বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আমরা কতগুলো উঁচু উঁচু পাথর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পাই। আমাদের মনে কি কখনও প্রশ্ন জাগে আসলে এই পাথরগুলো কি বা কোথা থেকে এসেছে? এগুলোকে আসলে বলা হয় মেগালিথিক পাথর (Megalithik Stone) । মেগা শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিশাল বা বড়’ আর লিথিক শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘পাথর’। সমগ্র এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ জুড়ে এ ধরনের নিদর্শন রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশেরও বিভিন্ন স্থানে এই পাথরগুলো প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
আমরা কি জানি যে আমাদের বাংলাদেশেও এই মেগালিথিক নিদর্শন গুলো রয়েছে? সিলেটের জাফলং যাওয়ার পথে পরে জৈন্তাপুর, একসময় যা ছিল জৈন্তা রাজার রাজ্য। ভূতাত্ত্বিক গঠনের জন্যেই অনেকদিন পর্যন্ত রাজ্যটি স্বাধীন ছিল। বিভিন্ন মহাকাব্য, পৌরণিক কাহিনী ও তান্ত্রিক সাহিত্যেও এর উল্লেখ রয়েছে। দেব বংশের শেষ রাজা জয়ন্ত তার একমাত্র কন্যা জয়ন্তীকে বিয়ে দেন খাসিয়া প্রধানের ছেলের সাথে। সেই সূত্রে পরবর্তীতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের অধীনে চলে আসে এই জৈন্তাপুর রাজ্য। উনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসনামলেও জৈন্তাপুর খাসিয়া রাজাদের অধীনেই ছিল। দেশ বিভাগের পরে এই রাজ্যের অর্ধেক চলে গিয়েছে ভারতের মেঘালয়ায় আর আর বাকি অর্ধেক রয়েছে বাংলাদেশের জৈন্তাপুরে। বাসস্ট্যান্ডের পাশেই আছে সেই জৈন্তা রাজা লক্ষী সিং – এর রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। এবং সেখানেই দেখতে পাওয়া যায় বিশাল আকারের পাথর স্তম্ভ আর পাথরের পায়ার উপর টেবিল বা বেঞ্চের মতো বসানো পাথরের বড় বড় টুকরো।
সাধারণত বিশেষ কেনো ব্যাক্তির সমাধির উপর এই পাথরের স্তম্ভগুলো গড়া হতো। বাংলাদেশে একমাত্র জৈন্তাপুরেই এই সমাধি স্তম্ভগুলোর চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। উঁচু লম্বা পাথর গুলোকে বলা হয় মেনহির এবং বেঞ্চির মতো পাথরগুলোকে বলা হয় ডলমেন। এই জৈন্তপুরেই ২৫ টি মেনহির আর ৩২ টি ডলমেন পাওয়া গিয়েছে, যার অনেকগুলোই আজ হারিয়ে গেছে।
আমরা লক্ষ টাকা খরচ করে যে জিনিস দেখতে ইউরোপ, আমেরিকায় যাই, সেই জিনিস যে আমাদের দেশেও আছে শুধু না জানার কারণে আমরা সেইসব জায়গাগুলোকে মূল্যয়ন করতে পারছি না। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই মেগালিথিক সংস্কৃতি দেখার জন্যে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসে। কিন্তু আমাদের দেশে এটি পরে রয়েছে ভীষণ অবহেলায়। আমাদের উচিত এই নিদর্শনগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন ব্যবস্থাকে সহজ করে তোলা।