সন্দেশের নাম শুনলে আজও বাঙ্গালীর জিভ ভিজে যায়। সন্দেশ নিয়ে আছে অনেক গল্প-কাহিনি। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের মিষ্টিগুলির মধ্যে সন্দেশ অন্যতম। সন্দেশের জন্মভূমি কোথায় ? প্রথম কে বানিয়েছিল এই সন্দেশ ? সেসব নিয়ে আছে নানা মানুষের নানা মত। রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। সন্দেশ ভারতের নিজের আবিষ্কার কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে । শোনা যায়, সন্দেশ তৈরীর প্রথম কারিগর হলো বাংলাদেশের বাঙালীরা। বিশেষ করে, চট্রগ্রামের বাঙালী ময়রারাই প্রথম সন্দেশ তৈরি করে। চলুন তাহলে জেনে আসা যাক, সেই বাংলার হারানো গৌরব ইতিহাস।

ষোল শতকের দিকে ভারতে পর্তুগিজরা আসার ফলে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে শুধু যোগাযোগই ঘটেনি, বিভিন্ন সংস্কৃতি- খাবারেরও মিলন ঘটেছে। তাদের থেকে অনেক বিদেশি শব্দও বাংলায় যোগ হয়েছে। পর্তুগিজদের প্রতিদিনের খাবারে চিজ বা পনির থাকতোই। জমাট বাঁধা দুধ দিয়েই তারা চিজ্ তৈরি করত। যেটা ছিল তাদের খুবই প্রিয়। তারা হুগলির বান্দেলে তাদের বাণিজ্যকেন্দ্র  গড়ে তোলে। এরপর চট্রগ্রাম বন্দরেও তারা কুঠি তৈরি করে। চট্রগ্রাম বন্দর তাদের কাছে ছিল অনেক লোভনীয় একটি এলাকা। এই বন্দরে তারা জাহাজ ঘাঁট বাঁধে এবং ব্যবসার জন্য এলাকার লোকজনের সাথে মিশে যায়। এখানেই তারা কিছু বাঙালী ময়রাদেরকে, তাদের চিজ বানানের কাজে নিয়োগ করেছিলেন। বাংলার কারিগররা চিজ্ বানাতে গিয়ে ছানা বানানোর কৌশল শিখে ফেলে। তখন তারা এর সাথে চিনি মিশিয়ে নতুন ধরনের একটি মিষ্টি তৈরি করে, যা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। সেটাই পরবর্তীতে, ‘সন্দেশ’ নামে সকলের মুখে মুখে রটে যায়।

বর্তমানে সন্দেশ সবাই ভালোবাসলেও, প্রাচীনকালে ভারতের হিন্দুদের মনে ছিল বিরাট কুসংস্কার। হিন্দু ধর্মমতে, দুধ ফাঠা বা বিভাজন ছিল চরম অধর্মের কাজ। তাঁরা বিশ্বাস করতো যে, জমাট বাঁধা দুধ খেলে পাপ হবে। হরে কৃষ্ণের বৃন্দাবনের গল্পে অনেক রকম মিষ্টির কথা বলা আছে। কিন্তু সন্দেশ মিষ্টির কোনো নাম বলা নেই। এছাড়া কৃষ্ণের পছন্দ ছিল দুধের মাঠা। আরো অনেক রকমের সামাজিক বিধিনিষেধ এবং কুসংস্কার তখন পুরো সমাজে ছড়িয়ে ছিল।

যাইহোক, পরবর্তীতে ঐসব সামাজিক কুসংস্কার ভেঙেই ছানার সন্দেশ মিষ্টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই মিষ্টি শুধু একটি নতুন খাবার ছিল না, সুস্বাদু, খুবই সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ীও ছিল। সবচেয়ে আরেকটি মজার বিষয় হলো, বৃটিশ আমলে ইংরেজ সহ ভারতীয়রা অনেকেই সন্দেশের অনেক নাম দিয়েছিলেন; যথা- নয়নতারা, দেশ গরব, মনোরঞ্জন ইত্যাদি। কিন্তু ভাইসরয় লর্ড রিপন এই মিষ্টির নাম দিয়েছিলেন সন্দেশ। সেই থেকেই সেই নামেই বাংলার সন্দেশ পৃথিবী বিখ্যাত।