চাকমা জাতির ইতিহাসে দুজন নারীর নাম জানা যায়, যারা রাজার মৃত্যুর পর রাজ্যের ভার গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম জনের নাম কাট্টুয়া রাণী। রাজা সাত্তোয়া বা পাগলা রাজা মারা যাবার পর কাট্টুয়া রাণীকে চাকমা সমাজের আমত্যরা রাণী হিসেবে বরণ করে নেন। কিন্তু চাকমা জাতির ইতিহাসে যিনি রাণী হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি হলেন রাণী কালিন্দী।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে চাকমা রাজাদের নেতৃত্বে পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা দীর্ঘ দুই যুগ (১৭৭২–১৭৯৮) ধরে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলো। গেরিলা যুদ্ধে পারদর্শী পার্বত্য অধিবাসীদের প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে অবশেষে পার্বত্য রাজ্যের স্বাধীনতা মেনে নিতে এবং রাজা জান বক্স খাঁর সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়। ১৭৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক দিন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে দুই পক্ষের মধ্যে এই সমঝোতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ধুরন্ধর ব্রিটিশরা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে এবং আবারো ব্রিটিশ–বিরোধী লড়াই শুরু হয়। এরপর আরো বেশ কয়েক দশক ধরে এই লড়াই স্থায়ী থাকে।
এদিকে রাজা জান বক্স খাঁর মৃত্যুর পর ছেলে ধরম বক্স খাঁর হাতে চলে যায় শাসনভার। তিনি ভীষণভাবে চেষ্টা চালিয়ে যান ব্রিটিশদের দখলদারিত্ব প্রতিহত করবার, যদিও সে সময় ব্রিটিশদের অত্যাচার তুলনামূলক কম ছিলো বলে জানা গিয়েছে। তবে ভাগ্যের বিপর্যয়, খুব অল্প বয়সে (মাত্র ৩০ বছর) তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রাজা ধরম বক্স খাঁর কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় রাজ্য শাসনের ক্ষমতা কার হাতে যাবে এই নিয়ে বেশ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। রাজ্যে এ রকম অস্থিতিশীল অবস্থা চলতে থাকলে ব্রিটিশ শাসকরা এর সুযোগ নিতে পারে, তাই রাজ্য শাসন করার মতো একজন যোগ্য শাসকের খুব প্রয়োজন দেখা দেয় তখন। এই নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন অংশের দেওয়ানরা নিজেদের মধ্যে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এমন একট সময়ে যিনি প্রচলিত রীতিকে উপেক্ষা করে রাজশাসনের দায়িত্ব নেন তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন চাকমা রাণী কালিন্দী।
তবে জেনে নেয়া যাক, চাকমা জাতির ইতিহাসের শক্তিশালী নারী ব্যক্তিত্ব রাণী কালিন্দী সম্পর্কে। তিনি দীর্ঘ তিন দশক চাকমা রাজ্য শাসন করেছেন এবং নিজের বিচার-বুদ্ধি, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতা কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশদের দখলদারিত্বকে যতোটা সম্ভব প্রতিহত করে রেখেছিলেন।
১৮৯০ সাল। বর্তমান রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা কুতুকছড়ী পাহাড়ি গ্রামে দরিদ্র জুমিয়া গুজং চাকমার ঘরে রাণী কালিন্দীর জন্ম। গুজং চাকমা গ্রামে ‘গুজং বুজ্যা’ নামে পরিচিত ছিলেন। কালিন্দীর বাবা তার নাম রেখেছিলেন ‘কালাবী’। কালাবী ছিলেন পরিবারের প্রথম সন্তান। তিনি শুধু সুন্দরীই ছিলেন না, যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্নও ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তিনি ছিলেন যথেষ্ট জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমতী। পাহাড়ি পরিবেশে বাবার সাথে ঘুরে ঘুরে স্বাভাবিকভাবেই কেটে যাচ্ছিলো কালাবীর জীবন। হঠাৎ একদিন এক জঙ্গলে রাজা ধরম বক্স খাঁ তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান এবং পরবর্তীতে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে রাজা ধরম বক্স খাঁর সাথে তার বিয়ে হয়। একজন সাধারণ পাহাড়ি মেয়ে ‘কালাবী’ থেকে ‘রাণী কালিন্দী’-তে পরিণত হন তিনি। হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বিয়ের সময় কালিন্দীর বয়স ছিলো মাত্র ১২ কিংবা ১৩ বছর।
সাধারণ পরিবারে বেড়ে উঠলেও কালিন্দী ছিলেন স্বশিক্ষিত এবং নিজের বুদ্ধি, যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে খুব সহজেই রাজপরিবারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন তিনি। তিনি শুধু বৈষয়িক কিংবা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দূরদর্শীতায়ই পারদর্শী ছিলেন না, এর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রেও যে অবদান তিনি রেখে গেছেন তার জন্য আজও তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
প্রথম জীবনে তিনি হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন এবং বৌদ্ধ ধর্মকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের রাজানগরে বর্তমান ‘মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির’-টি স্থাপন করেন। তিনি এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ‘মহামুনি মেলা’-র প্রবর্তন করেছিলেন, যা আজও অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
সেই সময়ের ‘বৌদ্ধ রঞ্জিকা’ প্রকাশেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের প্রতিও ছিলো তার অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি। এরই বাস্তবিক রূপ হিসেবে রাজধানী রাজানগরে হিন্দুদের জন্য মন্দির ও মুসলমানদের মসজিদ তৈরির লক্ষ্যে রাজভান্ডার থেকে অর্থও দান করেছিলেন। হয়তো তার এই গুণের জন্যই তিনি হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন।
চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁ ২০ বছর রাজত্ব করার পর ১৮৩২ সালে ৩০-৩২ বছর বয়সে মারা যান। ফলে অপুত্রক রাজার উত্তরাধিকারী হিসেবে কে দায়িত্ব নেবে এই নিয়ে একপ্রকার ঝামেলার সৃষ্টি হলে ইংরেজ কোম্পানি ধরম বক্স খাঁর তৃতীয় রাণীর একমাত্র মেয়ে মেনকা চিগনবীকে রাজ্যশাসনের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু প্রথমা রাণী কালিন্দীর আপত্তির কারণে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইংরেজ কোম্পানির পক্ষ থেকে শুকলাল দেওয়ানকে রাজ্যের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ইতিমধ্যেই ১৮৩৭ সালে রাণী কালিন্দী ইংরেজ কোম্পানির কাছ থেকে দুই বছরের জন্য রাজ্য ইজারা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাণী কালিন্দী ১৮৪৪ সাল থেকে সরকারিভাবে রাজ্যশাসন শুরু করেন। মূলত রাজা ধরম বক্স খাঁ মারা যাবার পর ১৮৩২ সাল থেকেই রাজ্য শাসন করা শুরু করেছিলেন তিনি।
রানী কালিন্দী ১৮৪৪ সাল হতে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন দশক রাজ্য শাসন করেছিলেন। এরই মধ্যে ছোট রাণী হারিবী বড় রাণী কালিন্দীর মতামত ছাড়াই চাকমা বীরপুরুষ রণু খাঁ এর প্রপৌত্র গোপীনাথ দেওয়ানের সাথে মেয়ে মেনকা চিগনবীর বিয়ে দেন এবং রাজনগরের কাছেই সনায়সুরী গ্রামে আলাদা বাড়ি তৈরী করে মেয়ে ও জামাতাসহ আলাদা বাস করতে শুরু করেন। অনেক আইনী লড়ায়ের পর ইংরেজ সরকার রাণী কালিন্দীকে মৃত স্বামীর যাবতীয় সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসাবে ও রাজ্যের সরবরাহকারী হিসাবে সাব্যস্ত করে। চাকমা রাজসিংহাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে রাণী কালিন্দী ছোট রাণী হারিবীকে তার কর্মের জন্য ক্ষমা করে দেন এবং মেয়ে-জামাই ও মেয়ে চিগনবীসহ সবাইকে রাজবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এভাবেই রাণী কালিন্দী নিজ অধিকার রক্ষার জন্য ঘরে বাইরে সব জায়গায় সংগ্রাম করে গেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে রাজাদের রাজ্য শাসনের মধ্যে রাণী কালিন্দীর শাসনকালটি ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার আমলেই ব্রিটিশ কোম্পানি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর প্রত্যক্ষ আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলো। ১৮৬০ সালের আগ পর্যন্ত ইংরেজরা চট্টগ্রাম থেকেই দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করতো। ফলে বাস্তবিক অর্থে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসন এই অঞ্চলে প্রচলিত ছিলো না।
১৮৬১ সালের পর থেকে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে এক এক সময় এক এক জন অস্থায়ী সুপারিন্টেনডেন্ট নিয়োগ পেলেও মূলত ১৮৬৬ সাল থেকেই নিয়মিত শাসনকর্তা হিসেবে যোগ দেন ক্যাপ্টেন টি.এইচ.লুইন। ক্যাপ্টেন লুইন ছিলেন একজন জ্ঞানী, কিন্তু ভীষণ ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৮৬৯ সালের ১লা জানুয়ারি চন্দ্রঘোনা থেকে রাঙ্গামাটিতে প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টার স্থানান্তর করেন। ক্যাপ্টেন লুইনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো নতুন রাজ্যে ব্রিটিশের স্থায়ী অধিকার ও প্রাধান্য বিস্তার করা।
অন্য দিকে রাণী কালিন্দীও ছিলেন এর ঘোর বিরোধী। কাজেই অচিরেই ক্যাপ্টেন লুইনের সাথে তেজস্বিনী রাণী কালিন্দীর বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ক্যাপ্টেন লুইন প্রথম থেকেই রাণীকে বেশ অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখতেন। তিনি এই ভেবে অবাক হতেন যে, একজন অশিক্ষিত নারীর পক্ষে কিভাবে রাজ্যের শাসন পরিচালনা সম্ভব। কিন্তু আসলে রাণী কালিন্দী ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, নিষ্ঠাবান, সদালাপী ও অতিথিপরায়ণ একজন নারী। মানুষের সাথে সহজেই মিশে যেতেন তিনি। অন্যের প্রতি ছিলো তার নিখাঁদ ভালোবাসা, যেটি তাকে অনেক বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ রেখেছিলো। এছাড়াও রাজ্যে এমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেওয়ান বা সর্দার ছিলেন না যারা সিংহাসনে বসে নিরাপদে রাজত্ব পরিচালনা করতে পারবেন। সে সময়ে দেওয়ান সরদাররা তাদের আধিপত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যেই কলহে লিপ্ত ছিলো। তাদের নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব রাণীকে সহজেই রাজ্য পরিচালনার সুযোগ করে দেয়।
সুচতুর ও ধূর্ত লুইন প্রায়ই নানাভাবে রাণী কালিন্দীকে অপদস্থ করার চেষ্টা চালাতেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি পার্বত্য এলাকার এক একটা উপত্যকাভূমিতে প্রতিপত্তিশালী দেওয়ানদেরকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত গ্রহণের জন্য প্রলুব্ধ করতে লাগলেন। এতে চাকমা রাজ্যের প্রায় অর্ধেক অংশ রাণীর হাতছাড়া হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সেটা হয় নি, কারণ রাণীর প্রতি অনুগত্য স্বীকার করে দেওয়ানরা কেউই এই প্রস্তাবে রাজি হন নি।
ক্যাপ্টেন লুইন যখন কোনোভাবেই দেওয়ানদেরকে রাজি করাতে পারলেন না, তখন তিনি সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে চাকমা রাজ্যকে দু’ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করে প্রাদেশিক গভর্নরের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ১৮৮৭ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ইংরেজ কোম্পানি পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেলে (চাকমা, বমাং ও মং) ভাগ করে দিয়েছিলো।
ক্যাপ্টেন লুইন রাণী কালিন্দীকে নানাভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করেও যখন কোনোভাবেই ধরাশায়ী করতে পারছিলেন না, তখন রাণীর সাথে সরাসরি সাক্ষাতের প্রস্তাব দিয়ে তাকে সামাজিকভাবে প্রজাসাধারণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টাও চালিয়েছেন। সে সময় সমাজব্যবস্থা ছিলো অনেক রক্ষণশীল। তাই নারীরা অনেক বেশি পর্দানশীন ও অন্তঃপুরবাসী ছিলেন। রাণীর এই অপারগতার দিককে কাজে লাগাতে ধূর্ত ক্যাপ্টেন লুইন রাণীর সাথে সামনাসামনি সাক্ষাতের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু রাণী লুইনের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে যান লুইন এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকশ সৈন্যসামন্ত নিয়ে তখনকার রাজধানী রাঙ্গুনিয়ায় চাকমা রাজবাড়ি আক্রমণের চেষ্টা চালানো হয়।
রাণী কালিন্দী সামাজিক, জাতিগত ও ধর্মীয় দিক থেকে ছিলেন অত্যন্ত উদার এবং মহৎ। এ জন্য সকল ধর্ম ও গোত্রের মানুষ তাকে ভালোবাসতো। ফলস্বরূপ হিন্দু-মুসলমান-চাকমা নির্বিশেষে স্থানীয় সকল প্রজারা ক্যাপ্টেন লুইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং লুইন বাহিনীকে পিছু হটিয়ে দেয়। আসলে রাণীর উদারতা ও বিচক্ষণতা এবং প্রজাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কারণে লুইনের হাজার ষড়যন্ত্রের পরও তিনি দৃঢ়ভাবে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে রাজ্য শাসন করতে পেরেছিলেন।
রাণী কালিন্দী চাকমা রাজপরিবারের দীর্ঘদিনের পুরুষতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে ভেঙে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে স্বশিক্ষিত, নিষ্ঠাবান ও বিনয়ী। রাণী কালিন্দী প্রায় তিন দশক রাজ্য শাসন করে এটা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে নারীরা ক্ষমতার শীর্ষেও তাদের মেধা ও যোগ্যতার স্থান রাখতে সক্ষম। তিনি পাবর্ত্য চট্টগ্রামের দুর্গম গিরিতে নারী নেতৃত্ব ও নারী অধিকারের যে মশাল জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন, তা আজও সেভাবেই জ্বলছে। অনেক আশা-নিরাশায় জীবন অতিবাহিত করা এই শক্তিমান নারী ১৮৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি পার্বত্য রাজ্যের শাসনভার যথাসম্ভব যোগ্য ব্যক্তির হাতে দেবার চেষ্টা করেছেন। সেই উদ্দেশ্যে রাণী কালিন্দী পার্বত্য রাজ্যের উত্তরাধিকারী হরিশচন্দ্রকে রাজ্য শাসনের যোগ্য করে তোলেন। ১৮৭২ সালে রাণীর নির্দেশক্রমে হরিশচন্দ্র ব্রিটিশদের ‘লুসাই অভিযান’-এ অংশগ্রহণ করেন এবং এতে সফলতার জন্য ইংরেজ সরকার তাকে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি দেয়। এই অভিযানের পর হরিশচন্দ্র রাজানগরে ফিরলে রাণী মহাসমারোহে রাজ্যের শাসনভার অর্পণ করেন তার কাছে।
দীর্ঘ তিন দশক রাণী কালিন্দীর পার্বত্য রাজ্যশাসন ক্যাপ্টেন লুইন এর সাথে তার ব্যক্তিত্বের সংঘাতের সৃষ্টি করে এবং পদে পদে লুইন তার বিরোধাচারণ করে গেছেন। এই ঘটনা রাণী এবং চাকমা রাজাদের স্বার্থে অপরিসীম ক্ষতির কারণ হয়েছিলো। কিন্তু এতো কিছুর পরও ক্যাপ্টেন লুইন অত্যন্ত চালাক, ধূর্ত ও কৌশলী রাজনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও রাণী কালিন্দীর কাছে কিন্তু বারবারই পরাজিত হতে হয়েছিলো তাকে।