“আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজছিলাম। তাই আমি মন্দিরে গেলাম, সেখানে তাঁকে খুঁজে পেলাম না। আমি গির্জায় গেলাম, সেখানে তাঁকে পেলাম না। এরপর আমি মসজিদে গেলাম সেখানেও তাঁকে পেলাম না। আমি আমার নিজের হৃদয়ে তাঁকে খুঁজলাম, সেখানে তাঁকে খুঁজে পেলাম।” তিনি বলেন —— “স্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর অজস্র পথ আছে। তার মাঝে আমি প্রেমকে বেছে নিলাম।”
আজকে আমরা সেই বিখ্যাত মাওলানা ও কবি জালাল উদ্দিন রুমির গল্প শুনবো, যাঁর কবিতা আমাদের নতুন করে ভালোবাসার সংজ্ঞা শেখায়, আমাদের শেখায় সৃষ্টিকর্তাকে ভয়ে নয়, ভালোবাসায় খুঁজে পাওয়া যায়।
তিনি তাঁর কবিতা বা গজল লেখার অনুপ্রেরণা পেতেন তাঁর আশপাশ থেকেই। রুমি প্রায়ই তার অনুসারীদের নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃতির মাঝে ঈশ্বর অদৃশ্য জগতের বার্তা ছড়িয়ে দেন। তিনি প্রকৃতিকে ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতিফলন হিসাবে দেখতেন এবং সেখান থেকে কবিতা গজল রচনা করার অনুপ্রেরণা পেতেন। কখনো বা রাখালের বাজানো বাঁশির সুর শুনে, কখনো ঢাকের আওয়াজ শুনে, আবার কখনো স্বর্ণকারের হাতুড়ির আওয়াজ শুনে।
কখনো কখনো তিনি তার গজলগুলোর সাথে এতটাই একাত্ম সাথে হয়ে যেতেন যে গভীর মগ্নভাবে ঘুরে ঘুরে নাচতে শুরু করতেন। নাচ তাঁর কাছে একধরনের ইবাদত ছিল। তিনি বলতেন- “আমরা শূন্য থেকে ঘুরতে ঘুরতে এসেছি যেমনটা তারারা আকাশে ছড়িয়ে থাকে। তারারা মিলে একটি বৃত্তের সৃষ্টি করে, এবং তার মাঝে আমরা নাচতে থাকি।”
জালালউদ্দিন রুমি ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে সেপ্টেম্বর, আনাতোলিয়া উপদ্বীপের আফগানিস্তানের বালাখে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন শহরের সুলতানুল উলামা, বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ এবং মা মুইমিনা খাতুন। তাঁর মা খোয়ারিজমী রাজবংশের বংশধর হওয়ায় শৈশব থেকেই রুমি সমাজের উঁচু স্তরের লোকজনদের সাথে মিলেমিশে বড় হতে থাকেন। বাবা ছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত উলামা এবং আইনজ্ঞ, এইজন্য ছোটবেলা থেকেই রুমির ইসলামি শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ ঘটে।
রুমির বয়স যখন ১১ বছর, বালখ শহরের রাজার সাথে এক বিবাদের জের ধরে তাঁর বাবা পরিবার আর কয়েকশ অনুসারী নিয়ে মধপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে হিজরতের জন্য বের হয়ে যান। এই সময় রুমির সাথে সাক্ষাৎ হয় সে সময়ের বিখ্যাত সব মনিষীদের। তাঁর বয়স যখন ১৮ বছর, মক্কা যাওয়ার পথে নিশাপুরে তাঁদের সাথে দেখা হয় পারস্যের বিখ্যাত আধ্যাত্মিক কবি আত্তারের। তিনি রুমিকে তার বাবার পেছনে হাঁটতে দেখে বলে ওঠেন,“একটি হ্রদের পেছনে একটি সমুদ্র যাচ্ছে”। তিনি রুমিকে ইহজগতের আত্মার উপর লেখা একটি বই ‘আসারনামা’ উপহার দেন। যা কিশোর বয়সের রুমির উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং তিনি রহস্যের উপরে আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন।
হিজরত চলার সময় কারামানে থাকা অবস্থায় ১২২৫ সালে রুমি গওহর খাতুনকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি ছেলে হয়, সুলতান ওয়ালাদ এবং আবদুল্লাহ চালাবী।এরপর গওহর খাতুন মারা গেলে রুমি এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করেন, যার আগে একটি মেয়ে ছিল নাম কিমিয়া খাতুন। এখানে রুমির এক ছেলে আমির আলিম চালাবী এবং এক মেয়ে মালাখী খাতুনের জন্ম হয়।
১২২৮ সালে আনাতোলিয়ার শাসক আলাউদ্দিন কায়কোবাদ, বাহাউদ্দিন এবং তার পরিবারকে আনাতোলিয়ার কোনিয়ায় নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন এবং তাঁদের সেখানে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানান। বাহাউদ্দিন সেখানের মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর বাবা মারা গেলে মাত্র ২৫ বছর বয়সে রুমি তার স্থলাভিষিক্ত হন।এবং ধীরে ধীরে তিনি সেখানকার মৌলভী সাহেব বা মাওলানা সাহেব হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। শিক্ষক থাকা অবস্থাতেই রুমি তাঁর বাবার এক ছাত্র সৈয়দ বুরহান উদ্দিন মোহাক্কিকি তীরমিযির কাছে টানা নয় বছর বিভিন্ন ইসলামি শরীয়া এবং সূফীবাদের শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং একসময় তিনি কোনিয়ার মসজিদের প্রধান হয়ে ওঠেন।
রুমির ২১ বছর বয়সে,জীবনের আর একটি বড় ঘটনা ঘটে , সেটি হলো ফকির-দরবেশ শামস আল দীনের সাথে তাঁর সাক্ষ্যৎ, শামস ছিলেন উন্মাদ ধরণের আধ্যাত্মিক পুরুষ, লোকে তাকে ‘পাখি’ বলে ডাকতো। কারণ তিনি এক জায়গায় বেশিদিন স্থির থাকতে পারতেন না আর প্রচলিত ছিল, তাকে একইসময় দুই জায়গায় দেখা যেত, যাতে মনে হতো তিনি উড়ে বা নিজের ইচ্ছামতো চোখের পলকে অবস্থান বদল করতে পারতেন। তিনি রুমিকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন রুমিই হতে পারবে তার যোগ্য শিষ্য এবং প্রতিনিধি, যে তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং ক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করতে পারবে। তাঁর ছিলো একটি বিশাল হৃদয় যেটা ছিল সৃস্টিকর্তার প্রতি নিবেদিত। তখন তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি রুমিকে বয়সের কারনে দিতে পারেন নি। রুমির বয়স যখন চল্লিশ হয়, এবং সেই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ধারণ করার যোগ্য হয়ে ওঠেন, তখন শামস তাবরিজি আবার রুমিকে খুঁজে বের করেন।
রুমি শামস তাবরিজির দেখা পেয়ে অভিভূত হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন এতদিন যে জীবন, যে বিশ্বাস নিয়ে তিনি বেঁচে ছিলেন, তার বাইরেও অনেক কিছু আছে। রুমি শামস-এর ভেতর একটা ‘স্বর্গীয় উপস্থিতি’ টের পান। শামস তাবরিজিকে তিনি তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাঁর সাথে লম্বা সময় কাটাতে থাকেন এবং তাঁর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন।
শামস তাবরিজির সাথে রুমির মেলামেশার এই বাড়াবাড়ি কেউ ভালোভাবে নিতে পারেনি। তাঁর পরিবার এবং সমাজের উঁচু স্তরের লোকেরা মনে করতে থাকেন, শামস তাবরিজির সাথে এত মেলামেশায় রুমির ‘সম্মানহানি’ ঘটছে। তাই তারা শামস তাবরিজিকে হুমকি দিতে থাকেন এবং তাবরিজিও এক পর্যায়ে কোনিয়া ছেড়ে দামেস্কে চলে যান। এই ঘটনায় রুমি প্রচন্ড ভেঙে পড়লে তাঁর বড় ছেলে সুলতান ওয়ালাদ শামসকে কোনিয়া ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন।
রুমি শামস তাবরিজিকে কোনিয়ায় ধরে রাখতে এক অদ্ভুত কাজ করে বসেন, তাঁর ১২ বছর বয়সী সৎ মেয়ে কিমিয়া খাতুনকে ষাটোর্ধ্ব শামস তাবরিজির সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। এই ঘটনায় রুমির ছোট ছেলে আবদুল্লাহ চেলেবী প্রচণ্ড ক্ষেপে ওঠে, কারণ সে কিমিয়া খাতুনকে মনে মনে পছন্দ করতো। বিয়ের কয়েক মাস পর কিমিয়া খাতুন মারা গেলে সমাজের উঁচু স্তরের ব্যক্তিদের মৌন সম্মতিতে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ শামস তাবরিজিকে হত্যা করে, এবং রাতের আঁধারেই রুমির অগোচরে তাকে দাফন করে ফেলে। রুমি যতদিন বেঁচে ছিলেন এই ঘটনা কোনোদিনই জানতে পারেননি। তিনি প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেননি শামস তাবরিজি মারা গিয়েছেন। তাই তিনি লেখেন, “কে বলে, যে অমর সে মারা গিয়েছে? কে বলে, আশার সূর্য মারা গিয়েছে? ঐ দেখো, এ তো সূর্যের শত্রু যে ছাদে এসেছে, এবং চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলছে, “হে, সূর্যের মৃত্যু হয়েছে।”
এভাবে তিনি চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন এবং এরপর কালো পোশাক পরে শামস তাবরিজির মৃত্যুর ঘোষণা দেন। তাকে হারানোর এই শোকই রুমির জীবনের মোড় পরিপূর্ণভাবে ঘুরিয়ে দেয়। এবং তার কাব্যসাধনার সূচনা ঘটে এই আঘাতের পর থেকেই। নিজের প্রিয় শিক্ষক এবং বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা তাকে করে তোলে প্রেমের ও বন্ধুত্বের কবি। তিনি লেখেন—- “তুমি চলে গেলে আমার চোখ দিয়ে রক্ত বাহিত হলো। আমি কেঁদে কেঁদে রক্তের নদী বহালাম। দুঃখগুলো শাখা-প্রশাখা বেড়ে বড় হলো, দুঃখের জন্ম হলো। তুমি চলে গেলে, এখন আমি কীভাবে কাঁদবো? শুধু তুমি চলে গেছো তা-ই নয়, তোমার সাথে সাথে তো আমার চোখও চলে গেছে। চোখ ছাড়া এখন আমি কীভাবে কাঁদবো প্রিয়!”
তাঁর সাথে দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত রুমি ছিলেন ইসলামিক আইন কানুন ও ফিকাহ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ একজন শিক্ষক। শামসের সাথে দেখা হওয়ার পর, তাঁর ভেতরের গুপ্ত আধ্যাত্মিকতা আর খোদার প্রতি ‘পরম’ নিবেদন জেগে উঠে। তিনি তার অ্যাকাডেমিক জীবন তথা শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে দিয়ে দরবেশ-জীবনে পা বাড়ান এবং রহস্যময় (Mystical) কবিতা লেখা শুরু করেন।
তাঁর কবিতায় তিনি প্রেম, মদ, মদ্যপ থাকা- এসবের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন যা ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক গ্রহনযোগ্য নয়, কিন্তু এখানে এই মদ আক্ষরিক অর্থে কোনো মদ নয়, এটি খোদার প্রতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাঁর পরম ভালোবাসা। আত্মসমর্পণ তথা তার সাথে মিশে যাওয়ার এক পরম উপলদ্ধিকেই বোঝায়।
তিনি সংগীত, কবিতা আর ঘুরে ঘুরে নাচের তালে তালে ধ্যান করার মধ্যে দিয়ে খোদার কাছে পৌঁছানোর শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করতেন। তিনি তাঁর বিশেষ সংগীতে এমনভাবে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলতেন, যে তার ভেতর দিয়ে একইসাথে আত্মার ধ্বংস আর পূর্নজন্ম লাভ হয়।
তিনি কবিতা আর গদ্যের অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারমধ্যে ‘দীওয়ান’, ‘মাসনাভী’, ‘মাকাতীব’, ‘মাজালীশ’ এবং ‘ফীহে মা ফীহে’ উল্লেখযোগ্য। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হলো ‘মাসনাভী’। এটি বিশ্বে একটি অনন্য সূফী গ্রন্থ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ‘মাসনাভী’ রুমির বিশ্ববিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। ৪০ হাজার লাইনের এই গ্রন্থ রচনা করতে তাঁর সময় লেগেছিলো ২২ বছর।
শামসকে চিরস্মরণীয় করে রেখে যাবার জন্য রুমি তাঁর প্রথম মহাকাব্যের নাম দেন, ‘তাবরিজ শহর থেকে শামসের সমষ্টিগত কবিতা’। এছাড়াও তিনি তাঁর অসংখ্য কবিতায় ‘শামস’ ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহার করেন, যার সংকলনকে ‘দেওয়ানে শামস’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তার বিভিন্ন গজল এবং চতুষ্পদী কবিতাগুলোতে শামসের প্রতি তাঁর ভালোবাসার বিভিন্ন স্তরের প্রতিফলন ঘটতে থাকে। আবার অনেকে বলে থাকেন, শামস তাবরিজির মৃত্যুর পর রুমিই শামস তাবরিজি হয়ে ওঠেন। তাই রুমির লেখা কবিতাগুলো মূলত শামস তাবরিজিরই কবিতা।
শামস তাবরিজির মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর রুমির আবার গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সালাউদ্দীন জাকুব নামের এক স্বর্ণকারের সঙ্গে। তিনি একদিন সালাউদ্দিন জাকুবের দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় তার হাতুড়ির আঘাতের শব্দ শুনে তিনি নাচতে শুরু করেন, তিনি জাকুবের হাতুড়ির আঘাতের শব্দের মাঝে যেন সৃষ্টিকর্তার করুণার সুর শুনতে পান, আর এভাবেই তাদের বন্ধুত্বের সূচনা হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন যাবত জাকুব রুমির ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে ছিলেন। রুমি তার বড় ছেলের সাথে সালাউদ্দিন জাকুবের মেয়ের বিয়ে দেন। সালাউদ্দিন জাকুবের মৃত্যুর পর রুমির এক ছাত্র হুসাম আল চেলেবীর সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। হুসাম আল চেলেবীকে তিনি ‘দিয়া আল-হাক’ বলে ডাকতেন। যার অর্থ ছিল ‘সত্যের প্রদীপ’। তার পরামর্শেই রুমি তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘মাসনাভি’ লেখা শুরু করেন। মাসনাভির মাঝে ১৩ শতকের সূফীবাদের বেশ নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও রুমি মাসনাভিতে ফুটিয়ে তুলেছেন শামস তাবরিজি, সালাউদ্দিন জাকুব এবং হুসাম আল চেলেবীর প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা।
মাসনাভি লেখার কিছুদিন পরই জালাল উদ্দিন রুমি মারা যান। তাঁকে তার পিতার পাশে কোনিয়ায় দাফন করা হয়। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকেরাও তাকে সম্মানের চোখে দেখতেন। তাই তার জানাজায় সব ধর্মের অসংখ্য লোক যোগ দেয়। কোনিয়ায় তার মাজার বা সবুজ দরগা এখনো বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের, বিশেষ করে তুর্কিস্তানের মুসলিমদের কাছে তীর্থস্থান বলে পরিগণিত হয়।
রুমির মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে সুলতান ওয়ালাদ এবং এবং শিষ্য হুসাম আল চেলেবি রুমির অনুসারীদের নিয়ে মৌলভী সম্প্রদায় গড়ে তোলেন, যারা বর্তমানে তুর্কিস্থানের ‘ঘূর্ণায়মান দরবেশ’ নামে পরিচিত। যেখানে একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্রে রাখা হয় রুমির রূপক হিসেবে এবং বাকিরা তাকে ঘিরে গোল করে ঘুরতে থাকে, যেভাবে সূর্যের চারপাশে গ্রহরা ঘুরে থাকে।
জালাল উদ্দিন রুমিকে কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠী দিয়ে বেঁধে ফেলা সম্ভব নয়, কারণ তিনি সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ের কথা বলেন। তাঁর কবিতার মূল বক্তব্য সুফি ভাবধারার, যেখানে মানুষের আত্মা স্বর্গীয় সত্তার সাথে মিলে মিশে একাকার। তিনি বিশ্বাস করতেন ভালোবাসাই সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায়। সৃষ্টিকর্তার ‘পরম’কে সম্পূর্ণ নিরাসক্ত প্রেম দিয়ে বোঝা আর উপলদ্ধি করার জন্য তিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের বাধা পেরিয়ে হয়েছেন সব মানুষের ভালোবাসা আর প্রেমের গুরু। রুমির কবিতার ভাষা এবং ছন্দ সহজেই মানুষের মনে জায়গা করে নেয়। তাঁর কবিতার প্রতিটি শব্দ শুনে মনে হয় এগুলি মানুষের হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনের অনুবাদ, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের ভাষা।