১৩৫০ সালের দিকে মুসলিম বাহামনি সাম্রাজ্য গোয়া কিছুদিনের জন্য হিন্দু রাজার অধীনে থাকলেও পরবর্তীতে আবার মুসলমানরা তা জয় করে নেয়। পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে বাহমানি সাম্রাজ্য পাঁচটি ছোট রাজ্যে বিদার, বেরার, আহমাদনগর, গোলকোন্দা ও বিজাপুর এই নামে বিভক্ত হয়ে যায় l গোয়া ছিল সুলতান আদিল শাহের অধীনে বিজাপুরের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে সেইখানে পর্তুগিজরা কীভাবে এসেছিল?
১৪৯৮ সালের ২০ মে পর্তুগিজ পর্যটক ভাস্কো দা গামা প্রথম বর্তমান কেরালায় কালিকট বন্দরে পৌঁছান। তার আবিষ্কৃত ভারতে আসার এই নতুন পথ পর্তুগিজদের সামনে নতুন বাণিজ্যের দরজা খুলে দেয়। এরপর ১৫১০ সালে আলফানসো ডি আলবুকার্কের নেতৃত্বে গোয়ায় প্রবেশ করেন পর্তুগিজরা। তবে আলবুকার্ক বাণিজ্য ছাড়াও গোয়ায় বসতি স্থাপন করতে চাইলে সুলতান আদিল শাহের সৈন্যবাহিনী তাদের বাধা দিলে আলবুকার্ক সেবার ফিরে যান l কিন্তু পরেরবার অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বহু সৈন্য নিয়ে গোয়ায় আসেন। তিমোজা নামের এক হিন্দু সর্দারের সাহায্য তার এই কাজটিকে সহজ করে দেয় । ইতিমধ্যে সুলতান আদিল শাহ মারা গেলে ক্ষমতায় বসেন তার নাবালক পুত্র ইসমাইল আদিল শাহ।
এই সুযোগটা কাজে লাগায় আলবুকার্ক । তিনি বিশাল পর্তুগিজ বাহিনী নিয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এলা ও গোয়া দখল করে নেন। এখানেই থামেননি আলবুকার্ক। পরের তিনদিনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর এক নারকীয় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালান তিনি। অবশ্য সেই সময় হিন্দুদের সাহায্য পাওয়ায় প্রথমদিকে তাদেরকে ছেড়ে দেন কিন্তু পরে তাঁরাও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাননি। ১৫৪৩ সালের মধ্যে পর্তুগিজরা সালসেত, মোরমুগা ও বারদেজে তাদের ক্ষমতার সীমানা সম্প্রসারিত করে l এ বিজয়ের পর গোয়া হয়ে ওঠে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এবং এটি ‘গোল্ডেন গোয়া’ বা ‘প্রাচ্যের লিসবন’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু গোয়ার বুকে গোয়ার প্রকৃত অধিবাসীর জীবন ছিল অনেক কষ্টের , ছিল অন্ধকারের, পর্তুগিজদের ধর্মীয় নিপীড়ন গোয়ার মানুষকে করেছিল দিশাহারা l তাদের এই অন্ধকার দিক নিয়ে চলবে আজকের আলাপন l
স্পেনের ইনকুইজিশনের ভয়াবহতার সম্পর্কে অধিকাংশ পাঠকই অবগত হলেও আমরা অনেকেই জানি না যে এই উপমহাদেশে গোয়ার জনগনও এই ভয়াবহ ইনকুইজিশন নামক অত্যাচারের মুখোমুখি হোয়েছিলl
সম্প্রতি গোয়ার শেফালী বৈদ্য ‘দ্যা বারবারিক গোয়া ইনকিউজিশন বাই পর্তুগীজ মিশনারীজ,’ বক্তৃতার মাধ্যমে এবং ‘গোয়া ইন ইনকিউজিশন’ নামে একটি বইয়ের মাধ্যমে সেইসব লোমহর্ষ্ক কাহিনি তুলে ধরেন আমাদের সামনে। তুলে ধরেন পর্তুগিজ খ্রিষ্ঠানরা কিভাবে ২৮০ টি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছে, শুধু এ টুকুই না ,তারপর তারা হিন্দুদেরকে কিভাবে জোড় করে খ্রিষ্ঠান ধর্মে ধর্ন্মান্তরীত করেছেন। ১৫৬৬ সালের থেকে কয়েক বছরে তারা বড় বড় সব হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিল।
প্রথমে আলবুকার্কের প্রধান লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য। তাই পর্তুগিজরা স্থানীয় হিন্দুদের পাশে পাওয়ার জন্য তাদের প্রতি প্রথম দিকে বেশ সহনশীলই ছিল, তবে মুসলিমদের প্রতি তাদের ক্রোধের কোনো সীমা ছিল না। পরবর্তী কালে একপর্যায়ে পর্তুগিজদের সাথে সাথে তাদের ধর্মেরও আগমন ঘটে গোয়ায়, এবং সেটিও ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরবর্তীতে গোয়ায় ‘ইনকুইজিশন’-এর আবির্ভাবের পর বদলে যায় গোটা দৃশ্যপট।
১৫৪২ সালে সেইন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ও জেসুইটদের আগমন ঘটে গোয়ায়। গোয়ায় পা রেখে জেভিয়ার বুঝতে পারেন, এখানকার মানুষ খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেও তাদের মনে এটি কোনো স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারেনি। স্থানীয় পুরনো ধর্ম ও রীতি-নীতির প্রতি এদের রয়েছে গভীর আকর্ষণ। বেশিরভাগ মানুষই হয়তো জোরপূর্বক কিংবা রাজনৈতিক কারণে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছে। এই জনগোষ্ঠীকে প্রকৃত খ্রিস্টান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, আর সেজন্য বেছে নেন ইনকুইজিশনের মতো ভয়ঙ্কর পথ। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন তিনি আর কেউ নন, সেন্ট জেভিয়ার। আলফোনসো ডি ১৫৪৫ সালের ১৬ মে তিনি পর্তুগালের রাজাকে একটি চিঠি লেখেন, যেখানে ইনকুইজিশনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাদের ভাষ্যমতে ”খ্রিস্টানদের জন্য দ্বিতীয় জরুরী জিনিসটি হচ্ছে পবিত্র ইনকুইজিশন l কারণ এখনও অনেকেই ইহুদি এবং মুসলিম তাদের মত করেই জীবনযাপন করছে। তাদের মনে ঈশ্বরের কোন ভয় নেই বা কোন চক্ষুলজ্জাও নেই। রাজা যেন তার ভারতের বিশ্বস্ত ও বিশ্বাসী প্রজাদের জন্য এইসব জরুরী জিনিসের ব্যাবস্থা করেন।” (Joseph Wicki, Documenta Indica, Vol. IV, Rome, 1956)
অবশ্য সেই সময়ে পর্তুগালের রাজা ও পোপের মধ্যে চলছিল দ্বন্দ্ব। তাই সাথে সাথেই ইনকুইজিশন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু জেসুইটরা ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ অব্যহত রাখে, তার ফলে ১৫৬০ সালে শুরু হয় ইনকুইজিশন কার্যক্রম। প্রাথমিকভাবে ইনকুইজিশনের লক্ষ্য ছিল কেবল নব্য খ্রিস্টানদেরকে শাস্তি দিয়ে ও ভয় দেখিয়ে প্রকৃত খ্রিস্টান হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু ক্রমেই এর শিকারে পরিণত হয় স্থানীয় হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি সকলেই। এমনকি অনেক ইউরোপীয়কেও ইনকুইজিশনের নামে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।
দূর্গেসনন্দিনীর মতে ইনকুইজিশনের ব্যাপারটা অনেকটা এমন ছিল যে, খ্রিস্টান যাজকেরা প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় নজরদারি করে বেড়াতেন, এবং যদি তাদের মনে কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রতি ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ জন্মাত যে ওই ব্যক্তি সঠিকভাবে খ্রিস্টধর্ম পালন করছে না, সাথে সাথে তাকে ধরে নিয়ে এসে অকথ্য নির্যাতন চালাতেন তারা। ১৮১২ সাল পর্যন্ত গোয়ায় ইনকুইজিশন চলে, এবং এই সময়কালের মধ্যে অগণিত মানুষকে শাস্তির নামে বন্দিশালায় বন্দি রাখা হয়, এমনকি জীবন্ত পুড়িয়েও মারা হয়। এসবের পাশাপাশি ইনকুইজিশন চলাকালীন প্রচুর মন্দির ও দেবতার মূর্তিও ধ্বংস করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে ১৫৬০ থেকে ১৮১২ সাল পর্যন্ত এই গোয়া ইনকুইজিশন চলে।
বুকানন ১৮০৮ সালে গোয়া যান এবং স্বচক্ষে দেখেন ইনকুইজিশনের সুবিশাল হল, বিচারকক্ষ, বন্দীশালা এবং যেখানে বন্দীদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত l বিষয়টি এতই ভয়াবহ ছিল যে অনেক ইউরোপীয়কেও ইনকুইজিশনের নামে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। ক্যাথলিক অনুশীলন অনুসরণ না করার অভিযোগে চার্লস ডেলন নামের একজন ফরাসি ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে ৩ বছরের জেল বা কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি মুক্তি পাবার পর ফ্রান্সে ফিরে গিয়ে ‘দ্য রিলেশন অফ দ্য গোয়ান ইনকুইজিশন’ নামে একটি বই লেখেন যার মাধ্যমে আমরা সেসময়ের ভয়ংকর চিত্রগুলি জানতে পারি।
ধর্মপ্রচারের এই “মহান” কাজে জেভিয়ারের সহযোগী ছিলেন রোম কর্তৃক নিযুক্ত ভারতের ভিসার জেনারেল(ধর্মরক্ষক)মিগুয়েল ভাস। এতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য ৪১ দফা পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে ৩ নম্বর দফাটি হল- “আমরা সবাই যেহেতু জানি যে পৌত্তলিকতা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এক জঘন্য অপরাধ তাই এটাই উচিত হবে যে আপনার রাজ্যের কোন এলাকায় এমনকি সমগ্র গোয়ায় যেন কোন প্রকাশ্য বা গোপন মন্দির না থাকে এবং মন্দির তৈরি করার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যাবস্থা করা হয়। কোন কর্মচারী যেন কোন ধরণের মূর্তি তৈরি করতে না পারে, তা পাথর, কাঠ, তামা বা অন্য যেকোনো ধাতুই হোক না কেন…… রাষ্ট্রের যদি সন্দেহ হয় যে কোনো ব্রাহ্মণ ও অন্য কোনো হিন্দুদের কারো ঘরে মূর্তি আছে , তা হলে সেন্ট পল’স কলেজের দায়িত্বে যারা আছে তাদেরকে যেন ঐ সব ঘর তল্লাসি করার ক্ষমতা দেয়া হয়” (Joseph Wicki, Documenta Indica, Vol. 1) এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রাজা ১৫৪৭ সালের ৮ মার্চ গোয়ার সমস্ত মন্দির ভেঙ্গে ফেলতে ভাইসরয়কে নির্দেশ দেন।
তবে মন্দির ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া যে আগে ছিলনা এমন কিন্তু নয়। খ্রিস্টান যাজক ও পুরোহিতরা নিজ উদ্যোগেই স্ব স্ব এলাকার বহু মন্দির ধ্বংস ছিলেন। শুধু ১৫৪১ সালেই ধ্বংস হওয়া ১৫৬টি মন্দিরের তালিকা পাওয়া যায় ১৯৫২ সালে প্রকাশিত লেখক Francisco Pais এর লেখা Tomba da Ilha des Goa e das Terras de Salcete e Bardes বইটিতে l তবে রাজার আদেশের পর ধ্বংস প্রক্রিয়া নতুন গতি লাভ করে। History of Christianity in India, Vol. 1 অনুযায়ী সালসেতে ২৮০টি মন্দির ও বারদেজে ৩০০টি মন্দির ধ্বংস করা হয়। বাসেইন, বান্দ্রা, থানা এবং বোম্বেতে ধ্বংস করা মন্দিরের কোন হিসেব পাওয়া যায় না। তবে মিশনারি নথিপত্রে বেশ কিছু মন্দিরকে গির্জায় পরিবর্তিত করার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেভিওন এবং নেভেন দ্বীপে অনেক মন্দির পুড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি কারো বাসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত দেব-দেবীর ছবি বা মূর্তি পাওয়া গেলেও নিষেধ অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হত। শুধু তাই নয়,পর্তুগিজ এলাকার বাইরে কোন মন্দিরে আর্থিক অনুদান দিলে বা তীর্থযাত্রায় গেলেও প্রচুর জরিমানা দিতে হত ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হত। স্থানীয়দের উপর চাপানো বৈষম্যমূলক আইনগুলি কেমন ছিল তার কিছু উদাহরণ নিচে দেয়া যেতে পারেঃ
ব্রাহ্মণদের বন্দী ও ক্রীতদাস করা হত বা নির্বাসন দেয়া হত। যেসব হিন্দুরা ধর্মান্তরের ভয়ে তাদের পরিবার পরিজনকে অন্য এলাকায় পাঠিয়ে দিত তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হত।
হিন্দু রীতি-নীতি ও উৎসব পালন নিষিদ্ধ ছিল।
হিন্দু পুরোহিত ও যাজকদের শাস্ত্রীয় ক্রিয়াকর্ম করা নিষিদ্ধ ছিল।হিন্দুদেরকে গির্জার ভাষণ শোনার জন্য বাধ্য করা হত। পারিবারিক ঐতিহ্য ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হত।
অনাথ হিন্দু শিশুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হত। হিন্দুদের ঘোড়ায় বা পালকিতে চড়া নিষিদ্ধ ছিল। এই সব বৈষম্যমূলক নিয়মগুলি অন্যান্য স্থানীয় অখ্রিস্টান অধিবাসীদের জন্যও প্রযোজ্য ছিল তবে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও পৌত্তলিক হওয়ায় হিন্দুদের উপর এর প্রভাব সবথেকে বেশি পড়েছিল। একইভাবে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানদের দেয়া হত নানা সুযোগ সুবিধা। তাদের ভূমি কর ১৫ বছরের জন্য মাফ করে দেয়া হত। সরকারি উচ্চপদগুলিতে তাদের নির্বিচারে নিয়োগ দেয়া হত। এভাবে ধর্মকে ব্যাবসার মত লাভজনক করে তুলেছিল জেভিয়ার ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা।
কিন্তু ঠিক কত লোককে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো বা অন্যান্য শাস্তি দেয়া হয়েছিলো তার সঠিক কোন রেকর্ড পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে সমস্ত নথিপত্র ক্যাথলিক চার্চ খুবই সতর্কতার সাথে গোপন করে গেছে। ১৮১২ সালের ২০ ডিসেম্বর গোয়ার ভাইসরয় পর্তুগালের রাজার কাছে ইনকুইজিশন সংক্রান্ত নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলার আবেদন জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। টমাস নরিনহো নামে একজন পাদ্রীকে নিয়োগ দেয়া হয় নথিপত্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করতে। পরে ওই নথিপত্রের কি হয় তা আর জানা যায়নি। তবে স্পেন ও পর্তুগাল ইনকুইজিশনের রেকর্ডের সাথে তুলনা করে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে এই উপমহাদেশেও প্রচুর মানুষ বিনা অপরাধে প্রাণ দিয়েছে, অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়েছে এবং প্রত্যক্ষ করেছে ধর্মের নামে মানুষ কত নিচে নামতে পারে। গোয়া ইনকুইজিশন সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত মনীষী ও মুক্তচিন্তক ভলতেয়ারের একটি উক্তি রয়েছে-“Goa is sadly famous for its Inquisition, equally contrary to humanity and commerce. The Portuguese monks made us believe that the people worshipped the devil, and it is they who have served him.” -Voltaire
ইনকুইজিশনের প্যালেস বা সান্তা কাসা, দ্য হলি হাউস নামে একটি বড় প্রাসাদে কোর্ট অফ ইনকুইজিশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওল্ড গোয়ায় একটি বড় গির্জায় জাভিয়ারের দেহাবশেষ রাখা রয়েছে এবং রাস্তা জুড়েই মূল বেসিলিকা। বাসিলিকার পাশেই রয়েছে সেন্ট ক্যাথারিনের গির্জা নামে আরও একটি গির্জা। বেসিলিকা এবং ক্যাথরিনের গির্জার মধ্যে একটি বিশাল জায়গা ছিল সেটাকেই তদন্ত প্রাসাদে পরিণত হয়েছিল। এতটা সন্ত্রাস ছিল যে কেউ এই প্রাসাদ বা সান্তা কাসাকে ইনকুইজিশনের বাড়ি বা হলি হাউস হিসাবে ডাকতো না। স্থানীয় লোকেরা বিগ হাউস বলে ডাকত । চার্লস ডেলন ইনকুইজিশনের প্রাসাদটি বর্ণনায় বলেন ঐটি ছিল এক ভয়ঙ্কর ভবন, এতে প্রায় ২০০ জেল কক্ষ রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি অন্ধকার এবং জানালাবিহীন ছিল।
এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আজও অনেক মানুষই ওল্ড গোয়ায় বেড়াতে গিয়ে তারা ফ্রান্সিস জাভিয়ারের কাছে প্রার্থনা করে। তারা জানেইনা যে এই মানুষটি এক সময় কত হাজার হাজার মানুষের কষ্টের কারণ ছিল l আসলে আমরা যদি সত্য না জানি তবে কীভাবে আগামীর সুন্দর পৃথিবী গড়বো?
আমাদের ইতিহাস লেখাটা খুব একপেশে, আমরা দেখি যে যতবার আওরঙ্গজেবকে মন্দির ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হয় বা হিন্দু হত্যার জন্য দিয়ে দোষী করা হয় ঠিক ততটাই গুরুত্ব দিয়ে বলা হয় না গোয়া ইনকুইজিশন ও হিন্দু মন্দির ধ্বংসকারী পর্তুগিজ জাতির কথা।
অবশেষে বলতে চাই, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছ থেকে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করলেও গোয়া থেকে গিয়েছিল পর্তুগালের অধীনে এবং ৪৫০ বছরের পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটে ১৯৬১ সালে। কী মর্মান্তীক!! আর উল্টো ইতিহাসকে বিকৃত করে আজ ইউরোপ জনগস্টিরাই মহা পরাক্রমশীল l
তথ্যসূত্র:
‘দ্যা বারবারিক গোয়া ইনকিউজিশন বাই পর্তুগীজ মিশনারীজ,’ শেফালী বৈদ্যর লেকচার।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকা।
উইকিপিডিয়া।