কোন মানুষ একই সময় দুই জায়গায় অবস্থান করতে পারে না বলে যারা বিশ্বাস করেন তারা অবশ্যই একবার ম্যাডাম সেইজের বিষয়টি ভেবে দেখবেন।ম্যাডাম সেইজ ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা ।কোন জটিল বিষয়ে সমাধান খুঁজতে গিয়ে একই স্থানে তার যুগপৎ উপস্থিতি এক বিস্ময়কর ঘটনা।
১৮৪৫ খৃষ্টাব্দে তিনি রাশিয়ার লিভোনিয়ার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কথিত আছে এই বিদ্যালয়ের কাজ করা কালীন তাকে যুগপৎ একই অবয়বে-একই সময়ে-দুইস্থানে দেখা যেত।যেমন একই সময়ে শ্রেণীকক্ষে ছাত্রীদের মুখোমুখী বসা দেখা যেত, আবার সেই একই সময়ে তাকে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্লাকবোর্ডে পিছন ফিরে লিখনরতও পাওয়া যেত।দুজন ছাত্রী একবার তাকে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বসা অবস্থায় দেখতে পায় আবার ঠিক সেই সেই সময়ই -কি আশ্চর্য ! তাঁকে বাগানে ফুল তুলতেও দেখে।
তার এই রহস্যময় দ্বৈত অবস্থানের কথা তাঁর অতি কল্পনা প্রবণ ছাত্রীদের দ্বারাই শুধু ব্যক্ত হয়নি।আরও আছে।আরও অনেকের কাছেই এই অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ছে ।
একবার ম্যাডাম সেইজ অসুস্থতার কারণে বাড়ীতে বিছানায় শুয়ে আছেন।তার বান্ধবী পাশে বসে তাকে বই পড়ে শোনাচ্ছেন ।বান্ধবীটি হঠাৎ লক্ষ্য করলেন সেইজের অবিকল প্রতিরুপ ঘরের চারদিকে পায়চারী করে বেড়াচ্ছে।
প্রায় আঠার মাস ধরে সেইজের এই দ্বৈত অবস্থানের ঘটনা নিয়ে অনেক কানাঘুষা, অনেক জল্পনা কল্পনা চললো। আর এই কানাঘুষা শেষে এমন এক পর্যায়ে পৌছালো যে স্কুল পরিচালক বর্গ আর চুপ করে থাকতে পারলেন না।ঘটনার সত্যাসত্য জানার জন্য তারা এগিয়ে এলেন। তাদের কাছে মহিলা স্বীকার করলেন যে ঘটনা সত্যি ।তিনি জানালেন যে তিনি নিজের ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে নিজের প্রতিমূর্তি প্রক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখেন।এই কৌশল অবলম্বন করে তিনি অনেক ক্ষেত্রে অনেক সুফল ও লাভ করলেন ।শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাঁর এই কৌশলের জুড়ি নেই।যখন পিছন ফিরে বোর্ডে তার কোন কাজ করার প্রয়োজন হয়-তখন এই কৌশল প্রয়োগ করে ছাত্রীদের উপর লক্ষ্য রাখা তার জন্য সহজ হয়।
কিন্তু নির্বাহী পরিচালক-পরিষদ তাঁর এই ব্যাখ্যায় মোটেই সন্তষ্ট হতে পারলেন না।তাকে চাকুরীচ্যুত করা হল ।মজার ব্যাপার এই যে একথা তিনি স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত হলেন না যে তার চাকুরীচ্যুতি এবারই প্রথম নয় ।এর আগেও তিনি এ কারণে কয়েকবার চাকুরীচ্যুত হন। যুগপৎ দ্বৈত মূর্তিধারী শিক্ষিকার নামের প্রথমাংশের কোন পরিচয় কোন নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি সর্বত্রই শুধু মাত্র ম্যাডাম সেইজ নামেই উল্লিখিত ও পরিচিত হতেন।তিনি বিবাহিতা ছিলেন বলেই এ ভাবে অভিহিত হতেন কিনা কিংবা ‘স্কুল মার্ম’ বা স্কুলের শিক্ষিকা বলেই তাকে ম্যাডাম সেইজ বলা হত কিনা সেটা ভাববার বিষয় ! কাগজ কলমে কেউ তার কারণ খুঁজে পায়নি।
সত্যিই বড় দুঃখজনক যে তার স্বামী বলে কেউ ছিলেন না। যদি থাকতেন তবে অবশ্যই তিনি তার দ্বৈত ম্যাডাম সেইজের সঙ্গে কাল যাপনের অভিনব স্মৃতিকথা লিখে রেখে যেতেন, যা তিনি নিজেও গভীর আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতে পারতেন। আর সেই স্মৃতিচারণ পাঠ করার সুযোগ পেলে আমরাও গভীর আনন্দ লাভ করা থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হতাম না।
#Photo Credit Spookie Doppelgänger