ইসরায়েলের প্রত্নতত্ত্ববিদরা সম্প্রতি জেরুজালেমের কাছে একটি প্রাচীন সমাধিতে এক তরুণীর দেহের ছাই ও একটি বিরল ব্রোঞ্জের আয়না আবিষ্কার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই নারী প্রাচীন গ্রিসের এক ‘হেতাইরা’—অর্থাৎ একধরনের উচ্চশ্রেণির রক্ষিতা ছিলেন। এই হেতাইরা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের মনোরঞ্জন করতেন।
সমাধিটি কিবুৎস রামাত রাহেল নামের একটি জায়গার পাথুরে ঢালে অবস্থিত। আয়নাটি ছিল চমৎকার—ব্রোঞ্জের তৈরি এবং ভাঁজ করার উপযোগী। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এটি দেখতে এতটাই ভালো অবস্থায় আছে যে মনে হয় যেন সেদিনই তৈরি করা হয়েছে, যদিও সেটি ২,৩০০ বছরের পুরনো।
এই ধরনের আয়না হেলেনিস্টিক যুগে (আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের মৃত্যুর পর থেকে রোমানদের মিশর দখলের আগ পর্যন্ত) সাধারণত দেবদেবী বা উচ্চপদস্থ নারীদের ছবি খোদাই করে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে উপহার দেওয়া হতো। এই কবরটি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষভাগ থেকে তৃতীয় শতকের শুরুর সময়কালের।

সমাধির গুহায় খননকাজ। ছবি: শাই হালেভি, ইসরায়েল পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষ
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ গাই স্টেইবেল বলেন, এই কবরটি আবিষ্কারের মাধ্যমে যেন ২,৩০০ বছর আগের এক মৃত নারীকে আবার জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
গবেষকদের মতে, তিনি কোনো গ্রিক সেনাধ্যক্ষ বা প্রশাসকের সঙ্গিনী ছিলেন। সেই সময় হেতাইরারা শুধু সৌন্দর্যেই নয়, বরং তাঁদের জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং মেধার দিক থেকেও অসাধারণ ছিলেন—অনেকটা জাপানি ‘গেইশা’দের মতো। এই রমণীরা পুরুষদের সঙ্গ দিতেন এবং বিনিময়ে মূল্যবান উপহার পেতেন। সম্ভবত আয়নাটিও তেমন একটি উপহার।
এখানে একটি আশ্চর্য বিষয় রয়েছে—এই নারীর দেহাবশেষ পুড়িয়ে তার ভস্ম রাখা হয়েছিল। এটি ইসরায়েলের সেই সময়কার ধর্মীয় প্রথা ও পারস্য শাসনের প্রচলিত রীতিনীতির সঙ্গে একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই ধারণা করা হয়, তিনি ইসরায়েল বা পারস্য অঞ্চলের ছিলেন না; সম্ভবত ছিলেন এক বহিরাগত গ্রিক রমণী। সমাধিটি লোকবসতি থেকে অনেক দূরে ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় তিনি আলেকজান্ডারের কোনো সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া এক জেনারেল বা সৈন্যের সঙ্গী হতে পারেন।

দুর্লভ আয়নার সঙ্গে ড. গাই স্টেইবেল ও লিয়াত ওজ। ছবি: ইয়োলি শোয়ার্টজ (ইসরায়েল পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষ)
সমাধি থেকে চারটি লোহার পেরেক পাওয়া গেছে। বিশ্বাস করা হতো, এই ধরনের পেরেক দিয়ে মৃতদেহকে “আটকে” রাখা হলে তারা আর জীবিতদের জগতে ফিরে আসতে পারবে না।
এই অনন্য আবিষ্কার নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা চলছে। আয়নার উৎপত্তি, নকশা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।