প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে মন্‌স্‌ এ একমাস ধরে তুমুল যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধের  ঠিক পর পরই লন্ডনের ‘ইভনিং নিউজ’ পত্রিকায় একটি সংবাদ পরিবেশিত হল। এই সংবাদ সমগ্র দেশবাসীর মনে এক অদ্ভুত অনুভূতির সঞ্চার করলো। আজ অবধিও মানুষ কিন্তু এই সংবাদের সঠিক জবাব খুঁজে পায়নি।

অয়েল্‌স্‌এ জন্মগ্রহণকারী সাংবাদিক এবং গ্রন্থাকার আর্থার ম্যাশেন এই সংবাদটি পরিবেশন করে জনমনে এই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। সংবাদটি ছিল এই যে ক্ষুদ্র বৃটিশ আক্রমণকারী সৈন্য বাহিনী Expeditionary Force তাদের চেয়ে তিনগুন বড় এক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই জয়ী হন। আর জয়ের পেছনে এক অলৌকিক ঘটনা জড়িত ।যুন্ধ চলাকালীন জার্মান ও বৃটিশ সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন এক সেনাবাহিনীর আবির্ভাব ঘটেছিল। তারা বৃটিশ সেনাবাহিনীর সহায়তা করায় –বলা বাহুল্য, জার্মান বাহিনী সম্পূর্ণভাবে পরাভূত হয়েছিল।

১৯১৪ সালে ২শে আগষ্ট এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় । সেপ্টেম্বর মাসে এই সংবাদ যখন খবরের কাগজে প্রকাশিত হয় ,যুদ্ধের অবশিষ্ট সৈন্য যারা তখনও বেঁচেছিলেন, তারা ফ্রান্সে অবস্থান করছিলেন। পরবর্তী বছর মে মাসের একজন খৃষ্টান ধর্ম যাজকের অধীন প্রদেশ বা পল্লীর গির্জার ম্যাগাজিনে বেনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। এই সংবাদটি পরিবেশনের সময় তিনি একথাও উল্লেখকরেন যে সংবাদটি তিনি একজন ব্রিটিশ অফিসারের কাছ থেকে শুনেছেন ।অফিসারটি ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়ে সংবাদটি সত্য বলে দাবী করেন।

অফিসারটি বলেন,তার সেনাবাহিনী  যখন মন্‌স থেকে পিছু হটে আসছিল, একদল অশ্বারোহী জার্মান সৈন্য তখন তাদের দিকে দ্রুত আক্রমণ চালায়। ধাবমান জার্মান সৈন্যের হাত এড়াবার জন্য তারা পূর্বনির্দ্ধারিত স্থানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে । উদ্দেশ্য সেখান থেকে তারা প্রতিআক্রমণ চালাবে। কিন্তু ইতিপূর্বেই জার্মান বাহিনী পূর্বনির্দ্ধারিত স্থান দখল করে নেয়। চতুর্দিক থেকে বেষ্টিত হয়ে বৃটিশ বাহিনী খুবই বেকায়দায় পড়ে যায়। মৃত্যু অবধারিত জেনে তারা মরিয়া হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রতিআক্রমণের জন্য তারা প্রসত্ততি নেয়-।কিন্ত কি আশ্চর্য ! তারা দেখতে পায় একদল স্বর্গীয় দূত শত্রুসৈন্য ও তাদের বাহিনীর মাঝে অবস্থান নিয়েছে। আর এই অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখে জার্মান বাহিনীর ঘোড়াগুলো ভীত হয়ে পরিত্রাহি চিৎকার শুরু করে দেয় ও ইতস্ততঃ ধাববান হয়ে পালিয়ে যেতে থাকে।

আর –জার্মান বাহিনীর তরফ থেকে জানা যায় যে তাদের যখন বৃটিশ বাহিনীকে আক্রমণের আদেশ দেয়া হয় তারা সোজাসুজি তা করতে অস্বীকার করে। কারণ স্বরূপ তারা জানায় যে তাদের চেয়ে বহুগুণ বড় সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করা বা তুলনা মাত্র। আর আশ্চর্য! মিত্রবাহিনীর সংবাদে আবগত হওয়া যায় যে সেখানে একটি বৃটিশ সৈন্য অবস্থান করছিল না।

কল্পনা প্রবণ লেখকঃ

মন্‌স  এর সংবাদ গুলোর কোনটাই কিন্তু সরাসরি কেউ দেখেছেন এমন কারোর কাছ থেকে শোনা যায় নি। প্রতিক্ষেত্রেই দেখা গেছে সংবাদটি তারা অন্যের কাছ থেকে শুনে পরিবেশন করেছেন। কেউ করেছেন বেনামে। হয়তবা তাদের আশঙ্কা ছিল-তাদের মুখ থেকে এই অদ্ভুত কাহিনী শুনে লোক হয়ত বিশ্বাস করবেনা। কল্পিত কাহিনী হিসেবে উড়িয়ে দেবে। কিংবা চাকুরিতে তাদের উচ্চপদে উন্নতির অন্তরায়ের  আশঙ্কাও হয়ত তাদের সরাসরি বলা থেকে বিরত রাখে।

ম্যাশেন নামে একজন লেখক ছিলেন। অপ্রাকৃত বিষয় ও ভূতের গল্প লিখে লিখে ইতিমধ্যে তিনি বেশ সুনাম ও কিনেছিলেন।তিনি হারমেটিক অর্ডার অব দ্যা গোল্ডেন ডন নামে একটি মিষ্টিকাল সোসাইটিরও সভ্য ছিলেন। বহু বৎসর প্র তিনি দাবী করেন এগুল কল্প কাহিনী ছাড়া কিছুই নয়।

এ কথার পর ব্যপারটার রহস্য যেন আরও ঘনীভূত হয়ে উঠলো। এই ঘটনার সত্যতার সম্বন্ধে সকলে অস্বীকার করলেও যুদ্ধ প্রত্যাগত শতশত সৈন্য মন্‌স্‌ এর সেই অদ্ভুত ঘটনার কথা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে স্মরণ করেন। দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য হন যে নিশ্চয় কোন অপ্রাকৃত কিছু একটা মন্‌স্‌এ সত্যিই ঘটেছিল। নইলে সৈন্যরা একথা বলার এত জোর কথায় পায়?

সৈন্যরা কি এমন কোন ঐশ্বরিক কাহিনী শুনে সেটাতে কল্পনার রং চড়িয়ে সত্য বলে ধরে নিয়েছিল? কিংবা বৃটিশ ও জার্মান উভয় বাহিনী কি এমন কিছু মরীচিকার সম্মুখীন হয়েছিল-যা তারা সত্য বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে? সত্যিই কি দেব পুরুষগণ দৈবলোক থেকে নেমে এসে জার্মান বাহিনীর সম্মুখীন হয়ে বৃটিশ বাহিনীর রক্ষা কর্তার কাজ করেছিল?

এই ঘটনার ব্যাখ্যা যাই হোকনা কেন-বৃটিশ বাহিনী কিন্তু সত্যিই অলৌকিক ভাবে রক্ষা পেয়ে গিয়েছিল। অলৌকিক ঘটনার মুখোমুখি হয়ে শত শত সৈন্যের জীবন নাশের পরেও দক্ষতা ও সাফল্যের সাথে সেনাবাহিনী পিছু হটে আসে এবং ব্রিটিশ B.E.F বাহিনী শক্তিশালী বাহিনী হিসাবে অটুট থাকে।