১৮২৮ খৃষ্টাব্দ । একটি জাহাজ বিস্তীর্ণ আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নিউ ফাউন্ডল্যান্ডেড় দিকে এগিয়ে চলেছে । জাহাজের ক্যাপ্টেন নিজের কেবিনের দরজা দিয়ে বাইরের দিকে উদ্দেশ্যহীণ ভাবে তাকিয়ে আছেন।হঠাৎ অদুরে ছায়ায় তিনি একটি লোকের দেখা পেলেন।লোকটিকে জীবনে কোনদিন তিনি দেখেননি ।
লোকটি জাহাজের কোন নাবিক তো নয়ই । আর-এ যাত্রায় জাহাজে কোন যাত্রীও নেওয়া হয় নি। তবে এ লোকটি এলো কোথা থেকে ! ক্যাপ্টেন হৃদয়ঙ্গম করলেন যে তিনি হয়তোবা কোন অগচ্ছায়া দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।এই চিন্তা মাথায় আসায় তিনি নিজের মনকে শক্ত করে তুললেন । ভয় না পেয়ে তিনি রীতিমত চেঁচিয়ে উঠলেন । তার চীৎকারে ছায়াটি যেমন ভাবে এসেছিল ঠিক সেই রকম নিঃশব্দে দৃষ্টির বাইরে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
ছায়াটি মিলিয়ে যাবার পর ক্যাপ্টেন লক্ষ্য করলেন, যে স্থানটিতে ছায়ামূর্তিটি দাঁড়িয়েছিল সেই স্থানের দেয়ালে হিজি বিজি আঁচড় কাটা ।তিনি একটুও ঘাবড়ালেন না। সাহস সঞ্চয় করে তিনি ঐ দেয়ালের কাছে এগিয়ে গেলেন। অবাক বিস্ময়ে তিনি লক্ষ্য করলেন, দেয়ালে কিছু যেন লেখা রয়েছে । তিনি চেষ্টা করে সেই লেখার পাঠোদ্ধার করলেন। ওখানে লেখা র্য়েছে-‘ অবিলম্বে জাহাজটি চালিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে যাও’।
কথাগুলো পড়ে ক্যাপ্টেনের রীতিমত আতঙ্ক হল। সেই সঙ্গে তার নিজের ভিতর হিজি বিজি আঁচড়কাটা লেখা অনুযায়ী চলবার জন্য বিশেষ আকুতি ও তাগিদ অনুভব করলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি জাহাজের দিক পরিবর্তন করে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে চললেন ।বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে জাহাজটি এভাবে চলবার পর অদূরে অন্য একটি জাহাজের দেখা পেল। ধীরে ধীরে ক্যাপ্টেন তার জাহাজটিকে ঐ জাহাজের সন্নিকটে নিয়ে গেলেন।তারপর নিজের জাহাজ থেকে অন্য জাহাজটিতে গিয়ে ক্যাপ্টেন লক্ষ্য করলেন যে সেখানে একটি মাত্র যাত্রী রয়েছে । তার বিস্ময়ের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল যখন তিনি দেখলেন যাত্রীটি আর কেউ নয় –এ সেই লোক-যাকে তিনি তার নিজের জাহাজের দেয়ালে আঁচড় কাটতে দেখেছেন।লোকটি ক্যাপ্টেনকে জানালো যে সে এইমাত্র গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। শুয়ে শুয়ে সে স্বপ্ন দেখছিল-অন্য একটি জাহাজ আসছে তাকে রক্ষা করতে ! ক্যাপ্টেনের কাছে কিন্তু ব্যাপারটা রহস্যই রয়ে গেল!