ইতিহাসের পাগলাটে এক রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা সিজার। রোমান সাম্রাজ্যের তৃতীয় রোমান সম্রাট ছিলেন তিনি। ক্যালিগুলা মাত্র ১৪০০ দিন সম্রাট ছিলেন। কিন্তু এই ১৪০০ দিনের ভয়াবহতার স্মৃতি মুছে যায়নি বিগত ২০০০ বছরেও। তার আসল নাম গায়াস জুলিয়াস সিজার জার্মানিকাস।
ক্যালিগুলার বাবা জার্মানিকাস। জার্মানিকাস ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের জনপ্রিয় এক সেনাপতি এবং ক্যালিগুলার মা আগরিপপিনা দি এলডার ছিলেন রোমান রাজকুমারী। আর আগরিপপিনার মা জুলিয়া ছিলেন প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাস এর মেয়ে। জার্মানিকাসকে রোমের সাধারণ জনগণ খুবই ভালোবাসতো। জার্মানিকাস রোমান সেনাবাহিনী নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযানে বের হতেন। ক্যালিগুলা তার সাথেই থাকতো…..তখন তার বয়স ছিল তিন বছর । বাবার সাথে থাকা সেনাবাহিনীর পোশাক দেখে তারও সেই পোশাক পড়ার ইচ্ছে হয়। জার্মানিকাস ছেলের ইচ্ছে পূরণ করে ….তাকে সেনাবাহিনীর পোশাক বানিয়ে দেন এবং পায়ে পরিয়ে দেন ‘ক্যালিগা’ নামক রোমান জুতা। ক্যালিগা পায়ে পরে সৈন্যদের মাঝে গায়াস সিজারের ছুটোছুটি ছিল বেশ পরিচিত এক দৃশ্য। সে সময় খুদে সৈনিকের পোশাক পরে সৈনিকদের সাথে ঘুরে বেড়াতেন ক্যালিগুলা। তাকে খুব স্নেহও করতো তারা। আদর করে সৈন্যরা তার নাম দেয় ক্যালিগা…. রোমান ভাষায় যার অর্থ ছোট আকারের জুতা। এই ক্যালিগা থেকেই ধীরে ধীরে তার নাম হয় ক্যালিগুলা….যা পরবর্তীতে তার প্রচলিত ডাক নামে পরিণত হয়।
ক্যালিগুলার আরো দুই ভাই ও তিন বোন ছিলো। ভাইদের নাম নিরো ও ড্রুসুস এবং বোনদের নাম আগরিপপিনা দ্য ইয়াংগার, ড্রুসিলা ও লিভিল্লা। ১৯ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার গর্ভনরের সঙ্গে জার্মানিকাস সিজার-এর বিরোধের সময়ে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, জার্মানিকাসকে বিষপানে হত্যা করেন তার চাচা সম্রাট টাইবেরিয়াস। কেননা জার্মানিকাস ছিলেন একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় সেনাপতি,যার জনপ্রিয়তাকে প্রচণ্ডভাবে হিংসা করতেন সম্রাট টাইবেরিয়াস । টাইবেরিয়াস ছিলেন অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী। জনপ্রিয় সম্রাট আগস্টাস সিজারের মৃত্যুর পরে তিনি সম্রাট হন। কিন্তু নিজের উদ্ভট খামখেয়ালীপনার কারণে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেন। তাই তিনি খুব ভয় পেয়েছিলেন যে মানুষের ভালবাসায় জার্মানিকাস তার কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিবে, কারণ তিনিই ছিলেন তাঁর প্রথম উত্তরাধিকারী।
টাইবেরিয়াস শুধুমাত্র জার্মানিকাসকেই হত্যা করে নি….তার দুই ছেলে নিরো ও ড্রুসুস সহ তার স্ত্রী আগরিপপিনা দি এলডারকেও গ্রেফতার করে প্যানডাটারিয়া দ্বীপে নির্বাসিত করে। কারাগারে রোমান আর্মি অফিসার তাদের প্রচন্ড মারধোর করে….ফলে আগরিপপিনা দি এলডার এর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এর প্রতিবাদে আগরিপপিনা দি এলডার অনশন করেন এবং ৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর তিনি মারা যান। ছেলেদের মধ্যে ড্রুসুস-এরও একই পরিনতি হয় এবং নিরো আত্মহত্যা করে। শুধু বেঁচে থাকেন ক্যালিগুলা এবং তার বোনেরা। নিতান্ত কিশোর বয়সের ক্যালিগুলাকে মেরে সময় এবং শক্তির অপচয় করতে চাননি সম্রাট। ক্যালিগুলা বড় হতে থাকেন তার দাদি অ্যান্টোনিয়ার কাছে। কিন্তু প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে তার বুকের ভেতরে। এই সময়ে ক্যালিগুলার মাঝে কিছু অসামঞ্জস্য ব্যবহারের লক্ষণ দেখা যায়। যেমন, অনেক ইতিহাসবিদ ধারণা করেন, এই সময়ে তিনি তার বোন দ্রুসিলার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন। অবাক হলেও সত্য, কিশোর বয়সে ক্যালিগুলার এই রূপ অনেককেই ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো।
এভাবেই কাটছিলো তার দিন। ক্যালিগুলার বয়স যখন ২৪ , তখন তাকে নিজের বিলাসবহুল প্রাসাদ ক্যাপ্রিতে ডেকে পাঠান টাইবেরিয়াস। হয়তোবা তার পিতাকে হত্যা করার জন্য এক ধরণের বিবেক দংশনে ভুগছিলেন তিনি…. তাই ক্যালিগুলাকে নিজের উত্তরসূরী হিসেবে ঘোষণা করেন। সম্রাট টাইবেরিয়াস তখন সত্তর বছরের বৃদ্ধ… নাতি জার্মিলাসকে নিয়ে বাস করেন প্রাসাদে। খুব স্নেহ করেন জার্মিলাসকে। টাইবেরিয়াস জার্মিলাসের সাথে ক্যালিগুলাকে থাকার অনুমতি দেন।
কিশোর বয়সে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে দিশেহারা ক্যালিগুলা তখন তারই পিতার হত্যাকারীর কাছে আশ্রয় খুঁজে পান। তবে সেই আশ্রয় ছিলো অনেকটা বন্দিদশার মতো। একজন রাজকুমার হয়ে বন্দি অপরাধীর ন্যায় জীবনযাপন ক্যালিগুলার মানসিক অবস্থাকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলে। ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকেন তিনি। একটা সময় দেখা গেলো তিনি অন্যের দুঃখেও উদাসীন হয়ে থাকতেন…এমনকি মঞ্চ নাটকের ন্যায় বন্দিদের অত্যাচারের দৃশ্য দেখেও ভীষণ আনন্দ লাভ করতেন। ক্যালিগুলার চরিত্রের এই কঠোর রূপ দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিলেন টাইবেরিয়াস এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “রোমের গর্ভে এক বিষধর সাপ বেড়ে উঠছে” যা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়।
ক্যালিগুলাকে বন্দি করার ছয় বছরের মাথায় সম্রাট টাইবেরিয়াস মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর আগেও সম্রাট বহুবার অসুস্থ হয়েছিলেন কিন্তু মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও ফিরে এসেছেন অলৌকিকভাবে। তাই সবাই ভাবলো, এবারও হয়তো বেঁচে যাবেন সম্রাট। এদিকে রোমের অবস্থাও ভালো নেই। তার মৃত্যুর মাধ্যমে সবাই এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়। জনতার আশাও পূরণ হয়….৩৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করে টাইবেরিয়াস। তার মৃত্যুর পর উত্তরসূরী হিসেবে রোমের সম্রাট হয় গায়াস ক্যালিগুলা সিজার। কিন্তু টাইবেরিয়াসের মৃত্যু নিয়েও দ্বিধা– দ্বন্দ রয়েছে। অনেকের মতে, সম্রাট অচেতন হয়ে পড়লে ক্যালিগুলা তাকে মৃত ভেবে নিজেই সম্রাটের রাজ আংটি আঙুলে পরেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি সিনেটরদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানাতে যাবেন, অমনি খবর আসলো, টাইবেরিয়াস মরেননি এবং তিনি তার আংটির খোঁজ করছেন। ক্রুদ্ধ ক্যালিগুলা তখন তার বিশ্বস্ত কমান্ডার মার্কোর সাহায্যে টাইবেরিয়াসকে হত্যা করে নিজের শাসনকালের সূচনা করেন। আর এভাবেই ক্যালিগুলা হয়ে উঠলেন রোমান সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি। কিন্তু এই ঘটনা কতটুকু সত্য তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
শুরুতে ক্যালিগুলাকে কিন্তু সাদরেই গ্রহন করেছিল রোমবাসী। কারণ তিনি তাদের জনপ্রিয় সেনাপতি জার্মানিকাসের ছেলে আর সে কারণে তৃতীয় সম্রাট হিসেবে ক্যালিগুলার প্রতি অনেক আশা ছিলো রোমানদের। তাছাড়া ক্যালিগুলা প্রথমদিকে বেশ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিলেন রোমবাসীদের কাছ থেকে। তিনি জরুরি ফরমান জারি করে সকল নাগরিককে টাইবেরিয়াসের কারা থেকে মুক্তি দান করেন। আগের সম্রাটের জারি করা অতিরিক্ত কর মওকুফ করে দেন। তার এই ঘোষণায় রোম উল্লাসে ফেটে পড়ে। এছাড়াও তিনি রোমবাসীর জন্য আয়োজন করেন মাসব্যাপী উৎসবের। এরকম জমকালো উৎসব রোমের ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি দেখেনি কেউ। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সম্রাটের জয়ধ্বনি!
কিন্তু অচিরেই মোহভঙ্গ ঘটে রোমবাসীর। এ কাকে বসিয়েছে তারা রোমের সিংহাসনে? একি সম্রাট? নাকি উন্মাদ? ক্যালিগুলা প্রথমেই অত্যাচার শুরু করেন রোমের অভিজাত শ্রেণীর উপর। যে অভিজাতরা ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে উঁচু স্থানে অবস্থিত তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ক্রীতদাসেরও নীচে নিয়ে আসেন তিনি। ধনীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম রাজনৈতিক প্রতারণার অভিযোগ আনতে পারলেই সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাজকোষাগারে নিয়ে যেতেন । তিনি মৌরিতানিয়ার রাজা টলেমিসহ তার উত্তরাধিকারী মার্ক অ্যান্টনিকে রোমে ডেকে এনে হত্যা করে সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নেন। যখন–তখন যে কারো উপরে কোনো কারণ ছাড়াই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন তিনি….ক্রোক করতেন তাঁদের সহায় সম্পত্তি, দিতেন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ। ক্যালিগুলার শাসনামলে এমন কোনো দিন ছিলো না যে কোনো অভিজাতের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। ক্রীড়ার মাঠে অভিজাতদের বিশেষ আসন ব্যবস্থা বাতিল করে তাঁদের সাধারণ নাগরিকদের সাথে একই সারিতে বসতে বাধ্য করতেন তিনি। কেউ সামান্য টু শব্দটি করলেই তাকে সাথে সাথে ছুড়ে ফেলে দেয়া হতো ক্ষুধার্ত সিংহের মুখে। কথিত আছে,সিনেটরদের হেয় করার উদ্দেশ্যে ক্যালিগুলা তার ইনসিটাটাস নামে প্রিয় ঘোড়াকে পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এই কথার ঐতিহাসিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হওয়ায় অনেকেই ভুয়া আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ভয়ানক মস্তিষ্ক বিকারগ্রস্ত মানুষ ছিলেন।
অসংখ্য অভিজাত শ্রেণীর সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের স্ত্রী কন্যাদের সাথে তাঁদের স্বামীদের সম্মুখেই অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতেন তিনি । রাজপ্রাসাদের মধ্যেই তিনি রাজকীয় পতিতালয় খুলে বসেন আর সভ্রান্ত ভদ্রলোকের স্ত্রী কন্যাদের সেখানে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন। ঐতিহাসিকরা বলেন, তার নিজের ভগ্নি ড্রুসিলার সাথেও অজাচারের সম্পর্ক ছিলো তার। নিজেকে একসময় দেবতাও ঘোষণা করেন তিনি। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তার নামে উপাসনালয় নির্মাণেরও আদেশ দেন তিনি। তার ইচ্ছে ছিলো সবাই তাকে দেবতার মতোই পূজো করুক। যতোই দিন যেতে থাকে ততোই বেড়ে যেতে থাকে তার অমিতব্যয় আর খামখেয়ালীপনা। তার লাগামহীন খরচের ভারে নুইয়ে পড়েছিলো রোমান অর্থনীতি। কিন্তু সম্রাটের কাছে কারো বলার সাহস ছিল না যে, কোষাগারে একটি পয়সাও বাকি নেই। তবে ক্যালিগুলা অর্থ ঘাটতির ব্যাপারটি নিজে থেকেই বুঝতে পারেন। তিনি ঘোষণা করেন, “অর্থ যোগানের জন্য এক রাজপতিতালয় খোলা হবে”। সেখানে ১৪ বছর বয়সী তরুণী থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা পর্যন্ত সব রাজকীয় নারীদের বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে হবে দুই সপ্তাহের জন্য। উগ্র ও লম্পট জনতা লুফে নেয় সম্রাটের এই প্রস্তাব। অনেক নারী নিজের সম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছিলেন কিন্তু এখানেও লাভ হলো সম্রাটের। তিনি আত্মহত্যার অপরাধে সেই পরিবারের পুরো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে দেন। এভাবে শূন্য রাজকোষাগার আবারও অর্থের ঝনঝনানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। মূলতঃ অভিজাত আর সম্ভ্রান্ত মানুষের জীবন নিয়ে খেলতেই বেশী আগ্রহ ছিলো তার। তবে মজার ব্যাপার হলো, ক্যালিগুলা যুদ্ধ না-করেও পূর্ববর্তী সম্রাটদের গৌরব চাইতেন।একবার ক্যালিগুলার মাথায় এক দুশ্চিন্তা ভর করলো আর সেটা হলো তার মৃত্যুর পর মানুষ তাকে ভুলে যাবে। তারপর একটা সময় থাকবে তার অস্তিত্ব ছিল সেটাই কেউ মনে রাখবে না। কিন্তু এমনটা তো হতে দেওয়া যায় না। মানুষের মাঝে এবং ইতিহাসের পাতায় বেঁচে থাকতে হলে প্রয়োজন মহান কিছু করার।
আর এই মাহাত্ম্য অর্জনের একমাত্র উপায় হচ্ছে যুদ্ধে যাওয়া। তাই তাকে যুদ্ধে যেতে হবে… ক্যালিগুলা যুদ্ধের জন্য বেরও হয়েছিলেন। তিনি ব্রিটেন আর জার্মানি আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা করলে কী হবে, ততোদিনে রোমান সেনাবাহিনী অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। কারণ ক্যালিগুলার নির্দেশে বহু অভিজ্ঞ সেনাপতিকে ইতোমধ্যে হত্যা করা হয়েছিলো। তবে ক্যালিগুলা যুদ্ধে গেলেন ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধ আর করলেন না। তিনি সেনাবাহিনীকে আদেশ দিলেন যেনো সাগরের নুড়ি পাথর, ঝিনুক সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়। তিনি দেশে ফিরলেন সেই পাথর আর ঝিনুকের সংগ্রহ নিয়ে। সেই ঝিনুক বোঝাই পেটরা দেখে জনতা ভাবলো সোনা-রূপা বোঝাই করে সম্রাট রোমে ফিরেছেন। তারা জয়ধ্বনি দিয়ে সম্রাটকে বরণ করে নিলো। এই খামখেয়ালীর কোনো যৌক্তিক কারণ আজও আবিস্কৃত হয়নি।
প্রচন্ড স্বেচ্ছাচারীতা , অত্যাচার আর তার জঘন্য সব কর্মকাণ্ডে রোমের অভিজাত শ্রেণী ও সাধারণ জনগণ অসহ্যের চরম পর্যয়ে পৌঁছে যায়। এভাবে ত্রাসের মাঝে আর কয়দিন বেঁচে থাকা যায়! অনেকেই হারিয়েছেন তার পরিবার-পরিজনকে সম্রাটের দণ্ডাদেশে । অনেকের কন্যা, স্ত্রী ,সম্রাটের পতিতালয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যায় জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তাই উন্মাদ সম্রাটের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে ক্রমশঃ তারা সংগঠিত হতে থাকে। ক্যাসিয়াস শেরিয়া নামক এক প্রিটোরিয়ান রক্ষীর নেতৃত্বে গোপনে গোপনে তারা একত্র হয়ে ক্যালিগুলাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। অবশেষে ৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি একটি খেলার অনুষ্ঠানে একজন দেহরক্ষী প্রথম ক্যালিগুলাকে আকস্মিক ছুরিকাঘাত করে বসে। এরপর মুহূর্তের মধ্যে কয়েকজন প্রিটোরিয়ান রক্ষী ক্যালিগুলাকে ঘিরে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এই হত্যাকান্ডের পেছনে বেশির ভাগই রোমান অভিজাতদের সমর্থন ছিলো বলে ধারণা করা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, মোট ৩০ বার তাকে ছুরিকাঘাত করার মাধ্যমে হত্যা করা হয়। ক্যালিগুলার নাম এবং তার বংশকে চিরতরে রোমের মাটি থেকে মিশিয়ে দিতে তার স্ত্রী এবং সন্তানদেরও হত্যা করা হয়। তার মন্দিরও ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এভাবেই উন্মাদ সম্রাটের অত্যাচার থেকে চিরদিনের জন্য মুক্ত হয় রোমবাসী। সম্রাটের মৃত্যুতে হঠাৎ করে রোমের রাজনীতির ময়দান গরম হয়ে উঠে। প্রিটোরিয়ান রক্ষীরা বিশৃঙ্খলার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে তথাকথিত ভাঁড় উপদেষ্টা ক্লডিয়াসকে রোমের সম্রাটের আসনে বসিয়ে দেন। এরপর এক কালের বোকা ক্লডিয়াসই শক্ত হাতে একসময় রোমের গৌরব ফিরিয়ে আনেন।
মানুষ তাকে মনে রাখবে কি-না এ নিয়ে ক্যালিগুলার বেশ চিন্তা ছিলো। অথচ তাকে সবাই আজও মনে রেখেছে ইতিহাসের কুখ্যাত শাসক হিসেবে। তবে এ সকল ঘটনার ভিত্তি রয়েছে কতোটুকু সঠিকভাবে আমরা কেউই জানি না , কেনানা ক্যালিগুলা’র মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে এসব কথা লিখা হয়েছিলো। যেহেতু তাকে হত্যা করা হয়েছিলো…..হয়তো এর মধ্যে অনেক সত্য কাহিনী আছে, আবার বানানো কাহিনীও আছে অনেক। তাই ইতিহাস সম্পর্কে কতোটা সত্য আর কতোটা মিথ্যা তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না!