আঙ্গুলের ছাপ। পাহাড়-পর্বত, ইটের টুকরো বা প্রাসাদের দেওয়ালে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের আঙ্গুলের ছাপের নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় । মানুষের মধ্যে যে স্বকীয়তার বৈশিষ্ট্য রয়েছে তারই প্রমাণ বহন করে এই আঙ্গুলের ছাপ l প্রাগৈতিহাসিক কালের আঙ্গুলের ছাপের যে নমুনাগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো কি কাকতালীয়ভাবে তৈরি নাকি মানুষ তাদের জ্ঞান প্রসূত ধ্যান ধারণা থেকেই এই ছাপগুলোর ব্যবহার করেছিল তা আমাদের জানা নেই।

প্রাচীনতম মানুষের আঙুলের ছাপ, এটি প্রায় ৭৩০০ বছরের পুরানো। © en.shafaqna
প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফিলিস্তিনের জর্ডান নদীর কাছে জেরিকাতে সর্বপ্রথম আঙ্গুলের ছাপের প্রাচীনতম নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। প্রাচীন এক শহর থেকে নিউলিথিক সময়ে তৈরি কতগুলো ইটের টুকরো পাওয়া যায় যার প্রতিটিতেই একটি আঙুলের ছাপ ছিল। আর ঐ আঙুলের ছাপওয়ালা ইট দিয়েই পুরোটা প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল। এই ছাপের মাধ্যমে ইট ভাটার মালিক হয়তো প্রতিটি ইটে তার মালিকত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগে দেখা গিয়েছে মেসোপটেমিয়ার কারিগরেরা তাদের উৎপাদিত পণ্যে নিজেদের আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করতো এই বিশেষ পণ্যটি তারই তৈরি। একই রকম ভাবে তারা চিনামাটি, মাটির ট্যাবলেট, মাটির পাত্র আরো অনেক দলিল পত্রে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজেদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং করেছিলেন। চায়নাতেও দেখা গিয়েছে বিভিন্ন চুক্তিপত্র তৈরির সময় বা কোন দলিল লেখার সময় কালো কালিতে আঙ্গুল ভিজিয়ে হাতের ছাপ দিয়ে জিনিসটির বৈধতা নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছিল।

3,000-year-old fingerprints found at ancient village in Al Ain
একজন চীনা ঐতিহাসিক কিয়াকুং ইয়েন বলেন বিভিন্ন চুক্তিপত্র তৈরির সময়, ঋণ গ্রহণ করা, বাড়ি সংক্রান্ত চুক্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে মাটির সিল এবং কালিসহ আঙুলের ছাপের উপস্থিতি তিনি দেখতে পেয়েছেন। ১৪ শতকের পারস্যের প্রাচীন নথিগুলো থেকে দেখা যায় যে সেখানকার একজন সরকারি কর্মকর্তা বা চিকিৎসক লক্ষ করেন যে, দুজন মানুষের আঙ্গুলের ছাপ একরকম নয়। তিনিই প্রথম না। ইংরেজদের এক নথিতে দেখা যায় কোন কিছু চুরি হয়েছে কিনা সেই তদন্তের সময় প্রমাণ হিসেবে হাতের ছাপ ব্যবহার করার বিবরণ রয়েছে। এই উদাহরণগুলো থেকে এটা কি মনে করা যেতে পারে যে, প্রাচীন কালে প্রতিটি মানুষেরা আঙ্গুলের ছাপের স্বকীয়তা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত ছিল।