সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়তমা স্ত্রী ছিলেন নূরজাহান। “পাদশাহ বেগম” উপাধি দেওয়া হয়েছিল। তিনি মুঘল দরবারের এক অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মুঘল সাম্রাজ্যের শিল্প এবং স্থাপত্যে বিকাশের ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট সাহায্য করছেন। তার নামে বহু মসজিদ, সরাইখানা, সমাধি ও বাগান তৈরি করেছে। আবার তিনি নিজেও কিছু কিছু স্থাপত্য তৈরি করেছিলেন।
আমরা আজকে তার তৈরি “নূরমহল সরাই” এর গল্প বলবো। পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলায় এই ছোট্ট শহর নূরমহল। ১৬১৮ সালে নূরজাহান সেখানে একটি সরাইখানা তৈরি করেছিলেন। তার নাম ছিল নূরমহল। এর
উপরে ভিত্তি করে পাঞ্জাবের ঐ এলাকার ছোট্ট শহরটির নামকরণ করা হয়েছে। দুই বছর ধরে সরাই খানাটি তৈরি করা হয়েছিল। সে সময়কার জলন্ধরের গভর্নর জাকারিয়া খান এটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন। লাহোর–আগ্রা পথের যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য সম্রাজ্ঞী এই সরাইখানাটি তৈরি করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথে এই সরাইখানাটি তৈরি করার কারণে নূরজাহান কোষাগারে প্রচুর রাজস্ব পেতেন এবং এই রাজস্বই পরবর্তীতে অন্যান্য নানা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেছিল। অসাধারণ বেলে পাথরের একটা দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় এখানে। আর গায়ে খোদাই করা আছে

নূরমহল সরাইখানার টেরাকোটা © notesonindianhistory.com
পাখি, হাতি, উট, পরী ও নানা মানুষের ছবি। তখনকার দিনে তৈরি বিভিন্ন সরাইখানাগুলির সাথে নূরজাহানের নূর মহলের বেশ কিছুটা তফাৎ রয়েছে। তার এই বেলে পাথরের দরজা অত্যন্ত রাজসিক এবং ভিন্ন মাত্রার ছিল।একটি হাম্মাম ও একটি মসজিদ রয়েছে এই সরাইখানার কমপ্লেক্সের মধ্যে। সবুজ রং তারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে সারি সারি ঘর। ঘরগুলোর মধ্যে রয়েছে খিলান দেওয়া বারান্দা, ছোট ছোট গর্ত। সম্ভবত প্রদীপ বা ফানুস রাখার জন্য সেই কুলুঙ্গিগুলি ব্যবহার করা হত।সম্রাট জাহাঙ্গীর নিজে দু’বার এই নূরমহলকে পরিদর্শন করতে গিয়েছিল।
তাঁর আত্মজীবনী তুজক-ই-জাহাঙ্গিরি-তে এই সরাই সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন যে,
“আমি নূর-সরাইয়ে থাকতাম। বিশাল এক ভবন এবং রাজকীয় উদ্যান নির্মাণ করেছিলেন নূরজাহান বেগম এক প্রতিনিধির সাহায্যে। সেটি আজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এই কারনে নূরজাহান বেগম বিশাল এক ভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেই ভোজে নানা রকম দুর্লভ ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেছিল। তাঁকে খুশি করবার জন্য আমি বেশ খালিনকটা খেয়েছিলাম। দুই দিন অবস্থান করেছিলাম সেখানে। নূরমহল সরাইখানা তৈরির ক্ষেত্রে ইসলামিক নকশা ও হিন্দু শিল্পেরও প্রভাব দেখা যায়। এক সিনক্রেটিক সংস্কৃতির অনন্য উদাহরন হচ্ছে গিয়ে এই নূরমহল। হিন্দু মুসলিম দুই সংস্কৃতির শিল্পধারা মিলেমিশে চমৎকার একটি ঐতিহাসিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে।

নূরমহল-সরাইখানার বারান্দা © notesonindianhistory.com

