কি বলো বাপু, তরমুজ ও মোদের নয়?
যেমন নয় আলু,যেমন নয় পেয়ারা
নাম ই যার তোর
সে মুজ নিজের কীভাবে হয়?
তরমুজ লাতিন নাম সিট্রেলাস লানাতাস।৩ মিটার দীর্ঘ এই গোলাকৃতি উদ্ভিদ টি কুমড়ো পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তরমুজের নিকটতম প্রজাতি গুলোর দেখা দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া যায়।প্রত্নতাত্ত্বিক এবং প্যালেওবোটানিস্টদের মতে, তরমুজের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন জাতীয় সিট্রুলাস প্রজাতির ক্ষুদ্র বুনো প্রতিনিধিদের সাথে প্রচলিত শেকড় রয়েছে, যা এখনও দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক এবং জাম্বিয়া, নামিবিয়া এবং বোটসওয়ানা প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।প্রায় ৫০০০ হাজার বছর উত্তর আফ্রিকায় এর অস্তিত্ব শুনতে পাওয়া যায়।বহুপূ্র্বে কালাহারি মরুভূমির বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মাঝে তরমুজ এর গুরুত্বপূর্ণ ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার পাওয়া যায় এর প্রাকৃতিক ভাবে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতার জন্য। কিন্তু তখন আজকের ন্যায় খেতে মিষ্টি ছিল না অনেকটা তিক্ত ছিল।তাই তারা ভেজে খেতো।
পরবর্তীতে ৪০০০ খীষ্টপূর্বাব্দে মিশরে কুমড়োর ব্যবহার পাওয়া যায় তখন তা বেশ উন্নত এবং কাঁচা খাওয়ার উপযুক্ত।ফারাও সম্রাট তুতেনখামেনের সমাধিতে তরমুজের বীজ পাওয়া গেছে। প্রাচীন মিশরীয় গ্রন্থ , ইহুদী গ্রন্থ এবং বাইবেলে তরমুজ ওষুধি গুণাগুণ এর বিবরণ পাওয়া যায়। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) তরমুজ এবং খেজুর দিয়ে ইফতারি করতেন।গ্রেকো – রোমানরা একে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধি হিসেবে গণ্য করতো।
পশ্চিমী চিকিৎসাশাস্ত্রের পিতা হিপোক্রেতিস ও বাচ্চাদের হিটস্ট্রোক এবং অন্যান্য রোগ নির্মূল করতে এর ওষুধি গুণ নিয়ে ভূয়সি প্রসংসা করেছেন। ভারতে সপ্তম শতকে কুমড়োর চাষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরবর্তীতে দশম শতকে চীনে এর চাষাবাদ শুরু হয়।পশ্চীম মুর( মুসলিম) রা লাইবেরিয়ান পেনিনসুলায় তেরোশো শতাব্দীতে তরমুজ কে পরিচিয় করায়।সে সূত্রে ই পশ্চিমে তরমুজ বিস্তার লাভ করে এবং সতেরো শতাব্দীতে ভারত ও আফ্রিকায় উপনিবেশ সম্প্রসারনের ফলস্বরূপ পশ্চীমে তরমুজ চাষাবাদ শুরু হয়।এই উপনিবেশবাদের এক রকম ফলস্বরূপ ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে আমেরিকায় তরমুজ চাষ শুরু হয়।বর্তমানে সারা পৃথিবীর ৯৬ দেশে ১২০০ প্রজাতির তরমুজ চাষ হচ্ছে।কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশেও তরমুজ চাষ শুরু হচ্ছে।এর পুষ্টিগুণ,স্বাদ এবং চাহিদা মোতাবেক এ দেশের চাষোপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষ করা যেতে পারে। কারণ শীতপ্রধান দেশে গ্রীন হাউস প্রক্রিয়ায় এর বাগান পদ্ধতি তে চাষ হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে উন্মুক্ত চাষ পদ্ধতিতেই এর বানিজ্য বাড়ানো যায়। আন্তর্জাতিক ফসল হওয়ার এতে দেশের আয় ও বৃদ্ধি এবং মানুষের স্বাস্থপ্রাপ্তিও হবে।
লেখকঃ Nashin promity