Indian film director
সুত্রাপুর তল্লাটটি বড়ই সুষমাময়। এই এলাকার  দিন ও রাতের চিত্রনাট্য চোখ ধাঁধানো। সুত্রাপুরের বৈদ্য জমিদার বাড়ীর এক ছেলের শৈশব কৈশোর আর প্রথম যৌবন  কেটেছে দৃশ্যের ভেতর দৃশ্যের এই চোখ ধাঁধানো চিত্রনাট্য দেখে । ছেলেটির জন্ম হয়েছিল ঢাকার সুত্রাপুরে জুলাই মাসের ১২ তারিখে ১৯০৯ সালে। জন্ম গ্রহনের প্রায় ৪৫ বছর পর পৃথিবী তার সিনমাটোগ্রাফির চোখে চোখ রেখে ওয়াইড এংগেল লেন্সে জীবনের বাস্তবতা দেখল “দো বিঘা জমিন” শীর্ষক সিনেমাতে। অসামান্য প্রতিভাধর ঢাকার ছেলের metaphysical layers দেয়া সিনেমাটি সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে  Cannes Film Festival জয় করল । ঢাকার সুত্রাপুরের এই ছেলের নাম বিমল রায়।
 
এখনকার যে তরুণ  Cannes Film Festival জয়ের স্বপ্ন দেখেন তিনি কানে সত্যজিৎ রায়ের অর্জনের কথা জানেন। অথচ দুর্ভাগ্য দেখেন ঢাকার ছেলে  বিমল রায়ের গৌরবের কথা আমরা খুব  একটা শুনিনা। তিনি Cannes Film Festival মাত করেছিলেন এমনকি পথের পাঁচালির মতো ছবিরও আগে। সেই ১৯৫৪ সালে কান উৎসব জয় করেছিলেন বিমল রায়। তিনি জয়  করেছিলেন  প্রিঁ ইন্টারন্যাশনাল বা সেরা আন্তর্জাতিক ছবির পুরস্কার।
 
এখানেই শেষ নয়  এই কান উৎসবে পরবর্তীকালে  প্রদর্শিত হয়েছে বিমল রায়ের আরও দুটো ছবি। দুটোই প্রতিযোগিতা বিভাগে। বিরাজ বহু (১৯৫৫) ও সুজাতা (১৯৬০)।
Dilip Kumar and Mr. Roy

Dilip Kumar and Bimal Roy

দিলীপ কুমার ও বিমল রায়ের মধ্যে অনেক সখ্যতা ছিল । বিমল বাবুর অনন্যসাধারন নির্মাণ শৈলী – প্রোযজনায় ও দিলীপ কুমারের অনবদ্য অভিনয় শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল ভারত উপমহাদেশের সর্ব কালের সেরা সিনেমা দেবদাস এবং মধুমতি। জীবন ঘনিষ্ঠ মধুমতি সিনেমার শুটিং চলাকালে একদিন দিলীপ কুমার বিমল রায়কে জিজ্ঞেস করলেন ,”বিমলদা,আপনি জীবনকে এত সাবলীল নিরলিপ্ত ভাবে দেখেন কিভাবে?” জবাবে বিমল রায় বললেন,আপনি কখনো জীবনে জ্বলজ্যন্ত ভাল্লুকের সামনে পড়েছেন? আমি আমার কৈশোরেই ভাল্লুকের মোকাবিলা করেছি। মানুষরুপী ভাল্লুক ।”
 
বাস্তবিক তাই। কৈশোরেই বিমল রায়ের বাবা মারা যান। তাদের সুত্রাপুর আর মানিকগঞ্জের জমিদারি লোপাট করল এষ্টেটের গোমস্তা। জমিদার পরিবারটিকে পথে বসিয়ে দিল। আটজন ছেলে মেয়েকে অনেক কষ্টে তার মা মানুষ করল। ১৯৪০ সালে জগন্নাথ কলেজে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কলকাতা হয়ে মুম্বাইয়ে স্থায়ী হলেন। তারপরে তো ইতিহাসে নাম লেখালেন,১৯৫৩ সালে নিজের প্রোডাকশন হাউজ খুলে ‘দো বিঘা জমিন’  নির্মাণ করে উপমহাদেশের সিনেমা আর্টকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসন দিলেন।তারপর একে একে নির্মান করেন ‘পরিণীতা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘মধুমতী’, ‘পরখ’, ‘প্রেমপত্র’, ‘বন্দিনীর মত ব্যবসা সফল জনপ্রিয় সিনেমা।
 
ঋত্বিক ঘটকের লেখা থেকে তিনি তৈরী করেন ‘মধুমতী’। এই সিনেমায় অসামান্য কাজ করেন দিলীপ কুমার ও বৈজয়ন্তীমালা। আপনারা জেনে অবাক হবেন এই সিনেমা থেকে অনুপ্রানিত হয়ে পরে রিমেক করা হয় ১৯৮১ সালে ‘কর্জ’ ও ২০০৭ সালে ‘ওম শান্তি ওম’।
Bimal Roy's Movies seen

বিমল রাযয়ের একটা ছিনেমার দৃশ

 
সলিল চৌধুরীর সংগীতে বিমল রায়ের মধুমতি সিনেমার গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।আজও কান পাতলে শুনবেন সুত্রাপুরের গলিপথ দিয়ে দল বেঁধে হাঁটতে হাটতে ছেলেপুলের দল গাইছে ,”সুহানা সাফার হায় ইয়ে মাওশাম হাসি,হামে ডার হায়কে হাম খো না জায়ে কাহি।”দুর্ভাগ্যজনক এই ছেলেপুলের দল জানেনা তাদেরই সুত্রাপুরের পুর্বজ এই জনপ্রিয় গানটির নির্মাতা।
 
১২ জুলাই,শ্রদ্ধা স্মরণ ঢাকার ছেলে বিমল রায়ের জন্ম বার্ষিকী।
Bimal Roy (1909-1965)

বিমল রায়

 
কৃতজ্ঞতা :
 
বিমল রায়ের উপর এই লেখাটা কাগজে কলমে হয়েছে Azim Bakhsh ভাইয়ের সৌজন্যে।তিনি আমাকে দারুন সব তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন,লিখতে insist করেছেন।সাধুবাদ সিংহভাগ প্রিয় অগ্রজের প্রাপ্য।কৃতজ্ঞতা সব সময়ের