Lord Dufferin

১৮৮০ খৃষ্টাব্দ লর্ড ডাফরিন প্যারিসে বৃটিশ রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছেন। কিছুদিনের জন্য ছুটি কাটাতে তিনি আয়ার্ল্যান্ডে জনৈক বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। রাতের আহার পর্ব সমাধার পর দুই বন্ধু মিলে অনেক রাত পর্যন্ত আড্‌ডা দিলেন। তারপর যার যার ঘরে শুতে গেলেন। গভীর রাতে ডাফরিনের আচমকা ঘুম ভেঙে গেল। কেন যে তার ঘুম ভাঙলো-তার কোন হদিশ খুঁজে পেলেন না। তিনি ভাবছেন, সচরাচর এমনতো হয় না ! গভীর ঘুম থেকে ভয় পেয়ে হঠাৎ জেগে ওঠা-কেন এমন হল? নিজেকে নিজেই বার বার প্রশ্ন করেন ।

ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে তিনি উঠলেন। পায়ে পায়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন। বাইরের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলেন চারদিক ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় ছেয়ে আছে। অদূরে একটি স্থানে তার দৃষ্টি যেন আটকে গেছে। জ্যোৎস্নার ভিতর তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন একটি কুঁজো  লোক এলোমেলোভাবে হেঁটে চলেছে। পিঠে তার কফিনের মত বিরাট এক বোঝা। বোঝাটির ভারে সে যেন টলে টলে অতি কষ্টে এগিয়ে যাচ্ছে। ডাফ্রিন তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন। ছুটে গিয়ে লোকটির কাছে পৌঁছালেন। তাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন সে কি বয়ে নিয়ে চলেছে? ভারী বোঝার নীচ থেকে লোকটি অতি কষ্টে মাথা তুলে তাকালো। তার চেহারা দেখে লর্ড রীতিমত ভয় পেয়ে গেলেন। কি কুৎসিত দর্শন এই চেহারা। ভয়ে শরীরের রক্ত যেন রীতিমত হিম হয়ে গেল। ডাফরিন তাড়াতাড়ি ঐ দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। ভয় পাওয়া সত্ত্বে ও লোকটিকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, এই কফিনটি বহন করে নিয়ে সে কথায় চলেছে? কিন্তু কুৎসিতদর্শন লোকটি যেন তার কোন কথা শুনতেই পেল না। কোন রকম জবাব না দিয়ে সে আপন মনে নিজের গন্তব্য পথে এগিয়ে গেল। ডাফরিন নিজের ঘরে ফিরে এলেন।বাকী রাত তার জেগেই কাটলো।

পরদিন সকালে ডাফরিন তার বন্ধুর কাছে গতরাত্রির ঘটনা বিস্তারিত ভাবে ব্যক্ত করলেন। বন্ধুটি হতবাক হয়ে গল্পটি শুনলেন।কিন্তু কে এই লোক ,কার এই কফিন –এত রাতে কেনইবা লোকটি একাকী এইটি বয়ে নিয়ে চলেছে, তার কোন সদুত্তর তিনি খুঁজে পেলেন না।

এরপর বেশ কয়েক বছর অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। ১৮৯০ সাল । আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ডাফরিন আবার প্যারিসে এসেছেন। উঠেছেন গ্র্যান্ড হোটেলে। নিজের সেক্রেটারিকে নিয়ে ডাফরিন একবার লিফটে উঠতে যাবেন-হঠাৎ তিনি পিছিয়ে এলেন। লিফটে ঢুকতে তিনি রীতিমত অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন। লিফট চালকের চেহারা দেখে তিনি ভীষণভাবে চমকে উঠলেন। -এ যে সেই কুৎসিত দর্শন চেহারার লোকটি-যাকে তিনি দশ বছর আগে আয়ারল্যান্ডের বন্ধুর বাড়ীতে জ্যোৎস্নার আলোয় শবাধার বহন করতে দেখেছেন।

লর্ড ডাফরিন ও তার সেক্রেটারী ছাড়াই লিফ্‌টটি নেমে গেল। অভ্যথনা কক্ষের টেবিলের সামনে অপেক্ষমাণ কর্মচারীর কাছে ডাফরিন এই অদ্ভুত চেহারার লোকটির পরিচিতি জানতে চাইলেন।

ইতিমধ্যে লিফ্‌টটি পাঁচতলায় পৌঁছানোর পর লিফ্‌ট-এর ফিতা ছিড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা যা হবার তা হয়ে গেল। লিফ্‌টটি একেবারে নীচের তলায় গিয়ে আছড়ে পড়লো। এত উঁচু থেকে পড়ার অর্থ সহজেই অনুমেয় ! লিফ্‌টটিতো চূর্ণ বিচূর্ণ হলই, সেই সঙ্গে লিফ্‌ট এ যারা ছিলেন তারা সকলেই এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন।

দুর্ঘটনার বিবরণটি কাগজে কাগজে ব্যানার হেডে বের হল। বৃটিশ সোসাইটি ফর সাইকিকাল রিসার্চেও ঘটনার বিবরণ নথিভুক্ত করা হল। সবই হল। কিন্তু এম্ব্যাসেডার ডাফরিন কিছুতেই ঐ লিফ্‌ট চাল্ক কুৎসিত দর্শন লোকটির পরিচয় খুঁজে বের করতে পারলেন না। তিনি কেবল অবাক হয়ে ভাবলেন- ঐ কুৎসিত লোকটি তার জীবন রক্ষাকারী হয়ে তার জীবনে অমর হয়ে রইলো । হোটেলের পরিচালনা বিভাগ কিংবা দুর্ঘটনা অনুসন্ধানকারী –দল-কেউই লোকটির নাম ধাম থিকানা-কিংবা কোথা থেকে তার আগ্মন-কোন বিষয়েই সঠিক জবাব দিতে পারলেন না !!

Images Collected from Google