১৫৭৫ সালে সম্রাট আকবর বাংলা জয় করেন। কিন্তু তখনও পূর্ব বাংলা মোগলদের হাতে পুরাপুরি আসেনি। বারো ভূঁইয়াদের সাথে মোগলদের যুদ্ধ সবসময় লেগেই থাকত। একসময় মোগল সেনাপতি খানজাহান হোসেন কুলী খান, ওয়াজির খান, শাহবাজ খান, ঈসা খানের বিরুদ্ধে এবং বারো ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। আর এ কারণেই মানসিংহকে সম্রাট আকবর বাংলায় পাঠিয়ে দেন।
ঈশা খানকে পরাজিত করাই ছিল মানসিংহের মূল লক্ষ্য। কিশোরগঞ্জের হাওর এবং জঙ্গলবাড়িকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত ছিল ঈশা খাঁর রাজ্য। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য তিনি অনেকগুলো সুরক্ষিত দূর্গ তৈরী করেন। হাজিগঞ্জ, শেরপুর, দেওয়ানবাগ প্রভৃতি স্থানে নির্মিত হয় দূর্গগুলো। মানসিংহ ঢাকার কাছেই ডেমরায় অবস্থান নেন।
যুদ্ধে মানসিংহ পরাজিত হলেও ঈশা খা মানসিংহের সাথে দিল্লি গিয়েছিলেন। মানসিংহের স্ত্রী তাকে যেতে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন। কারণ মানসিংহ পরাজিত হয়ে একা ফিরে গেলে সম্রাট আকবর তাকে মৃত্যুদন্ড দিতেন। তবে সম্রাট আকবর ঈশা খানের মহত্ত্ব ও বীরত্বের জন্য তাকে বন্দি অবস্থায় না রেখে মসনদ-ই-আলা উপাধি দেন। খুশি হয়ে দান করেন ২৬টি পরগনা। ১৫৯৯ সালে ঈশা খানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুসা খান ২৬টি পরগনাসহ ঢাকা ও ময়মনসিংহে অনেক জায়গা জুড়ে রাজ্য গড়ে তুলেন।
সুরক্ষিত দুর্গ তৈরী করেন। সদর দপ্তর ছিল সোনারগাঁ পরগনার কাতরাপুরে। যাত্রাপুরে ছিল তার আর একটি সুরক্ষিত ঘাঁটি। ১৬০২ সালে রাজা মানসিংহ তার সদর দপ্তর ঢাকায় নিয়ে এলেন। আগে ছিল ভাওয়াল গড়ে। ঢাকেশ্বরী মন্দির অঞ্চলে এসে অবস্থান নিলেন মানসিংহ।
তার সৈন্য সামন্ত থাকতো উর্দু বাজারে। মুসা খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যই তোড়জোড় করছিলেন মানসিংহ। জানা যায় ঢাকেশ্বরী মন্দির এ সময় তিনি পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। ঢাকা রাজধানীর মর্যাদা পাওয়ার আগে একজন থানেদার এর অধীনে থানা হিসেবে ছিল।
সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর ১৬০৫ সালে দিল্লির সিংহাসনে বসেন জাহাঙ্গীর। আইন-ই-আকবরীতে ঢাকার নামের সমস্ত পরগনাটি ঢাকা বাজু নামে উল্লেখ আছে।