টুথপেস্ট এর ধারণা মোটেও আধুনিক না,বরং আজ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় বা সাত হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ টুথপেস্টের কথা জানত। যদিও প্রথম দিকে টুথপেস্টের কাজ ছিল শুধু দাঁতকে পরিষ্কার রাখা,পরে আস্তে আস্তে এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দাঁতের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোও। মূলত খ্রিস্টের জন্মেরও তিন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে মিশরীয়রা টুথপেস্টের মতো এক ধরনের ক্রিম ব্যবহার করত। অদ্ভুত সমস্ত জিনিস দিয়ে এটা বানানো হতো,যেমন- মিহি করে গুঁড়া করা ষাঁড়ের খুড়, এক প্রকার গাছের সুগন্ধি রস, লাভার সঙ্গে বেরিয়ে আসা পাথরের গুঁড়া, পুড়িয়ে নেয়া ডিমের খোলস এবং পানিসহ আরো নানা কিছু। যদিও সে সময় এ ধরনের ক্রিম দাঁতে লাগাবার জন্য কোনো ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করার চল ছিল না, ব্রাশের পরিবর্তে এক ধরনের নরম কাঠি ব্যবহার করতো মিশরীয়রা। এভাবে বহু বছর চলার পর ১০০০ খ্রিস্টাব্দে টুথপেস্টের উপকরণে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনে পার্সিয়ানরা।
তারা তাদের দাঁতের ক্রিমে শামুকের খোলস ছাড়াও ওয়েস্টার ও জিপসামের মতো উপকরণ যুক্ত করে। বাণিজ্যিকভাবে টুথপেস্টের বিক্রি শুরু হয় আঠার শতকের ইংল্যান্ডে। তখন সিরামিকের এক ধরনের পাত্রে বোরাক্স মিশ্রিত টুথ ক্লিনিং পাউডার বিক্রি হতে থাকে। তবে বিংশ শতকের আগ পর্যন্ত এ ধরনের অধিকাংশ পণ্য দাঁত পরিষ্কার করলেও দীর্ঘমেয়াদে দাঁতের ক্ষতি করত। এরই মাঝে সিরামিকের পাত্র ছেড়ে উনিশ শতকেই টুথপেস্টের জায়গা হয় লিড বা টিনের তৈরি ছোট ছোট টিউবে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লিড ও টিনের সংকট দেখা দিলে দু’একটি কোম্পানি তাদের টুথপেস্ট বাজারজাত করার জন্য প্রথমবারের মতো অ্যালুমিনিয়াম, কাগজ ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে লেমিনেটেড টুথপেস্ট টিউবে দাঁত মাজার উপকরণ বাজারে ছাড়তে সক্ষম হয়। টুথপেস্টের ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে বড় একটি পরিবর্তন আসে গেল শতকের চল্লিশের দশকে। এ সময় ডা. উইলিয়াম অ্যাঙ্গলার নামের এক ব্যক্তি ৪০০ শিশুর উপর পরীক্ষা চালিয়ে আবিষ্কার করেন যে ফ্লুরাইডের মতো উপকরণ দাঁতের ক্ষয় রোধ বা ক্যাভিটি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আর এভাবেই ১৯৫০ সালে প্রথমবারের মতো স্রেফ দাঁত পরিষ্কারের গণ্ডি ছেড়ে দাঁতের সুরক্ষাতেও টুথপেস্টের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ফ্লুরাইড ঢুকে পড়ে টুথপেস্টের উপকরণে। আর এরই হাত ধরে পরবর্তী সময়ের বিজ্ঞানীরা দাঁত পরিষ্কারের পাশাপাশি দাঁতের সুরক্ষার উপর জোর দিয়ে নানা উপকরণ যোগ করেন টুথপেস্টে|