পাঞ্জাবের কালানৌর অঞ্চলটি ভারতীয় ইতিহাসের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্রাটের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সম্রাট অশোক এবং সম্রাট আকবরকে ভারতবর্ষের মহান ও শ্রেষ্ঠ দুই জন রাজা হিসেবে সম্মানিত করা হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে আকবর সম্রাট হিসেবে তার জীবন শুরু করেছিলেন এই কালানৌরে।

মুঘল সম্রাট হুমায়ুন বহু বছর অত্যন্ত ঝঞ্ঝাটপূর্ণ জীবনযাপন করেছিলেন। শেরশাহ সুরির আক্রমণের কারণে প্রায় ১৫ বছরের জন্য তাকে ইরানে নির্বাসিত জীবনে চলে যেতে হয়েছিলো। এক পর্যায়ে কঠিন লড়াইয়ের মাধ্যমে আবারো তিনি ফিরে আসেন ভারতবর্ষে। কিন্তু ফিরে আসার সাত মাসের মধ্যেই তার অকালমৃত্যু ঘটে। ১৫৫৬ সালের ২৭ জানুয়ারি মারা যান সম্রাট হুমায়ুন। মুঘল সাম্রাজ্য তখন শত্রু দিয়ে পরিবেষ্টিত। আর মৃত সম্রাটের ছেলের বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর। এই ১৩ বছর বয়সী ছেলে জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর সে সময় তার পরামর্শদাতা বৈরাম খানের সাথে মিলে কালানৌরে একটি বিদ্রোহ দমন করেছিলেন।

এর মধ্যে দিল্লীর চারদিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি গড়ে ওঠার কারণে দিল্লীতে তাদের প্রত্যাবর্তন ভীষণ জরুরি হয়ে উঠলো। কিন্তু সেখানে তো সম্রাটের ছেলের যাওয়া যথেষ্ট নয়, স্বয়ং সম্রাটকেই যেতে হবে। তাই বৈরাম খান আকবরকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করলেন।

আকবরের রাজ্যাভিষেক প্ল্যাটফর্ম: যেখানে চৌদ্দ বছর বয়সী বালক-বাদশাহকে হিন্দুস্তানের রাজার মুকুট দেওয়া হয়েছিল

১৫৫৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই কালানৌরেই সম্রাট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন আকবর। কালানৌরের যে স্থানটিতে আকবর তার মাথায় মুকুট পরেছিলেন, সেই জায়গাটি আজও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। স্থানটি অমৃতসর থেকে পাঠানকোট যাবার রাস্তায় পড়ে।

পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কালানৌর অঞ্চলটি। সুন্দর করে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে জায়গাটিকে। সেখানকার মানুষ তাদের মূল্যবান ঐতিহ্য সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। অদ্ভূত সুন্দর এই স্থানটির চারদিকে সবুজ ফসলের ক্ষেত। আর মাঝখানে মুঘল সম্রাট আকবরের প্রথম সিংহাসনটি হলুদ আলোয় জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে। ‘তখত-ই-আকবরী –দ্য নেগলেক্টেড থ্রোন অফ আকবর’ নামে পরিচিত আকবরের এই সিংহাসন। আগ্রার ফোর্ট বা ফতেহপুর সিক্রির সিংহাসনগুলোর মতো এর ডিজাইনটি এতোটা উন্নত না হলেও মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিংহাসন। প্লাস্টার করা সিংহাসনটিতে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।

ইট সিংহাসন যেখানে আকবর বসেছিলেন, পরবর্তী মুঘল রাজার মুকুট পরার জন্য।

জাঁকজমকহীন সাদামাটা একটি সিংহাসন ‘তখত-ই-আকবরী’। তবুও বিশাল স্মৃতির স্মারক হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে কালানৌরে। ভাবতেও অবাক লাগে, প্রায় ৪০০ বছর আগে এখানে বসেছিলেন ভারতবর্ষের একজন শ্রেষ্ঠ সম্রাট।

রেফারেন্স: