১৮১৬ খৃষ্টাব্দে কোলরিজ ‘কুরলা খান’ কবিতাটি রচনা করেন। এই বিখ্যাত কবিতাটি  রচনার পর টাকার  অভাবে বিশ বছর পর্যন্ত তিনি এটি ছাপিয়ে প্রকাশ করতে পারেননি। এই অনবদ্য রচনাটি তিনি কেন ছেপে বের করতে পারেন নি –তার অন্তরালে রয়ে গেছে বিরাট এক বিস্ময়। কি সেই রহস্য ? শুধু কি টাকার অভাবে তা ছাপাতে পারেননি ?

কোলরিজ বর্ণনা করেন যে তিনি তখন আফিমে আসক্ত ছিলেন ।একদিন আফিম সেবনের পর তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। সেই অবস্থায় তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন। একটি ছায়া মূর্তি যেন তার সামনে আবির্ভুত হল ।সেই ছায়া মূর্তিটি তাকে কবিতাটি লিখবার জন্য অনুপ্রাণিত করে। আচ্ছন্ন অবস্থায় ছায়া মূর্তির অনুপ্রেরণায় তিনি কবিতাটি লিখে চলেন আর তার এই লেখায় হঠাৎ কোন কারণ বশতঃ বাঁধা পরে।এই অতর্কিত বাঁধা পড়ার দরুণ তিনি কবিতাটি আর শেষ করতে পারেন নি। কবিতাটি চিরদিনের জন্যই অসমাপ্ত থেকে গেল।

একবার অসুস্থ অবস্থায় তিনি একটি খামার বাড়ীতে বসবাস শুরু করেন । শরীর তার ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। ওষুধ হিসাবে তিনি দুই দানা আফিম খেয়েছেন। আসলে তিনি এই মাদকদ্রব্যটিতে আসক্ত ছিলেন। ঠিক সেই সময় এই ছায়া মূর্তিটির আবির্ভাব হয়। জেগে উঠে তিনি আনন্দোৎফুল্ল চিত্তে কবিতাটির রচনা শুরু করেন।যখন কবিতাটির নিম্নোক্ত পংক্তি পর্যন্ত লেখা হয়ঃ  For he on honey dew has fed/And drunk the milk of paradise-সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি শহর থেকে ইনশিওরেন্সের এক দালাল এসে তার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলো। তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল এই লোকের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করলেন। সারাক্ষণই লোকটি তাকে পার্থিব জগৎ সম্বন্ধে ,অর্থ কড়ির উপকারিতা সম্বন্ধে জ্ঞানদান করতে লাগলো। নিরুপায় কোলরিজ অগত্যা হাল ছেড়ে দিলেন।

কোলরিজ এরপর অবশ্যই বার বার চেষ্টা করেছেন কবিতাটি সম্পূর্ণ করতে। আবার সেই দিব্যদৃষ্টি ফিরে পাবার জন্য আপ্রান প্রয়াস চালিয়েছেন। কিন্ত কার্যক্ষেত্রে আর তা হয়ে ওঠেনি। জানাডুর পৌরাণিক জগতে ফিরে যাবার অদম্য প্রচেষ্টা তার সফল হয়নি। কুবলা খানের প্রথম খণ্ডটিই তিনি সেই অতীন্দ্রিয় সাহায্য ও সহায়তায় রচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর বাকি টুকু শেষ করতে পারেননি বলেই কবিতা টিতে ছাপার উপযুক্ত বলে মনে করেননি । কবিতাটি যেহেতু তার কাছে ছাপার অযোগ্য বলে মনে হয়েছিল, তাই তিনি সেটিকে বিশ বছর ধরে ফেলে রেখেছিলেন।