আমেরিকার নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি। এক বাঙালি পড়ুয়া সেখানে পিএইচডি করতে এসে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রথম ক্লাসেই বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এক সহপাঠীকে দেখে। কারণ সেই সহপাঠী ছিলেন অন্ধ।বাঙালির ধারণা ছিল, অন্ধ ছেলেমেয়েরা হয়তো শুধু অব্যবহারিক বিষয়গুলোই পড়েন। রসায়নের মতন ব্যবহারিক এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতন কঠিন কাটখোট্টা বিষয় যে একজন অন্ধ ছেলে পড়ার টপিক হিসেবে বেছে নিতে পারে এটা তার ধারণাতেই ছিলো না।পরে অবশ্য অন্ধ ছাত্রটির সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠলো। দেখতে দেখতে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা হলো, রেজাল্ট ও বেরিয়ে গেলো। নিজের সমন্ধে আত্ম বিশ্বাস থাকা সেই বাঙালি কিন্তু জীবনে প্রথমবারের মতো ফেল করলেন। সাবজেক্ট কোয়ান্টাম মেকানিক্সে। ফেল আবার যে সে ফেল না, পরীক্ষায় একেবারে শূন্য পেয়ে ফেল করলেন । আর জানেন কে পেয়েছিল সর্বোচ্চ নাম্বার? সেই জন্মান্ধ সহপাঠী! যেটা দেখে বাঙালিটি যারপরনাই অবাক হয়েছিলেন।


পরবর্তী সেমিস্টারের জন্য প্রফেসর যখন কোয়ান্টাম মেকানিক্স না নিতে বললেন, তখন বাঙালি ও মনস্থির করে ফেলেছিলেন যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বাদ দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে। কিন্তু এই সময়ে তাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল সেই অন্ধ ছেলেটি।সে তাকে বোঝাল যে চেষ্টা ও ইচ্ছা থাকলে সফল সে ও হতে পারবে। বাঙালি এবার মনে মনে ভাবলো,বন্ধুটি যদি শুধু কান দিয়ে শুনেই সর্বোচ্চ নাম্বার পেতে পারে- তাহলে আমি কেন কান দিয়ে শুনে, চোখ দিয়ে দেখে পাশ করতে পারব না? নতুন উদ্যমে শুরু করলেন প্রস্তুতি। পরবর্তী সেমিস্টারে আবার হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরীক্ষা এবং রেজাল্ট বেরোনোর পর দেখা গেল বাঙালি পেয়েছে ১০০% নাম্বার।সাফল্যের পথে ওই অন্ধ বন্ধুটিই যেন বড় অনুপ্রেরণা হয়ে দেখা দিয়েছিল।

যদিও সেই জন্মান্ধ বন্ধুর নাম আমরা আর জানতে পারি না । তবে , নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে সেই বাঙালির নাম ? তিনি কিন্তু মেকানিক্স নিয়ে বিখ্যাত হননি। পরবর্তীকালে বিখ্যাত হয়েছিলেন লেখালেখি করে। তিনি দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয়, সম্মানীয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ, যিনি পড়াশোনাতেও যথেষ্ট ভালো ছিলেন এবং সম্মানের সাথে PhD ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তার জীবনের গল্প থেকে আমরা এটা শিখতে পারি বিফল হওয়ার জন্য অজুহাত হাজারো তৈরি করা যায়, তবে সফল হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা কিন্ত আমাদের চারপাশে উপস্থিত থাকে। শুধু প্রয়োজন সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গির।