চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত রাঙ্গুনিয়া থানার দক্ষিণে পশ্চিমাংশে এবং কর্ণফুলী নদীর কাছাকাছি বাম তীরে পোমরা নামক গ্রামে আনুমানিক আড়াইশো বছরেরও আগে প্রতিষ্ঠিত একটি পুরনো মসজিদের অস্তিত্ব বর্তমান রয়েছে। একসময় স্থানটি ছিল ঝোপজঙ্গলে পরিপূর্ণ। এখনও এই অঞ্চলটিতে ছোট ছোট টিলা বর্তমান। টিলাগুলি ছিল হরিণের বিচরণক্ষেত্র। এই মসজিদ সম্পর্কে শোন যায় যে, এখানে হরিণ শিকার করতে জৈনিক খাঁ সাহেব দলবলসহ আসেন। তাঁবু ফেলে কয়েকদিন থাকার পর যাওয়ার আগে লক্ষ্য করলেন, এখানে গুটি কয়েক মুসলিমের যে বসতি গড়ে উঠেছে তাদের নামাজ পড়ার জন্য কোনো মসজিদ নেই।
মসজিদের অভাব উপলদ্ধি করে তিনি আরও কিছুদিন সেখানে থেকে যান। তখন এই অঞ্চলের অধিকাংশ ভুমির মালিক ছিলেন কান্ত হাজরা নামে এক জমিদার। খাঁ সাহেব সেই জমিদারের কাছ থেকে অল্প কিছু জমি কিনে মসজিদের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্ত আশ্চর্যের বিষয়, খাঁ সাহেব যেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তার দক্ষিণাংশে একটি টিলার পাদদেশে রোজই গায়েবী আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। খাঁ সাহেব দুই-তিন দিনের মধ্যেই ওই দিকে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
মসজিদ নির্মাণের পরও দৈনিক পাঁচবার অদৃশ্যভাবে আজানের সেই ধ্বনি শোনা যায়। তিনি তখন মনে করেন যে, তাঁর ভ্রমণ সার্থক। নিশ্চয়ই তিনি কোনও মহান সাধকের সান্নিধ্যে এসে পড়েছেন। এটা বুঝে নিয়ে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেই মসজিদটি ভেঙে যেদিক থেকে আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল, সেই দিকেই আবার মসজিদ নির্মাণ করলেন। তারপর থেকে আজানের ধ্বনি শোনা যায়নি। তখন থেকে এটি “খাঁ -মসজিদ” নামে পরিচিত হয়ে আসছে।
মসজিদ দিতে গেলে পুকুরও দিতে হয়। খাঁ সাহেব তখন জমিদার কান্ত হাজরার কাছ থেকে পুকুর তৈরির জমি প্রার্থনা করেন। কান্ত জমিদারের চৈতন্যোদয় হয়। তিনি ভাবলেন, অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে নাম রাখার জন্যই এত উদ্যোগী হয়েছেন। তাই সরাসরি তিনি খাঁ সাহেবের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন। খাঁ সাহেব বিফল মনোরথ হয়ে ফিসে এসে মসজিদ সংলগ্ন একটা ছোট্ট চৌবাচ্চা তৈরি করিয়ে দিলেন।
খাঁ সাহেবের সেই ছোট্ট চৌবাচ্চাটি কালের প্রকোপেও বিনষ্ট হয়নি। এখনও তা আগের মতো স্বচ্ছ জলে পরিপূর্ণ। এই মসজিদ সম্পর্কে শোনা যায় আরও নানা কথা। এই মসজিদে প্রতি শুক্রবারে যত শিরনি বা তবারক আসে এমনটি আর কোনও মসজিদে হয় না। এই মসজিদে শিরনি দিয়ে বহুলোকের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়েছে। আগে এই মসজিদে রাতে একা একা কেউ আসতে যেতে পারত না। ভয় পেত। কারণ শেতবস্ত্র পরিহিত নামাজে রত বহু লোককে দেখা যেত। অনেক ভিক্ষুক বা উপবাসী লোক ইচ্ছা মতো শুক্রবারে এসে একবেলার খাবার খেতে পারত। অনেক সময় খাদ্যসামগ্রীও ওই চৌবাচ্চাটিতে ফেলে দেওয়া হত। অথচ আশ্চর্য এই-চৌবাচ্চার জল কিছুতেই নোংরা বা খারাপ হত না।