পিরামিড মানেই রহস্য – ১
পিকু আর পিঙ্কি সেই একবছর ধরে ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। এই পুজোয় বাবা মার সাথে ক্লাস ফাইভের পিকু আর নাইনের পিঙ্কির ইজিপ্ট ঘুরতে যাওয়ার কথা। এদিকে করোনা বাবাজী দিলেন সব পন্ড করে। মার্চের শুরুর দিকে ভেবেছিল হয়তো পুজো অব্দি ব্যাপারটা কন্ট্রোল হয়ে যাবে। কিন্তু এখন যা মনে হচ্ছে, নাহ্ এ যাত্রায় প্রাণ হাতে নিয়ে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না। দাদুর কিন্তু খুব মজা, এবার নাতি নাতনী এক্কেবারে কাছে থাকবে। পিকুর হাতে পায়ে দুষ্টুমি। আর অনলাইন ক্লাসের চক্করে পড়াশোনাও গোল্লায়। ঘুমচোখে উঠে ডাইনিং এ এসেই পিকু টিভি রিমোট হাতে নিয়ে বসে পরে। সাত সকালে মার রোজ এক কথা, “এই যে নবাব পুত্তুর পড়াশোনা লাগবে না নাকি? তাহলে এবার বই খাতা গুলো বিক্রি করে দি বরং।” কানে কি একটাও কথা যায়, টিভি তে তখন কার্টুন।
‘সপ্তম আশ্চর্যের একটি আশ্চর্য’ ডেসক্রিপটিভ রাইটিং দিয়েছে স্কুলে হোম টাস্ক। পিকু তো বুঝেই পায়না কি নিয়ে লিখবে। এই প্রথম ওদের এরম লেনদি উত্তর লিখতে বলেছে। ব্যাস ভরসা একজন ই, দাদু। খাতা পেন্সিল নিয়ে দৌড় দাদুর কাছে। সাথে পিঙ্কি।
পিকু: দাদু ওই তাজমহলটা নিয়ে একপাতা essay লিখে দাও তো।
দাদু: আরে দাদুভাই কি লিখবো? কিছুই তো বুঝছি না। চুপটি করে বসো তো দেখি। বুঝিয়ে বল আমায়।
পিঙ্কি: দাদাই পিকুকে স্কুলে ডেসক্রিপটিভ রাইটিং দিয়েছে হোম ওয়ার্ক। টপিক দিয়েছে সেভেন ওয়ান্ডারস। তুমি সাজেস্ট করো না কি লিখি।
দাদু: তা তোমরা তাজমহল নিয়ে লিখবে দিদিভাই?
পিকু: আরে দাদুভাই। আমরা তো আর কিছু জানি ই না।(হাত নেড়ে, ঠোঁট উল্টে জানিয়ে দিল)
দাদু: তোমরা তো ইজিপ্ট যাবে বলেছিলে এবার। জানো ওখানেও সেভেন ওয়ান্ডারের একটা আছে। পিরামিড।
পিঙ্কি: রাইট। আমিও পড়েছি দাদুভাই। ওই ট্রায়েঙ্গেল শেপের গ্রেভিয়ার্ড। কিন্তু ওটা তো মিশরের পিরামিড। আমরা তো ইজিপ্ট যেতাম।
দাদু: বাংলায় ইজিপ্টকেই মিশর বলা হয়। যেমন ইন্ডিয়াকে ভারত। মিশরীয়রা তাদের দেশকে “মিশর” বলে ডাকে। এটিই এই দেশটির আসল নাম। মজার বিষয় জানো “মিশর” শব্দের অর্থই হলো দেশ। অর্থাৎ মিশরীয়রা তাদের দেশকে “দেশ” নামেই ডাকে। গ্রীকরা নীলনদের তীরে অবস্থিত এই দেশটির নাম দিয়েছিল Aegyptos। এটাই পরে ‘Egypt’ হয়।
পিকু: যেমন আমার নিকনেম আর গুডনেম?
পিঙ্কি: না বুদ্ধু। দুটোই গুডনেম। জানিস ভাই ওদের রাজাদের মৃত্যুর পর পিরামিড বানিয়ে তার নিচে রেখে দিত। খাবার দাবার, জামা কাপড়, সাজার জিনিস সব থাকত। একটা স্পেশাল প্রসেসে মমি বানাতো আর সোনা দিয়ে তারপর মুড়ে রেখে দিত পিরামিডে। ভাই পিরামিডে ঢুকলেই ভুত ধরবে কিন্তু। হিহি।
পিকু: আমি সুপারম্যান। আমি ভয় পাইনা ইত্তুও।
দাদু: আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে। কিন্তু দিদিভাই তুমি কি জানো গিজার পিরামিড গুলোয় একটিও মমি বা মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পিকু: ওরা কি পালিয়ে গেছে তাহলে ভুত হয়ে?
পিঙ্কি: এই ভাই চুপ করতো। দাদাই তাহলে, কেন বানিয়েছে এই পিরামিড?
দাদু: অনেক অনেক রহস্য আছে দিদিভাই। এখন তোমরা শুয়ে পরো। কাল রাতে আবার বাকিটা বলবো।
পিকু, পিঙ্কি একসাথে: দাদাই প্লিজ এখনই।
দাদু: না, না। কাল সকাল সকাল অনলাইন ক্লাস। তাড়াতাড়ি শুয়ে পরো। মা কিন্তু পিটুনি দেবে নাহলে।
পিরামিড মানেই রহস্য – ২
গুছিয়ে বসেছেন তো সবাই? পিকু পিঙ্কি ও কিন্তু ডিনার সেরে ফেলেছে। দাদু ও রেডি।
পিকু: দাদাই এসে গেছি। তাড়াতাড়ি বলো ভেতরে কি থাকে। আমি কাল স্বপ্ন দেখেছি ভেতরে লাড্ডু আর মোমো রাখা আছে।
দাদু: হাহাহা। তা তুমি মন্দ বলোনি। জানো ভেতরে টেম্পারেচার সবসময় 20°C। ভালো খাবার দাবার থাকতে পারে। ভাবো কত বুদ্ধিমান হলে তবেই ওইরকম মরুভূমির মধ্যে এত কম তাপমাত্রা রাখা সম্ভব। বাইরে কিন্তু 50-90°C হয়ে যায়।
পিঙ্কি: দাদাই কি করে এটা সম্ভব? ওদের দেওয়ালে কি কোনো এয়ার কন্ডিশনার আছে?
দাদু: দিদিভাই ওখানে এমন কিছু জিনিস দিয়ে পাথরগুলো বানানো হয়েছে, যেটা ভেতর টা ঠান্ডা রাখে। পাথর গুলোর মধ্যে একটু ফাঁক থাকত, যাতে রোদের তাপে পাথর বেড়ে গেলেও ইমারত ফেটে না যায়।
পিকু: মনে হচ্ছে সুপারম্যান বানিয়েছে।
দাদু: প্রত্যেকটা পাথর কিন্তু আলাদা আলাদা আকৃতির। কিন্তু ওখানে তিনটে পাথর বাকিগুলোর থেকে 6°C বেশি গরম। বিজ্ঞানীদের অনুমান ওখানে গুপ্ত রাস্তা আছে নিশ্চই।
পিকু: ও দাদাই আমার মনে হয়, ওখান দিয়েই এলিয়েনের প্ল্যানেট যাওয়া যায়।
পিঙ্কি: ভাই তুই যেখানে পারিস এলিয়েন নিয়ে আসিস। থাম তো।
দাদু: না দিদিভাই। বেশিরভাগ মনে করে এই পিরামিড বানানো মানুষের পক্ষে অসাধ্য। এত বিশাল আকৃতির মনুমেন্ট বানানো একমাত্র এলিয়েনরা করতে পারে। প্রত্যেকটা পাথরকে সমান ভাবে একটার ওপর একটা রাখা, তাও আবার এত উঁচুতে রাখা কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া প্রায় অসম্ভব। তবে আরো বহু রিসার্চ বলছে ওরা খুব পরিশ্রমী ও শক্তিশালী ছিল। পিকু তোমার মত শক্তি ছিল ওদের।
পিকু: আমি তো সুপারম্যান তাই। কিন্তু দাদাই কত্ত তো বড়ো বড়ো বাড়ি আছে। অমনি করেই বানিয়েছে ওরা।
দাদু: বলতে তো ভুলেই গেছি, এই পিরামিড 4000 বছর আগে তৈরি। তখন এইসব যন্ত্রপাতি কোথায় ছিল। একটা পিরামিডে প্রায় 23 লাখ পাথরের ব্লক আছে। আর এক একটা পাথর 2700- 70000 কিলো অব্দি হতে পারে। তাহলে ভাবো একটা করে পাথর 500 মাইল দূর থেকে টেনে আনাই অসম্ভব। আবার তা দিয়ে এমন ট্রায়াঙ্গেল শেপ দেওয়া আরও অসম্ভব। আর কি জানো এখনের মেশিনগুলো 20000 এর বেশি ওজন তুলতে পারে না। তাহলে সেই যুগে কিভাবে তুলবে!
পিঙ্কি: দাদুভাই ওরা তো পাথরগুলো ওখানেই বানাতে পারত। তাহলে আর কষ্ট করে বয়ে আনতে হত না।
দাদু: একদম ঠিক বলেছ দিদিভাই। অনেকেই মনে করে ওখানেই পাথর গুলোকে চুন, মাটি, বালি আর নীল নদের জল দিয়ে বানানো হত। কিন্তু তবু ওই যে পাথর গুলো সাইজ মত কেটে শেপে অনা হোয়েছে আর সেই কাটা পাথরগুলো কোথায় তার কোনো চিহ্ন নেই। আশেপাশে কোথাও এই ধরনের পাথর পাওয়া যায়না।
পিকু: দাদু আমি বলছি এইসব এলিয়েনরা করেছে। আমরা গেলে এবার এলিয়েন পেতাম। ধুর কেন যে এই ভাইরাস টা আসলো। সব গেলো।
পিঙ্কি: ভাই সত্যি এরম ই মনে হয়। জানিস অরিয়েন কোরিলেশন থিওরি আছে একটা। আমি পড়েছিলাম।ওটাই নাকি এলিয়েনদের ঘর। দাদু তুমি ওটা জানো?
দাদু: গিজার তিনটে পিরামিড আর আকাশের তিনটে তারা একদম এক লাইনে রয়েছে। রাতের আকাশে এটা দেখা যায়। ভাবো এলিয়েনরা হত ওই তারাগুলো থেকে নজর রাখত পৃথিবীর ওপর। তারাগুলোর নাম অ্যালনাইটাক, অ্যালনিলাম, মিনটাকা।
পিকু: দেখেছিস দিদি কেমন এলিয়েন এলিয়েন নাম।
দাদু: না দাদুভাই এগুলো অ্যারাবিক নাম। অনেক বিজ্ঞানীরা বলেছে এই তারার সাথে সমান রেখায় থাকা কো-ইনসিডেন্ট। কিন্তু 800 কিমি দূরে নাবটা প্লাই বলে একটা গোলাকার স্ট্রাকচারও অরিয়ান তারাগুলোকে পয়েন্ট করে। আবার মেক্সিকোয় তৈরি থিওটিহুয়াচান(Teotihuacan) পিরামিডটিও ওই তারাগুলোকে পয়েন্ট করে। এবার ভাবো মেক্সিকো কিন্তু ইজিপ্ট, কায়রো থেকে 12000 কিমি দূরে। আমাদের আগে টেকনোলজি, যন্ত্রপাতি কতখানি উন্নত হলে এমন মিল সম্ভব। তাই বলা হয় মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীরও হাত আছে এতে। যদিও আমি মনে করি ইজিপ্টের মানুষই বানিয়েছে নির্ঘাত।
পিকু: দাদু ওদের বাড়িটা রং করেনি কেন? কেমন খালি পাথর পাথর।
দাদু: রং ছিল তো। সাদা চকচকে রং। পিরামিডের একেবারে ওপর সোনা বা ওই জাতীয় চকচকে কিছু দিয়ে বাঁধানো ছিল। বাকি বাইরের পাথরের ওপর সাদা রঙের casing স্টোন দিয়ে মোড়া ছিল। এতে করে মসৃণ দেখাত বাইরেটা। একেবারে আয়নার মত। 1300 সাল নাগাদ একটা ভূমিকম্পে ওই লেয়ারটা নষ্ট হয়ে যায়।
পিঙ্কি: কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না যদি মানুষ বানায়, তাহলে কতদিন ধরে তাহলে এই পিরামিড তৈরি হয়েছে?
দাদু: বলা হয় মাত্র 20 বছরেই এই পিরামিড তৈরি হয়। কিন্তু কি জানো, যদি তাই হয় তবে রোজ 400 পাথর তৈরি করা ও সঠিক জায়গায় বসানো উচিত। তাও সম্ভব কিনা জানা নেই।
পিকু: দাদাই আমি একাই সব পাথর তুলে নেব। তুমি দেখো।
পিঙ্কি: তুই তো হনুমান। গোটা পিরামিড টাই তুলে নিবি। চল এবার ঘুমোতে। কাল সকালে দাদাই যা বলেছে নোট করে নিবি। নাহলে ভুলে যাবি কিন্তু।
দাদু: গুড নাইট। আজ তো বাইরের গঠন বললাম। কাল কি ভেতরে কি আছে শুনবে?
পিঙ্কি: হ্যাঁ হ্যাঁ দাদাই। ওটা তো ভুলেই গেলাম। বাইরেই এত কিছু, ভেতরে না জানি কি কি আছে।
দাদু: না না এখন একদম বলা যাবে না। ওসব সময় লাগবে অনেক। বরং কাল সময় নিয়ে এসো।
পিকু: আমি তো আজকে স্বপ্নে পিরামিডের ওপর থেকে নিচে স্লিপ চড়ব। হিহিহি।
পিকু, পিঙ্কি: আচ্ছা দাদাই গুড নাইট।