পিকু, পিঙ্কির দুজনের মারাত্মক রাগ হয়েছে। দাদু এতদিন গল্প শোনায় নি বলে। দাদু আজ নিজেই ওদের রুমে এসেছে চকোলেট নিয়ে।
দাদু: এই যে দেখো তোমাদের জন্য চকোলেট এনেছি।
পিকু: দাদাই তোমার সাথে কাট্টি। চকোলেট নেবোই না।
পিঙ্কি: হ্যাঁ দাদাই। তুমি প্রমিজ করেছিলে, সব গল্পটা বলবে।
দাদু: দিদিভাই জানোই তো শরীরটা ভালো যায়না। আচ্ছা বেশ এই যে বসলাম, আজ অনেক গল্প শোনাবো তোমাদের।
ব্যাস আনন্দে আটখানা হয়ে গেল দুজনেই। শুরু হল পিরামিড রহস্যভেদ।
দাদু: তা কতদূর বলেছিলাম বলো দেখি দাদুভাই।
পিকু: দাদাই ওই যে বাইরের চকচকে পাথর অব্দি বলেছিলে। এবার তাড়াতাড়ি ভেতরে চলো।
দাদু: আচ্ছা ভেতরে যাওয়ার আগে একটা কথা জানাই তোমাদের। জানো এই যে গিজার পিরামিড পৃথিবীর একদম মাঝখান বরাবর তৈরি।
পিঙ্কি: দাদাই কিন্তু আর্থ তো ওভাল শেপ। তবে মিডল পয়েন্ট কিভাবে হবে?
দাদু: নিরক্ষরেখা নাম শুনেছ তো? এই রেখা পৃথিবীর মাঝ বরাবর একটি কাল্পনিক রেখা। মানে ধরে নেওয়া হয় সুমেরু কুমেরু থকে সমান দূরে এই রেখাটি।
পিকু: সুমেরু, কুমেরু মানে ওই বরফের জায়গা? যেখানে ইগলু আছে? আমি বইয়ে পড়েছি।
দাদাই: হ্যাঁ ঠিক বলেছ পিকুবাবু। পিরামিড দেখতে ত্রিভুজ। কিন্তু এটির চারটে সাইড। মানে 3D। চারটে সাইড পৃথিবীর চারদিক মানে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ দিকের সাথে একদম সরলরেখায় আছে। মানে ধরো একটা চৌকো ঘরের মাঝখানে একটা বক্স রাখলে যেমন চারিদিক থেকে সেটা সমান দূরত্বে থাকবে সেরমই।
পিঙ্কি: দাদাই এত অ্যাকুরেসি কিভাবে হল? তখন কি এগুলো ওরা জানত?
দাদাই: দিদিভাই মনে করা হয় ভারতীয় পদ্ধতিতে ওরা স্থান নির্বাচন করেছিল। যেমন ধরো কোণার্কের মন্দিরের সূর্য ঘড়ি। সূর্যের রশ্মির সাথে সাথে ওরা সময় বুঝত। তেমন মিসরীয়রা লাঠি বসিয়ে সূর্যের রশ্মি যেদিকে ছায়া ফেলছে দিনের বিভিন্ন সময়ে দাগ দিয়ে রাখত। আর পুরোটাই হয়েছিল, যখন পৃথিবীর দিন রাত্রি সমান। এবার বল তো কবে দিন রাত্রি সমান হয়?
পিঙ্কি: দুদিন হয়। 21st মার্চ আর 23rd সেপ্টেম্বর।
দাদাই: একদম তাই। এভাবে দাগ দিয়ে একটা লাইন ড্র করে, ওরা ইস্ট ওয়েস্ট পেল। এবার তার 90° তে সাউথ, নর্থ। ভাবতো কতখানি বুদ্ধি ছিল ওদের।
পিকু: দাদাই আমি এগুলো বুঝতেই পারছি না। কি বলছ তোমরা!
দাদাই: আরে দাদুভাই আর একটু বড়ো হলেই বুঝবে। শুধু এখন জেনে রাখো পিরামিড পৃথিবীর মাঝখানে আছে। আর একটা জিনিস জেনে রাখ সেটা হল পিরামিডের যে লোকেশন সেটা হলো, 29.9869126°N. আর আলোর গতিবেগ এইটার এক্কেবারে সমান। এদিকে আলোর স্পীড আজ থেকে মাত্র 350 বছর আগে আবিষ্কার হয়েছে। কি কেমন মজার?
পিঙ্কি: ওয়াও। ইট ইজ জাস্ট আনবিলিবেভবল।
দাদাই: এইতো মজা। সব কী কো-ইন্সিডেন্স বলা চলে? চলে না। আবার বাকি পিরামিড গুলো যেগুলো মেক্সিকোতে আছে সেগুলো একদম এই একভাবে পৃথিবীর চারদিকে সমান দূরত্বে আছে।
পিঙ্কি: এগুলো দেখে তো বলাই যায় এলিয়েনরাই বানিয়েছে।
দাদাই: আমরা কোথাও ঘুরতে গেলে এখন ছবি তুলি। কেন তুলি বলত? এগুলো হলো স্মৃতি। সেরম আগেকার যারাই এই পিরামিড বানিয়েছিল তাঁরাও চিহ্ন হিসেবে এগুলো এমন ভাবে বানিয়েছে যাতে আমরা বুঝি তাঁরা কারা, বা তাদের চিন্তাধারা কি ছিল।
পিকু: দাদাই ওই অরিয়ান বেল্টের তারাগুলো থেকে ওরা এখনো আমাদের দেখে?
দাদু: সেতো বলতে পারবো না। তবে মিশরীয় এরম বহু স্থাপত্য পাওয়া গেছে মানুষের থেকে আলাদা দেখতে কোনো জীবের ছবি। যাই হোক সেসবে পরে আসবো।
পিঙ্কি: দাদু এবার বলো কি আছে ভেতরে?
দাদু: অনেক বছর ধরে পিরামিডের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছে বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ওখানের সরকার কিছুতেই এই মহান স্থাপত্য ভাঙতে দেবে না। তাই এবার এমন একটি জিনিস বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করল যাতে বাইরে থেকেই ভেতরে কি আছে উঁকি মারা যায়।
পিকু: মানে স্পেশাল সানগ্লাস?
দাদু: সেরম কিছুই ধরে নাও। এক্স রে দিয়ে যেমন মানুষের শরীরের ভেতর দেখা যায় তেমন ভাবে করা হবে পরীক্ষা ঠিক করা হল। ও হরি সে গুড়ে বালি। এক্স রে পিরামিডের দেওয়াল ভেদ করতেই পারেনা। কিন্তু তার বদলে পাওয়া গেল মিউয়ন নামে একটা কণা। যদিও বিস্তারিত বলছি না। শুধু জেনে রাখো এই কণা আকাশ থেকে টুপটুপ পরে। হাহাহা।
পিকু: তারপর কি দেখা গেলো বলনা!
দাদু: ভেতরে সবথেকে ওপরে রাজার ঘর, নীচে রাণীর ঘর আর গ্র্যান্ড গ্যালারি আছে বিশাল বড়। এবার এই কণা এগুলো ছাড়াও একটা উটের কুঁজো মত কিছু খুঁজে পায়। সেটা প্রায় গ্র্যান্ড গ্যালারির মতই বিশাল বড়। আর সেটাকে বিগ ভয়েড বা বৃহৎ গহ্বর বলা হয়।
পিঙ্কি: মানে এখনও ওই ভয়েডটায় কি আছে জানা যায়নি?
দাদু: না ওটা এখনো দেখা যায়নি। তবে এই রাজা, রাণী আর গ্যালারি তিনটিই একটা রাস্তা দিয়ে জোড়া যায়। একটা ছোট্ট ক্যামেরা ঢুকিয়ে এগুলো পাওয়া গেছে। আর পাওয়া গেছে এখনও অব্দি 2 টো বাইরে বেরোনোর দরজা। কিন্তু মনে করা হচ্ছে আরও অনেক গোপন জায়গা আছে নিশ্চই, যেগুলো এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পিকু: তাহলে কেন বানালো এসব?
দাদু: পিরামিডে এমন কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে পিরামিডে বল সকেট ইউজ হয়েছে। মানে ওখানে 20 হাজার কিলোর একটা দরজা আছে, যে কেউ সেটা এক হাতে খুলতে পারত।
পিঙ্কি: তারমানে যে কেউ যেতে আসতে পারত।
পিকু: তাহলে তো মমি চুরি হয়ে যাবে।
দাদু: প্রথমেই বলেছিলাম ওখানে কোনো মমি পাওয়া যায়নি। মানে বানানোই হয়েছে অন্য কোনো কাজের জন্য। বিগত 5 6 বছর ধরে পিরামিডকে বলা হয় ‘পাওয়ার হাউস’। কেন বলা হয়, তা বলবো কাল। এখন চটপট শুয়ে পরো তোমরা।
পিঙ্কি: দাদাই এগুলো ঠিক না। তুমি আসলটা বলছ না।
দাদু: এইগুলো না জানলে ইকুয়েশন মিলবে না যে!
পিকু: পাওয়ার হাউস মানে কি?
দাদু: কাল শুনতে হবে মন দিয়ে এইসব জানতে গেলে।
দাদু: এই যে ছানারা এসে গেছো!
পিকু, পিঙ্কি একসাথে: হ্যাঁ……
পিঙ্কি: দাদাই ক্লাইম্যাক্স বলো এবার।
পিকু: ওই পাওয়ার হাউস নাকি বলেছিলে, ওটা থেকে বলো।
দাদু: তোমার তো দেখছি সব মনে আছে দাদুভাই। তাহলে পাওয়ার হাউস কী সেটা আগে বলি। যেখানে ইলেক্ট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ তৈরি হয় সেই জায়গাকে বলা হয় পাওয়ার হাউস।
পিঙ্কি: দাদাই কি বলছ তুমি? আমি তো পড়েছি 1900 অ্যারাউন্ড নিকোলা টেসলা আর থমাস এডিসন প্রথম ইলেক্ট্রিসিটি আবিষ্কার করেছিল।
দাদু: দাঁড়াও দাঁড়াও অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে তো। বলছি একটা একটা করে।
পিকু: মানে ওখানে অনেক গ্যাজেট ছিল। ডোরেমন গেছিল আমি শিওর।
পিঙ্কি: ভাই তুই থাম তো। কার্টুন সব জায়গায়। দাদাই তুমি বলো।
দাদু: তো যেটা বলছিলাম। সবার প্রথমে বলি পিরামিড কিন্তু এমন কিছু জিনিস দিয়ে বানানো হয়েছিল, যেগুলো খুব সুন্দর ভাবে ইলেক্ট্রিসিটি বহন করতে পারে। মানে ইলেকট্রিক্যাল কন্ডাক্টিভিটি। এমনকি শুধু পিরামিডের ভেতর নয়, ইরাকেও মাটির তোলা থেকে এমন তিনটি জিনিস একসাথে পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবহার। একটা সিরামিকের পট, একটি কপার টিউব আর একটা লোহার রড। এবার এই তিনটে জিনিসকে যদি লিকুইড অ্যাসিডের সাথে জুড়ে দেওয়া যায় তবে, কেমিক্যাল রিয়েকশন হয়ে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হওয়া কোনো বড় ব্যাপার নয়। এটিকে বাগদাদ ব্যাটারি বলা হয়। সাইজ মাত্র 13.5 cm, 2000 সাল পুরোনো। তাহলে ভাবো আমাদের আগের প্রজন্ম কতখানি উন্নত ছিল।
পিঙ্কি: পিরামিডে এরম লোহা আর সিরামিক পট পাওয়া গেছে?
দাদু: না ওখানে যে মূর্তি গুলো পাওয়া গেছে সব গুলোতে সোনার প্লেটিং আছে। এমনকি পিরামিডের ওপরেও সোনার লেয়্যার ছিল। আর এই লেয়্যার ইলেক্ট্রিসিটি ছাড়া করা সম্ভব না। যেমন এখন রুপোর ওপর সোনার জল করা হয় সেরকমই।
পিকু: আমাদের ঘরেও তো সোনা আছে, তোমার আংটি টাও সোনার। তাহলে অগুলোতেও ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হচ্ছে?
দাদু: না দাদুভাই সেই ব্যাপারে আসছি। ওখানে সোনা ছাড়াও আরো এক ধরণের জিনিস ব্যবহার হয়েছে। ডলামাইট। এটিকে যতো বেশি চাপ দেওয়া হয়, ততো এর কন্ডাক্টিভিটি বেড়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, লুকোনো প্যাসেজ আর টানেল গুলোতে গ্রানাইটও পাওয়া গেছে। জানো সেটা কি?
পিঙ্কি: রেডিও এক্টিভ ম্যাটেরিয়াল।
দাদু: গুড। একদম ঠিক বলেছ। এই গ্রানাইট গুলো ভেতরে যে হাওয়া থাকে তাকে আয়োনাইজ করে দেয়। মানে পজিটিভ আর নেগেটিভ চার্জে সেপারেট করে। আর গোল্ড ইজ আ গুড কন্ডাক্টর।
পিকু: তাতে কি হবে? আর সেপারেট করে কোথায় রাখে ওদের কে?
দাদু: না না দাদুভাই কোথাও রাখে না। ওই জায়গাটাই একটা বাক্সের মত। ওখানেই আলাদা হতো আর রিয়েকশন হওয়ায় ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হত। ওখানে এখনও অবদি 20টা গ্রানাইট বক্স পাওয়া গেছে। সেগুলো সাইজে বিশাল বড়। ওজন প্রায় 1লাখ কিলো। ওগুলোকে কি ধরে নেওয়া হচ্ছে জানো? ক্যাপাসিটর।
পিকু: সেটা কী?
পিঙ্কি: ক্যাপাসিটর মানে হল যেখানে ইলেকট্রিক এনার্জি ধরে রাখা হয়। দাদাই ঠিক বললাম?
দাদু: একদম ঠিক বলেছ। হাজার হাজার বছর পর 1993 সালে প্রথম রাণীর ঘর আবিষ্কার হয়। আর 2011 তে প্রথম একটা ছোট্ট ক্যামেরা ওই চেম্বারে পাঠানো হয়। তাতে যা পাওয়া গেছে তার থেকে মোটামুটি সবাই নিশ্চিত ইলেক্ট্রিসিটি ছাড়া আর কিছুর জন্য এর ব্যবহার হতেই পারে না।
পিকু(চোখ বড় বড় করে): কি পাওয়া গেছে দাদাই?
দাদু: ওখানে কপার তার আর দেওয়ালে আজকালকার বাড়ির সুইচ বোর্ডের মতন ডিজাইন পাওয়া গেছে।
পিঙ্কি: তাহলে তো হয়েই গেলো প্রমাণ!
দাদু: না না। বিজ্ঞানীদের আর একটা খটকা আছে। কনস্ট্যান্ট ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি করতে বাইরে থেকে এনার্জি সোর্স লাগে। তাঁরা এতদিন ভেবেছো সেটা কি হতে পারে। বলতো সেটা কি হতে পারে?
পিঙ্কি: দাদাই আমি জানি। নীল নদ।
দাদু: চমৎকার। একদম ঠিক। নীল নদ আগে পিরামিডের নীচ দিয়ে বয়ে যেত। একদম প্রথমদিন বলেছি। এতে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হত সবসময়। ধরে নাও যেমন জলবিদ্যুৎ হয় এখন। কিন্তু এখন নদটি শুকিয়ে গিয়ে পাশ দিয়ে যায়।
পিঙ্কি: দাদু দে ওয়্যার ব্রিলিয়ান্ট।
দাদু: 100%। যদি মীসরীয়রা নাও বা করে, তবুও যেই করুক না কেন তারা আমাদের থেকেও বুদ্ধিমান ছিল। আরো একটি কথা জানলে অবাক হবে, ওখানে একটা মন্দিরেও এর প্রমাণ আছে। হ্যাথর নামের মন্দিরটিতে ড্যন্ডরা লাইট নামে একটি ছবি আছে। যেটি একটি স্পষ্ট বাল্বের ছবি। খোদাই করে বানানো এই ছবিটি 4000 বছর পুরোনো। মানে মোটামুটি সিওর হওয়া যায়। এবার বলো তোমাদের কি মনে হচ্ছে।
পিকু: দাদাই আমিতো ভাবছি এই এত্ত পুরোনো এই পিরামিড হাইলি মিস্টেরিয়াস।
দাদু: হাহাহা একদম ঠিক। আরো নতুন কত কি আবিষ্কার হবে তা আমরা নিজেও জানিনা। ওহহ দ্যা গ্রেট স্ফিংস নিয়ে তো বলাই হলো না। সেতো আরেক রহস্য ঝুলি। শুনবে নাকি?
পিঙ্কি: হ্যাঁ প্লিজ বলো এখন।
দাদু: স্ফিংসের নীচে নাকি গুপ্ত চেম্বারে লুকিয়ে রাখা হয়েছে অ্যাটলান্টিস শহরের সব দরকারী নথিপত্র।
পিকু:স্ফিংস কী? অ্যাটলান্টিস কী?
দাদু: বলবো বলবো সব বলব। তবে আজ নয়। আজ ঘুমাতে হবে টুক করে।
পিঙ্কি, পিকু: গুড নাইট দাদাই।