ঢাকায় সুবেদার ইসলাম খানের রাজসভার উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও রাজন্যবর্গের মনোরঞ্জনের জন্য এক জমকালো নৃত্যের দরবার ছিল। সেখানে ‘লুলি’, ‘কাঞ্চনী’, ‘হরকানী’, ও ‘ডোমিনী’ নামে হাজারেরও বেশি নৃত্যশিল্পী ছিল। যাদের প্রত্যেকের জন্য প্রতি মাসে ৮০ হাজার রুপি খরচ হতো, (সেই সময়ের হিসেবে)। খরচের হিসাব দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে, এই নর্তকীর দল অত্যন্ত দক্ষ, আকর্ষণীয় ও যোগ্যতা সম্পন্ন ছিল। নৃত্য চলাকালীন সময়ে দরবারের বিভিন্ন কোনায় খানসামারা খাজাঞ্চী ভর্তি মুক্তো, সোনার গহনা ও দামী দামী উপহার নিয়ে দাড়িয়ে থাকতো। বিভিন্ন সময়ে নাচ দেখে প্রভুরা খুশি হলে ঐ পাত্র থেকে উপহারগুলো ছুড়ে ছুড়ে দেয়া হতো নর্তকীদেরকে। নাচের মেয়েদের পাশাপাশি ‘কালান্ত’ নামের গায়কও ছিল তার দরবারে। তারা হিন্দু-মুসলিম ঊভয় ধর্ম থেকেই সুবাদারের দরবারে কাজ পেয়েছিল। এইসব নৃত্যশিল্পী ও গায়করা তাদের অসামান্য যোগ্যতার জন্য সারা ভারতে প্রচুর সুনাম অর্জন করে। ঐ সময়ের একটি চমৎকার গল্প রয়েছে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ও সুবেদার ইসলাম খানের নিয়ে। আজকে আমরা সেই গল্পই জানাবো।
মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ইসলাম খানের ঢাকার নৃত্যশিল্পীদের প্রচুর সুনাম শুনে তাদেরকে দেখার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন তিনি তাঁর দিল্লীর রাজদরবারের প্রেমরাঙ্গা নামের একজন দামী সংগীত শিল্পীকে ঢাকায় ইসলাম খানের কাছে পাঠান এবং প্রেমরাঙ্গা শিল্পীর বিনিময়ে কয়েকজন ঢাকার নৃত্যশিল্পীকে দিল্লীতে পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু ইসলাম খান সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি এই বিনিময় প্রথায় যাবেন না। সম্রা্টকে না বলার যোগ্যতাও ইসলাম খানের ছিল। কারণ, ইসলাম খান ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের ছোটবেলার খেলার সাথী। সত্যিই, তিনি দিল্লীর দরবারে কাউকে পাঠাননি বরং উল্টো প্রেমরাঙ্গাকে গুপ্তচর মামলায় কারাগারে বন্দি করে রাখেন। আসলে ঢাকার নৃত্যশিল্পীদের ইসলাম খানের দরবারের বাইরে অন্য কোথাও নৃত্য প্রদর্শ্ন নিষেধ ছিল এবং এটা কড়াকড়িভাবে পালন করা হতো।
আমরা কমবেশি সবাই জানি, মোঘল সুবাদার ইসলাম খান 1610 সালে ঢাকায় আসেন এবং কৌশলগত কারণে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী করে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ‘জাহাঙ্গীরনগর’ নাম রাখেন। জাহাঙ্গীর তাকে ‘ইসলাম খাঁ’ উপাধি দিয়ে সুবাদার করে পাঠান। তিনি বারো ভুঁইয়াদের দমন করে বাংলাকে সমৃদ্ধ সুবায় প্রতিষ্ঠিত করেন। ঢাকার ইসলামপুর আজও তার স্মৃতি বহন করছে।
তথ্যসূত্র: গিলেম্পেস অব ওল্ড ঢাকা।