ভাবুন তো, আপনি হেঁটে হেঁটে ঢুকে পড়েছেন নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামে। হঠাৎ চোখে পড়ল এক অপূর্ব সৌন্দর্যের আসবাব—রোমান যুগের একটি রিক্লাইনিং সোফা এবং তার সঙ্গী এক সূক্ষ্ম কারুকাজময় পাদানি। মনে হবে যেন কোনো প্রাচীন রোমান ভিলার রাজকীয় ডাইনিং হল থেকে উঠে এসেছে তারা।
বিশ্বাস করা হয়, এই সোফা ও পাদানি খ্রিস্টীয় ২য় শতকের, এবং এক সময় এটি রোমান সম্রাট লুসিয়াস ভেরাসের ব্যক্তিগত ভিলায় ছিল।
তবে যখন এই সোফাটি প্রথম মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামে আনা হয়, সেটি ছিল ভাঙা অবস্থায়—একাধিক খণ্ডে বিভক্ত। মেট নিজেই বলেছে—“It was in pieces.”
এই খণ্ডিত নিদর্শনকে ধৈর্য, নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ও ভালোবাসা দিয়ে একত্র করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও জাদুঘরের শিল্পীরা। কাঠামো পুনর্গঠন করা হয়েছে মূল রোমান শিল্পরীতি মেনে, যাতে সোফাটি যেন সময় পেরিয়েও তার অতীত রাজকীয়তা ফিরে পায়।

সোফার পাদানিটি (footstool) ও এর ফ্রন্ট অংশ © The Metropolitan Museum of Art
নরম কুশনগুলো অবশ্য নতুন সংযোজন, কিন্তু সেগুলোর নকশা এসেছে পম্পেই ও হারকুলেনিয়ামের প্রাচীন দেয়ালচিত্র থেকে—তাতে যেন ফিরে আসে খ্রিস্টপূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের যাপনভঙ্গির ছায়া।
একটু চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন—একটি প্রশস্ত ঘর, যেখানে ছয় থেকে দশটি এমন রিক্লাইনিং সোফা ঘিরে আছে একটি খাবারের টেবিলকে। হালকা আলো, সুগন্ধি খাবারের গন্ধ, আর পাশেই কেউ হয়তো কবিতা আবৃত্তি করছে। এই ছিল অভিজাত রোমানদের আয়েশি ডাইনিং অভিজ্ঞতা।
সোফাটির কাঠামোয় রয়েছে হাড় বা দাঁতের সূক্ষ্ম কারুকাজ। কিছু অংশ এখনো আসল, আবার কিছু অংশ নিখুঁতভাবে পুনর্নির্মিত। যেমন—চারটি সিংহের মাথা সদৃশ অলংকার। এগুলো আধুনিক শিল্পীর হাতে তৈরি, কিন্তু প্রাচীন নিদর্শনের আদলে, হুবহু। ভালো করে তাকালে বোঝা যাবে কোনটা আসল আর কোনটা নতুন—নতুন অংশে রং একটু উজ্জ্বল, আর সেখানে সময়ের ছাপ নেই।
তবে সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো অংশ হলো এর চারপাশে বসানো লাল কাঁচের প্যানেল। সূক্ষ্ম কারুকাজে ভরপুর এই অংশগুলো আদৌ আসল কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও, দেখে মনে হবে—এই প্যানেলগুলিই ছিল সেই রাজকীয় গৃহসজ্জার প্রকৃত সৌন্দর্য।

হাড়ের কারুকাজে Cupid ও হরিণ শিকারীর दृश्य ক্লোজ‑আপ © The Metropolitan Museum of Art
এই রাজকীয়, আধা-আসল, আধা-পুনর্গঠিত রোমান রিক্লাইনিং সোফাটি এখন জনসাধারণের জন্য দৃশ্যমান, মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামের একটি গ্যালারিতে। প্রাচীন ইতিহাস যেন এখানে নীরবে নিঃশ্বাস ফেলে—নিঃশব্দ, অথচ জীবন্ত।