প্রাচীন ইতিহাসে প্রথম চিড়িয়াখানা তৈরির কথা জানা যায় আসিরীয় রাজা আশুরনাসারপাল দ্বিতীয়-এর (৮৮৩–৮৫৯ খ্রিষ্টপূর্ব) আমলে। তিনি ছিলেন প্রাচীন ইরাকের অন্যতম শক্তিশালী শাসক। এই রাজা শুধু যোদ্ধা হিসেবেই নয়, শিল্প, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যে অসাধারণ কৃতিত্ব রেখে গেছেন। গবেষকেরা তাঁকে প্রায়ই বলেন “যোদ্ধা-শিল্পী রাজা”।
রাজা আশুরনাসারপাল দ্বিতীয় যখন নিমরুদ শহর নতুন করে প্রতিষ্ঠা করে সেটিকে রাজধানী বানান, তখন তিনি সেখানে এক চমৎকার রাজউদ্যান ও বাগান তৈরি করেন। বাগানে চল্লিশটিরও বেশি প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। পাশাপাশি, তিনি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বন্য প্রাণী ও পাখি সংগ্রহ করে সেখানে আনেন। এই প্রাণীদের জন্য তৈরি বিশেষ জায়গাটিই ইতিহাসে “বিশ্বের প্রথম চিড়িয়াখানা” হিসেবে বিবেচিত হয়।

রাজা আশুরনাসারপাল দ্বিতীয়-এর সঙ্গে প্রাচীন Nimrud চিড়িয়াখানা
নিজের রাজলিপিতে আশুরনাসারপাল দ্বিতীয় লিখেছিলেন যে তিনি পাহাড় ও বন থেকে ১৫টি সিংহ এবং ৫০টি শাবক ধরে এনেছিলেন। তিনি এই সিংহগুলোকে কালখো (নিমরুদ) শহরে এনে খাঁচায় রাখেন এবং শাবকগুলো নিজ হাতে বড় করেন। তাছাড়া, তাঁর সংগ্রহে ছিল বাঘ, হাতি, বন্য ষাঁড়, উটপাখি, বানর, জেব্রা, হরিণ, ভালুক, চিতা সহ আরও অসংখ্য প্রাণী—সবই তাঁর জনগণের দেখার ও শেখার জন্য।
আশুরনাসারপাল দ্বিতীয় শুধু চিড়িয়াখানা তৈরি করেই থেমে যাননি। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চিড়িয়াখানার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নির্দেশনামা রেখে যান।
তাঁর আদেশে বলা হয়েছিল,
“এই সমস্ত প্রাণী বিধাতা আশুরের আশীর্বাদ; তাই তাঁদের প্রতি যত্নশীল হওয়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একান্ত কর্তব্য।”
ইতিহাসবিদদের মতে, এটি মানবসভ্যতার প্রথম “পশুর অধিকারের ঘোষণাপত্র” হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ, প্রাণীদের যত্ন নেওয়া ও তাদের অধিকার রক্ষা করা যে মানুষের নৈতিক দায়িত্ব — তার প্রথম নথিভুক্ত উদাহরণ পাওয়া যায় আশুরনাসারপাল দ্বিতীয়-এর কাছেই।
যুদ্ধজয়ী রাজা হয়েও আশুরনাসারপাল দ্বিতীয় তাঁর জনগণ ও প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই চিড়িয়াখানা কেবল বিনোদনের কেন্দ্র নয়, বরং প্রকৃতি ও প্রাণী সংরক্ষণের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। আজকের দিনে প্রাণী সংরক্ষণ ও পশুর অধিকার রক্ষা নিয়ে যে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন—তার সূচনা হয়েছিল হাজার বছর আগে এই আসিরীয় রাজা থেকেই।
বিশ্বের প্রথম চিড়িয়াখানা শুধু একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়; এটি মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। আশুরনাসারপাল দ্বিতীয় দেখিয়েছিলেন যে ক্ষমতা মানে কেবল যুদ্ধ নয়—বরং জীবজগতের প্রতি দায়বদ্ধতাও রাজকীয় গুণের অংশ।

আশুরনাসারপাল দ্বিতীয়-এর প্রাচীন Nimrud চিড়িয়াখানা, যেখানে সিংহ, হাতি, জেব্রা ও বানরগুলো রয়েছে সুসজ্জিত উদ্যান ও প্রাসাদের মাঝে।