৬১০ সালে ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির বছরে তৎকালীন আরবে নতুন এই ধর্মটি একটি ধর্মীয় শক্তির পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নবী মোহাম্মদ প্রবল বিরোধিতা ও বিদ্রোহ উপেক্ষা করে মদিনায় একটি ইসলামি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তার নতুন এই সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল মানবিক এবং এর সামরিক শক্তি ক্রমেই হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। নবী মোহাম্মদের জীবদ্দশায়ই ইসলাম আরবের বাইরেও তার সাম্রাজ্য বিস্তার করা শুরু করে। ৬৩২ সালে নবীর মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধু ও শিষ্য হযরত আবু বকর রাশিদুন খিলাফতের নতুন খলিফা হন। নতুন এই খিলাফত সাম্রাজ্য বিস্তারে আরও অগ্রগামী হয়। প্রথমে ইসলামি সাম্রাজ্য একটু দুর্বল মনে হলেও খুব দ্রুতই মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ধর্মীয় এই শক্তিটি প্রভাবশালী হয়ে উঠে। কয়েক দশকের মধ্যে ইসলাম হেজাজের মদিনা পেরিয়ে পৌঁছে যায় ইরাক, মিশর, উত্তর আফ্রিকা, সিরিয়া, লেভান্ত, ইরান ও ভূমধ্যসাগরের কয়েকটি দ্বীপে। ৬৫৬-৬১ এই সময়কালের প্রথম ফিতনা বা ইসলামের প্রথম গৃহযুদ্ধকালীন সাম্রাজ্য বিস্তার খানিক সময়ের জন্য রুদ্ধ হলেও পরবর্তী উমাইয়া ডাইনেস্টি (৬৬১-৭৫০) আমলে আবার ইসলামের সামরিক অভিযান ও সাম্রাজ্য বিস্তার পুরোদমে শুরু হয়।
ইসলাম ধর্ম ও ইসলামি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের দ্বার খুলে যায় ৬৩০ সালে যখন মদিনার মুসলমানরা হযরত মোহাম্মদ (স.) এর নেতৃত্বে মক্কা বিজয় সম্পন্ন করে। এ সময় ইসলামের বিরোধী জোট একে একে পরাজিত হতে থাকে। বিশ্ব বিজয়ের আগে আরব বিজয়ের মাধ্যমেই শুরু হয় ইসলামি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ। যেই বীজ বপন করে দিয়েছিলেন নবী মোহাম্মদ পরবর্তীতে তার বাস্তবায়ন করেছিলেন তারই শিষ্য ও অন্যান্য মুসলিম শাসক।
রাশিদুন খিলাফত ও রিদ্দার যুদ্ধ
নবী মোহাম্মদের মৃত্যুর দিনই খিলাফতের নেতৃত্ব নিয়ে এক সংকট তৈরি হয়। তবে বিশিষ্ট সব সাহাবীদের পরামর্শ ও মতৈক্যে শেষ পর্যন্ত নবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু বকরকে খলিফা হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। আর এর সাথে ইসলামের নূতন খিলাফত রাশিদুন খিলাফতের শুরু হয়।
মোহাম্মদ (স) সমকালীন সিরিয়ার বাইজান্টাইন গভর্নর এক মুসলিম দূতকে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে মোহাম্মদ (স) এক মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করলে বাইজান্টাইনদের কাছে মূতা নামক জায়গায় পরাজিত হয়। আবু বকর এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ক্ষমতায় এসেই সিরিয়া সীমান্তে একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করেন। আর এর সুযোগে আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও বেদুইনের দল বিদ্রোহ করে বসে। নবী মোহাম্মদের অনুপস্থিতিতে অনেক বেদুইন গোত্র ইসলামের মূলনীতি চর্চা থেকে ফিরে আসে। তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করে। প্রাক-ইসলামি জীবনাচরণ তাদের মধ্যে আবার প্রভাব ফেলতে শুরু করে। অনেকে নামাজ পড়া বাদ দিয়ে দেয়। দিকে দিকে বিদ্রোহীরা খিলাফত অস্বীকার করে ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এরই মধ্যে নবুওয়াতকে লাভজনক ব্যবসা মনে করে আরবের বিভিন্ন গোত্রে ভণ্ডনবীদের উত্থান হয়। আবু বকর এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ভণ্ডনবীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান করে তাদের দমন করেন। ইতিহাসে যা পরিচিত রিদ্দা বা স্বধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ফলে খোদ আরবেই ইসলামী সাম্রাজ্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। আরব উপদ্বীপের মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমান্তে ছিল আরো দুইটি প্রভাবশালী সাম্রাজ্য। উত্তর-পশ্চিমে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ও উত্তর পূর্বে পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য ছিল ইসলামের জন্য বড় হুমকি। তবে পার্শ্ববর্তী এই দুই পরাশক্তিই নিজেদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলেন আবু বকর। আবু বকরের দৃষ্টি এখন আরব উপদ্বীপ পেরিয়ে সীমান্তের ওপারে নিবদ্ধ হয়।
পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্যে অভিযান
ইরাক ও খোরাসানের সমন্বয়ে গড়া পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্যের দুর্বলতা সম্পর্কে আগেই খবর পেয়েছিল মুসলিম বাহিনী। রিদ্দার যুদ্ধের সময় মুসান্না বিন হারিস আবু বকরকে সাসানীয় সাম্রাজ্যের দুর্বলতা সম্পর্কে অবহিত করেন। আবু বকর আর দেরি না করে মুসলিম সেনানায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে এক বাহিনীকে প্রস্তুত করেন। ৬৩৩ সালে ইরাক আক্রমণের এই সময়টাতে খালিদের বাহিনী ইয়ফ্রেতিস নদীর পশ্চিম তীরে এসে আটকে পড়ে। তবে এখানে এসে স্থানীয় লোকদের সহায়তায় মুসলিম বাহিনী প্রাথমিক সাফল্য লাভ করে এবং সাসানীয় বাহিনীর অগ্রগতিকে ঠেকিয়ে রাখে। একই সময়ে মুসলমানদের আরেকটি বাহিনী সিরিয়াতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছিল। সিরিয়ার মুসলিম সেনাদল বাইজান্টাইন বাহিনীর তোপের মুখে পড়লে আবু বকর খালিদ বিন ওয়ালিদকে সিরিয়া গমনের নির্দেশ দেন। ইরাকে থাকা খালিদ বিহীন মুসলিম বাহিনী কমান্ডার আবু উবায়েদ আল তাকাফির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়। এসময় মুসান্না বিন হারিসের পরামর্শ উপেক্ষা করে আবু উবায়েদ সাসানীয়দের আক্রমণে উদ্যত হলে মুসলিম বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ৬৩৪ সালে সংঘটিত ঐতিহাসিক সেতুর যুদ্ধে আবু উবায়েদ নিহত হন। ছত্রভঙ্গ বাহিনী মুসান্নার নেতৃত্বে আবার পূর্বের ইউফ্রেতিস নদীর পশ্চিম তীরে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং মদিনা থেকে অতিরিক্ত সৈন্য আসার অপেক্ষা করতে থাকে।
৬৩৪ সালে একই বছর আবু বকর মারা গেলে রাশিদুন খিলাফতের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে অভিষেক হয় হযরত উমরের। তার আমলেই ইসলামী সাম্রাজ্যের সোনালি যুগের সূচনা হয়। যাহোক, ইরাকে অপেক্ষায় থাকা মুসলিম বাহিনীর সাহায্যের জন্য এবার প্রসিদ্ধ সাহাবী সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে একদল নতুন সৈনদের প্রেরণ করেন উমর। একইসাথে সাসানীয়রাও অধিকৃত ইরাকের বিভিন্ন জায়গা পুনর্দখলের জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। সাসানীয় বীর রুস্তম মুসলমান বাহিনীকে দেখে নেয়ার সংকল্পে তলোয়ার শাণ দিতে থাকেন। অপরদিকে সিরিয়ার যুদ্ধে যাওয়া খালিদ বিজয়ীর বেশে ইরাকে থাকা মুসলিম বাহিনীর সাথে যোগ দিলে এটি একটি ভীতিকর সেনাদলে রূপ নেয় । তা সত্ত্বেও সাসানীয় বিশাল বাহিনীর তুলনায় মুসলিম বাহিনী এক ক্ষুদ্র দলে পরিণত হয়। তাছাড়া সামরিক সরঞ্জামের দিক থেকেও সাসানীয় বাহিনী ছিল এগিয়ে। ৬৩৬ সালে শুরু হয় মুসলিম বনাম সাসানীয় যুদ্ধ তথা ঐতিহাসিক কাদেসিয়ার যুদ্ধ। বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে আত্মবিশ্বাসে থাকা জেনারেল রুস্তম প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুসলিম বাহিনীর ওপর। প্রথম কয়েকদিনের যুদ্ধে এগিয়ে থাকে সাসানীয়রা৷ কিন্তু হঠাৎ করে একদিন যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মুসলিম বাহিনীর কতিপয় পদাতিক সেনা বালুঝড়ের আড়ালে সাসানীয় ফ্রন্টলাইনের ভেতরে ঢুকে পড়ে প্রভাবশালী কয়েকজন জেনারেলকে উপুর্যুপরি আক্রমণে হত্যা করে আসে। যুদ্ধে সাসানীয় বীর রুস্তমকেও হত্যা করা হয়। ফলে সাসানীয় বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। বিশাল বাহিনী পদানত হয় মুসলিম ক্ষুদ্র বাহিনীর কাছে। পারস্যের রাজধানীর উপর বিজয় অর্জিত হয় মুসলমানদের।
শেষ সাসানীয় সম্রাট তৃতীয় ইয়াজদেগার্ড মুসলমানদের মোকাবেলা করার জন্য আরেকটি শক্তিশালী সেনাদল প্রস্তুত করেন। ৬৪২ সালে নাহওয়ান্দের যুদ্ধে এই বাহিনীও মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। মুসলমানদের পরবর্তী দৃষ্টি ইরানের দিকে নিবদ্ধ হলেও হযরত উমর আর অভিযান না চালানোর মনস্থির করে বিজিত অঞ্চলে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। নিজেদের সাম্রাজ্য হারানোর শোকে লুলু নামের এক পারসিয়ান দাস হযরত উমরকে হত্যা করলে রাশিদুন খিলাফতের তৃতীয় খলিফা হিসেবে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ধনাঢ্য উসমান। তিনি তার পূর্বসূরিদের মত সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্যাম্পেইন অব্যাহত রাখেন। ৬৫১-৫৩ সালের মধ্যে খোরাসান মুসলমানদের বশ্যতা স্বীকার করে। ইসলাম পৌঁছে যায় পূর্বদিকে আধুনিক পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে।
সিরিয়া ও লেভান্ত অভিযান
সিরিয়া ও লেভান্ত দখলের জন্য আবু বকর চারজন জেনারেলের নেতৃত্বে চারটি ডিভিশন সেখানে পাঠিয়েছিলেন। তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল বাইজান্টাইন সেনাদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে না জড়াতে। এমনকি কোন বড় শহর বা দুর্গ আক্রমণ করতেও তাদের মানা করা হয়। মুসলিম বাহিনী প্রথমে কোন বাঁধার সম্মুখীন না হলেও অসুস্থ বাইজান্টাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস ও তার ভাই থিওডোরের নেতৃত্বে রোমান বাহিনী মুসলমানদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আবু বকর এবার খালিদকে সিরিয়া অভিমুখে রওনা হওয়ার নির্দেশ দেন। খালিদ তার শ্রেষ্ঠ সেনাদের নিয়ে উট সাথে নিয়ে মরুভূমি হয়ে সিরিয়া পৌঁছান। আগে উপস্থিত থাকা চার ডিভিশনকে একত্র করেন তিনি। এই সম্মিলিত শক্তি ৬৩৪ সালে আজনাদায়েনের যুদ্ধে বাইজান্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করে।
রাশিদুন সেনাবাহিনী লেভান্ত ও সিরিয়ায় নিজেদের অভিযান অব্যাহত রাখে। আজনাদায়েনের যুদ্ধের বছরই মুসলিম বাহিনী দামেস্ক দখল করে। ৬৩৬ সালে সিরিয়ান শহর হোমস মুসলমানদের দখলে আসলে আলেপ্পো ও এন্টিওকের মত প্রভাবশালী খ্রিস্টান শহরের খুব কাছাকাছি চলে আসে তারা। এর আগে আজনাদায়ানের যুদ্ধে থিওডোর পরাজিত হলে হিরাক্লিয়াস থাকে তার পদ থেকে অপসারণ করে নতুন জেনারেল আর্মেনিয়ার ভাহানের নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনীকে রাশিদুন সেনাদের মোকাবেলা করতে নির্দেশ দেন। অফিশিয়ালি মুসলিম এই বাহিনীর কমান্ডার খালিদ ছিলেন না। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তার অপরিসীম দক্ষতার জন্য তিনিই নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। খালিদ তার সেনাদের দক্ষিণ দিকে ইয়ারমুক নদীর তীরে নিয়ে আসেন এবং সেখানেই সাম্রাজ্যবাদী খ্রিস্টান বাহিনীর মুখোমুখি হয় মুসলমানরা। ইতিহাসে ইয়ারমুকের যুদ্ধ শিরোনামে ফের ময়দানে নামে রাশিদুন শক্তি। ছয়দিনের এই যুদ্ধে প্রথমদিকে কোণঠাসা থাকলেও খালিদের রণনিপুণতায় মুসলমানরা বিজয়ী হয়। জর্ডান, সিরিয়া আর প্যালেস্টাইনে মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য থেকে হুমকি দূর হলে মুসলিম বাহিনী ইরাকে প্রত্যাবর্তন করে।
৬৩৭ সালে পবিত্র শহর জেরুজালেম মুসলমানদের দখলে আসে। খলিফা উমরের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে রোমানদের কাছ থেকে জেরুজালেম কোন রক্ত ঝরানো ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে অধিকৃত হয়। এরইসাথে ৫ শতাব্দী পূর্বে রোমানদের দ্বারা বিতাড়িত ইহুদিরা আবারো জেরুজালেমে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। এসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ইসলামের সামরিক অভিযানের সফলতার মহানায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদকে খলিফা উমর তার দায়িত্ব থেকে পদচ্যুত করেন। পদচ্যুতির আগে ৬৩৮ সালে খালিদ আনাতোলিয়া ও আর্মেনিয়া বিজয় করেন। ৬৪২ সালে এই অমিত শক্তিধর জেনারেলের মৃত্যু হয়।
মিশর ও উত্তর আফ্রিকা বিজয়
আমর ইবনুল আস একদিন খলিফা উমরের কাছে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত মিশর দখলের প্রস্তাবনা নিয়ে আসেন। তিনি খলিফাকে বুঝাতে সক্ষম হন যে সেখানকার রাজনৈতিক অবস্থা শোচনীয় এবং এই মুহূর্তে যদি মুসলিম বাহিনী সেখানে আক্রমণ করে তবে খুব একটা প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে না তারা। ৬৪০ সালে আমর ইবনুল আসের নেতৃত্বেই সম্পন্ন হয়ে যায় মিশর বিজয়। তার দুই বছর পর মিশরের বেশিরভাগ অঞ্চলই রাশিদুন খিলাফতের আওতায় চলে আসে। আলেকজান্দ্রিয়ায় আরেকটি বাইজান্টাইন আক্রমণ প্রতিহত করা হয় স্থানীয়দের সহায়তায়। ৬৪৭ সালে সুফেতুলার যুদ্ধে ত্রিপোলির উত্তর আফ্রিকার একটি অংশ মুসলমানদের দখলে আসে।
রাশিদুন খিলাফতের গৌরবময় বিজয়রথ আরব থেকে শুরু হয়ে সিরিয়া, লেভান্ত, রোমান সাম্রাজ্য, মিশর, উত্তর আফ্রিকা হয়ে চলে গিয়েছিল পূর্বে সিন্ধু পর্যন্ত। ভূমধ্যসাগরের বেশকিছু দ্বীপও এসে গিয়েছিল এই খিলাফতের নিয়ন্ত্রণে। এই জয়রথ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত হয় হযরত উসমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। পরবর্তী খলিফা আলীকে ব্যস্ত থাকতে হয় অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ মোকাবেলা করতে। খারিজী বিদ্রোহী কর্তৃক আলীর মৃত্যু হলে মুসলিম সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আসেন উমাইয়া বংশীয় মুয়াবিয়া। তার আমলে ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তারের সে ঢেউ শুরু হয়েছিল তা উমাইয়া বংশের ৬৬১-৭৫০ সমকালীন অব্যাহত থাকে এবং ইসলামি সাম্রাজ্য দূর দূরান্তে নিজের পতাকা ওড়ায়।
ইসলামের প্রাথমিক যুগের এই অভিযানগুলোই ইসলাম ও ইসলামি সাম্রাজ্যকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিল। এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই ইসলাম ও ইসলামি সাম্রাজ্য হয়ে উঠে একটি বৈশ্বিক ও প্রভাবশালী ধর্মীয়-রাজনৈতিক শক্তি।