ক্রিপ্টোগ্রাফির ছেলেবেলা, Stay Curioussis

আমরা অনেকেই আমাদের কথা বা মেসেজ গোপন রাখার জন্য অনেক সময় সাংকেতিক ভাষা (coded language) ব্যবহার করি। মনে নেই, আমরা ছেলেবেলায় বন্ধুদের সাথে অনেক কথা সাংকেতিক ভাষায় বলতাম? এখনো ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বড়দের সামনে তাই করে। উদ্দেশ্য, অন্য বন্ধুরা বা অন্য কেউ যেন তাদের কথা বুঝতে না পারে। যেমন, “খেয়েছিস” হয়ে যায় “এয়েছিস-খে,” “পাঁচশো” হয়ে যায় “আশ্চ-পা,” “সিনেমাতে যাবো” হয়ে যায় “ইনেমাসিতে আবোযা”। মনে পড়লো তো এখন? এই সাঙ্কেতিক ভাষাগুলো আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের উদ্ভাবন। এই কৌশলগুলোকে বলা যেতে পারে একধরণের ক্রিপ্টোগ্রাফি। আমরা সবাই একেকজন ছোটখাটো ক্রিপ্টোগ্রাফার আরকি!

আমাদের কম্পিউটারকে অনেকাংশে নিরাপদ রাখে এই ক্রিপ্টোগ্রাফ। তবুও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমাদের সংবেদনশীল ইলেকট্রনিক্স মেসেজ, কথা, লেখা, ফাইল -এসব কিছুকে গোপন রাখা একটি দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তির গবেষণা সংস্থাগুলো, বিজ্ঞানীরা, এমনকি অনেক দেশ এ নিয়ে যুগ যুগ ধরে পরিশ্রম করে যাচ্ছে, কি করে ভাল ক্রিপ্টোগ্রাফ উদ্ভাবন করা যায় কম্পিউটারকে নিরাপদ রাখতে। ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং ক্রিপ্টো এনালাইসিস শিক্ষার বিদ্যাকে বলা হয় ক্রিপ্টোলজি। মজার ব্যাপার হলো, এই ক্রিপ্টোলজির জন্মস্থান এবং ছেলেবেলা কিন্তু আরবী ভাষা-ভাষীর দেশেগুলোতে। ইউরোপীয় ভাষায় “Cipher” শব্দটি আরবী শব্দ “সিফর” থেকে এসেছে।

ক্রিপ্টোগ্রাফির ছেলেবেলা, Stay Curioussis

                                                 মিশরীয়রা সাঙ্কেতিক ভাষা “হায়ারোগ্লাইফি” (hieroglyph)

প্রথম ক্রিপ্টো’র ব্যবহারের প্রমাণ মিলে মিশরে। প্রায় ৪৫০০ বছর আগে মিশরীয়রা সাঙ্কেতিক ভাষা “হায়ারোগ্লাইফি” (hieroglyph) দিয়ে গোপন বার্তা আদান প্রদান করতো। তার মানে, ক্রিপ্টোগ্রাফির জন্মস্থান হলো মিশর। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীর প্রখ্যাত আরব বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক, ইয়াকুব আল-কিন্ডি (Yacoub Al-Kindi) হলেন ক্রিপ্টোলজি সম্পর্কিত প্রাচীনতম বইয়ের লেখক। তার গ্রন্থটির নাম, “রিসালাহ ফি ইসতিখরাজ আল মুআম্মা” (Decrypting Cryptographic Messages)। এটি হলো ক্রিপ্টোলজির সর্বাধিক প্রাচীন বৈজ্ঞানিক পান্ডুলিপি।

ক্রিপ্টোগ্রাফির ছেলেবেলা, Stay Curioussis

                                    ইয়াকুব আল-কিন্ডি

খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে আরেক চিন্তাবিদ, আলী ইবনে আদলান লিখেন “আল মু’আল্লাফ লিল মালিক আল আহরাফ” (A real manual of cryptanalysis)। এটি ক্রিপ্টোগ্রাফির একটি মূল্যবান দলিল। চৌদ্দশো শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তাজ আদ-দ্বীন ইবনে আদ-দুরাইহিম লিখেছিলেন, “মিফতাহ এ-কুনুজ ফি ইদাঃ আল-মারমুজ”, (Treasures on Clarifying Ciphers)। বর্তমান সময়ে ক্রিপ্টোগ্রাফি খুবই উন্নত। এগুলোর বেশীর ভাগের ভিত্তি কিন্তু এই বইগুলোই।

আশায় আছি, আমাদেরই এক ঝাঁক দুরন্ত ডানপিটে ছেলে-মেয়ে হয়তো কোন একদিন আবিষ্কার করে ফেলবে বিশ্ব জয় করা কোনো ক্রিপ্টো! অসম্ভব কিছু তো নয়। অপেক্ষায়।

ক্রিপ্টোগ্রাফির ছেলেবেলা, Stay Curioussis

 

সূত্র: Mohd. Al-Suwaiyel “Arabic Origins of Cryptology,” Oxford University (UK), presented on April 26, 2018.