কথায় বলে, কুকুর পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যে কি না নিজের চাইতেও তার মনিবকে বেশি ভালবাসে। আজকাল ইন্টারনেটের বদৌলতে ফেসবুক পেজগুলোতে কুকুরের বিশ্বস্ততা নিয়ে নানান রকমের ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়, জানা যায় বিভিন্ন অজানা তথ্য। তাছাড়া যারা কুকুর পোষেন, তারা অবশ্যই জানেন কুকুর কতটা প্রভুভক্ত প্রাণী।
ইতিহাসের পাতা ধরে পেছন দিকে এগোলে আমরা দেখতে পাই, সেই আদিম সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে চারপেয়ে এই জন্তুটি সবসময় মানুষের কাছাকাছি থেকেছে। শিকার, পশু পাহারা দেয়া, বাড়ি পাহারা দেয়া থেকে শুরু করে যেকোনো বিপদ-আপদে কুকুর মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কুকুর আর মানুষের বন্ধুত্ব নিয়ে গল্প-কাহিনী আর সিনেমার কোনো অভাব নেই। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে কয়েকটি কুকুরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যেগুলো স্মরণীয় শুধু তাদের অপার বিশ্বস্ততার জন্য, এ খবরই বা কয়জন জানেন?
১. রুসওয়ার্প
ইংল্যান্ডের গার্সডেল শহরের ধারেই ছোট একটা রেলস্টেশন, সেখানে সেটল-কার্লায়ল নামে একটা রেললাইনও ছিল। কিন্তু ১৯৮০ সালে কোনো এক কারণে গার্সডেল রেলস্টেশনকে এই রেললাইনটি বন্ধের জন্যে নোটিশ দেয়া হয়। এই রেললাইনটিকে বাঁচাতে তখন শহরের প্রায় ৩২,০০০ মানুষ একটি পিটিশনে সাক্ষর করে। মজার ব্যাপার, ৩২,০০০ মানুষের সাক্ষরের সাথে পিটিশনে ছিল একটি কুকুরের পায়ের থাবাও!রুসওয়ার্প নামের বাদামি-কালো রঙের ইংলিশ কলি এই কুকুরটি ছিল শহরের বাসিন্দা গ্র্যাহাম ন্যুটেলের বিশ্বস্ত সঙ্গী। আর তাই মনিবের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিল এই প্রাণীটিও।
১৪ বছর বয়সী রুসওয়ার্পের পায়ের ছাপকে বৈধ একটি সাক্ষর হিসেবেই পিটিশনে রাখা হয়েছিল।১৯৯০ সালের ২০ জানুয়ারির সুন্দর এক সকালে গ্র্যাহাম রুসওয়ার্পকে সঙ্গে করে তার হোম টাউন বার্নলি থেকে সারাদিনের জন্যে ঘুরতে বের হন। গন্তব্য ল্যান্ড্রিনড্রড ওয়েলস। কিন্তু সেদিন সারাদিন গ্র্যাহাম আর রুসওয়ার্প বার্নলি ফিরে এলো না। দিন গড়িয়ে যখন পরদিন সকাল হলো, তখন টনক নড়ল প্রতিবেশীদের, শুরু হলো খোঁজাখুঁজি। সপ্তাহজুড়ে পোস্টার লিফলেট ইত্যাদি বিলি করা হলো, কিন্তু গ্র্যাহাম আর রুসওয়ার্পের হদীস কেউ পেল না।প্রায় ৩ মাস পর অবশেষে এপ্রিলের ৭ তারিখ একটি পাহাড়ি ঝর্ণার পাশে তাদের খোঁজ মেলে। গ্র্যাহাম জীবিত ছিলেন না, কিন্তু রুসওয়ার্প বৃষ্টি আর ১১ সপ্তাহের ভয়াবহ শীত উপেক্ষা করেও মনিবের মৃতদেহকে পাহারা দিয়ে রেখেছিল। ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর ঠান্ডায় জর্জরিত রুসওয়ার্প ছিল মারাত্মক দুর্বল। কিন্তু এত কিছুর পরও সে গ্র্যাহামের দেহ ফেলে কোথাও যায়নি। সে এতই দুর্বল ছিল যে, তাকে পাহাড় থেকে বয়ে নিয়ে আসতে হয়।
শহরে পর্যাপ্ত চিকিৎসার পর রুসওয়ার্প খানিকটা সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু বেঁচে থাকার ইচ্ছা বুঝি মনিবের সাথেই চলে গিয়েছিল তার। আর তাই অনেক সেবা-শুশ্রূষার পরও গ্র্যাহামের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটু পর সে-ও পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। গ্র্যাহামের কফিনটি কবরে নামানোর সময় রুসওয়ার্প করুণ গলায় যেভাবে আর্তনাদ করেছিল, গার্সডেলের লোকেরা বহুদিন তা মনে রেখেছে।
২. ববি: দ্য ওয়ান্ডার ডগ
এবারের গল্পটা আমেরিকার অবিস্মরণীয় কুকুর ববিকে নিয়ে, যে মনিবের প্রতি ভালবাসার টানে অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলেছিল। ব্রেজিয়ার পরিবারের ২ বছর বয়সী এই স্কচ কলি প্রজাতির কুকুরটি ছিল ফ্র্যাঙ্ক ব্রেজিয়ারের চোখের মণি।১৯২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফ্র্যাঙ্ক ও এলিজাবেথ ব্রেজিয়ার ছুটি কাটানোর জন্য নিজ শহর সিলভারটন থেকে ইন্ডিয়ানা স্টেটের উদ্দেশ্যে গাড়ি করে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে আদরের কুকুর ববি তো রয়েছেই। কিন্তু বিধি বাম, ইন্ডিয়ানায় পৌঁছে ছোট্ট ববি কী করে যেন আলাদা হয়ে গেল ব্রেজিয়ারদের কাছ থেকে। অনেক খুঁজেও ববিকে না পেয়ে ভগ্ন হৃদয়ে ব্রেজিয়াররা সিলভারটনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।
ববির আশা একপ্রকার ছেড়েই দিলেন দুজনে।১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারির এক সকালে সিলভারটনে নিজেদের বাড়ির দরজায় আঁচড়ের শব্দে এলিজাবেথ একটু যেন ভয়ই পেলেন। পায়ে পায়ে গিয়ে সদর দরজা খুলতেই যা দেখলেন তা বিশ্বাস করা যায় না। তার আদরের ববি দরজায় সটান দাঁড়িয়ে আছে! ববির অবস্থা অবশ্য খুবই খারাপ। টানা ৬ মাসেরও বেশি সময় প্রায় ২,৫৫১ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ইন্ডিয়ানা থেকে সিলভারটন এসেছে ববি। তার শরীর হাড্ডিসার, বিভিন্ন অংশ লোমহীন, পায়ের নখ বালি আর পাথরে লেগে ক্ষয়ে গেছে। ছোট্ট এই চারপেয়ে নায়কের কথা রাতারাতি সবাই জেনে গেল।ববির অভাবনীয় কীর্তির জন্যে সে পেয়েছিল অজস্র পুরষ্কার। তার মাঝে রয়েছে অনেকগুলো মেডেল, ট্রফি, শহরের বিভিন্ন স্থানের চাবি, এমনকি দামি পাথরখচিত কলারও। ববিকে নিয়ে ‘রিপ্লি’স: বিলিভ ইট অর নট’ এ একটি লেখাও স্থান পেয়েছিল, এমনকি তার এই নায়কোচিত ভূমিকায় ববি নিজেই অভিনয় করেছিল একটি ফিল্মে।৩ বছরের মাথায় ১৯২৭ সালে ছোট্ট সাহসী ববির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর পোর্টল্যান্ডে পোষা প্রাণীদের কবরস্থানে তাকে কবর দেয়া হয়। সিলভারটনের মানুষ তখন তার সম্মানে একটি পোষা প্রাণীদের প্যারেডের আয়োজন করে। এরপর থেকে প্রতিবছর এই প্যারেডটি নিয়মিত হয়ে আসছে। সিলভারটন শহরে ববির ছোট্ট একটি বাড়ি এবং অবিকল ববির মতো দেখতে একটি ছোট্ট ভাস্কর্যও তৈরি করে শহরবাসী। তাকে শহরের নাগরিকের মর্যাদাও দেয়া হয়।
৩. ফিডো
ল্যাটিন ভাষায় ফিডো শব্দের অর্থ ‘বিশ্বস্ত’। কাজেই, ফিডো নামটি যেকোনো কুকুরের জন্যেই নিঃসন্দেহে দারুণ একটি নাম। আব্রাহাম লিংকন তার কুকুরের নাম রেখেছিলেন ফিডো, তার অনেক বছর আগে থেকেই রোমানরা কুকুরের জন্য এই নামের প্রচলন শুরু করে। তো ফিডো নামের একটি কুকুরের বিশ্বস্ততার গল্প জানা যাক।ইতালির ফ্লোরেন্স শহর থেকে খানিকটা দূরের ছোট্ট শহর বোর্গো স্যান লরেঞ্জো। সেখানে কার্লো সোরিয়ানি নামের একজন শ্রমিক বাস করতেন। ১৯৪১ সালের এক শীতের সন্ধ্যায় সোরিয়ানি ফ্যাক্টরি থেকে কাজ করে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার পাশে ছোট একটি আহত কুকুরছানা খুঁজে পান। মায়াবশত তিনি একে বাড়ি নিয়ে আসেন আর সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। কিছুদিনের মাঝেই কুকুরছানাটি প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে, দেহে রং ফিরে আসে। সোরিয়ানি তার নাম রাখেন ফিডো।
ফিডো আশেপাশের সকলের মন জয় করে ফেলে সহজেই, সবার বন্ধু হয়ে যায় সে। প্রতিদিন সকালে সে সোরিয়ানিকে কাজে যাওয়ার সময় বাস স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিতো, সন্ধ্যাবেলা সোরিয়ানি বাড়ি ফেরা পর্যন্ত স্টেশনেই থাকতো। সোরিয়ানি ফিরে এলে ফিডো ঝাঁপিয়ে পড়তো তার কোলে, এরপর দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরতো।সবকিছু ঠিকভাবেই চলছিল, অন্তত বছর দুই পর্যন্ত। এর মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ গুরুতর অবস্থায় চলে গেল। ১৯৪৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর সোরিয়ানির ফ্যাক্টরিতে একটি বোমা হামলা হলো, সোরিয়ানি এতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করল। ফিডোকে সে কথা বলবার কে-ই বা ছিল? অন্যদিনের মতো সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সোরিয়ানির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো, কিন্তু সোরিয়ানি ফিরে এলো না।ফিডো ভাবলো, বাড়ি গেলে হয়তো সোরিয়ানিকে দেখতে পাবে। সে ছুটে বাড়ি ফিরলো, কিন্তু তাকে দেখতে পেল না। হতাশ ফিডো বন্ধুকে দেখার আশায় পরদিন বিকেলে আবার স্টেশনে গেল, তবু দেখা মিললো না। তার পরদিন আবার, তার পরের দিনও। এভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ফিডো আগ্রহভরে প্রতিদিন বিকেলে বাস থেকে সোরিয়ানিকে নামতে দেখার আশায় বসে থাকতে লাগলো। অবশেষে ১৪ বছর পর এই অপেক্ষার অবসান হলো তার, পৃথিবী থেকে বিদায় নিল ফিডো।শহরের সবাই এই অপার বন্ধুত্বের কথা জেনে গেল। ইতালির জাতীয় দৈনিক ‘লা নাযিওন’ ফিডোকে নিয়ে একটি কলাম প্রকাশ করেছিল, যেখান থেকে মোটামুটি সমস্ত ইউরোপের লোকজন ফিডোর কথা জানতে পারল। ফিডোকে স্মরণ করে শহরের টাউনহলে তার একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরি করা হয়।
১৯৫৮ সালের গ্রীষ্মের একটি ঝরঝরে দিনে ফিডো যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়, তাকে সোরিয়ানির কবরের বাইরে একটি জায়গায় সমাধিস্থ করা হয়। ১৪ বছরের অপেক্ষার পর ফিডো অবশেষে বন্ধুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়।
৪. গেলার্ট
এবার একটি পুরানো লোকগাঁথার বিখ্যাত একটি কুকুরের করুণ গল্প শোনা যাক। অনেক অনেক কাল আগে উত্তর ওয়েলসের বেডগেলার্ট নামে একটি গ্রামে লিওয়েলিন নামে এক রাজপুত্র ছিল। তারই পোষা কুকুরের নাম গেলার্ট। মনিবের জন্য সর্বদা নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকতো গেলার্ট। আর তাই তো রাজপুত্র কখনও তাকে কাছছাড়া করতেন না, করতেন অসম্ভব আদর।জানা গেছে, গেলার্টকে ইংল্যান্ডের রাজা জন লিওয়েলিনকে উপহার হিসেবে দিয়েছেলেন। লিওয়েলিনের অবশ্য আরও অনেক কুকুর ছিল, কিন্তু রাজার দেওয়া এই হাউন্ডটি কেন যেন তিনি অনেক বেশি পছন্দ করতেন। রাজপুত্র ছিলেন খুব ভাল মাপের একজন শিকারী।
শিকারে যাওয়ার সময় কখনওই গেলার্টকে রেখে যেতেন না। প্রতিটি শিকারে যাওয়ার সময় তিনি বিশেষ এক ধরনের ভেঁপু বাজাতেন, আর সেই শব্দে তার সবগুলো কুকুর বুঝে ফেলত যে এটি শিকারে যাবার সংকেত। তৎক্ষণাৎ সবাই ছুটে আসতো, সেই সাথে গেলার্টও।যে দুর্ভাগ্যজনক দিনটির কথা বলছি, সেদিনও রাজপুত্র শিকারে যাওয়ার জন্য ভেঁপুতে আওয়াজ করেন। সেই আওয়াজ পেয়ে তার সব কুকুর ছুটে এল, কিন্তু কেন যেন গেলার্ট ভেঁপুর আওয়াজ খেয়াল করতে পারলো না। রাজপুত্র খানিকক্ষণ তাকে এদিক ওদিক খুঁজে মন ভার করে তাকে ছাড়াই শিকারে চলে গেলেন। প্রাসাদে রয়ে গেল তার স্ত্রী ও এক বছর বয়সী ছোট্ট ছেলে।শিকার শেষে রাজপুত্র সন্ধ্যায় প্রাসাদে ফিরলেন। সবার প্রথমেই গেলার্ট তাকে স্বাগত জানাতে দৌড়ে এল। হঠাৎ রাজপুত্র খেয়াল করলেন, গেলার্টের সারা শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন। চোয়াল রক্তমাখা, লাল টকটকে তাজা রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ছে দাঁত বেয়ে নিচে। গেলার্ট মহা উত্তেজিত আর উৎফুল্ল। অজানা আশংকায় রাজপুত্রের মন ভারি হয়ে গেল, তিনি দৌড়ে নিজ কামরায় এলেন, গেলার্টও তাকে অনুসরণ করল। কামরায় এসে তিনি আঁতকে উঠলেন। তার ছোট ছেলেটির বিছানা ওলটানো, সমস্ত কামরা লন্ডভন্ড। কিন্তু ছোট বাচ্চাটির কোনো চিহ্নই নেই কোথাও।রাজপুত্র গেলার্টের দিকে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর রেগে উঠলেন। নিশ্চয়ই তার অনুপস্থিতিতে জানোয়ারটা তার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে, হয়তো খেয়েও নিয়েছে। আর দেরি করলেন না, খাপ থেকে তলোয়ার বের করে তিনি উৎফুল্ল গেলার্টের হৃৎপিণ্ড বরাবর তীক্ষ্ণ তলোয়ারটি ঢুকিয়ে দিলেন। পুরো সময়টা গেলার্ট অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মনিবের দিকে।
গেলার্ট যখন কাতর শব্দ করতে করতে মৃতপ্রায়, ঠিক তখন রাজপুত্র কোথায় যেন বাচ্চার একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে তিনি ছেলের বিছানাটি সরিয়ে দেখলেন, তা ছেলে হাসিমুখে শুয়ে আছে। আর ছেলেটির পাশেই বিশাল বড় এক নেকড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মরে পড়ে আছে। ঘটনাটি বুঝতে রাজপুত্রের এক মুহূর্তও দেরি হল না, তিনি বুঝলেন গেলার্ট আসলে নেকড়েটিকে মেরে বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আর সেই ঘটনাটি দেখাতেই মনিবের কাছে দৌড়ে গিয়েছিল সে।রাজপুত্র ছুটে গেলেন গেলার্টের কাছে, কিন্তু ততক্ষণে সে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ফেলেছে। প্রিয় কুকুরকে নিজ হাতে হত্যা করে রাজপুত্র শোকে প্রায় পাগল হয়ে গেলেন। তারপর ভগ্ন হৃদয়ে গেলার্টের মৃতদেহ তার রাজ্যের সবচাইতে উঁচু জায়গায় সমাধিস্থ করলেন, যাতে সবাই তার এই বিশ্বস্ত কুকুরের কথা জানতে পারে। এরপর থেকে গেলার্ট মানুষের মনে ও গল্পে স্থান করে নিয়েছে।
৫. ক্যানেলো
স্পেনের দক্ষিণপার্শ্বে কেডিজ শহরে নিভৃতে বাস করতেন এক বৃদ্ধ। শহরের হট্টগোল থেকে একটু দূরে থাকতেই যেন পছন্দ করতেন তিনি। পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধব বলতেও কেউ ছিল না তেমন। কিন্তু একা থাকাটা আর হয়ে উঠলো না আর, ছোট্ট ক্যানেলো এসে তার জীবন কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দিল।একমাত্র সঙ্গী কুকুর ক্যানেলোর সাথে প্রায়ই দেখা যেত বৃদ্ধকে। কখনও প্রাতঃভ্রমণে, কখনও উদ্দেশ্যবিহীন ঘোরাঘুরি, আবার কখনও বা ফূর্তিতে ভরা বিকেল কাটাতেন তারা একসাথে। তবে সপ্তাহে একদিন খুব সকালে তাদের যাত্রা শেষ হত পুয়ের্তো দেল মার হাসপাতালে গিয়ে।
বৃদ্ধের কিডনী সংক্রান্ত কিছু জটিলতা ছিল, তাই প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাতে হতো। হাসপাতালের ভেতর ক্যানেলোর যাবার অনুমতি ছিল না। কিন্তু সঙ্গীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে সে সবসময় গেটের বাইরে দুই থাবার ভেতর মুখ গুঁজে অপেক্ষা করতো। বৃদ্ধ না ফেরা পর্যন্ত একইভাবে বসে থাকতো। অবশেষে বিকেলে দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরতো।এই ছিল দুজনের নিত্যদিনের রুটিন। এলাকার সবাই তাদের চিনতো, তাই অপেক্ষমান ক্যানেলোকে সবাই হাসি দিয়ে স্বাগত জানাতো। কিন্তু ভাল দিনগুলো খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়, তাদের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হলো না। আশির দশকের শেষ দিকের কথা। ক্যানেলো তার বৃদ্ধ সঙ্গীকে নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও হাসপাতালে এলেন। বৃদ্ধ যাবার পর বাইরে বসে রইল সে। কিন্তু এবার আর সব ঠিকঠাক গেল না।ডায়ালাইসিসের সময় বৃদ্ধের খুব শারীরিক জটিলতা দেখা দিল, ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেও তা ঠিক করতে পারলেন না। হাসপাতালের বিছানায় মারা গেলেন তিনি। ওদিকে ক্যানেলো কিন্তু তার কিছুই জানে না। সে তবু ঠায় সটান বসে রইলো বৃদ্ধের ফেরার অপেক্ষায়। কিন্তু প্রতিদিনের মতো কেউ এলো না তার জন্য।ক্যানেলো সেখান থেকে নড়ল না। সেই পুয়ের্তো দেল মার হাসপাতালের গেটের বাইরেই সে অপেক্ষা করে যেতে লাগল দিনের পর দিন। স্থানীয় লোকজন বুঝে গেল, কুকুরটি এখান থেকে যাবে না। তখন তারা সাধ্যমতো তাকে খাবার দিতে লাগল। পথচারীরা যাওয়া আসার সময় তাকে অনেক আদর করতো, এছাড়া এটা সেটা খেতে দিত। কিন্তু ক্যানেলো নতুন কোনো পরিবার খুঁজলো না, নতুন কাউকে সঙ্গী হিসেবেও গ্রহণ করল না। পুরানো সঙ্গীর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে যেতে লাগল।
দীর্ঘ ১২ বছর পর ক্যানেলোর এই উদগ্রীব অপেক্ষার পালা অবশেষে শেষ হলো। ২০০২ সনের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ, সে নিত্যদিনের মতো হাসপাতালের বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় একটি গাড়ি দ্রুতবেগে তার গায়ের ওপর উঠে গেল। গাড়িচাপায় সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো ক্যানেলো।ক্যানেলো ছিল ক্যাডিজ শহরের সবার অত্যন্ত প্রিয়। সে কারো নিজস্ব কুকুর ছিল না, সে ছিল সমস্ত শহরবাসীর কুকুর। তাই তো ক্যাডিজের লোকজন তার নামে একটি রাস্তার নামকরণ করে, তার একটি ছোট প্রতিকৃতিও তৈরি করে শহরে।
৬. হাচিকো
যে কুকুরটির কথা বলে শেষ করবো, তার কথা না বললে আসলে গোটা লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বিশ্বস্ত কুকুরের প্রসঙ্গে হাচিকোর নাম কি বাদ যেতে পারে?যাকে কেন্দ্র করে গল্পের সূচনা, সেই ইজাবুরো উনো জাপানের শিবুয়া এলাকায় থাকতেন। বলছিলাম ১৯২০ সালের কথা, ইজাবুরো ছিলেন টোকিও ইউনিভার্সিটির কৃষি বিভাগের একজন নামকরা প্রফেসর। তার আদরের কুকুরটি তার নিত্যসঙ্গী, আকিতাইনু প্রজাতির এই পশমী বলের নাম ছিল হাচিকো। আদর করে তাকে হাচি বলেও ডাকতেন তিনি।ইজাবুরোর প্রতিদিনের রুটিন মোটামুটি একইরকম। সকালবেলা হাচিকোকে সাথে নিয়ে শিবুয়া স্টেশনে আসতেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার জন্য ট্রেনে উঠতেন হাচিকে বিদায় দিয়ে। লেকচার শেষ করে বিকাল ৩টার সময় তিনি আবার ফিরে আসতেন শিবুয়া স্টেশনে, যেখানে হাচি তার জন্য অপেক্ষা করতো। এরপর দুজনে মিলে হেঁটে সেখান থেকে বাড়ি ফিরতেন। হাচির ছোট্ট পৃথিবীতে এই সময়গুলোই ছিল সবচেয়ে মূল্যবান।হাচিকো বাকি জীবনটা এভাবেই হয়তো কাটিয়ে দিতে পারত, কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠল না। ১৯২৫ সালের দিকে ইজাবুরো যখন ক্লাসে লেকচার দিচ্ছিলেন, সেই অবস্থাতেই তার হঠাৎ করে স্ট্রোক হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেবার পর সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে বিকাল ৩টায় হাচিকো উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করে রইলো মনিবের জন্য, কিন্তু কেউ এলো না।বিশ্বস্ত হাচিকো পরেরদিন ঠিক ৩টা বাজে শিবুয়া স্টেশনে গিয়ে একই জায়গায় বসে রইল। ভাবখানা এমন, ইজাবুরো এখনই ট্রেন থেকে নেমে তাকে কোলে তুলে নেবে আর সে লেজ নেড়ে তাকে সম্ভাষণ জানাবে। কিন্তু প্রিয় মনিব আজও এলো না। হাচি হাল ছেড়ে দিল না। পরেরদিন হাচিকে আবারও একই জায়গায় একই সময়ে বহাল তবিয়তে দেখা গেল। এভাবে দিনের পর দিন ধরে সে স্টেশনে এসে বসে থাকতে লাগল। খুব অল্পদিনের মধ্যেই হাচিকোকে আশেপাশের সবাই চিনে ফেলল।
প্রফেসর ইজাবুরোর ছাত্রদের কানে এই ঘটনাটি গেলো। একদিন তার একজন ছাত্র ট্রেনে চেপে শিবুয়া স্টেশনে হাচিকোকে দেখতে এলো। সেখানে ছোট্ট হাচিকোকে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। ফিরে গিয়ে সে দৈনিক একটি পত্রিকায় হাচিকোর এই প্রভুভক্ততা নিয়ে কলাম ছেপে দিল, এতে সমগ্র পৃথিবী হাচিকোর কথা জেনে গেল। বিশ্বস্ততা আর বন্ধুবাৎসল্যের প্রতীক হিসেবে সবাই হাচির উদাহরণ দিতে লাগলো। বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন হাচিকোকে একনজর দেখার জন্য জাপানে আসতে লাগলো।টানা ১০ বছর ধরে ঝড়-বৃষ্টি, ঠান্ডা কোনো কিছুই হাচিকোকে রুখতে পারেনি, প্রতিদিনই সে স্টেশনে হাজির হতে লাগলো। এমনকি বার্ধক্য আর আর্থ্রাইটিসকেও সে পাত্তা দেয়নি। তার মনে কেবল একটাই আশা, কোনো একদিন নিশ্চয়ই সে মনিবকে দেখতে পাবে, অন্তত একবারের জন্য হলেও। মাঝে মাঝে দলবেঁধে এলাকার লোকজন তার সঙ্গে করে আসতো, কখনও সে একাই আসতো।অবশেষে ১৯৩৫ সালের এক শীতল সন্ধ্যায় হাচিকো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, প্রাকৃতিকভাবেই। তার মৃতদেহ শহরের লোকজন রাস্তায় আবিষ্কার করলো। সবাই গভীর আলিঙ্গনে তাকে বুকে তুলে নিল, তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করলো ইজাবুরোর কবরের পাশেই। ১০ বছর পর প্রিয় মনিবের সঙ্গ পেয়ে হাচিকোর কেমন লাগছিল, তা জানার উপায় আর কারোই রইল না।
হাচিকো সমস্ত বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিল, তার মৃত্যুতে কেঁদেছিল হাজারো মানুষ। তার স্মরণে শহরবাসী একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরি করে ঠিক সেই জায়গাটায়, যেখানে সে মনিবের জন্যে প্রতিদিন অপেক্ষা করতো। এছাড়া তাকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি সিনেমাও, নাম ‘হাচিকো: এ ডগ’স টেল’, যা অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
এখানে নিজের অভিজ্ঞতা আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই, আমার ছোটবেলা মশানজোড় এ কেটেছে যা এখন ঝাড়খণ্ড এ অবস্থিত। মশানজোড় জায়গাটি ছোটনাগপুর মালভূমি অন্তর্গত পাহাড়ি অঞ্চল।এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চল তাই জঙ্গলি পশু আটকাবার জন্য বাড়িতে কুকুর থাকতো। তাছাড়া আমাদের বাড়িতে গরু,ছাগল,ভেড়া, হাঁস, মুরগি ত ছিলো এবং তাদের জন্য আলাদা আলাদা থাকার ব্যবস্থা ছিলো এছাড়া বিড়াল ছিলো অনেক,পায়রা ও খরগোশ ছিলো কিন্তু সাপের অত্যাচারের জন্য তাদের রাখা সম্ভব হয়নি পরে।এত সব বললাম কেননা তাহলে আপনাদের গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ড বুঝতে সুবিধা হবে।তাই আমার ছোট বেলায় বন্ধু ছিলো বই ও এই সব পশু পাখি রা, বিশেষ করে কুকুর বিড়াল ও ছাগল। এবার আমার অভিজ্ঞতা ছোটো করে বলছি- সব ছোটবেলার কথা তখন বুড়ো বলে একটা মেয়ে কুকুর ছিলো।সে সাদা রং এর, সে এত নিষ্ঠবান ছিলো যে কি বলবো,অন্য কুকুর গুলো কে শাসনে রাখতো দুষ্টুমির থেকে,গরু ছাগল গোয়ালে ঢুকাতে সাহায্য করতো বাগালদের(যারা গরু ছাগল চড়ায়),কোনো ছাগল দুষ্টুমি করলে কান ধরে টেনে আনতো,আমি যখন আরো ছোটো তখন আমাদের একটা গরু আমাকে দেখলে তেরে আসতো তখন এই বুড়ো এসে আমাকে বাচাতো,পরে পিসি গরুটি বিক্রি করে দেয়। ওকে নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা আছে সব মনে আচ্ছে না তাছাড়া সব বলা যাবেও না,মূল ঘটনা গুলো বলছি,আমি ক্লাস এইট এ পড়ি থাকি সিউরি কাছে এক হস্টলে, দিনটা ছিলো শুক্রবার রাত আটটার কাছাকাছি আমি পরেরদিন হস্টলে আসবো কারেন্ট ছিলোনা (তখন বিহারে কারেন্ট একমাসে কোনো একদিন দেখা যেতো),আমি বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে মা ও পিসি র সাথে কথা বলছি,বুড়ো ও অন্য দুটো কুকুর সন্ধ্যা র পর বাঁধা থাকতো বাবা কাজে থেকে এসে ওদের খুলে দিয়ে সদর দরজা বন্ধ করতো।ঐ দিন ও তাই কুকুর গুলো কে খুলে দেয়ে, হঠাৎ বুড়ো(তখন তার খুব বয়স হয়েছে) আমার দিকে চিৎকার করতে করতে এগিয়ে আসে পাশে অন্য কুকুর গুলো, হঠাৎ আধো আধো হারিকেন আলোয় দেখি আমার থেকে এক থেকে দেড় ফুট দূরে কালো মত কিসের উপরে যেনো বুড়ো ঝাঁপিয়ে পড়লো,ফস ফস করে আওয়াজ ও ওদের চিৎকার শুনে ভয়ে সরে আসি,বাবা তখন উঠানে এসে টর্চের আলো ফেলে,আলোতে যা দেখলাম তা দেখে আমি এখনও লিখতে লিখতে শিউরে উঠছি, দেখলাম বুড়ো একটা কালো রঙের গোখরো সাপ কে কামড়ে ধরে আছে আর সাপটা তার সারা শরীরে জরিয়ে ধরে ছোবল মেরে যাচ্ছে, কিন্তু বুড়ো তাকে ছাড়েনি শেষ পর্যন্ত।বাবা ও ধাবার কাজের লোকেরা(আমাদের ‘ধবা’ আছে বাড়ির সামনে ) লাঠি ও বল্লম নিয়ে এসে সাপ টিকে মেরে ফেলে কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ,বুড়ো শেষ। ঐ ভাবে জড়িয়ে কামড়ে ধরে মারা গেছে সে। ও নিজের প্রাণ দিয়ে আমার প্রাণ বাঁচালো কেননা সাপটা একটু হলে আমাকে ছোবল দিত।পরে বাবা ওর যথাযত ভাবে সৎকারের ব্যবস্থা করেন। ঐ ঘটনা আজ ও আমরা কেও ভুলতে পারিনি,পারবোও না।আর একটা ঘটনা বলছি এর দুই বছরে পরের ঘটনা,তখন বাড়িতে চারটে কুকুর ছিলো,রাতে বেলায় কুকুর গুলো খোলা থাকতো, একদিন রাতে মুরগি র ঘরে লেপার্ড বা চিতাবাঘ হানা দেয়, ভোর রাতে কুকুরের প্রচন্ড রকমের ঘেউ ঘেউ এর আওয়াজে বাড়ির সবাই ঘুম ভেঙে যায়, বাবা আমি ও রাখাল তিনজন 5 সেলের টচ জ্বেলে দেখি একটি কুকুর মরে পড়ে আছে এবং দুটি কুকুরের গা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে ও পাশে আরেকটা কুকুর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে,কুড়ি টার উপরে মুরগি মারা গেছে, চিতাবাঘ টিকে দেখতে পাওয়া যায়নি কিন্তু সে আহত হয়েছিল সেটা বোঝা যায়,পরে আহত একটা কুকুর মারা যায়।এই খানে যে দুটি কুকুর আহত হয় তারা ছিল বুড়োর ই বাচ্চা নাম ছিলো কালু ও লালু,লালু মারা যায়, আর একটি ঘটনা বলি কালুকে নিয়ে আমি তখন উচ্চমাধ্যমিক পড়ছি হোস্টেলে একদিন শুনলাম কালুকে পাওয়া যাচ্ছে না, বাড়ির সবার খুবই মন খারাপ বিশেষ করে মায়ের, কেননা মা যখন শঙ্খ বাজাতো ইনিও আওয়াজ করতো শঙ্খ এর সাথে সাথে, আর সন্ধ্যার সময় ঠিক হাজির হয়ে যেতো, ও দেখতে ছিল অনেকটা জার্মান শেফার্ড এর মতন। এর ঠিক সাত আট মাস পরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে বসে আছি, মশানজোড় বাজার থেকে বাড়িতে আসছি হঠাৎ দেখলাম রাস্তায় একটি কালো রঙের কুকুর লেজকাটা জির্ণ তার দশা আমার পিছু নিয়েছে আমি সাইকেলে আসছিলাম, ওর অবস্থা এতই খারাপ ভালো করে চলত পারছিল না। তাই যথারীতি পিছিয়ে পড়ল এবং আমি বাড়ি চলে আসি, তখন বাবা ও অফিস থেকে আসছিল ওই কুকুরটি বাবার পেছনে আসতে থাকে এবং কুঁইকুঁই করতে থাকে, বাড়িতে এসে মা ও পিসির পায়ের কাছে কুঁইকুঁই আওয়াজ করতে থাকে, তখন সবাই খুব আশ্চর্য হয়ে যায় যে রাস্তার একটি নোংরা কুকুর তাও আবার লেজকাটা অবস্থায় আছে এমন করছে কেনো।আমি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসার পর কুকুরটি করুণ স্বরে চিৎকার শুরু করে দেয়, তখনই সবাই বুঝতে পারে এটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া কালু।কেও ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো বহুদূরে এবং লেজ কেটে দেয় কেনো জানিনা।ও ঠিক এত দিন পরে বাড়ির রাস্তা চিনে ঠিক চলে এসেছে।পরে তাকে ডাক্তার দেখিয়ে ভালো খাওয়া-দাওয়া দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে সে অনেক দিন জীবিত থাকে, আমি সিউড়ি চলে আসার পর বুড়ো বয়সে মারা যায়।(তার শেষ বয়সের ছবি আমার কাছে ছিল কিন্তু এই মুহূর্তে পারছিনা পরে পেলে এড করে দেবো ) আর একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি শেষ করতে চাই এটি বাবার ও পিসি র মুখে শোনা, তখন আমার বয়স তিন মাস, ওই সময় ওই অঞ্চলে খুব ডাকাতি হত, ঐরকমই একদিন ‘ওয়েলকাম’ নামক একটি রাতের বাসে ডাকাতি হচ্ছিলো সেই সময় পুলিশ ডাকাতদের ধাওয়া করে নানা দিকে পালিয়ে যায়।সব গ্রামবাসী এমনকি বাবা পুলিশ সময় মিলে ডাকাতদের খোঁজ খোঁজ শুরু করে।দু-একটা ডাকাত ধরাও পড়ে সাঁওতালদের মারে কেউ কেউ আধমরা হয়ে যায়, দশটা নাগাদ সবকিছু শান্ত হয়ে গেলে বাবা যখন বাড়ি ফেরে এবং কুকুরদের খুলে দেয় ওই সময় কুকুররা বাড়ির পাশে একটি কালভার্টের নিচে গিয়ে চিৎকার করতে থাকে।বাবার না বুঝেশুনে একটি লাঠি নিয়ে একাই চলে যায় কি হয়েছে দেখতে,তখন দেখতে পাই একটি বেটে মত লোক ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছে এবং তার দিকে ছুরি উচিয়ে আছে,বাবা দেখে ভয়ে ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায় প্রথমে, ওই লোকটি এগিয়ে আসতে গেলে বাড়ির তিনটে কুকুর তার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন বাবা চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকে, পরে পাড়ার লোক এসে ওই ডাকাত টি কে ধরে ফেলে, পুলিশ দিয়ে দেয়। ততক্ষনে তাকে কুকুরের কামড়ের যাচ্ছেতাই করে দিয়েছি। পরে পুলিশ বাবা কে পুরস্কৃত করে। এরকম অনেক অভিজ্ঞতা গল্প আছে, সব ত এখানে বলা যাবে না।
আজকের এই রকম লকডাউন পরিস্থিতিতে আমরা ঐসব অবলা প্রাণী দের ভুলে না যায়, কিছুটা সময় কাটাই না ওদের সঙ্গে, তাতে মন ভালো থাকবে সময় ও কাটবে, হতেও পারে কোনো বিপদের সময় ওরাই আপনার পাশে দাঁড়াচ্ছে। এরকম যদি আপনাদের কোন অভিজ্ঞতা থাকে বা আপনার পোষ্য দের নিয়ে কোন গল্প থাকলে আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন।
লেখকঃ পার্থ ভৌমিক
মূল লেখা নেওয়া roar.media
ছবি: