ঈশ্বর তার প্রার্থনায় খুশি হলেন। দৈববাণীতে দীঘি খননের আদেশ দিলেন তিনি এবং বললেন এতেই প্রজাদের দুঃখ কমবে। রাজ্যের প্রধান দীঘি খননকারী গন্ডমালিকে ডেকে রাজা আদেশ দিলেন দীঘি খননের । এই সুযোগটি নিলো কেউকা। গন্ডমালিকে নানা ভয় দেখিয়ে রাজি করালো রানি কমলাবতীর নামে দিঘিতে প্রথম কোপ দিতে। প্রচলিত ছিল, যার নামে দিঘিতে প্রথম কোপ দেওয়া হয়, তার আত্মবিসর্জন ছাড়া দীঘি পূর্ণ হয় না। ঈশ্বরের ইচ্ছায় দীঘি তো এমনিতেই পূর্ণ হত। কিন্তু মাঝখান থেকে কেউকা কমলাবতীর প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে এ কাজটি করল। ফলে যা হবার তা হল, দীঘি খনন হয়, জল তো ওঠে না। রাজা ভাবলেন তবে কি মিথ্যে দৈববাণী? তখন গন্ডমালি এসে তাকে সব কথা খুলে বলল। রানি কমলাবতীও শুনল সে কথা। প্রজাদের দুঃখ লাঘব করার জন্য রানী কমলাবতী স্বতঃস্ফুর্তভাবে দীঘিতে আত্মবিসর্জন দিল। দীঘি কানায় কানায় পূর্ণ হল। প্রজাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হল। সাধারণ মানুষের মাঝ থেকে উঠে আসা কমলাবতী সেই সাধারণমানুষের জন্যই তার প্রাণ বিসর্জন দিল।
এই গল্পগুলো পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে। বিসর্জনের জন্যে নারীকেই সবসময় বেছে নেয়া হয়। নারীদের দেবীর আসনে বসিয়ে তাদের ইচ্ছা – অনিচ্ছার প্রতি তোয়াক্কা না করে যুগ যুগ ধরে তাদেরকে সতী বানাবার ইচ্ছায় সমাজ তাদেরকে ব্যবহার করছে। নারীর এই আত্মত্যাগ সতীদাহ প্রথা থেকে শুরু করে দীঘিতে পানি উঠানোতেই সীমাবদ্ধ নয়। ধর্মে দেখা যায়, স্বামীর দীর্ঘায়ুর জন্যে স্ত্রীকেই উপবাস করতে হয়। তবে স্ত্রীর দীর্ঘায়ুর জন্যে কে উপবাস করবে? নারীরা আজও জ্বলছে। আগে সতী হওয়ার মাধ্যমে জ্বলেছে, এখন যৌতুকের জন্যে জ্বলছে। সমাজের এই সমস্ত কুসংস্কার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নারীদেরকে তাদের যোগ্য সম্মান দিতে হবে। সমাজে ও পরিবারে তাদের আত্মত্যাগকেও সম্মান করতে হবে। বিশ্ব নারী দিবসে এটাই স্টে কিউরিয়াস সিস্ ও সিদ্দিকী’স পরিবারের কামনা।