেতন বা যারা এই অবধি ওনার সম্পর্কে অচেতন_এই দুধরণের পাঠকবৃন্দই ওনার সম্পর্কে জানতে বা ওনাকে, ওনার সাহিত্যকর্মকে অতটা না মানলেও ওনি যে একজন এবং বেশ একজনই, তা যে অনাগত কালে জানতে সমর্থ হবেন_এটাই প্রত্যাশিত।
বৈশ্বিক সাহিত্যের ইতিহাসে উপরিউক্ত উপন্যাসের মতো চরিত্রের উপস্থিতি, ধারাবাহিক ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মিলন, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার স্থলে সামষ্টিকেন্দ্রিকতার দিকে যে পরোক্ষ ইঙ্গিত, সামাজিক শ্রেণী হিসেবে মধ্যবিত্তের হঠাৎ উপরমহলের ট্যাগ লাগিয়ে রাতারাতি পূর্বকার পরিচয় বদলিয়ে নতুন পরিচয়ে ভদ্রজাতে উঠার প্রাণান্তকর চেষ্টা-তদবির, পারিবারিক অশান্তি-বিশৃঙ্খলা-উৎশৃঙ্খলা-টানাপোড়নের ফলে পারস্পারিক বিচ্ছিন্নতা, অতিত স্মৃতির রোমন্থন, পরিবারের বড়ছেলের বাম রাজনীতিতে আত্মহুতির দরুণ আর্থিক দুরবস্থা-দৈন্যতায় জর্জরিত একটি পরিবার, কতগুলো চরিত্রের বেলেল্লাপনা, এক মায়ের তার প্রিয় ছেলের স্মৃতিকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার আকুল আকাঙ্ক্ষা, মৃত ছেলে ফিরে আসার পথ চেয়ে দিনাতিপাত করা, খুটিয়ে খুটিয়ে ছেলের ফেলা যাওয়া বা খানিকটা রেখে যাওয়া নানা অতিত কথনের সমাহারকে বুকে আগলে রাখার তীব্র বাসনায় নীনাদিত, সমস্ত উপন্যাস জুড়ে মা সুজাতার উপস্থিতি_সত্যিই বিশ্বসাহিত্যের কতিপয় উপন্যাসের সাথে মিলে যায়। আর এক্ষেত্রে সবার আগে উল্লেখ করা যেতে পারে ম্যাক্সিম গোর্কি’র পৃথিবী খ্যাত উপন্যাস ‘মা’এর মা চরিত্রের সাথে ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসের মা_সুজাতার। যারা গোর্কির উপন্যাসটা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন তাদের জ্ঞাত থাকা উচিত_উক্ত উপন্যাসে পাভেলের মা প্রায় প্রতিটি অংশেই চিত্রায়িত হয়েছেন। কখনো পরম স্নেহশীল মা হিসেবে, কখনো খানিকটা শাসনের অনুযোগ-অনুরাগ যেমন বজায় রেখেছেন, তেমনিভাবে পাভেল জেলে থাকাকালীন ছেলের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ মা সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা মা চরিত্রটি এত্তবড় উপন্যাসের এত্তগুলো পৃষ্ঠার আড়ালে ক্ষণিকের জন্যও হারিয়ে যায়নি! ম্যাক্সিম গোর্কির অসাধারণ এই উপন্যাসে ঔপন্যাসিক অনবদ্য এই চরিত্র সৃষ্টি করে বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন_ যার রেশ এখনো বর্তমান। মহাশ্বেতা দেবির ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসের মা সুজাতাও ঠিক একই মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ, প্রতিটি অধ্যায়ের আনাচেকানাচে মা ও তার মৃত ছেলের অতিত-বর্তমান-ভবিষ্যতের কি ছিল, কেমন ছিল, কেমন আছে এবং পরবর্তীতে কেমন হতো বা কেমন হবে_ইত্যাদী বাস্তবতার সাথে কল্পনার মিশেল-পাঁচমিশেলে, স্মৃতির রোমন্থনে, মায়ের আকাঙ্ক্ষায়, ঘোরের সাথে ছেলে-মায়ে’তে খানিকটা সময় কাটানো, আর তার সদাজাগ্রত উপস্থিতি_ কিছু ক্ষেত্রে গোর্কির উপন্যাসকে টেক্কা দিয়েছে বলা যায়! পৃথিবীতে এমন উপন্যাস ও একাঙ্কিক চরিত্রের দ্বারা চিত্রায়িত কাহিনি খুব বেশি পাওয়া যাবে না।
উপন্যাসের বিশেষ আরেকটি দিকের কথা উল্লেখ করতেই হবে আর এটাও পূর্বকার মতো সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সতীনাথ ভাদুরীর বিখ্যাত উপন্যাস ‘জাগরী’র কাহিনি বিন্যাস হয়েছিল ঠিক বারো ঘন্টা নিয়ে। অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ঘটনা নিয়ে বিস্তৃত হয়েছে উপন্যাসটি। অবশ্য এই বারো ঘন্টার মধ্যেই আগে ঘটে যাওয়া নানাবিধ ঘটনার উল্লেখ, স্মৃতিচারণ আছে। সেদিক দিয়ে মহাশ্বেতা দেবির উপন্যাসেও একই সাদৃশ্য বিরাজ করে! যদিও ‘জাগরী’ থেকে ‘হাজার চুরাশির মা’ সম্পূর্ণ ভিন্ন। জাগরীতে যেখানে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত উপন্যাসের বিস্তৃতি গড়ায় সেখানে ‘হাজার চুরাশি’র মা’ তে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিস্তার হয়। এই বারো ঘন্টার মধ্যেই ধারাবাহিক ভাবে কাহিনি বর্ণিত হয়। এখানেও অতিত স্মৃতির রোমন্থন, চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশের নানা দিক উন্মোচিত হয়। তবে সব চেয়ে বড় কথা উপন্যাসটি আরো বিভিন্ন কারণে ব্যতিক্রমের তকমা অনায়াসেই পাবে। এটা পাওয়াই উচিত; কি নন্দিত, কি নিন্দিত_ উভয়পক্ষ থেকেই উপরোক্ত দুটি দিক বিবেচনা করলে উল্লিখিত উপন্যাসটি সচেতন পাঠকের দৃষ্টি কাড়বে।
উপন্যাসের নাম নিয়ে অনেকের আগ্রহ জন্মাতে পারে আর এটা হওয়া অমূলক নয়। হাজার চুরাশি একটা কফিনের সিরিয়াল নম্বর_যাতে সুজাতার ছেলের মৃতদেহ ঐ কফিনে আবদ্ধ ছিল। শাসকের রোষানলে পড়ে, তাকে তার কয়েক বন্ধুসহ একদিন বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। যাইহোক পরবর্তীতে স্ব স্ব পরিবারকে তাদের স্বজনের লাশ নিতে উপরমহল থেকে নির্দেশনা জারী করা হয়। উপরোক্ত বিপ্লবীর যে কফিনে লাশ ছিল সেটার নামই হাজার চুরাশি। ঔপন্যাসিক নামটাকে শ্লেষের সাথেই গ্রহণ করেছেন বলা যায়। এত্তবড় সামাজিক শ্রেণী থেকে অবস্থান করলেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্যের দরুন বাবা-ছেলের সম্পর্কে টানাপোড়েন, একে অন্যকে শ্রেণীশত্রু হিসেবে বিবেচিত করা, কেউ কারো ভালো-মন্দের খোঁজখবর না রাখা এবং শেষে বিরুদ্ধপক্ষের আত্মাহুতিতেও অপরপক্ষের শ্রেণী সচেনতার কাছে পিতৃত্ব হার মানা_সবকিছু মিলিয়েই ঔপন্যাসিক আপাত তার উপন্যাসের নামটাকে একটি কফিনবদ্ধ অভিধায় শৃঙ্খলিত করলেও অর্ন্তঃগত অর্থের বিচারে তা অনেক অজানা, অদেখা আর যা সাধারণের বোধোদয়ের বাইরে_বিষয়গুলো ই মুখ্য হয়ে ধরা দেয়।
সমালোচনা না বলে এটাকে উপন্যাসের দৃশ্যগত দিকের ধারাবাহিক বর্ণনা-ই বলা অধিক যুক্তিযুক্ত হবে_যেখানে অতিতের কাহিনির সম্মিলনে এক মা তার ছেলে হারানোর স্মৃতি নিয়ে দিনের বারো ঘন্টায় বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্লটে আর বিভিন্ন চরিত্রে উপস্থিত হয়েছেন। আর তার সাথে অবশ্যই বাস্তবতার খানিক মিশেল একটু অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে সন্দেহ নেই। বামপন্থি আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে, মানুষের করুণ অবস্থা থেকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যায়ে, তৎকালীন রাজনীতির নানা পট পরিবর্তনে সমাজ তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তখনকার কাহিনি নিয়েই উপন্যাসটি রচিত। আর খোলাখুলি ভাবে বলতে গেলে ‘শ্রেণিশত্রু’ বিনাশের যে আদর্শগত শপথ নিয়ে তখনকার সময়ে মধ্যবিত্ত-নিম্মবিত্ত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের ধ্যানজ্ঞানে ছিল সোভিয়েতপন্থি দিক-নির্দেশনা_তারই বাস্তবায়নের নানাবিধ প্রচেষ্টা দেখা যায় উপন্যাসের কতিপয় চরিত্রে। অবশ্য রাষ্ট্রের যে ‘রিগ্রেসিভ’ বা ‘দমনমূলক’ ব্যবস্থা নিয়োজিত ছিল তখনকার সময়ে সেটা লেখক বেশ সচেতনতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাষ্ট্রের বুর্জোয়াসুলভ আচরণ আর তার প্রতিক্রিয়াশীল অংশ তথা পক্ষ ‘সর্বহারার’ নেতৃত্বে এগিয়ে এসে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে, শ্রেণিশত্রুদের নির্মূল করে, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার অভিপ্রায়েই বিরোধ বাধে উপরোক্ত দুইপক্ষের। ফলাফল অবশ্যই চরম ও করুণ হয়। নকশাল আন্দোলনের খানিক উপস্থিতি’র আভাস থাকলেও তাতে আর বিস্তৃতিলাভ করে নি। রগড়ে যাওয়া, বখাটে, রক্তগরম আর তথাকথিত সমাজতন্ত্র কায়েমের নামে সন্ত্রাসীবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া দুষ্টু ছেলেদের দমন করতে তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্রও বেশ নিষ্ঠুর পদক্ষেপ ই নেয়। যাইহোক উপন্যাসের পুরো কাহিনিই বর্ণিত হয়েছে এক মায়ের ঐ আন্দোলন বা বিপ্লবে বলি হওয়া ছেলের অতিত কাহিনি, তার সংগ্রাম, তার আত্মত্যাগ, তার আদর্শের আর তার জীবনদানের চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে-নিকেশের মধ্যে দিয়ে। মা সুজাতার দৃঢ়তা বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে ঘটনার স্তরে স্তরে। যে ছেলে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, সে ছেলের ত্যাগের প্রতিই সম্মান জানিয়ে সকল ধরণের ভোগ-বিলাস থেকে নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছেন। পারিবারিক মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান আর শ্রেণিগত পরিচিত_ইত্যাদী ত্রয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে সাধারণের একজন হিসেবে ভবিষ্যৎ মত ও পথে অবিচল থাকার শপথ নিয়েছেন। আর এখানেই গোর্কির উপন্যাসের মায়ের চরিত্রের সাথে মহাশ্বেতা দেবী’র উপন্যাসের মা সুজাতার সার্বিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
আরেকটি চরিত্রের কথা না বললেই নয় আর সেটা হল সুজাতার ছেলের বন্ধুরও একই শপথে নিজ জীবন বলিদানের ব্যাপারটি। নেহাতই সমাজের নিম্মতম অবস্থান থেকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, অজঁপাড়া গাঁ থেকে উঠা এসে, মানবমুক্তির নিমিত্তে অগ্রসরমান দামাল ছেলে_যার লক্ষ্য ছিল ভালো একটা চাকরি পেয়ে পরিবারের নিদারুণ দুঃখ-দুর্দশার লাঘব করবে, বড় বোনের বিয়ে দিবে আর নিজেরও সুস্থ-সুন্দর একটা জীবন গড়বে। যাইহোক তা আর হল না। সমাজের মূল সমস্যার পরিবর্তন বা সেখানে বিপ্লব ঘটিয়ে নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন না করলে অন্যগুলোতে পরিবর্তন কখনোই আসবে না। আর সেই পরিবর্তনই আনয়নের লক্ষ্য নিজেকে সপে দিল অজানা বিপদের দিকে। ফলস্বরুপ বিপ্লব আর সম্পন্ন হল না। অচিরেই নিজের প্রাণটা চলে গেল আর সাথে করে পরিবারের স্বপ্নকে অন্ধকারের অতলে নিক্ষিপ্ত করে দিয়ে সে জীবন নামক প্লট থেকে আগেভাগেই, অগোচরে বিদায় নিল।
তখনকার সময়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। হাজার হাজার শরণার্থী মানুষের আগমনে কলকাতা তথা সমগ্র ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন প্রদেশগুলোতে লোকে লোকারণ্য। তাদের সার্বিক সংস্থানের ব্যবস্থা করতে ভারত সরকার যখন রীতিমত নাজেহাল, তখনই নকশাল আন্দোলন শুরু হল। ভারতের অবস্থা তখন শোচনীয় থেকে শোচনীয়তার দিকে ক্রম অগ্রসরমান। ঔপন্যাসিক এই ইস্যুটায় কেমন জানি একটু বিরূপ মন্তব্য নির্দেশ করেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। যদিও এখানে স্পষ্টাস্পষ্টি কোনো কিছুর উল্লেখ নেই, তবু বাংলাদেশের শরণার্থী, তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম, ভারত সরকারের তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ, মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন এবং ভবিষতের দিক-নির্দেশনাতে কতটুকু স্বকীয়তা, মৌলিকতা বিরাজ করবে সে ব্যাপারে সন্দেহস্বরূপ অনির্দেশিত কটাক্ষপাত যে করেছেন_তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই! মোটামুটি এই টুকুই হল উপন্যাসের আদ্যোপান্ত। শেষে ঐ দরিদ্র ছেলের মারা যাওয়ার পর পরিবারের ভার তার বড় বোনের উপরে বর্তানোর দরুন, জীবন নামক চক্রে সে যখন নিষ্পেষিত তারই রূপক হিসেবে ঔপন্যাসিকের বিখ্যাত উক্তি দিয়ে বিদায় হচ্ছি_যা ভালো লাগে না, তাও করে চলার নাম কর্তব্য করা। চিতার আগুনে শরীরের স্নেহ পদার্থ যেমন পুড়ে যায়, সংসারের আগুনে সমুর দিদি পুড়ে ঝলছে গেছে’।