স্যাভয়ের ডিউকের তুরিণ ক্যাথড্রেলের ভজনালয়ে প্রাচীন নথিপত্রের সঙ্গে চৌদ্দ ফিট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা ও তিন ফিট আট ইঞ্চি চওড়া এক টুকরো কাপড় অত্যন্ত যত্ন সহকারে রক্ষিত আছে। এই কাপড়টিতে একজন মানুষের সম্মুখ ও পশ্চাৎভাগের অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
একশত বছরে আনুমানিক চারবার এই কাপড়টি লোক সমক্ষে প্রদর্শিত হয় ।আর এটির দর্শন পাবার জন্য হাজার হাজার তীর্থ যাত্রী এই স্থানে সমবেত হন। তারা বিশ্বাস করেন যে যীশুখ্রীষ্টের প্রতিচ্ছবি অবলোকন করে তারা ধন্য হচ্ছেন।
তুরিণের এই পবিত্র শবাচ্ছাদনটি খৃষ্টজগতের অত্যন্ত বিতর্কিত ও সযত্নরক্ষিত বস্তু। এটি অকৃত্রিম ও অকপট বলে দাবী করা হয়। এবং এটাকে অকৃত্রিম মনে করা হয় বলেই খৃষ্টান জগতে এটা একটি অমূল্য সম্পদ বলে বিবেচিত হয়।
যীশুখ্রীষ্টকে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করার পর এই লিনেনের বস্ত্রটি দিয়েই তাকে আচ্ছাদিত করে সমাহিত করা হয় এবং সকলেই দৃঢ়ভাবে একথা বিশ্বাস করে আসছেন। জনশ্রুতি আছে যে যীশুর প্রতিচ্ছবি সহজাত ভাবে এতে অঙ্কিত হয়ে গেছে ঠিক যেভাবে ফটোগ্রাফিক প্লেটে ছবি তোলা হয়।
এই প্রতিচ্ছবিটি সত্যিই যীশুর কিনা তা আবিষ্কারের জন্য বহু অনুসন্ধান চালানো হ্যেছে।এই অনুসন্ধান বহু আশ্চর্য ঘটনার দ্বারোদ্ঘাটন কয়েছে-বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
লোকে বিশ্বাস করে যে শবাচ্ছাদন বস্ত্রটি তিন শতাব্দী ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, খৃীষ্ট ধর্মের প্রথম প্রচারের সময় নির্যাতন ও উৎপীরণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এটিকে লুকিয়ে রাখা প্রয়োজন ছিল বলেই এটাকে জন সমক্ষে বের করা হয়নি ।পরবর্তী পর্যায়ে এই বস্ত্রাচ্ছাদনটির মালিক হন কনষ্টান্টিনোপল্ এর বাইজেন্টাইন শাসন গোষ্ঠী .১২০৪ খৃষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন শাসকদের পতনের আগ পর্যন্ত এটি তাদের হাতেই ছিল।
ক্রসেডারগণ এই আচ্ছাদনটি নিয়ে ফ্রান্সের আন্তর্গত ডুব্স্ নগরীর ব্যাসঙ্কন ক্যাথিড্রাল রাখেন। এখানে এই আচ্ছাদনটি ১৩৩৯ খৃষ্টাব্দে একটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পায়।
অবশেষে ১৪৩২ খৃষ্টাব্দে শেষবারের মত স্যাভয়ের ডিউকের নিকট এটি অর্পণ করা হয়। এখানে অন্য একটি অগ্নিকান্ডে বস্ত্রটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হলে এটিকে ডিউকের স্যাভয়ের প্রাসাদ থেকে স্থানান্তরিত করে তুরিণের ক্যাথেড্রেলে নিয়ে যাওয়া হয়, ১৫৭৮ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি তুরিণেই সযত্নে রক্ষিত ছিল।
প্রথম ফটোগ্রাফঃ
১৮৯৮ খৃষ্টাব্দে সেকেন্ডোপিয়া নামে একজন প্রত্বতাত্বিক ফটোগ্রাফার এই শবাচ্ছাদনটির প্রথম ছবি তোলেন। তিনি আবার বিষ্ময়ে লক্ষ্য করেন যে কাপড়ের অস্পষ্ট ছাপের তুলনায় ফটোর ছবিটি অনেক পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট হয়ে এসেছে।একটি মানুষের পরিপূর্ণ অবয়বের ছবিটি তাকে বহুক্ষণ বাকরহিত ও আবিষ্ট করে রাখে।
বিশিষ্ট ফরাসী ডাক্তার ডঃ ইয়েভ্স্ ডিলেজ এই আচ্ছাদনটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। ১৯০২ খৃষ্টাব্দে এই অনুসন্ধানের ফলে প্রাপ্ত তথ্যাদি তিনি ফ্রেঞ্চ একাডেমী অব সায়েন্স এর নিকট প্রদান করেন।
তার সহকর্মী পল ভিগ্নন্ মন্তব্য করেন যে বস্ত্রখণ্ডটির দাগগুলো ঘাম ও মশলাজাতীয় কোন কিছুর সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন ঘাম ও মশলা জাতীয় কিছু এতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
ডঃডিলেজ বর্ণনা করেন যে এই বস্ত্রে যে ছবিটি আছে তা সম্পূর্ণ ভাবে কোন একজন লোকের সর্বাঙ্গীণ প্রতিচ্ছবি । এই ছবিটি যার সেই লোকটির উপর অমানুষিক ও অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছিল। চরম নির্যাতনের পর শেষ পর্যায়ে তাকে ক্রুশবিন্ধ করা হয়েছিল। ডঃ ডিলেজের মতে মুখের ছবিতে বেশ কয়েকটি ঘুষির চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে, আছে।নাক্টি আঘাত প্রাপ্ত ডান গালটি থেতলানো ও স্ফীত ,ডান চোখটি অত্যন্ত সঙ্কুচিত ,কপালে ও মাথায় পিছনে রক্ত চিহ্ন দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে তার চামড়া এফোড় ওফোড় করা হয়েছিল।
মুখ,হাত ও পদযুগল ছাড়া সমগ্র দেহ দুই দড়ি বিশিষ্ট চাবুকের আঘতে জর্জরিত করার চিহ্ন বিদ্যমান , এই চাবুকের দড়িতে সীসার অথবা হাড়ের ছোট ছোট বল সন্নিবেশিত ছিল। আর এই ঘটনা দুজন লোক দ্বারা সংঘটিত হয় বলে অনুমিত হয়। এই আঘাতের চিহ্নগুলো বেশী মারাত্মক আকারে দেখা যায় বিশেষ করে বুকের ও পেটের মাংসপেশিতে। দুই কাঁধে যে ক্ষতচিহ্ন দেখা যায় তা হয়তো কোন ভারী জিনিস বহনের কারণে ঘটেছে। হাঁটু দুটোই কাঁটা । মনে হয় কোন উচুজায়গা থেকে পতনের কারণে এর উদ্ভব । পায়ে ও কব্জিতে যে খতচিহ্ন দেখা যায় সেগুলো হয়ত কোন পেরেকের আঘাত জনিত কারণে সৃষ্ট এবং এই ক্ষতগুলো থেকে রক্তক্ষরণ চিহ্ন স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
কব্জির ক্ষতঃ
হাতের গোড়ালির ঠিক পেছনে কব্জির খতগুলোর অবস্থান। ডানদিকে পঞ্চম ও ষষ্ঠ বক্ষপঞ্জরাস্থির (রিবের) মাঝামাঝি একটি বিরাট ক্ষত সুস্পষ্ট দেখা যায়। ঐ স্থান থেকে রক্ত ও রঙহীন তরল পদার্থ বেরিয়ে আসার চিহ্ন বিদ্যমান । মনে হয় বিদ্ধ করা ফুস ফুস থেকে কোন জলীয় পদার্থ বেরিয়ে আসছিল। দেহটিতে চূর্ণীকৃত অগুরু ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওগুলোর কিছু কিছু কাপড়টিতে লেগেছিল। কিন্তু ইহুদীধর্মের রীতি অনুযায়ী দেহতিকে ধোয়া কিংবা কিছু দিয়ে অভিষিক্ত করা হয়নি।হয়ত বা হত্যার পর তাড়াতাড়ি মৃতদেহ সমাহিত করার প্রয়োজনে ইহুদীধর্মের নিয়মের বাইরে না ধুয়েই কাজ সারা হয়েছে।
ডঃ ডিলেজ তার বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসারে ব্লেন,একদিকে অগুরুরঞ্জিত শবাচহাদনটি আমরা পাচ্ছি ,এটি আমাদের মিশরের বাইরে পূর্বাঞ্চলের অন্য এক অংশে নিয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে পাই এমন একজন লোকের বিবরণ যিনি ক্রশ বিদ্ধ হয়ে চরম নির্যাতনের মাঝে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অন্য দিকে আমরা এমন একটি ঘটনার বিবরণ পাই যা অবশ্যই ইতিহাস, জনশ্রুতি ও বহুকালের প্রথার একত্র সন্নিবেশ।
জুডিয়াতে যীশুর হত্যাকাণ্ডের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় অর্থাৎ যীশুকে হত্যা করার সময় তার প্রতি যে আচরণ করা হয়ে ছিল তার হুবহু প্রতিচ্ছবি আমরা এই কাপড়ের মারফত পাচ্ছি- এখন এই কাপড়ে যারই মৃতদেহ আবৃত হয়ে থাকনা কেন !
তার এই বক্তব্য স্ফুলিঙ্গের মত চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো ও তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করলো। আর এই বিতর্কের শেষ আজও হয়নি। সমালোচকরা এই শবাচ্ছাদনটিকে ভুয়া বলে দাবী করেন। তারা বলেন এটা অবশ্যই কোন সুচতুর দক্ষ শিল্পীর কীর্তি ।
কিন্তু ডঃ ডিলেজ নির্দেশ করেন যে ঐ বস্ত্রটিতে কোন রকম রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
চতুর্দশ শতাব্দী থেকে এটিকে আসল বলে মনে করে আসা হচ্ছে। যদি কাপড়ের ছাপটা আসল না হত তবে এই ভুয়া ছাপটি প্রস্তুতকারী একজন অজানা শিল্পীর ও অস্তিত্ব অবশ্যই থাকা প্রয়োজন কে সেই শিল্পি।রেনেসার শিল্পীদের মত তারও উৎকৃষ্ট শিল্পকর্মের নমুনা অবশ্যই তিনি রেখে যেতেন।
তিনি আরও বলেন যে কারও পক্ষে এরকম নিখুঁত ভাবে নেগেটিভ ছবি আঁকা সম্ভবপর নয়। তাছাড়া এত দীর্ঘদিন ধরে মানুষ কেন এটিকে বয়ে বেড়াচ্ছে ? কেন এটি সযত্নে রীতিমত লালিত হছে ? এর পেছনে কোন কারনই কি নেই ? বিশেষ করে এমন এক যুগে পাওয়া যায় যখন ফটোগ্রাফি মানুষের স্বপ্নেরও অগোচরে ছিল।
১৯৩১ খৃষ্টাব্দে গিসেপে এন্রি নামে অন্য একজন ফটোগ্রাফার এই কাপড়টির ছবি তুলবার অনুমতি পেলেন। তিনি তার তোলা ছবির প্লেটগুলো পরীক্ষা করে দেখলেন এগুলো ১৮৯৮ খৃষ্টাব্দের টলা ছবির চেয়েও ভাল উঠেছে। তিনি ঘোষণা করলেন, এই ছবি কোন আর্টিস্ট দ্বারা অঙ্কিত নয়। অত্যন্ত উচ্চমানের দক্ষ শিল্পীর পক্ষেও এ ধরণের ছবি আঁকা সম্ভবপর হবে না। এই ছবি বড় করে তুলে দেখা হয়েছে যে এতে কোন রঙের ব্যবহার হয়নি। কাপড়টিতে অন্য কিছুর ছাপ।।
এক্সরে পরীক্ষাঃ
জার্মানির ও ইতালীর কিছু অনুসন্ধিৎসু নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে একটি সভায় মিলিত হন। এই সভার সভ্যরা মিলিতভাবে গভীর অভিনিবেশ সহকারে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে এই বস্ত্র খণ্ডটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন। বিভিন্ন দিক থেকে এটার সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা চললো। ধর্মীয় বিশ্বাসের বিভিন্ন ঘটনাবলীর প্রতি দৃষ্টি রেখে এই বস্ত্রটির দীর্ঘ পরীক্ষা করা হল। ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে পোপ পল দি ত্রয়বিংশতমের নিকট জার্মান কনভেনশন এই মর্মে আবেদন জানালেন যে এই বস্ত্র খন্ডটি থেকে সামান্য কিছু অংশ কেটে রাসায়নিক ও বিভিন্ন মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষায় ব্যবহারের জন্য প্রদান করা হোক। এক্সরে ,আল্ট্রাভায়োলেট রে ইত্যাদি বিভিন্ন রেডিও কার্বন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বস্ত্র খণ্ডটি পরীক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা তারা প্রকাশকরলেন।
আর তাদের এই আবেদন তুরিনের আর্কবিশপ কার্ডিনাল ফসেটি এককথায় নাচক করে দিলেন।এই অনুমতি না দেয়ার পেছনে তিনি কোন রকম যুক্তিসঙ্গত কারণ দর্শানোও প্রয়োজন বোধ করলেন না।
কুর্ট বার্ণা নামে একজন জার্মান লেখক এই বস্ত্র খণ্ডটি নিয়ে গভীর অভিনিবেশ সহকারে পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি দাবী করেন, এই আচ্ছাদনটি নির্দ্বিধায় যীশুরই ছিল।রক্তের ছাপ দেখে তিনি অনুমান করেন যে যীশুকে ক্রশ বিদ্ধ করার পর যখন সেই অবস্থা থেকে নামানো হল তখনও তার হৃদযন্ত্রের ওঠানামা চলছিল। তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া যদি বন্ধ হয়ে যেত তবে তার ক্ষত থেকে রক্ত ক্ষরণও বন্ধ হয়ে যেত, সেই সঙ্গে দেহের বাহিরের দিকের অন্যান্য অংশের ক্ষতস্থানে থেকেও রক্তপাত বন্ধ হত এবং ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বেধে যেত। কাপড়ের টুকরো দিয়ে দেহটিকে আবৃত করার বহু পূর্বেই জমাট বেধে যাবার কথা। যেহেতু রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়নি, সেহেতু অনুমান করা যেতে পারে যে তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া তখনও চলছিল।
এই প্রস্তাবনা বা অনুমান সমগ্র খৃষ্টান ও ইহুদী জগতের কাছে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য ও মুল্যবান বলে মনে হল। তাদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেষ্টামেন্টে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে মেশিয়া ক্রশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করবেন।
বার্ণা আরো বলেন যে যীশু খ্রিষ্ট ক্রশবিদ্ধ হয়ে কিংবা বুকে বল্লম বিন্ধ হয়ে মারা যাননি । তিনি দাবী করেন যে, বস্ত্রখন্ড থেকে তোলা ফটোগ্রাফ থেকে সহজেই প্রতিভাত হচ্ছে যে বস্ত্রখণ্ডটির যে স্থানে রক্তক্ষরণের চিহ্ন সুস্পষ্ট হচ্ছে সে স্থান দিয়ে বল্লম বিন্ধ করলে তার হৃদযন্ত্র স্পর্শ করে না।
তার আরও বিশ্বাস যে ,যিশু নিশ্চয় আঘতের কারণে অচেতন হয়ে পড়েছিল। তার দেহের ওপর অতিরিক্ত অত্যাচারের কারণে তার হয়ত নিশ্বাস প্রশ্বাস সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে এসেছিল।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অথবা মৃত্যুর পর রোমান প্রথা অনুযায়ী অতিরিক্ত ভিনিগার বাস্প বা ধোঁয়া দেওয়াতে হয়ত তার চৈতন্য লোপ পায়।
শীতল আবহাওয়ায় পুনরুজ্জীবিতঃ
তাকে মৃত মনে করে হত্যাকারীরা তার দেহকে কোন কবরে সরিয়ে নিয়ে যাবার অনুমতি দান করে ।
বার্ণা অনুমান করেন যে সেখানকার শীতল পরিবেশ অগুরুর সুগন্ধ, বিভিন্ন মলম ও প্রসাধনী দ্রব্যের গুণে নিশ্চয়ই তার জ্ঞান ফিরে এসেছিল। আর সে জন্যই জীবিতাবস্থায় তার উর্দ্ধগমনের আগে তিনি আবার তার শিষ্যদের সম্মুখীন হতে পেরেছিলেন।
বার্ণা আরো বলেন ,বস্ত্রাচ্ছাদনটির দাগগুলো দেখে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে তার হাতের কব্জিতে পেরেকের আঘতটাই ছিল প্রধান। লোকের সাধারণ বিশ্বাস ,যীশুর হাতের তালুতে পেরেক মারা হয়েছিল। কিন্ত কাপড়ে কব্জিতে পেরেকের আঘতের সুস্পষ্ট চিহ্ন বিদ্যমান। আর বার্ণার মতে কব্জিতে পেরেক মারাটাই স্বাভাবিক। হাতের তালুতে পেরেক মারলে ঝুলন্ত শরীরের ওজনে তা ছিড়ে বেরিয়ে আসবার কথা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য চিকিৎসক বৃন্দও এই বস্ত্রাচ্ছাদনের ফটোগ্রাফ নিয়ে বিশেষভাবে পরীক্ষা চালান। তাদের অভিমত, ক্রশ বিদ্ধ করে হত্যা করার কারণে দেহের বিভিন্ন পেশী সমূহের বিকৃতি ঘটেছে ।
ডঃ ডেভিড উইলিস নামে একজন ইংরেজ পুলিশ সার্জেন এই বলে অভিমত প্রকাশ করেন যে মৃতের হাতের বুড়ো আঙ্গুলের যে ছাপ পাওয়া যায় তা অতিরিক্ত মাত্রায় সঙ্কুচিত ।এর কারণ হিসাবে তাদের যুক্তি হল সরাসরি মধ্য স্নায়ুতে পেরেকের আঘাতের দরুন আঙ্গুল সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। আর এই মধ্য স্নায়ু সোজাসুজি কব্জির দিকে নেমে গেছে।
মৃতের এই আবরণী বস্ত্রটির সত্যতা সম্বন্ধে যারা নিঃসন্দেহ তারা বলেন ,মানব দেহের এতসব খুঁটিনাটি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অঙ্গ প্রতাঙ্গের ছবি কোন শিল্পীর পক্ষে তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব ।তাদের প্রশ্ন অত্যাচারে জর্জরিত দুঃসহ যন্ত্রণাক্লিষ্ট কোন দেহের বিভিন্ন ,অঙ্গপ্রত্যঙ্গের এত সুক্ষ্মছবি আঁকবার ক্ষমতা স্বয়ং মাইকেল এঞ্জোলোরও নাই, তুলির টানে যদি ও তিনি মানবদেহের বহু সৌন্দর্য অকৃতিম ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তথাপি একাজ কোন মানুষের সৃষ্টি নয় -এ এক পরম বিস্ময় !
তুরিণের রক্ষকেরা যদি এই বস্ত্রখণ্ডটির পরিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ,পরীক্ষা ও নিরীক্ষার অনুমতি দান করেন তবে এই রহস্যের দ্বারোদ্ঘাটন করা সম্ভবপর হবে। অন্ধকার দূরীভূত হয়ে উন্মচিত হবে কুয়াশার আবরণ। যাচাই করা সম্ভব হবে সত্য ও মিথ্যা।
Images Collected From Google