ইলোরা ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদ শহর থেকে ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত, এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী’ স্থান হিসাবে মর্যাদা পেয়েছে।ইলোরা যেতে হলে আওরঙ্গবাদ হয়ে যেতে হয়।আওরঙ্গবাদ একটি ঐতিহাসিক শহর।আবিসিনিয়ার এক ক্রীতদাস – নাম মালিক অম্বর ভারতবর্ষে এসে তার ভাগ্য ফিরে যায় পরে আমেদ নগরের রাজার প্রধানমন্ত্রী হন।তিনি ‘খাড়কে’ নামে একটি শহরের পত্তন করেন, আওরঙ্গজেবের আমলে এর নাম বদলে রাখা হয় আওরঙ্গবাদ।
মোগল আমলের চিহ্ন ছাড়াও এখানে আছে প্রায় তেরশো বছরের পুরানো আট- দশটা বৌদ্ধ গুহা এবং এই গুহার মধ্যেও কিছু ভাস্কর্য আছে, যেগুলির কিছুটা মিল আছে ইলোরার মুর্তিগুলির সাথে।এর কাছেই আছে আওরঙ্গজেবের রানীর স্মৃতিস্তম্ভ এখানকার নকল তাজমহল’বিবি- কা- মোকবারা।
ইলোরার কৈলাস মন্দির—
কৈলাস মন্দির তৈরি হয়েছিল সপ্তম শতাব্দীতে রাষ্ট্রকুট রাজবংশের রাজা কৃষ্ণের আমলে। খুলদাবাদে অবস্থিত ইলোরার গুহাগুলি হচ্ছে ভারতের সেরা ভাস্কর্যের সমাহার। পাহাড়ের গা কেটে কেটে বের করা হয়েছে কৈলাসের মন্দির.. যেটা দেখলে শুধু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়-হাতুড়ি আর ছেনি দিয়ে পাহাড়ের গায়ের পাথর কেটে খোদাই করা এইসব অপূর্ব সুন্দর ভাস্কর্যগুলি।
তেরশো বছর আগে হাতুড়ি আর ছেনি দিয়ে দাক্ষিণাত্যের একদল কারিগর চরনন্দ্রী পাহাড়ের গা কেটে কেটে পাহাড়ের ভেতর থেকে খুঁড়ে বের করেছে এই কৈলাস মন্দির। তিনদিকে পাহাড়ের দেয়ালের মাঝখানে কৈলাসের মন্দির অবস্থিত।মন্দিরের একপাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পিছন দিক দিয়ে ঘুরে অন্যদিক দিয়ে আবার সামনে ফিরে আসা যায়। মন্দিরের ডানে এবং বামে পাহাডের গায়ে অনেকগুলি গুহার মতো ঘর করা আছে, সেগুলির গায়েও আছে অনেক কারুকাজ করা ভাস্কর্য।
জায়গাটা তিনশো ফুট ল্ম্বা,দেড়শো ফুট চওড়া, উচ্চতা একশো ফুট.. দুই লক্ষ টন পাথর কেটে সরানো হয়েছিল। প্রথমে তিনদিক থেকে পাথর কেটে খাদ তৈরি করা হয় তারপর চূড়া থেকে শুরু করে কাটতে কাটতে নীচ পর্যন্ত নেমে এসেছিল। দেব-দেবী,মানুষ-জানোয়ার, রামায়ন- মহাভারত সবকিছুরই ভাস্কর্য রয়েছে।
পাহাড়ের গায়ে লাইন করে দেড় মাইল জায়গা জুড়ে আরও চৌত্রিশটা গুহা – হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন – তার প্রতিটি মুর্তি কারুকার্যময়।বৌদ্ধ ধর্মের বারোটি,হিন্দু ধর্মের সতেরোটি এবং জৈন ধর্মের পাঁচটি। এই অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ করা শিল্পকলাগুলির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। দুই হাজার বছর আগে পাথর কেটে কেটে বের করা শিল্প মানুষ এখনও অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে।
অজন্তা গুহা
অজন্তা গুহাগুলি ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদ জেলার অজন্তা গ্রামের পাশেই পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত।গভীর খাঁড়া গিরিখাতের পাথর কেটে খোদাই করা প্রায় ৩০টি গুহা-স্তম্ভ। এগুলো খ্রিষ্টপূর্ব দোসরা শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। দেখলে মনেহয় শিল্পীরা রীতিমত একজন আরেকজনের সাথে প্রতিযোগিতা করে গুহার দেয়ালে ফুটিয়ে তোলেন তাঁদের শিল্পকর্ম যা মানব সভ্যতার শিল্পকলার ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গুহাগুলি খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টীয় ৭০০ অব্দের মধ্যে নির্মান করা হয়েছিল।
৪৮০ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট হরিসেনার রাজত্বের অবসান হলে মন্দিরগুলো ধীরে ধীরে পরিত্যাক্ত হয় । বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যায় এই অতুল কীর্তি।
১৮১৯ সালে এগুলো নতুন করে আবিষ্কার করেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ব্রিটিশ সেনা অফিসার জন স্মিথ।
জঙ্গলে বাঘ শিকার করতে গিয়ে তিনি গুহাটির ভিতরে ঢুকে এত সুন্দর কারুকাজ দেখে হতবাক হন, তারপরই শুরু হয় প্রত্নতাত্বিক অভিযান। গুহা গুলোর সামনে রয়েছে বারান্দা । বারান্দার ছাদ ও স্তম্ভগুলো কারুকাজ করা। প্রতিটি গুহার মাঝখানে রয়েছে প্রশস্ত জায়গা বা হল । হলগুলোর চারদিকে রয়েছে বড় বড় চারটি স্তম্ভ। ছাদ যেন ধ্বসে না পড়ে সে জন্য রয়েছে পাথরের খিলান। অজন্তার দেয়ালের ছবিগুলি বুদ্ধের জীবন কাহিনী নির্ভর, বিভিন্ন রংয়ের ছবিগুলি ফ্রেস্কো ধাঁচের বলে খুব জীবন্ত লাগে।কোন সন্দেহ নাই যে এগুলি বৌদ্ধ চিত্রশিল্পের সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন। অজন্তা গুহার কারকার্যময় ছবিগুলি ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরচিত্রের অন্যতম নিদর্শন। বিরল গুহা চিত্রের জন্য অজন্তা ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কোর সহায়তায় এটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।