বিবি খানম ছিলেন মধ্য-এশিয়া এবং ভারত উপমহাদেশ নিয়ে গঠিত বিশাল তিমুরিদ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা তৈমুর লঙ্গের প্রধান সহধর্মিণী। বিবি খানম জন্মগ্রহণ করেন ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের সরাসরি বংশধর এবং মোঘলিস্তানের (বর্তমানের চীনের একাংশ, কাজাগিস্তান এবং কিরগিস্তান) রাজকন্যাও। বিবি খানম শুধু তৈমুরের সহধর্মিনীই ছিলেন না, তিনি তিমুরিদ সাম্রাজ্যেরও ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ রাজ-কর্মকর্তা। তৈমুর লং যখন যুদ্ধে ব্যস্ত থাকার কারণে রাজধানী সমরকন্দে অনুপস্থিত থাকতেন, তখন “মহান সম্রাজ্ঞী” উপাধিপ্রাপ্ত বিবি খানম কখনও কখনও তিমুরিদ সাম্রাজ্যের অস্থায়ী শাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
২০২৫ সালের জুন মাসে উজবেকিস্তানের সমরকন্দ শহরে ভ্রমণের সময় লেখক দেখতে যান বিবি সারায় মুল্ক খানম মসজিদ বা মাদ্রাসা। বিবি খানমের সম্মানে তৈমুর লং এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন ১৩৯৯-১৪০৪ সালে।মাদ্রাসা নামে পরিচিত হলেও, আসলে এই দৃষ্টিনন্দন এলাকাটির শিক্ষা বিষয়ের পরিসর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও চর্চা হতো দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাসের মতো বিষয়। জ্ঞান অর্জনের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসতো বিভিন্ন ভাষার শিক্ষার্থীরা।

সব ছবি লেখকের মোবাইল ফোনে ধারণ করা।
এটি একক কোন ভবন নয়, এর বিস্তৃতি একটি বিশাল এলাকা নিয়ে। এখানে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, এবং বিবি খানমের সমাধির চিত্তাকর্ষক ইসলামিক স্থাপত্য। সুদৃশ্য টাইলস দিয়ে অলংকৃত উচ্চ ও দীর্ঘ প্রাচীর দিয়ে এলাকাটি ঘেরা। প্রবেশ দ্বার, মিনার, নীল গম্বুজ, অভ্যন্তরের রং-বেরঙের দেয়াল-চিত্র ও টাইলসের ক্যালিওগ্রাফি দিয়ে মনোরমভাবে সজ্জিত। অভ্যন্তরের দেয়ালগুলো অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন অলংকরণ নকশার পাশাপাশি স্টাইলাইজড ল্যান্ডস্কেপ দিয়ে আবৃত। স্থাপত্যগুলোর ভেতর-বাহিরের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী, আকর্ষণীয় নীল-সোনালী-সাদা রঙের টাইলসের অলংকরণ, শ্বেত পাথরের মেজ এবং কোরআনের অগণিত আয়াতের ক্যালিওগ্রাহীর প্রদর্শন চোখ ধাঁধিয়ে দেয় দর্শণার্থীদের! তাদের মননকেও দোলা দেয় নিঃসন্দেহে।
সন্ধ্যার পর পুরো এলাকাটিকে অপূর্বভাবে আলোকিত করা হয় বিভিন্ন কোণ থেকে বিচ্ছুরিত রঙ-বেরঙের আলো দিয়ে। মসজিদটির চৌহদ্দীর পাশেই রয়েছে বিবি খানমের সমাধি। সমাধি সৌধের অভ্যন্তরটি আসলে একটি বিশাল চোখ ধাঁধানো মোজাইক প্যানেল। ১৭৪০ সালে সমরকন্দ আক্রমণের সময় নাদির শাহ এলাকাটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তীতে এটিকে আবার পুনর্নির্মাণ করা হলেও ১৮৯৭ সালে আবারো এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্পে।সমরকন্দে সব দর্শনার্থীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় ল্যান্ডমার্ক।