চারশো বছরের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিমতলীর দেউড়ি। অনেকে মনে করেন, মোঘল আমলে নদী তীরবর্তী কোনো বড়, পুরোনো নিমগাছকে কেন্দ্র করেই এলাকাটির নামকরণ করা হয় নিমতলী। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন পুরো দেশটাকে দখল করে নিলো, সেই সময় ঢাকায় চলছে দ্বৈত শাসন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পাশাপাশি নায়েবরাও ঢাকাকে শাসন করতো। বংশপরম্পরায় এই শাসনকার্য চলেছিলো বলে এই জায়গাটি অনেক পরিচিতি লাভ করেছিলো। ইতিহাসবিদ তৈফুর বলেন, প্রথম দিকে নায়েবরা কারাগার চত্বরের পুরোনো দুর্গে থাকতেন। পরবর্তীতে তারা বড় কাটরায় স্থানান্তরিত হয়। এই নিমতলী প্রাসাদটি লেঃ সুইটনের নির্দেশে নায়েবদের বসবাসের উপযুক্ত করে দ্রুত নির্মাণ করা হয়েছিল। যতদিন তারা বেঁচে ছিলেন, এই প্রাসাদেই বসবাস করতেন।
বর্তমান নিমতলী মহল্লা ও হাইকোর্ট ভবনের মাঝে এই প্রাসাদ অনেকটা জায়গা জুড়ে ছিল এবং অনেকগুলো বিভিন্ন আকারের আরোও অনেক ভবন ছিল যা আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে নিমতলী দেউড়ির প্রধান ফটকটি দেখে ধারণা করা হয়, প্রাসাদটি মোঘলদের তৈরী স্থাপত্যের নকশা অনুসরণ করেই তৈরী। প্রাসাদের পানি সরবরাহ করা হতো কমলাপুর নদী থেকে আসা ছোট একটি খালের মাধ্যমে।
বিশপ হেবার বলেছেন, প্রাসাদের একটি খোলা হল ঘর নহবতখানা নামে পরিচিত ছিল। সেখানে সন্ধ্যাবেলায় রণসঙ্গীত বাজানো হতো। এছাড়াও বারোটি দরজাবিশিষ্ট একটি ঘর ছিল যা বারোদুয়ারী নামে পরিচিত ছিল। সেখানে এলাকার ১২ জন সর্দার সাধারণ মানুষের সুবিধা অসুবিধাগুলো জানার উদ্দেশ্যে ১২ টি দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। পূর্বে এটি ঢাকা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরবর্তীতে ঢাকার নায়েবদের শাসনামল শেষ হয়ে গেলে হাতবদলের মাধ্যমে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসে। বর্তমানে নিমতলী দেউড়ি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো নিমতলী দেউড়ির প্রধান ফটকটি দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
জাদুঘরে নায়েব নাজিম Image Source Google
এশিয়াটিক সোসাইটি হেরিটেজ মিউজিয়ামের ভিতরের দৃশ্য Image Source Google
এশিয়াটিক সোসাইটি হেরিটেজ মিউজিয়ামের ভিতরের দৃশ্য Image Source Google