উপমহাদেশে পর্তুগীজ!, Stay Curioussis
ঢাকার রেস্তোরাঁয় প্লেটে পরিবেশন করা বড় একখানা গোল আলু’র প্রচলন মন হয় বছর দশেক হলো।
ভাবতাম এটা আমাদের চকবাজারের ‘খাবার দাবার’ ধরণের কোন রেস্তোরাঁর প্রবর্তন।
কিন্তু কোন এক বিদেশী চ্যানেলে ক’দিন আগে দেখলাম, এর প্রচলন নাকি কোলকাতায়!
আরও specifically বলতে হয়, মেটিয়া বুরুজে। অউধের নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ-র সূত্রে।
নবাব সাহেবকে কে ইংরেজরা এনে রেখেছিলো এই মেটিয়াবুরুজে। সিপাহী বিদ্রোহের ঠিক আগের বছর।
গোলন্দাজ বাহিনীই শুধু ছিলো না। নয়তো আর সব বাহিনীই ছিলো নবাব সাহেবের।
ভোগ বিলাস নৃত্য গীত পশু পাখী পালন ছাড়াও রীতিমতো বাহিনী ছিলো রান্না বান্নার লোকদের।
এদের কাজই ছিলো নবাব সাহেবের মন যোগানের জন্য নিত্য নুতন রান্না বান্না।
রান্নাবান্নার এমন এক্সপেরিমেন্টের ফলই নাকি বিরিয়ানির পিরামিডে বড় গোল আলু।
উপমহাদেশে গোল আলু আনে পর্তুগীজ – রা, এরও শত বর্ষ আগে। কিন্তু তখনও তেমন সহজ লভ্য হয় নি। কিছুটা বিলাসী খাবারই ছিলো আলু!
বিরিয়ানি – তে বিলাস-খাদ্য আস্ত আলুর এমন প্রয়োগ করে নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ’র শেফ- বাহিনী ।
কোলকাতার মেটিয়াবুরুজের বিরিয়ানির খ্যাতি নাকি ভারত জুড়া!
এদেশ থেকেতো প্রতিনিয়তই যায় লোকজন। কিন্তু মেটিয়াবুরুজের বিরিয়ানির কথা শুনিনি বা দেখিনি কারো মুখে বা ফেসবুকের লিখায়।
শুধু কফি হাউজের কফির গল্পই শুনি।
আমি আবার সাথে সাথেই রিং করে খবর নিলাম কোলকাতায়। Asoke Kumar Dhar এর কাছে।
কি রে ভাই, মেটিয়াবুরুজের বিরিয়ানি নাকে সেরাম?
কিন্তু খাওয়াতো দূর, সে জানেই না!
শুধু আলুই নয়, আনারস, কামরাঙ্গা, পেঁপে, পেয়ারার মতো আরো বেশ কিছু কৃষিজ ফল সব্জী এ অঞ্চলে আনে পর্তুগীজরা।
এদেশের সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাতে, অবিচ্ছেদ্যভাবে রয়ে গেছে পর্তুগিজ প্রভাব। বেশ কিছু শব্দ এসেছে পর্তুগীজ থেকে। কারণও আছে।
আশ্চর্যের মনে হলেও সত্য, প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা হয় পর্তুগীজ ভাষায়।
ভাওয়ালের একটি গির্জায় ধর্মযাজক ছিলেন পর্তুগিজ ধর্মযাজক মানোএল দা আস্‌সুম্পসাঁউ (Manoel da Assumpcam) ।
তিনিই প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন পর্তুগিজ ভাষায়। রোমান হরফে ১৭৪৩ সালে এটি মুদ্রিত হয় পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে।
পর্তুগীজদের এই ধর্ম প্রচারনা, পান্ডিত্য, গীর্জার প্রতিষ্ঠা – এ সব পরিচয় ছাড়াও আরেক পরিচয় হার্মাদ, বোম্বেটে, লুন্ঠনকারী, অপহরণকারী ।
পর্তুগীজদের এমন পরিচয়ের এক স্মারক এখনো আছে চাঁদপুর জিলার ফরিদগঞ্জে। একেবারে ভেতরে, এখনো প্রায় জঙ্গল, সাহেবগঞ্জ নামের এমন এক জায়গাতে। এটি পর্তুগিজ ওয়াচ টাওয়ার একটি।
অশুভ সামরিক উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে তোৎকালে উপকূল নিকটবর্তী এই জঙ্গলে ওয়াচ টাওয়ারের প্রয়োজন হবে কেন?
গোল বা আয়তাকার নয়, অষ্টভূজ এর আকার। ভেতর দেয়াল ঘেঁষে প্যাচানো সিঁড়ি। তলা আছে তিনটি, এখনো সহজে উঠা যায় দেয়াল ঘেঁষা প্যাচানো সিঁড়ি দিয়ে।
প্রতি তলায় উঠে বাইরে তাকানো যায় ‘দরজায়’ দাঁড়িয়ে।
এক সময়ের ভয়ংকর সব জলদস্যুদের ভীতিপ্রদ এই টাওয়ারে আরোহনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ নিলেন দু:সাহসী দু’জন। একজন আমার প্রায় সমবয়সী।
কয়েক জায়গাতে বলা, নির্মান সাল ১৫৪০ থেকে ৪৬ । এই তথ্য সঠিক হলে এই টাওয়ারের বয়স অন্তত ৪৮০ বৎসর।
আবার এই পর্তুগীজদেরকে ১৫৩৭ এ চট্টগ্রামে বানিজ্য ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দানের খুব বেশী পরে নয় এর নির্মান।
আগে হতেই নানান দুষ্কর্মের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছিলো পর্তুগীজরা।
তার পরও পর্তুগীজদের এই সুযোগ দেন হুসেন শাহী বংশের শেষ শাসক মাহমুদ শাহ। কারণ পাঠান বীর শের শাহকে ঠেকাতে পর্তুগীজ সয়ায়তা নিয়েছিলেন মাহমুদ শাহ।
এতে করেও শেষ রক্ষা হয়নি মাহমুদ শাহর, মাঝখান হতে চট্টগ্রামে গেড়ে বসে পর্তুগিজরা।
শুধু টাওয়ারটিই নয়, এই টাওয়ারের চতুর্পাশে দন্ডায়মান আছে দুর্গ ধরনের কাঠামোর দেয়াল।
এই টাওয়ারটি নির্মান করেছিলেন এন্টেনিও ডি সিলভা মেনজিস নামের এক পর্তুগীজ সেনাপতি।
Contributed by
Tapan Roy