অভিজ্ঞানশকুন্তলা, মেঘদূত, ঋতুসংহার…নামগুলো চেনা চেনা লাগছে না? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, এগুলো গুপ্ত সাম্রাজ্যের মহাকবি কালিদাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম। নামগুলো শুনে নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে হয় সেসময়কার অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগের মানুষদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল? আজকে আমরা বিস্তারিত জেনে নিব সেই সম্পর্কে।

কালিদাসের যে সাহিত্যকর্মগুলো আজও টিকে রয়েছে সেগুলো হলো: নাটক: মালবিকাগ্নিমিত্র, অভিজ্ঞানশকুন্তলা, বিক্রমোর্বশী। কাব্যগ্রন্থ: মেঘদূত, কুমারসম্ভব, রঘুবংশ, ঋতুসংহার। লেখাগুলো একেকটি যেন বিশ্বকোষ। যেমন: “মেঘদূত”-এ বিধর্বের রামটেক থেকে  তিব্বতের মানস সরোবর পর্যন্ত উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলসহ আবহাওয়ারও অবিশ্বাস্যরকমের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে। “রঘুবংশ”-এ রাজা রঘুর অভিযানের মাধ্যমে তখনকার ভারতের ভৌগলিক বর্ণনা অকল্পনীয়। “মালবিকাগ্নিমিত্র”-এ মানুষ একে অপরকে “নমস্কার” করে আর “রঘুবংশ”-এ তারা “প্রণাম” বা “বন্দে” বলে, যা কিনা আজকের দিনের ভারতবাসীরাও অভিবাদন করতে ব্যবহার করে!

কালিদাস মেঘদূত লিখেছেন

খাদ্যাভ্যাস:

“রঘুবংশ”-এ “ক্ষির” বা “পায়েসচারু”(পায়েস) এবং অন্যান্য লেখাগুলোয় “মোড়ক” নামের এক ধরনের মিষ্টান্নের কথা লেখা রয়েছে। এমনকি, “বিক্রমোর্বশী”-তে কাব্যিক কালিদাস “মোড়ক” মিষ্টিকে চাঁদের বিভিন্ন রূপের সাথে তুলনা করেছেন। “শিখরিনী”(বর্তমানে “শ্রীখন্ড”) নামের আরেকটি খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা দইয়ের সাথে এলাচ, লবঙ্গ, কর্পূর এবং আরো বিভিন্ন সুগন্ধি উপাদান দিয়ে দুধ আর চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হতো। ভাবতেই জিভে পানি এসে যাচ্ছে, তাই না? “রঘুবংশ”-এ বলা আছে, দক্ষিণের মালয় পর্বতে (কেরালার ইলামাল পর্বতমালা) উন্নত জাতের এলাচ, লবঙ্গ আর গোলমরিচ জন্মাত।

আরও কিছু ফলের গাছ, বিশেষ করে আম গাছের কথা বেশ কিছু জায়গায় বলেছেন কালিদাস। শস্যদানা আর চাল ছাড়াও নিয়মিতভাবেই মাছ এবং মাংস খাওয়া হতো সেসময়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো গঙ্গার “রোহিত” বা “রোহু” মাছ। এছাড়া “মালবিকাগ্নিমিত্র”-এর একটি লাইনে কসাইখানা আর মাংসের দোকানের কথা বলা আছে যেখান থেকে সেকালের মানুষ মাংস কিনত।

আধুনিক নারিকেলসভ দেখতে 

মজার ব্যাপার হলো, কালিদাস তাঁর লেখায় মদের কথাও উল্লেখ করেছেন যা নারী পুরুষ উভয়েই উপভোগ করত। তাঁর লেখায় তিন ধরনের মদের কথা আছে, প্রথমটি “নারিকেলসভ”, যা নারকেলের নির্যাস থেকে তৈরি হতো। দ্বিতীয়টি “সিধু”, যা আখের নির্যাস থেকে নেওয়া হতো আর শেষটি ফুলের নির্যাস থেকে নেওয়া “মধুক”।

আমের মুকুল আর লাল “পতক” গাছের ফুল দিয়ে এগুলোতে সুগন্ধ যোগ করা হতো।

“রঘুবংশ”-এ রাস্তার পাশে পানীয়ের গ্লাসে(কসকোট্টর) ভর্তি মদের দোকান এবং পানশালা(“পানভূমি”) ছিল। এই কাব্যে কবি কালিদাস আরও বলেছেন, রাজা রঘুর সমস্ত বাহিনী নারকেলের নির্যাস থেকে তৈরি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়েছিল। আবার, “মালবিকাগ্নিমিত্র”-এ মদ্যপানে অসুস্থ রোগীদের নিরাময়ে আয়ুর্বেদিক চর্চাকারীরা “মৎস্যনদিক” নামে অপরিশোধিত আখের রসের ক্বাথ ব্যবহার করতো।

পোশাক-পরিচ্ছদ:

অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় প্রাচীন ভারতের পোশাক নিয়ে গবেষণা কমই হয়েছে। তাই হয়তো জেনে অবাক হবেন, ১৫০০ বছর আগেও ভারতবর্ষের মানুষ অনুষ্ঠান অনুযায়ী পোশাক পরত। কালিদাসের বিভিন্ন লেখায় শিকারের পোশাক, বিয়ের পোশাক,”অনুতপ্ত”,”প্রেমাসক্ত” আর ব্রতপালনকারীদেরও বিশেষ পোশাকের বর্ণনা আছে। যেমন: “রঘুবংশ”-এ পাতার রঙে শিকারের পোশাক বানানো হতো যাতে সহজেই শিকার ধরা পড়ে। কি চমৎকার, তাই না?

আবার, একেক ধর্মের বিয়ের পোশাকও ছিল একেক ধরনের। “মালবিকাগ্নিমিত্র”-এর নায়িকা মালবিকা তার বিয়েতে বিধর্ব রাজ্যের বিয়ের পোশাক পরে। পুরুষরা সাধারণত পাগড়ি, স্কার্ফ(বেস্তানা) আর ধুতি পরত। সম্ভ্রান্ত বংশের পুরুষরা বিভিন্ন রত্ন-পাথর দিয়ে পাগড়ি সাজাতো। সেসময়কার কাপড় সাদা, লাল, নীল, খয়েরি, কালোসহ বৈচিত্র্যময় রঙের হতো এবং উষ্ণ ও শীতল আবহাওয়াভেদে ভিন্ন ধরনের হতো।”কুমারসম্ভব”-এ সিল্ক (কৌশিক)এবং উল(পাত্রর্ণা) দু’ধরনেরই কাপড়ের উল্লেখ আছে। চীন থেকে আমদানি করা হতো “চিনামসুক” নামের উন্নতমানের সিল্ক।

বিভিন্ন ধরনের গয়নারও উল্লেখ করেছেন কালিদাস। সেসময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় গলার হার ছিল “নিসক”, যা তৈরি “নিসক” নামের পয়সার ছড়া দিয়ে। অন্যান্য হারের মধ্যে ছিল মুক্তার ছড়া দিয়ে তৈরি “মুক্তাবলি”; বড় বড় মুক্তার তৈরি “তারাহার”, সাধারণ “হার”, বরফের মতো সাদা পুঁতির তৈরি “হারশিখর”, মাঝে রত্ন-পাথর বসানো “সুদ্ধ একদ্বলি”।

কানের দুলের মধ্যে ছিল মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি “কর্ণভূষণ” আর “কুন্ডল”। সর্পাকৃতির এক ধরনের বিশেষ কানের দুলের বর্ণনা পাওয়া যায়, যাতে মালিকের নাম পর্যন্ত খোদাই করা ছিল!

চুলের সাজসজ্জা ছিল উঁচু দরের শিল্প আর শ্রেণি, আয়, সংস্কৃতির পরিচায়ক। নারীরা “আগর কাঠ” বা “চন্দন কাঠ” দিয়ে চুল সুগন্ধ করে লম্বা বেণি করত। তারপর চুলে ফুল আর মুক্তার মালা দিয়ে সাজানো হতো।

অসংখ্য বর্ণনায় উঠে এসেছে যে, নারী-পুরুষ উভয়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের মালা দিয়ে নিজেদের সাজাতো।

“কুমারসম্ভব” এবং “ঋতুসংহার”-এ প্রসাধনীরও বর্ণনা এসেছে। তারা এতটাই আধুনিক ছিল যে, গোসলের আগে চন্দন কাঠ ও বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক গাছের মিশ্রণের তৈরি “অনুলেপন” ও “অঙ্গরাগ” নামের “বডি মাস্ক” ব্যবহার করত। গোসলের পর তারা সুগন্ধি ব্যবহার করত।

“ঋতুসংহার”-এ একধরনের বিশেষ সাদা রঙের মিশ্রণের মেকআপ তৈরি করা হতো, যা দিয়ে মুখে পাতার প্যাটার্নে নকশা আঁকা হতো। নারীরা লিপস্টিক হিসেবে প্রথমে জতু ব্যবহার করত। তার উপর লালচে আভার জন্য “লোধরা” কাঠের গুঁড়ো লেপে দিত।

গৃহসজ্জা:

কালিদাসের লেখায় হাতির দাঁত আর সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো “ভদ্রাপিঠ” বা “ভদ্রাসন” নামের সুন্দর বসার জায়গার উল্লেখ পাই। আর ছিল বেতের তৈরি “বেত্রাসন”। আকারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন বিছানার বর্ণনাও পাওয়া যায়। সবচেয়ে কাব্যিক বর্ণনা ছিল “রঘুবংশ”-এর “যেন রাজহাঁসের মতো”- “সাইয়া” নামের বিছানার। বিভিন্ন কাপড়, প্রসাধন আর গয়না রাখতে ব্যবহৃত হত “মন্জুসা” নামের বাক্স।এছাড়া বিভিন্ন মূল্যবান লন্ঠন, পাত্র আর পালিশ করা চকচকে ধাতুর প্লেট ছিল যা আয়না হিসেবেও চলতো।

ঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল বাগান, যেখান থেকে সাজসজ্জা আর প্রসাধনের ফুল আসত। তাই কালিদাসের প্রায় সবগুলো লেখায় উদ্যানপালন শিল্পের খুব কদর ছিল।

“কুমারসম্ভব”-এর দেবী পার্বতী, “মেঘদূত”-এ যক্ষ্মার বউ এবং “অভিজ্ঞানশকুন্তলার” শকুন্তলা ফুল আর গাছের প্রতি খুব গভীরভাবে আকৃষ্ট ছিল। ব্যক্তিগত বাগান ছাড়াও নাগরিকদের জন্য সরকার গণবাগানের ব্যবস্থা করেছিল। “উদয়নপালিক” নামের বিশেষ মালিরা এসবের দেখভাল করত এবং রাষ্ট্র তাদের ব্যায়ভার বহন করত।

বিনোদন:

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেসময় রাজা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় আর সহজসাধ্য বিনোদনের মাধ্যম ছিল দোলনা। “মালবিকাগ্নিমিত্র”-এ রানি ইরাবতী তাঁর স্বামী রাজা অগ্নিমিত্রকে একসঙ্গে দোলনায় বসে দোল খাওয়ার অনুরোধ জানান।

১৫০০ বছর আগেও নাট্যশালা এবং নাটক ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান, জন্মদিন, বিয়েতে নাটক মঞ্চস্থ হত। এমনকি, কালিদাসের “মালবিকাগ্নিমিত্র” নাটক রচিত হয়েছিল বিষুব উদযাপনকে ঘিরে।

বিস্ময়করভাবে, ঠিক বর্তমান যুগের সিনেমার সমালোচকদের মতোই সেযুগেও “পরসনিক” নামে বিশেষ অফিসার ছিল যাদের কাজ ছিল নতুন মুক্তি পাওয়া নাটক দেখা এবং রাজার কাছে মন্তব্য জানানো। ইতিবাচক মন্তব্য করলে সে নাটকের জনপ্রিয়তা বহুগুণ বেড়ে যেত আর রাজার থেকে বিশেষ পুরস্কার পেত। “মালবিকাগ্নিমিত্র”-তে এই ব্যাপারে লেখা আছে।

যেহেতু সেসময় গান আর নাচ খুব জনপ্রিয় ছিল তাই তখন “সংগীতশালা” ছিল যেখানে নারী পুরুষকে গান ও নাচের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোও রাষ্ট্রের মাধ্যমে পরিচালিত হত এবং শিক্ষকরা নিয়মিত পারিশ্রমিক পেত। তবে কালিদাস এই শিল্পের “রাগ”এর কথা লেখেননি।

ছবি আঁকাও অনেক জনপ্রিয় ছিল। দেয়ালচিত্র, প্রতিকৃতি আর ভূদৃশ্য আঁকার বর্ণনা আছে। সুদৃশ্য দেয়ালচিত্রে ভরা প্রাসাদের দেয়ালগুলো আজ বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে কালিদাস তাঁর লেখায় প্রতিকৃতি বা পোর্ট্রেট করার বর্ণনা দিয়েছেন যখন “মেঘদূত”-এ যক্ষ্মা পাথরের চাঁইয়ের উপর নিজের স্ত্রীর প্রতিকৃতি আঁকে।

শিকার করা ছিল সেকালের রাজাদের পছন্দের অবসর। কালিদাস তাঁর “অভিজ্ঞানশকুন্তলায়” লিখেছেন শিকারের সময় রাজারা “যবনী” বা “গ্রিক দাসীদের” সঙ্গ নিত। মগধ রাজপরিবারের উদাহরণ দিয়ে এই ঘটনা গ্রিক কাহিনীকার মেগাস্থিনিস তাঁর “ইন্ডিকা” নামের রচনায় লিখেছেন।(যা কালিদাসেরও ৭০০ বছর আগে লেখা)

অর্থনীতি ও বাণিজ্য:

অধিকাংশ মানুষই কালিদাসের উর্বর ও সমৃদ্ধ ভূমির বর্ণনা পড়ে আকৃষ্ট হয়েছে।গুপ্তযুগের “রঘুবংশ” কাব্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনীতি, ব্যবসা ও বাণিজ্যের বিস্তৃত বর্ণনা আছে।

অবিশ্বাস্যভাবে, কালিদাস ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শস্য সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।”ঋতুসংহার”-এ বলা আছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে বাংলায় শস্য তোলা হত। তিনি “কলম” ও “সালি” নামের ধানের কথা বলেছেন যা বন্য পরিবেশে জন্মাত। এছাড়া “জাফরান” এর চাষাবাদ আফগানিস্তানে আর মালদেশের(মালওয়া) চাষাবাদ উল্লেখ করেছেন।

“রঘুবংশ” কাব্যে কালিদাস মূল্যবান পাথর আর মুক্তার জন্য বিখ্যাত “পান্ড্য” দেশ(তামিলনাড়ু) এর কথা লিখেছেন। কলিঙ্গ(ওড়িশা)এবং কামরূপ(আসাম)-এ হাতি শিকার করা হতো। হিমালয়ের বনগুলো ধূপকাঠি আর সুগন্ধি তেলের জন্য বিখ্যাত ছিল। কেরালার “ইলামাল” অঞ্চলের বন থেকে লবঙ্গ, এলাচ আর গোলমরিচ পাওয়া যেত। তিনি আরও লিখেছেন, ব্যবসায়ীরা অনেক সময় লম্বা সমুদ্রপথে ঝড়ে সব হারিয়ে ফেলতো।

তিনি বিশেষভাবে “বনযু”(আরব) অঞ্চলের উন্নত জাতের ঘোড়ার কথা উল্লেখ করেছেন, যা ভারতে আমদানি করা হতো।

এই সমৃদ্ধশালী অর্থনীতির অর্থায়ন করতে সেসময় ব্যাংকিং প্রথারও প্রচলন ছিল।কালিদাস “নিকসেপ” নামের এক ব্যবস্থার কথা বলেছেন যেখানে আমানত রাখা যেত আর পরে তা ফিরিয়েও নেয়া যেত। “ন্যাস” এবং  “নিবি” ছিল রাজস্বসহ সবধরনের খরচ করেও বেঁচে থাকা অর্থ। গুপ্তযুগের লেখাগুলো থেকে আরও জানা যায়, মধ্যপ্রদেশের “মন্দসর”-এলাকায় আমানত জমা নেওয়া হতো এবং অগ্রিম ঋণ দেওয়া হতো।

রাজনীতি এবং শাসনব্যবস্থা:

“অভিজ্ঞানশকুন্তলায়” তিনি “লোকতন্র” নামের একধরনের সরকারের কথা বলেছেন, যদিও এর অর্থ আজকের দিনের “গণতন্ত্র” থেকে আলাদা। এর অর্থ “গণপ্রসাশনের ব্যবস্থা”।

“মালবিকাগ্নিমিত্র” নাটকে “মন্ত্রী পরিষদ” বা মন্ত্রীসভার উল্লেখ করেছেন যাদের কাজ ছিল প্রশাসনিক কাজে রাজাকে সাহায্য করা। রাজা এবং মন্ত্রীগণ একে অন্যের পরিপূরক ছিল। যখন রাজা বাইরে যেতেন, তখন মন্ত্রীরা ক্ষমতায় থাকত।

কালিদাস অন্তত তিন ধরনের মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন: প্রধান মন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং অর্থ, আইন ও ন্যায়বিচারের মন্ত্রী। মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাজার কাছে পাঠানো হতো। “মালবিকাগ্নিমিত্র” নাটকে একটি লাইন আছ যেখানে প্রধান মন্ত্রী রাজাকে বলে, “আমরা বিধর্বের সমস্যার সমাধান করেছি, আমরা শুধু এ ব্যাপারে আপনার মতামত চাই।” আজকের দিনের মতোই মন্ত্রীরা ফাইল বা ডকুমেন্টে নোট করে রাখত, “আমি অনুমোদন দিলাম” বলে।

“রঘুবংশ” কাব্যে বর্ণিত আছে, মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারেই রাজা দশরথের মৃত্যুর পর “ভারত” সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন “রাম” নির্বাসনে চলে যান। মন্ত্রী পরিষদের অধীনে, যাযকরা “ধর্মাধিকারী” ছিল।

“নগরক” নামে শহরের নিজস্ব পুলিশ ব্যবস্থা ছিল। তবে গুপ্ত যুগেও দুর্নীতি, ঘুষ ও চাঁদাবাজির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।

কঠিন শাস্তির সাথে আইন-কানুনও খুব কড়া ছিল। কালিদাস ফৌজদারী আইন নিয়ে বিস্তারিত লিখলেও বেসামরিক আইন নিয়ে কমই লিখেছেন।

তিনি ভারতের আঞ্চলিক বিভাগগুলোকে “জনপদ” বলে উল্লেখ করেছেন। ভূমি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল বিশ্বকোষের মতো।”রঘুবংশ”-এ তিনি পান্ড্যদের রাজ্য, “উরাগপুর” রাজধানী(মাদুরাই বা নাগাপত্তম), কেরালা রাজ্য এবং অপরন্ত (কোনকান)রাজ্য, কেন্দ্রীয় ভারতের অবন্তী, বিধর্ব আরও অনেক রাজ্যের কথা বলেছেন।

তিনি “মহেশমতী” (বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের মহেশ্বর) এবং কর্ণাটকের গোকার্ণ নিয়েও লিখেছেন। “মেঘদূত”-এ রামগিরির(নাগপুরের কাছে রামটেক) নদী, গাছ ও প্রাণিকুলের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

অবশেষে, ১৫০০ বছর আগের ভারতবর্ষের জীবনধারা দেখে এলাম আমরা। কালিদাসের কাছে আমরা সেসময়কার এত উন্নত বর্ণনার জন্য চিরঋণী। সরণ উপাধ্যায় “ইন্ডিয়া ইন কালিদাস” (১৯৪৭) নামে একটি তথ্যবহুল গবেষণা করেছেন। তবে কালিদাসকে নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, এতে করে নতুন প্রজন্ম ভারতবর্ষের সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবে।