সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা। এই সভ্যতার কেন্দ্র ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু নদ অববাহিকা। পরে তা প্রসারিত হয় ঘগ্গর-ভাকরা নদী উপত্যকা ও গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল পর্যন্ত। বর্তমান ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানের বালোচিস্তান এই সভ্যতার অন্তর্গত ছিল। এই সভ্যতা হরপ্পা- মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতা নামে পরিচিত। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে এটি আবিষ্কার হয়। মহেঞ্জোদাড়ো সিন্ধু সভ্যতার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। যেখানে ‘The Dancing Girl’ মূর্তি আবিস্কৃত হয়েছিল। আমরা এখন মহেঞ্জোদাড়োর ড্যান্সিং গার্ল সম্পর্কে কিছু বলবো। এটি একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি ।
যার বয়স ৪৫০০ বছর। ১৯২৬ সালে মহেঞ্জোদাড়োর এইচ আর এলাকায় বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ আর্নেস্ট ম্যাকওয়ে এটি খুঁজে পেয়েছিলেন। মহেঞ্জোদাড়োতে পাওয়া প্রত্নবস্তুগুলোর মধ্যে এটি সবচাইতে উল্লেখযোগ্য। এই ক্ষুদ্র নারী মূর্তির ভাস্কর্যটি সিন্ধু সভ্যতার একটি আইকন। শিল্পশৈলির কারণে এই নৃত্যরত তরুনীর ভাস্কর্যটি সবার কাছে প্রিয়। মূর্তিটির দুহাতে চুড়ি এবং গলায় ৩ লকেট বিশিষ্ট অত্যন্ত ভারী একটি গলার হার। তার বড় বড় চোখ, ঘাড় কাত করে দাঁড়ানো, একটু বাঁকা দৃষ্টি, পা’টাকে ভাঁজ করে নাটকীয়ভাবে দাঁড়ানোর কারণেই, তাকে ড্যান্সিং গার্ল বা নর্তকী বলা হয়। শিল্পীর হাতের তৈরী এই যৌবনের প্রতীক হচ্ছে এই নৃত্যরত যুবতী। তাঁর লম্বা চুলকে খোপা করে ঘাড়ের উপরে অলতো করে রেখে এক অনন্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।
একহাত কোমরে রেখে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে আছে, যা তার স্বাধীনচেতা মনোভাবকে তুলে ধরে। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ মর্টিমার হুইলার বলেছেন, পৃথিবীতে এই ধরনের আত্নপ্রত্যায়ী নারী মূর্তি খুবই বিরল। তাঁর অঙ্গ ভঙ্গিমার মাধ্যমে – “আমি ছিলাম, আমি থাকবো” – ভাবটি প্রচ্ছন্নভাবে দেখা যায়। বর্তমানে এটি ভারতের দিল্লী জাদুঘরে রয়েছ্। মূর্তিটি নারী স্বাধীনতার প্রতীক।