বাংলাদেশের সাঁওতাল সম্প্রদায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহৎ নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল। উত্তরের দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলাসমূহে তাদের বসতি। সাঁওতাল আদিবাসিরা মেয়ে পুরুষেরা উভয়ে মিলে জমিতে কাজ করে এবং ফসল উৎপাদন করে।

মেয়েরা পরে হাতেবোনা শাড়ি আর পুরুষরা পরে থান কাপড়ের ধুতি, লুঙ্গি। এদের গায়ের রং হয় কালো,মেয়েরা সাজগোজ করতে খুব ভালবাসে, চুলে তেল দিয়ে যত্ন করে খোঁপা বেঁধে তাতে ফুল গুঁজে.. পায়ে রুপার মল ও গলায় হাঁসুলি পরে। মেয়েরা মাঠে কাজে যাবার সময় তাদের বাচ্চা কাপড় দিয়ে পিঠে বেঁধে নিয়ে যায়। তারা ভাত, ইঁদুর,গুঁইসাপ, মাছ, মাংস ( শুকর, খরগোশ)প্রভৃতি খেয়ে থাকে। গৃহপালিত জন্তু হিসাবে প্রায় সবাই শুকর পালে।

এদের বাড়ি ঘর হয় মাটির তৈরি,দরজাগুলি হয় নিচু এবং জানালা রাখেনা,বাড়িগুলিও হয় খুব ছোট ছোট কিন্তু পরিষ্কার। তারা বাড়ির গায়ে আঁকে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা এবং ছবি..,এতে তাদের শিল্পি মনের পরিচয় পাওয়া যায়।

তারা নবান্ন, হোলি, সোহরাই, দাসাই, বাহা প্রভৃতি উৎসব পালন করে থাকে।এইসব অনুষ্ঠানে মেয়ে ও পুরুষেরা মাদল ও বাঁশি বাজিয়ে গান গায় ও নাচে..এরা খুব আনন্দপ্রিয় জাতি। যে কোন উৎসবে মহুয়া ফুলের রস থেকে তৈরি এক ধরনের নির্যাস পান করে, এটা মেয়ে পুরুষ উভয়েই পান করে থাকে।

সাঁওতালদের মধ্যে ১২ টি গোত্র রয়েছে…

সাঁওতালদের মধ্যে ছয় রকম বিবাহপ্রথা চালু আছে এবং শুধু বাইরের গোত্রের সাথে বিবাহের চল আছে।একই গোত্রের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ের প্রচলন নাই। অভিভাবকের পছন্দ অনুসারে বিয়েকে সাঁওতালি ভাষায় ‘ডাঙুয়াবাপলা’ বলে। সাঁওতালরা সূর্যকে প্রধান দেবতা হিসাবে পূজা করে, সাঁওতালি ভাষায় দেবতাকে বলে ‘বোংগা’।পাহাড়ের দেবতাকে বলে ‘মারাংমুরো’ এবং গৃহদেবতার নাম ‘বোঞ্চার’।মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম থাকলেও তারা পয়সার অভাবে মাটি চাপা দেয়। তারা নবান্ন, হোলি, সোহরাই, দাসাই, বাহা প্রভৃতি উৎসব পালন করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব গান, সংস্কৃতি এবং নাচ। মাদল, দমা ও বাঁশি এদের প্রধান বাদ্যযন্ত্র।  ফাল্গুনমাসে তাদের নতুন বছর শুরু হয় তাই এই সময় তাদের বেশ বড় সড় উৎসব হয় এছাড়া চৈত্র সংক্রান্তিতেও তারা উৎসব পালন করে।

সাঁওতালি ভাষা অস্ট্রিক ভাষার পরিবারভুক্ত। কোল ও মুন্ডারি ভাষার সঙ্গে সাঁওতালি ভাষার সাদৃশ্য রয়েছে। প্রতিরোধ সংগ্রাম সত্ত্বেও জোতদার-মহাজনদের শাসন-শোষণ থেকে সাঁওতাল সমাজ মুক্ত হতে পারে নি। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল অবধি বাংলাদেশে তেভাগা আন্দোলনে সাঁওতালদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কথা এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য।