ভারতের কনৌজের ভট্টাচার্য পরিবার তীর্থ করার জন্য কাশীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। ভট্টাচার্যের স্ত্রী ছিলেন সন্তান সম্ভবা। পথের মধ্যে এক বনের ভেতর তার স্ত্রী পুত্রসন্তান প্রসব করেন। তীর্থের উদ্দেশে বের হয়েছেন বলে, সন্তানের চেয়ে ধর্মকে বড় করে দেখলেন তারা। বনের মধ্যে নবজাতক শিশুকে একটি শালপাতায় ঢেকে রেখে; তারা আবার কাশীর দিকে যাত্রা করলেন। তীর্থ শেষে ভট্টাচার্য স্বপ্নে দেখলেন, দেবতা তাদের পূঁজা গ্রহণ করেননি। সদ্যোজাত পুত্রকে বনে ফেলে আসায়, তাদের পাপ হয়েছে। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে, তারা বনে ফিরে গেলেন। বনে গিয়ে দেখেন একটি ময়ূর পাখা দিয়ে ঢেকে রেখেছে তাদের পুত্রকে। মা পুত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ময়ূরের আশ্রয়ে বেঁচেছিল বলে ছেলের নাম রাখেন ময়ূরভট্ট। এরপরে তারা বাংলাদেশের শরীয়তপুরে এসে বসবাস শুরু করে। ধানুকা গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৬শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী তাদের বাড়ি। ময়ূরভট্টের নামানুসারে এই বাড়ির নামকরণ করা হয় ‘ময়ূরভট্টের বাড়ি’।
হতে পারে এটি অলৌকিক ও কিংবদন্তীর লোককথা। যা এখন অযত্ন অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে। জানা যায়, এক সময়ে এখানে পূঁজা দেয়ার জন্য ভারত থেকে বহু লোক আসতো। আরেকটি লোককথা হলো, ময়ুরভট্টের বাড়ীটি মনসা বাড়ি নাম হলো কিভাবে, এ বাড়ীর এক কিশোর একদিন সকালে বাগানে ফুল কুড়াতে গিয়ে মস্তবড় একটি সাপ দেখে। পরপর দুইদিন দেখার পর তৃতীয় দিনে সাপটি তার পিছন পিছন বাড়ি এসে নাচতে থাকে। বাড়ির লোকজন এতে ভীষন ভয় পেয়ে যায়। সেইরাতে কিশোরের পরিবার মনসা দেবীকে স্বপ্নে দেখেন। তারপর তারা সেখানে মনসা মন্দির নির্মাণ করে পূজা শুরু করে। সেই থেকে এ বাড়ির নাম মনসা বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের পরে এখান থেকে প্রায় ৩৫ টি কাঠের বাঁধাই করা ও তুলট কাগজে লেখা পুঁথি উদ্ধার করা হয়েছিল। কয়েকটি কপি নেপালে ও বাংলাদেশ জাদুঘরে পাঠানো হয়। বর্তমানে কয়েকটি কপি শরীয়তপুর জেলার পাবলিক লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। ধারণা করা হয়, প্রাচীন মহিলা কবি জয়ন্তী দেবীর পিতা ছিলেন ময়ুরভট্ট। বলা হয়, ধর্মমঙ্গলের আদি কবি এই ময়ুরভট্ট। সঠিক ইতিহাস কোনটি, তা খুঁজে বের করতে আরো গবেষণার প্রয়োজন।