মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বর বৌদ্ধ নগরীতে সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিস্কৃত হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পিরামিড আকৃতির নান্দনিক বৌদ্ধ স্তূপ। এই বৌদ্ধ স্তূপের দেয়াল ৬৪ সেন্টিমিটার উঁচু ও প্রশস্ত প্রায় তিন মিটার। দেয়ালের বাহিরের দিকে চারটি প্যানেলে বিভক্ত মনোরম নকশা রয়েছে। স্তূপটির কেন্দ্রের অংশটি মাটি দিয়ে ভরাট করা, যা নিরেট আকার ধারণ করেছে । এটি বাংলাদেশের প্রথম, ব্যতিক্রমী, ও দুষ্প্রাপ্য পিরামিড আকৃতির নান্দনিক স্তূপ। এটির তৈরির সময়কাল ধরা হয়েছে ৭৮০ থেকে ৯৫০ সাল।

 
 
 
 
 
 
আসলে স্তূপ মানে হলো সমাধি। বৌদ্ধ ধর্মে স্তূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য। এই স্থাপত্যের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধ ও তার বৌদ্ধ ধর্মকে উপস্থাপন করা হয়। পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্মভূমি বিক্রমপুরে এটি অবস্থিত এবং এটি তার জন্মের আগের কীর্তি। প্রাচীনকালে বিক্রমপুরে সমৃদ্ধ একটি বৌদ্ধ সভ্যতা ছিল।
সেই সভ্যতায় শ্রীজ্ঞানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। যে কারণে অতীশ দীপংকরের জ্ঞানগরিমায় অভিভূত হয়ে তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্ম রক্ষার জন্য চীনের রাজা তাকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি চীনে ও তিব্বতে এখনও পূজনীয়। তার জীবনীগ্রন্থে উল্লেখিত নগর ও অট্টালিকার সঙ্গে নাটেশ্বরে আবিস্কৃত বিশাল আকৃতির স্তূপের মিল পাওয়া যায়। তিব্বতীয় সাক্ষ্য অনুসারে, অতীশ দীপঙ্কর প্রাচীন পূর্ব ভারতের অর্থাৎ বাংলার ঝাহরের এক রাজকীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই নগরে হাজার হাজার ভবন ছিল এবং নগরের রাজপ্রাসাদটি সোনার অলংকরণে সাজানো ছিল।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ উদ্ধারে প্রত্নতত্ত্ব জরিপ ও খননকাজ শুরু হয়। এতে রামপালে হাজার বছরের পুরাতন বৌদ্ধবিহার, বল্লালবাড়ী এলাকায় সেন বংশের রাজবাড়ি, ও টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে বৌদ্ধমন্দির আবিস্কৃত হয়। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিনের উদ্যোগে হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ নগরীর প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ তত্ত্বাবধান করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহ সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক সমকাল পত্রিকা।